কেরানিও দৌড়ে ছিল

image_1236_308488
১৯
বিজলির থাম চলতি বুলিতে খাম্বা। খাম্বা সামাদ! আমরা জেনেছি, কাউকে সিধে করতে হলে সে তাকে একটা থামের সঙ্গে বেঁধে পেটায়। কখনও সঙ্গে সঙ্গেই, কখনও পেটাবার আগে দিন কয়েক বিনা দানাপানিতে সে মানুষটাকে বেঁধে রাখে। খুব রোষ হলে নিজ হাতে সে পেটায়, নইলে সঙ্গী-সাথীরাই কাজটা সারে।
পুরনো ঢাকার লালবাগ মহল্লা ছাড়িয়ে দূর এক গলির ভেতরে প্লাস্টিকের কারখানা, তারপরে জলা, জলার ওপারে কাঠগুদাম। নির্জন সুমসাম জায়গাটা। নৌকো বেয়ে কাঠের চালান এলেই কেবল ক্ষণেকের জন্যে লোক সমাগম হয়, নইলে গা ছমছম ভুতুড়ে পড়ে থাকে এলাকাটা। গুদামের পাশেই বুড়িগঙ্গার ধার বরাবর মাটিতে পড়ে আছে সারি সারি বিজলির থাম, তারই একটা গুদামের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো। আর, এটাই সেই বিখ্যাত থাম বা খাম্বা যার সঙ্গে মানুষ ধরে এনে বাঁধা হয়।
নাসির বলে, ভাই, আহমদউল্লারে আইনা থাম্বার লগে বান্ধি, তারপরে আপনে পিটান কি ক্যারানি তারে পিটায়, সেইটা আপনের ডিসিশন।
খাম্বা সামাদ বলে, না! নদীর পাড়ে! লঞ্চ ঘাটে। যেইখানে তার হোগায় লাত্থি দিছিলো ঠিক সেইখানে। লাত্থিটা কেরানিই দিবো। ঘাটের বেবাক মানুষ দেখবো!
নাসির অবাক হয়। এতদিনের পুরানা একটা অভ্যাস, খাম্বার লগে বাইন্ধা! অখন কয় সদরঘাটে! লঞ্চের পাড়ে! ওস্তাদের হইলো কী! কিন্তু কথাটা সে মুখে বলতে সাহস পায় না।
গভীর রাতে কেরানিকে ফোন করে খাম্বা সামাদ।
রেডি থাইকেন।
কিসের রেডি?
আহমদউল্লাহ! কাইল দুফর বেলা!
কেরানি জবাব দেয় না।
খাম্বা সামাদ সোৎসাহে বলে, কাইল তারে ফিট করছি। কাইল এক মিছা কারণে তারে ডাকছি সদরঘাটে। সে আসবে। তারপরে এক ক্যাচাল বাধাইয়া ধাক্কা দিয়া ফেলাবো তারে নদীর পাড়ে। ঠিক সেই জায়গায়, যেইখানে আপনেরে সে ফেলছিলো। তারপরে আপনে গিয়া তার হোগায় দিবেন লাত্থি।
কেরানি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, আপনি কোথায়?
আমি এক ভ্যাজালে আছি। ক্যান?
কেরানি বলে, থাক!
থাক মানে?
দরকার নাই।
কী দরকার নাই?
আপনি পারলে একবার বোডিংয়ে আসেন।
আসবে কি আসবে না, শোনার অপেক্ষা না করে ফোনটা রেখে দেয় কেরানি।
আধঘণ্টার ভেতরেই এসে উপস্থিত হয় খাম্বা সামাদ। কেরানি তখন ঘুমের বিছানা ছেড়ে রুমের বাইরে বারান্দায় নদীর দিকে মুখ করে বসে ছিলো। নদীর বুকে এখন শান্ততা। লঞ্চ সব ছেড়ে গেছে সেই কোন সন্ধ্যেবেলা। মানুষেরাও ফিরে গেছে যে যার ঘরে।
এইখানে বইসা আছেন?
