আকার ইকার আমি ভুল করি শুধু ভুল করি যতবার ভুল করি ততবার সেই নাম ধরি। ধরতে ধরতে আমি ধরা পড়ি নিজের কাছেই, যতবার ধরা পড়ি ততবার সেই নাম ধরি। কি আছে অধরা বলো ধূলিহীন ধরার কুলায় যতই সধরা হই ততবার সেই নাম ধরি। বুকের গভীরে সুখ ধুকপুক শুধু জ্বলে যায় জ্বলে জ্বলে ছাই হয়ে ততবার […]
জলের গজল
নতুন সংসার
জীবনের বোঝা কাঁধে প্রতিদিন পথ চলি আমি; জীবনটা দামি নয়, মনে হয় বোঝাটাই জীবনের চেয়ে ঢের দামি! কেউ কেউ প্রশ্ন করে, কত এই বোঝার ওজন? নিরুত্তর পথ চলি, পথে পথে সঙ্গী অগণন। নগর পেরিয়ে যাই, পেয়ে যাই শালতমালের পর বুড়ো বটমূল, সূর্যাস্তের পরপারে সুদূরে মিলিয়ে যাই কাশ-শাদা চুল। নিজেকে দেখতে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি আপন সুরত, […]
উক্তির মুক্তি ও নজরুল
বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তম কবিদের শীর্ষে থেকেও সবচেয়ে সহজবোধ্য নন যিনি, তাঁর নাম নজরুল। তাঁর কবিতার ধ্বনি ও শ্রুতিমাধুর্য় শ্রোতাকে যতটা কাছে টানে, তার বাণী ততোটা টানে কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ। এ-কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা শ্রোতাপাঠকের কাছে যতোটা শ্রুতিসিদ্ধ, ততোটা স্বতঃবোধ্য নয়। ফলে যে নজরুল মূলত যুক্তিসিদ্ধ উক্তির কবি, তিনি প্রায় সব একপাঠের পাঠক-পাঠিকার কাছে অধরাই থেকে যান। এই […]
রবীন্দ্র-তুরুপ
তোমাকে মাদুলি করে পরেছি গলায়, সকালে গিয়েছি আজ বকুলতলায়; শিথানে গীতবিতানের পাতা খুলে তোমাকে নকল করি চলায় বলায়। তুমিও তো শিষ্য ছিলে পোষ্য ঋষিদের; তারপর নিজেই নিজের তুমি আলখেল্লা-গুরু; লালকেল্লাবাসী তিরিশের তরুণেরা যদিও দেখিয়ে দিলো মেরিলিন উরু; স্বীকারে ও অস্বীকারে তোমাকে করতে চায় সকলেই শুরু। কী তোমার সরলতা কী তোমার দুর্বলতা এই নিয়ে চলছে বাহাস […]
ছায়ার বাঁশি
বিশ বছর পর বললাম, ‘ভালোবাসি’। বিশ বছর। পাশাপাশি আমাদের ঘর। তুমি অবাক হলে না। হাসলে। ‘আমার উত্তরটাও পাবে বিশ বছর পর’। না, আমি অপেক্ষায় থাকি না। আমি প্রতিদান পেয়ে ভালোবাসি না। আমার ভালোবাসা তাকায় না। হাসে না। আমার ভালোবাসা বোবা চোখে কাঁদে। এইতো আমার নিয়তি। যেহেতু শেষমেশ আমিও পা রেখেছি ভালোবাসার ফাঁদে। আমি কি তোমার […]
গোলাবাড়ি ছেড়ে যাই
