পরাবাস্তব

এ কোথায়? এ যে এক বনভূমি_ ভীষণ নীরব। পদতলে পান্ডুর পল্লব। একদা তো নক্ষত্রের উজ্জ্বল আসব। একদা যে ভোর ছিল অগি্নময়_ ছিল যে গৌরব আজ তবে দাঁতে তুলে নিয়েছে বরফ! শব, কুটিরে কুটিরে শব, জনপদে শব_ এতো মৃত্যু! তবু মৃত্যু পায় না গৌরব মানবজন্মের গল্পে যদি কেউ না লেখে এসব। অমাবস্যা ছিঁড়ে খায় পূর্ণিমার রুপালি […]

একুশের কবিতা

সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায় বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল_ তপ্তশ্বাস হাহুতাশ পাতাঝরা বিদীর্ণ বৈশাখীর জ্বালাকর দিনের দিগন্তে আষাঢ়ের পুঞ্জীভূত কালো মেঘ আসবেই ঠিক। সাগরের লোনাজলে সি্নগ্ধ মাটীর দ্বীপ শ্যামলী স্বপ্নের গান বুকে পুষে নবীন সূর্য্যেরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার জানাবেই। সংখ্যাহীন প্রতিবাদ ঢেউয়েরা আসুক, […]

আবার শুরুর দিকে

উড়ে যাক উড়ে যাক পাখিদের ঝাঁক যেখানেই যাক তারা উড়ে চলে যাক শুধু রেখে যাক আকাশটা শুধু রেখে যাক এই মাঠ মাঠের আকাশে যেন সন্ধ্যা নেমে এলে অন্ধকার ঘন হয়ে এলে তারা-পাখি হয়ে তারা আসে পাখিদের ফিরে আসা মানুষও তো আসে ফিরে আসে ইতিহাস ঘন অন্ধকারে তারার ঝাঁকের মতো পাখির ঝাঁকের মতো মাঠে ঘাস ঘাসের […]

স্বাগত ১৪২০

রোদ্দুরের আনাজ সবুজে আমি শুনে উঠছি স্বর— সামনে নতুন দিন! নতুন বছর! আকাশে কয়েকটি ঘুড়ি। এক বালকের হাতে— তার একটি পড়ে গেল ওই ভোকাট্টাতে। এভাবেই ছিঁড়ে পড়ে সংসারের বঁইচির হার। ভরে ওঠে কান্নায় পাথার— অথচ ঘুড়িটা পড়ে যেতে কী উল্লাস! কাল বুড়ো বটের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে তাস— উনত্রিশ তাসের খেলা। তবে এ জীবন হয়তো জুয়ার […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

২৩ সোনালি খড়ে ছাওয়া গোলঘরের টেবিলে এসে বসবার সঙ্গে সঙ্গে ধোপদুরস্ত শাদা প্যান্ট-শার্ট পরা এক সেবক এসে লণ্ঠনের চিমনির মতো কাচের লাল গোলকের ভেতরে দুটি মোমবাতি রাখে। নিবিড় একটি আলো ছড়িয়ে পড়ে। লেডির মুখটিকে আরো অপরূপ দেখায়। কেরানি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ থেকে বিস্ময় কাটে না_ ইনিই তিনি? যার কথা এত শুনেছে সে, […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

২২ পুরান ঢাকা, তারপর নতুন ঢাকা, তারপর টঙ্গী ছাড়িয়ে, আরো উত্তরে গজারি বনের ভেতর দিয়ে জয়দেবপুর, রাজেন্দ্রপুর, তবে শ্রীপুর! খাম্বা সামাদ কেরানিকে বলে_ ভাই, এই যে গজারি বন দ্যাখেন, উই যে জয়দেবপুর, বিটিশ আম্বলে এই রাজত্ব আছিলো ভাওয়াল রাজাদের। শোনেন নাই ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কথা? বিষ খাওয়াইয়া রানী মারছিলো মধ্যম কুমাররে। তারপর বহু বচ্ছর বাদে সেই […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

২১ মঙ্গলবার! মঙ্গলবার! মাথার ভেতরে বোঁ করে ওঠে কেরানির। কোথায় কবে যেন কোন মঙ্গলবার? কিছুতেই তার মনে পড়ে না। কিন্তু ভাবনার চাকা থেমেও থাকে না। কী যেন কবেকার সেই মঙ্গলবারে! দিনের এই বারটা তার পিছু ছাড়ে না। মঙ্গলবার! মাথার ভেতরে অবিরাম কটকট করতে থাকে। শ্রীপুর থেকে ফিরে সোনারগাঁও হোটেলের ঝর্ণা রেস্টুরেন্টে আবার সেই লবস্টার ডিনার। […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

২০ কেরানির জ্বর ঘন হয়ে আসে। জ্বর বাড়তেই থাকে। দিনের পর দিন। মাঝে মাঝে কেরানি নিজেই টের পায় সে জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে। লঞ্চের পাটাতনে যাত্রীর জামার কলার ধরে চেঁচিয়ে উঠছে, ভাড়া নাই! লঞ্চে উঠছো কেন? তার ধন্দ লাগে সে এখনো নীল সাগর লঞ্চের চাকরিতেই। শরীরের নিচে নদীর স্রোত টের পায় কেরানি। নদী বয়ে চলেছে […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

১৯ বিজলির থাম চলতি বুলিতে খাম্বা। খাম্বা সামাদ! আমরা জেনেছি, কাউকে সিধে করতে হলে সে তাকে একটা থামের সঙ্গে বেঁধে পেটায়। কখনও সঙ্গে সঙ্গেই, কখনও পেটাবার আগে দিন কয়েক বিনা দানাপানিতে সে মানুষটাকে বেঁধে রাখে। খুব রোষ হলে নিজ হাতে সে পেটায়, নইলে সঙ্গী-সাথীরাই কাজটা সারে। পুরনো ঢাকার লালবাগ মহল্লা ছাড়িয়ে দূর এক গলির ভেতরে […]

কেরানি ও দৌড়ে ছিল

১৮ ভোরবেলা। জিপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাসির। আমাদের কেরানি রওনা হবে ঢাকার দিকে। উঠানে নেমে তরতর করে জিপের দিকে এগিয়ে যায় কেরানি। হঠাৎ তার মনে হয়, আর কবে হস্তিবাড়ি ফিরে আসা হয় কে জানে। মাকে একবার সালাম করে যাওয়া ভালো। কতকাল মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নাই সন্তান। ভোরের পাখিটাও যেন এই সৎ খেয়ালে […]