কেরানি বলে, না, কাজটা ভালো হবে না।
আহমদউল্লাহ শালা আপনের অপমান করলো, তার প্রতিশোধ নিবেন না? দ্যাশের বাড়িতে যখন ফোন করলাম আপনেরে, তখন আপনের গলায় তো এই সুর শুনি নাই!
কেরানি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, আমার কিছু ভালো লাগছে না।
কন কী! বিষয় কী!
কিচ্ছু না!
অফকোর্স কিছু! খুইলা কন।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে কেরানি বলে, আপনাকে সব কথা বলা হয় নাই। আমি পাপী। একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন আমি নষ্ট করেছি। তালাক দিয়েছি!
খাম্বা সামাদ রুখে উঠে বলে, সেই মাগী আপনেরে আবার ফোন করছিলো?
মাগী শব্দটা ঠা ঠা করে কেরানির কানে বাজে। সেও রুখে ওঠা গলায় বলে ওঠে, না! রুহিতন ফোন করে নাই। মাগী শুনতে আমার ভালো লাগে না, খাম্ভাই।
খাম্বা সামাদ একটু বিচলিত হয় কেরানির রোখ দেখে। কেরানিকে নিয়ে সে একটা বড় কিছু ঘটাবার পরিকল্পনা করে বসে আছে, মানুষটা এখন যদি বিগড়ে যায়!
খাম্বা সামাদ তার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, সরি! ভেরি সরি! আমার উচিত হয় নাই।
কেরানি বলে, একদিন তার সাথে সংসার করেছি। তবে, সব কথা আপনাকে বলি নাই। এর আগেও আমার একটা বিয়ে হয়েছিলো।
বিস্মিত হয়ে যায় খাম্বা সামাদ। হাঁ করে সে তাকিয়ে থাকে।
হ্যাঁ, রুহিতনকে বিয়ে করার দিন পনেরো আগেই, বাবা-মায়ের অনুরোধে, বড়বুবুর দেখা মেয়ে, মদিনা, তার সঙ্গে।
সে বৌ? আছে?
না, তাকেও আমি তালাক দেই।
কী বলেন! এত হিস্ট্রি আপনের!
তার সঙ্গে কলমা পর্যন্তই। আর কিছু হয় নাই।
খাম্বা সামাদ বলে, তা আপনে পাপী হইলেন ক্যামনে যে নিজেরে আপনে পাপী কইলেন?
পাপী না! আমি পাপীই তো। দোষ তার ছিলো না। নামটাই শুধু। মদিনা! বাসরঘরে শুনেই আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। নবীর শহর মদিনা! আর সেই নামে নাম যার, তার সাথে বিছানায় যাবো? যাই নাই। পরের দিন যখন শুনি, তাকে একজন রেপ করতে জঙ্গলের মধ্যে ধরে, কী রেপ করে! সেই হিস্ট্রি! মন থেকে সন্দেহ যায় না। এ আমি কাকে বিয়ে করলাম! মনের মধ্যে সাপের মতো ছোবলের পর ছোবল! বাড়ি থেকে ঢাকায় আসি। আসার সময়ে দুয়ার ধরে সে দাঁড়িয়েছিলো। ভুলতে পারি না সেই ছবিটা। তার মুুখ! মদিনা!
কেরানি আর বলতে পারে না। নদীর বুকে আলোর ঝিলমিল সে দেখে। সারি সারি লঞ্চ। নিঝুম নিশ্চুপ। মানুষ নাই। মানুষের স্বর নাই। কেরানির ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে।
আমরাও একটু অবাক হবো এখন। কেরানির ধাতে ভাবনা চিন্তা নাই। তার তো যখন যেমন তখন তেমন। কবে, কখন থেকে, সে ভাবতে শুরু করেছে? ভাবতে ভাবতে নিজেকে সে পাপী বলে দেখে উঠেছে! এই কী সেই আমাদের চেনা কেরানি?
খাম্বা সামাদ হঠাৎ হা হা করে হেসে ওঠে। তার হাসিতে ঘোর কাটে কেরানির। সে খাম্বা সামাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে তুমুল এই হাসির কারণটা কী?
