একাত্তরে আমার পিতা জীবিত ছিলেন না। পিতৃত্বের বিরুদ্ধেই কি বিদ্রোহ ঘটেছিল একাত্তরে? সেই যাঁরা কর্তা, যাঁরা মুরব্বি, যাঁরা আনুগত্য চান, তাঁদের বিরুদ্ধে? তা তেমনই ছিল বৈকি ঘটনা। একবার আমার এক পরিচিতজন, সে বলেছে, আমি নাকি বিশেষ সৌভাগ্যবান। আমি আমার পিতার বিশেষ স্নেহ পেয়েছি। এমন অনেক পিতা আছে, যারা স্বার্থপর, অত্যাচারী, বিবেকহীন। যারা মায়ের স্বামী বটে; […]
মনের ছায়া মতের ছবি
নদী নিঃশেষিত হলে
আনোয়ার পাশার সহপাঠী ছিলেন কলকাতার খ্যাতিমান লেখক শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭২–এ বন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি লিখেছিলেন মর্মস্পর্শী এই লেখা। ছাপা হলো সেই লেখার নির্বাচিত অংশ ‘নদী নিঃশেষিত হলে’—এই নামে একটা কবিতার বই লিখেছিল আনোয়ার। আমাদের বন্ধু, আনোয়ার পাশা। নীলিমা ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আনোয়ারের খবর কিছু জানেন? কাগজে যা লিখেছে তা কি […]
ক্লাউনের পোশাক পরে
শেখের সম্বরা, আত্মার সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শওকত ওসমান ক্লাউনের পোশাক পরে সমাজের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এই পোশাকটা তার দরকার, তিনি যেসব প্রশ্ন করতে চান কিংবা সমালোচনা, এ পোশাকটা তাকে কতক সুবিধা দেয়। তিনি ক্লাউন, তিনি বাইরের লোক, তার চোখে সব ধরা দেয়, তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি অবেগপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর। এই পোশাক পরে শওকত ওসমান […]
ছদ্মবেশী রাজকুমার
বন্ধুদের দলে সাবলীলভাবে মিশে থাকা সম্পূর্ণ অচেনা একজনকে দেখলাম, তার নাম বেলাল চৌধুরী। সম্পূর্ণ মেদহীন সুগঠিত শরীর, ফরসা রং, নিষ্পাপ, সুকুমার মুখখানিতে ঈষৎ মঙ্গোলীয় ছাপ। এই নিরীহ যুবকটি সম্পর্কে অনেক রোমহর্ষক কাহিনি (হয়তো পুরোটা সত্যি নয়, সব রোমহর্ষক কাহিনিই তো সত্যি-মিথ্যে-গুজব মিশ্রিত হয়ে থাকে) শোনা গেল। তার বাড়ি পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে, পেশা কুমির ধরা। […]
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো ০১
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো সেদিন আমার মাথা ন্যাড়া। জীবনে দুবার ন্যাড়া হওয়ার কথা আমার মনে আছে। একবার একাত্তরের মাঝামাঝি, আরেকবার তিরাশির শুরুর দিকে। দুবারই মন ভালো ছিল না। একাত্তরে আমি এসএসসি ক্যান্ডিডেট। আমাদের বয়সী ছেলেরাও মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে। এ কারণে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করে দিলেন। দুঃখে। আমি ন্যাড়া হয়ে গেলাম। ন্যাড়া […]
ও বন্ধু আমার
আমি জানতাম, আবুল হাসান ছিল ওর মা এবং ওর বোনদের প্রতি খুবই দুর্বল। বিশেষ করে বুড়ির প্রতি ওর খুবই দুর্বলতা ছিল। পারিবারিক কথা উঠলে হাসান ওর মা এবং বোনদের কথাই বেশি বলতো, বাবা বা ভাইদের কথা সে খুব একটা বলতো না। ওর শয্যাপাশে গ্রাম থেকে আসা বোন বুড়ি এবং মা সর্বদাই উপস্থিত থাকতো। হাসানের কাছ […]
একজন বিশাল পরিমাপের মানুষ
ষাটের দশকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন অনেকের লেখা পড়তাম। তখন থেকেই হক ভাইকে লেখার মধ্য দিয়ে চিনি। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘তাস’-এর কথা শুনেছিলাম সেই সময়ে। একুশের সংকলনে প্রকাশিত তাঁর কবিতা পড়েছিলাম। তারপর পড়েছি ‘রক্তগোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’ বইগুলো। হক ভাইকে দেখি স্বাধীন বাংলাদেশে। এর আগে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়ই ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশে দেখা হয়, বাংলা একাডেমিতে তাঁর […]
আমার দোস্ত
মানুষের মৃত্যু হয়, কবির মরণ নেই। শারীরিকভাবে ‘নেই’ হয়ে গেলেও কবি বেঁচে থাকেন পাঠকের মানসপটে, বইয়ের পাতায়। আমার দোস্ত কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে দু-চার কথা লিখতে বসে প্রথমত এসব কথাই মনে আসছে। স্বীকার করি, খবরটা শোনার পর থেকে বেশ ভারাক্রান্ত অবস্থায় আছি। ‘একে একে নিভিছে দেউটি’, চলে যাচ্ছে সবাই। কেবল বসে আছি আমিই অধম, কখন […]
অভিনন্দন দাদুভাই
নামের সঙ্গে উপাধি ও পদবির যোগ থাকাটা সাধারণ ঘটনা, রফিকুল হকের নামের সঙ্গেও একটি উপাধি আছে, তবে সেটা বংশগত নয়, পারিবারিকও নয়, সামাজিক। রফিকুল হক দাদুভাইয়ের কাজটা কিশোর সমাজকে নিয়ে, তাদের কাছে তিনি দাদুভাই। রফিকুল হক কিশোরদের জন্য ছড়া ও গল্প লিখেছেন। বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র কিশোর-সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘কিশোর বাংলা’ সম্পাদনা করেছেন। তিনি কিশোরদের সংগঠন […]
কবোষ্ণ জীবন
রুদ্রর সঙ্গে যখন জীবন দেওয়া নেওয়া ইত্যাদি সব সারা তখনও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। চিঠিতেই আলাপ, চিঠিতেই প্রেম, চিঠিতেই যা কিছুএ। খেলার ছলে ওই জীবন দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারটি ঘটেছে। রুদ্র জানাল, ২৯ আশ্বিন তার জম্নদিন। -‘জম্নদিনে কি চাও বল। তুমি যা চাও, তাই দেব তোমাকে’। -‘যা চাই তা দেওয়া কি তোমার পক্ষে সম্ভব হবে?’ […]