অনেকটা প্রস্তুতিবিহীনভাবে চলে গেল আমার বন্ধু খোন্দকার আশরাফ হোসেন। আমাদের কালের প্রায়-অশনাক্ত এক কাব্যনায়ক। আমার সহপাঠী ও বহুমাত্রিক এক সৃষ্টিযাত্রী। আজ থেকে প্রায় অর্ধ-শতাব্দী আগে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। আমরা দু’জনেই ভর্তি হয়েছিলাম অনার্স প্রথম বর্ষে। তখন তার পদচারণা ছিল প্রায় নিঃশব্দ। ক্লাসে নিরীহ ও মনোযোগী এক ছাত্র। সাধারণত তরুণ […]

‘তুমি যে তুমি ওগো এই তব ঋণ, আমি মোর প্রেম দিয়ে শুধি চিরদিন’। বন্ধু পুরুষ হলে, বন্ধুত্বের আবেগে আমরা আপনা থেকে সহজেই তুইয়ে চলে যাই। আর বন্ধু যদি নারী হয় তাহলে আমরা তাকে ‘তুই’ বলি না; বলি, তুমি। ‘তুমি’র মধ্যে একটা নীরব, প্রায় নিঃশব্দ চুম্বনের ধ্বনি আছে। আমরা ‘তুমি’ বলতে বলতে নারীর অতি নিকটে পেঁৗছে […]

শ্রাবণ আসতে না আসতেই ঝড়ের তা-বে সব ল-ভ- হওয়ার জো। আজকাল আবার ঝড়ের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়ে থাকে। এবারের ঝড়ের নাম হুমায়ূন ঝড়। বিধ্বংসী তো বটেই। তবে এই ধ্বংসের মধ্যে ছিল প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, অনুরাগ, মায়া-মমতা, ভক্তি শ্রদ্ধা, সমীহ, সম্ভ্রম আর বিহ্বলতা, বুকভাঙ্গা হাহাকার, রোদন মেঘের ফাঁকে ফাঁকে রোদ্দুরের ঝকঝকে আলোর বিচ্ছুরণ। অনেকটা কোনো এক ঝড়ের […]

এই দুপুরটি অন্যরকম, এই দুপুরটি বুকের উপর চেপে-বসা নষ্ট দুপুর_ এই দুপুরটি শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাসের দোদোল দোলায় অসহ্য এক ভ্রষ্ট দুপুর… এই দুপুরটি জীবনগ্রাসী : এই দুপুরটি আকাশউপুর কান্না জরায় দু’চোখ পুকুর! এই দুপুরটি বুকের ওপর বিশাল ভারী কৃষ্ণপাথর, জগদ্দল-ও বলতে পারো_ এই দুপুরটি কুরে খাচ্ছে হাড়মাংস ও মজ্জাসহ; এই দুপুরটি গলার কাছে অস্বস্তিকর আটকে আছে, […]

‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’_ এই কথাটি প্রচলিত আছে। কিন্তু সংসারের মূল উপাদান হলো সংসারের অংশীদার দু’জন মানব-মানবী। পরস্পরের আস্থা ও ভালোবাসায় তারা ঘর বাঁধে এবং জীবনের যাত্রা শুরু করে। আমরা এটাকেই বলি ‘সংসার’। প্রেম, ভালোবাসা ও নীড়_ এভাবেই গঠিত হয় সংসার। পরস্পরের ওপর গভীর আস্থা না থাকলে সঙ্গ হয়; কিন্তু সংসার হয় না। সংসারের […]

চা_ শুধু একটিমাত্র অক্ষরে তৈরি শব্দটির মূলে এক সুদীর্ঘ এবং অতিপ্রাচীন ইতিহাস বিধৃত রয়েছে। চা মূলত চীন, শ্রীলংকা এবং ভারতে উৎপাদিত হলেও চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও আজ আর পিছিয়ে নেই। সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চা-বাগানই তার প্রকৃষ্ট নিদর্শন। পারস্য আরবে চাই, চীনে কু-তু বা কু-চা, কিয়া, শেহ্, চুয়েন। ইতালিতে টে, ফ্রান্সে থি, জার্মানিতে […]

বসন্ত এসেছে আবার আমাদের মাঝে। বাংলার বসন্ত নিয়ে চর্যাপদের কবিদেরও যে দু’একটি পঙ্ক্তি নেই তা কিন্তু নয়। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনেও বসন্তের দেখা মেলে। আর পদাবলী তো আমার মনে হয় বসন্তের রাজা। সংস্কৃত শ্লোক জয়দেবেও আমরা পাই। এ ছাড়া আমাদের সাহিত্যে, গানে, নৃত্যে বসন্তবন্দনা হয়েছে নানা কারণে। এসব কারণ যাই থাকুক না কেন, আমার বারবার একটি কথাই […]

তখন চিটগং কলেজিয়েট স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ি। ক্লাসটিচার বড়ুয়া স্যার আমাদের বাংলা পড়ান। স্যার একদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘রচনা লেখো “আমার প্রিয় ঋতু”।’ এই বলেই চেয়ারে পা তুলে তিনি ঘুমের প্রস্তুতি নিলেন। আমাদের সময়ে ক্লাসওয়ার্ক দিয়ে শিক্ষকদের ঘুমানো এবং ঝিমানো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। এটাকে কেউ দোষের ধরত না। ছাত্ররা তো ক্লাসওয়ার্ক করছেই। খাতা খুলে বসে […]

হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে পরিচয় হলো বাহাত্তর সালে। স্বাধীনতার পরের বছর। বছরের বোধহয় শেষ দিকে। আমি তখনও লেখক হইনি, ফরীদি তখনও অভিনেতা হয়নি। লেখা উচিত ‘হননি’। ফরীদিকে আপনি করে লিখতে কি রকম যেন লাগছে। সে আমার এত প্রিয় বন্ধু, ফরীদির মতো বন্ধুকে কেমন করে আপনি বলি! আমি তখন থাকি গেন্ডারিয়াতে। গেন্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের একটা বাসায় […]