খাম্বা সামাদ রুমের ভেতরে গিয়ে হুইস্কির বোতল গেলাশ নিয়ে আসে। একটা ছোট টুলও আনে। টুলের ওপর বোতল গেলাশ রেখে বলে, আসেন, লেট আস হ্যাভ এ ড্রিংক।
কেরানি হাঁ বা না কিছুই বলে না।
কেরানির হাতে গেলাশ ধরিয়ে দিয়ে খাম্বা সামাদ বলে, লাইফ ইজ এ স্ট্রেঞ্জ ড্রামা। আসেন! চিয়ার্স! কাম অন!
গেলাশে ঠোঁট ছোঁয়ায় কেরানি।
খাম্বা সামাদ বলে, দুশ্চিন্তা সব ডুবায়া দ্যান! গুলি্ল মারেন! দৌড়ের পরে আছেন, দৌড়ান! লাইফ ইজ এ রান! থামছেন কি পড়ছেন! মরছেন! লাইফে কত কিছুই হয়। এ নিয়া অ্যাতো ভাবলে চলে! পাপ করে বলে? পুণ্যই বা কী! মানুষেরই রচনা! মদ খান, দেখবেন সব ভুইলা গেছেন।
কেরানি বলে, হাঁ, শুনেছি। মদ খেলে সব ভোলা যায় শুনেছি। আর আমার? আমার বেলায়? মদ যত খাই তত সব মনে পড়ে। আমার বেলায় উল্টা?
সমস্যাটা বেশ কঠিন বলেই মনে হয় খাম্বা সামাদের।
কেরানিও এই প্রথম একটা হদিশ পায় নিজের সম্পর্কে। সে যে আজকাল অতীত নিয়ে ভাবছে, মদ থেকেই তবে এ সবের শুরু?
গেলাশটা ঠেলে, মুখ মুছে, কেরানি বলে, ওই পাগলি! আমার সঙ্গে তো তার কিছু না, ভালো করে চোখ তুলে কখনোই তাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তার পেটে বাচ্চা এলো, কার বাচ্চা আমি জানি না, দোষ আমার ঘাড়ে পড়লো! লাথি খেলাম। চাকরি গেলো। আমার কী মনে হয় জানেন, খাম্ভাই?
বলেন, বলেন।
আমার মনে হয়, দোষী তো নিশ্চয় কেউ একজন। কোনো একটা মানুষ! আর আমিও এক মানুষ! ঠিক তো? তবে, সেই দোষী মানুষটাকে যদি না-ই খুঁজে পাওয়া যায়, অপরাধের শাস্তি তো হতেই হবে, নাকি?
বইলা যান।
বলছি। বলছি। আমি যে শাস্তি পাই, অপমান হই, লাথি খাই, চাকরি যায়, সেই দোষী মানুষটার হয়েই_ বুঝতে পারছেন কী বলছি?_ তার হয়েই শাস্তি পাই।
বারে বা! এইটা আপনে কী কন, কেরানিভাই?
আপনিই তো বলেছিলেন, আমাদের কাঁধের ওপর দুই দিকে দুই ফেরেশতা বসে আছে।
হা হা করে হাসতে হাসতে খাম্বা সামাদ বলে, আল্লার কেরানি! কেরামুন আর কাতেবিন। দুই কেরানি। পাপ লিখতাছে।
কেরানি যোগ করে, সওয়াবও লিখছে। লাগাতর লিখছে। লিখেই চলেছে। আমি এখন চিন্তা করি, এই যে পাগলির পেটে বাচ্চা পয়দার কারণে শাস্তি পাই, এ আমার পাপের শাস্তি না, মানুষের পাপের শাস্তি, কোনো একটা মানুষ, তার শাস্তি! তারই শাস্তি আমি পাই! এই আমি! ঘাড়ের কেরানি নিশ্চয় আমার খাতায় সওয়াবই লিখেছে, কারণ অপরের শাস্তি, মানুষের পাপের শাস্তি, আমি গ্রহণ করি।
এ বড় জটিল কথা আপনে তুললেন!