লেবুর পাতার ঘ্রাণে জব্দ তুমি, করলব্ধ, নাবালিকা ভুমি; যেতে যেতে ফিরে আসো, ভালোবাসো সর্বনাশও, তুমি ঘূর্ণি-রুমি; হে গর্ভিনী জলাঙ্গিনী, স্বরস্বতী দুগ্ধবতী, মা-দুর্গা ওলান – রেখেছি অমৃতে মুখ, জন্মে-জন্মে সর্বভূক, সতৃষ্ণ পরাণ। দাও শস্য, দাও জল, আকাশগঙ্গায় খল নক্ষত্রের ঢল, জোনাকি বধুর মুখ, জন্মে-জন্মে সর্বভূক, পিপাসা অমল। যাই দূরে যাই, গোলাবাড়ি ছেড়ে যাই, শস্যমুখে যাই, ওরে, […]
নজরুলের ‘জয় বাংলা’
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, সুরমা-ধলেশ্বরী-কর্ণফুলী, আরো কতো-শত নদনদীবাহিত, পলিগঠিত এই বঙ্গীয় অববাহিকা। অনাদিকাল থেকে এই ব-দ্বীপভূমিতে বিবর্তমান মানবগোষ্ঠির স্বাতন্ত্র্যসূচক অভিধার নাম বাঙালি। আর তার বসতভূমির নাম বাংলা নামের দেশ। ইতিহাসের অবশ্যম্ভাবী ধারাবাহিকতায় পূর্বদৃষ্টান্তরহিত এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম-জাতিরাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়ার মুহূর্তে তার সাংবিধানিক নাম হলো ‘বাংলাদেশ’। এ-কারণে এই রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের কাছে ‘নদী বা ব-দ্বীপ বা পলি’-র […]
মুজিবের মুখ ও অন্যান্য কবিতা
মুজিবের মুখ মানে বাঙালির মুখ মুজিবের মুখ মানে বাঙালির সুখ মুজিবের মুখ মানে নদী আঁকাবাঁকা মুজিবের মুখ মানে প্রগতির চাকা মুজিবের মুখ মানে নৌকার পাল মুজিবের মুখ মানে কৃষকের হাল মুজিবের মুখ মানে জেলেজোলাতাঁতী মুজিবের মুখ মানে বাঙালির জ্ঞাতি মুজিবের মুখ মানে হালের লাঙল দাড়ীমুখে সারিগান পাহাড়িয়া ঢল মুজিবের মুখ মানে ধান আর পাট ধনধান্যপুষ্পময় […]
দখলীস্বত্বের বাড়ি
সেতুকে ওপরে রেখে নদী বয়ে যায়। নদীকে গভীরে রেখে সেতুদের আড়ি। তাই কি জলের সঙ্গে স্রোত দাঁড় বায়? দ্বীপ-চরে বেড়ে ওঠে একাকিনী বাড়ি। বাঁকা জল আঁকা জল, মাঝখানে বাড়ি। গৃহস্থের চালাবাড়ি, হে নগরবাড়ি! আড়ালে ঘুমটো-মুখ, হে ব-দ্বীপবাড়ি। দখলীস্বত্বের বাড়ি, খুব দরকারি। ভিটি ছেড়ে মাটি ছেড়ে মাঝি গলা ছাড়ে। সাঁতরায় ডিঙিনৌকা। গাঙ দেয় পাড়ি। দখলীস্বত্বের বাড়ি, […]
মুনি রূপে গণ্য
ঊনিশশত পঁয়তাল্লিশ, একুশ তারিখ, জুন বৃহস্পতিবারে জন্ম নির্মলেন্দু গুণ। বারহাট্টা, কাশতলা, জেলা নেত্রকোণা জন্ম দিলো এমন শিশু, ইতিহাসে গোণা। কংশতীরে হংস তিনি, বাংলাজোড়া ডানা কাল পেরিয়ে ডাল পেরিয়ে মহাকালে হানা। একাত্তরে কম-বা-বেশি একাত্তরটি তূণ শব্দে-ছন্দে ছুঁড়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা’র গল্পটি তার বুকে সত্তুরটি বছর কাটে সুখ মিশিয়ে দুখে। হৃদয়টা তার কাটাকুটি, শিরায় নীরার ব্রীড়া […]