খাম্বা সামাদ ভাবে, এই লোকটির ভেতরে এমন ভাবের কথা! মনে মনে একটা সন্দেহ হতে থাকে তার। যে কাজের জন্যে কেরানিকে সে এতদিন খাইয়ে পরিয়ে টাকার ওপর রেখে তৈরি করছিলো, সেই কাজটার মুখে কেরানি ভড়কে যাবে না তো? পাপ-পুণ্যের চিন্তা উঠবে না তো?
খুব সতর্ক গলায় খাম্বা সামাদ বলে, শোনেন, অপমান অপমানই।
কেরানি বলে, হাঁ, দ্যাট ইজ অলরাইট! বাট আই হ্যাভ নো কমপ্লেন। আমার কোনো অভিযোগ নাই। আহমদউল্লাহকে ফিরে অপমান করার ইচ্ছা আমার নাই, খাম্ভাই। তাকে আমি মাফ করে দিতে চাই।
গেলাশটা হাতে নেন। খান।
খাচ্ছি। আপনি তাকে আর কিছু করতে যাবেন না। আমি তো সব কথাই আপনার শুনছি। আপনি ছিলেন বলেই আমি এখনো আছি। খুব ভালো আছি। আপনি আমার এই কথাটা রাখেন।
সে রাতে কেরানিকে কথা দিয়েও কথাটা রাখা সম্ভব হয় না খাম্বা সামাদের। আহমদউল্লাহর ব্যাপারে সে অনেকদূর এগিয়েছে। আগামীকালই লোকটাকে মিথ্যা এক বাহানায় সদরঘাটে এনে হাজির করবে খাম্বা সামাদের লোকজন। সে জানে, এখন আর ক্ষান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। তার নিজের মানুষেরা একটা দারুণ মজার ঘটনা ঘটাবার জন্যে শানিয়ে বসে আছে। তাদের ফেরানো যাবে না। তার দাপটটাই চোট খেয়ে যাবে।
অতএব, পরদিন, কেরানির কথার পরোয়া না করে, ঘটনা একটা ঘটে যায়।
আহমদউল্লাহকে নিয়ে আসে খাম্বা সামাদের যে জিপ, সেই জিপের ভেতরেই তাকে পাছড়ে ধরে পরনের সমস্ত কাপড় খুলে নেওয়া হয়। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় জিপ থেকে।
হর্নের ভোঁ ভোঁ আওয়াজ তুলে জিপটা ভিড়ের ভেতরে চলে যাবার পথ খোঁজে। জিপের তলায় চাপা পড়বার তরাসে লোকজন পালাবার পথ পায় না। উদ্ভ্রান্তের মতো তারা দিগ্গি্বদিক ছোটে। রিকশা থেকে কেউ কেউ পড়ে যায়। যাত্রী কারও কারও মালপত্র ছিটকে পড়ে সড়কে। ফুটপাথের ফেরি দোকানিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিছানো জিনিশ সরাতে।
নিজে বাঁচলে বাপের নাম! তাই প্রথমে কারও চোখে পড়ে না উলংগ আহমদউল্লাহকে। তারপর যখন চোখে পড়ে তখন এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে যে যার জায়গায় স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
একটা লোক! দাড়িতে মেহেদি। সারা শরীরে এক সুতো বস্ত্র নাই। মাথায় যে টুপিটা ছিলো, তাড়াহুড়োয় সেটা কেড়ে নেওয়া হয় নাই। অতএব সেটি স্বস্থানেই। বাকি দেহ? একেবারে সুন্নত সমেত হাজার চোখের সমুখে দৃশ্যমান।
নিজের লজ্জাস্থান দু’হাতে ঢাকবার প্রাণপণ চেষ্টা করে আহমদউল্লাহ। গোঙিয়ে ওঠে। ভীত বিস্টম্ফারিত চোখ। সংজ্ঞা প্রায় লুপ্ত। অথবা বিভ্রমে পতিত। কী হচ্ছে! কেন হচ্ছে! জগৎ আছড়ে ভেঙে পড়ে। চিৎকার করে সে ছুট দেয়। এক দৌড়ে নিজামত মিয়ার হোটেলে গিয়ে ওঠে।
শীতের দিন। নিজামতের গায়ে সবুজ আলোয়ান। নিজামত অনেক দেখেছে দুনিয়ায়। এও এক দেখা! তার কোনো বিস্ময় নাই। আলোয়ানটা সে খুলে জড়িয়ে দেয় আহমদউল্লাহর গায়ে। আহমদউল্লাহর বস্ত্র গেছে, কৃতজ্ঞতা যায় নাই। আলোয়ানটা গায়ে জড়াতে জড়াতে সে উচ্চারণ করে ওঠে, আলহামদুলিল্লাহ!
যেন এ সকল নিত্যদিনেরই ঘটনা, নিজামত মিয়া ঠাণ্ডা গলায় বলে, আসেন, বসেন। লুঙ্গিমুঙ্গি কই থুয়া আইলেন?
আলোয়ানের ঢাকা পেয়ে আহমদউল্লাহ যেন সম্বিত ফিরে পায়। তার রোষ ফিরে আসে। বলে, তামশা পাইছো, না? তামশা!
নিজামত বলে, না, তামশা কিয়ের! খাম্ভাইয়ের জিপ থিকা নামলেন দেখলাম।
দেইখা নিমু তারে!
হায় হায়! এই কথা কইয়েন না! হাপের ল্যাঞ্জায় পাও দিয়েন না।
নিজামত কাউন্টারের কাছে কৌতূহলী মানুষের ভিড়। অজস্র তাদের প্রশ্ন।
ভাই, বিষয় কী? হইছে কী? মানুষটা ক্যাঠা?
নীল সাগর লঞ্চের মালিক।
লোউরাইয়া আইলা ক্যা? উদাম হইলো ক্যামনে? মাথা খরাব হয়া গ্যাছেনি!
নিজামত ঠাণ্ডা গলায় ভিড়ের মানুষদের উত্তর দেয়, আরে না! না! কুনো কথা তো পড়া থাকে না! অ্যাকদিন অ্যাক ঠ্যাক দিছিলো, আইজ শোধ হয়া গ্যালো।
সন্ধ্যার দিকে কেরানি পুরো বৃত্তান্ত শোনে। রাতেই জ্বর এসেছিলো, সারাদিন বিছানায় সে অচেতন ছিলো। ময়না তার মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। ম্যানেজার জগদীশ ডাক্তার ডেকে এনেছে। এখন একটু আরাম। জগদীশের কাছে ঘটনা শুনে কেরানি ফোন করে খাম্বা সামাদকে।
ভাই, জ্বরে আমি পড়াছিলাম। শুনলাম। আপনাকে তো বলেছিলাম, আহমদউল্লাহর ওপর আমার রাগ নাই, কমপ্লেন নাই।
আমার আছে।
আপনার?
অবাক গলায় খাম্বা সামাদ বলে, বাহ্, আমার ভাইরে অপমান করবে! আপনেরে যদি ভাই বইলা জানি, ইফ ইউ আর মাই ব্রাদার, আমার গায়ে কি সেই অপমান লাগে নাই? একটা কথা জাইনা রাখেন, নো দিস মাই ব্রাদার, আমি সামাদ কোনো সাধুর বাচ্চা না। ক্ষমা আমার ধাতে নাই। আর, ভাই, আপনেও একটা কথা জাইনা রাখেন, আপনে সেদিন কইছেন জগতে দোষ যেই করুক শাস্তি তার আছেই আছে, তাই দোষী শাস্তি না পাইলেও নিজের ঘাড়ে যে শাস্তি আইসা পড়ে, মাইনা নিতে হয়_ নাহ্, এইসব কথার কোনো দাম নাই। আপনের মাথার ঠিক নাই।
কী ঠিক নাই?
আপনের! ঠিক থাকলে মদিনার লগেই থাকতেন। ঠিক থাকলে এক বৌ থাকতে আরেক বিয়া করতেন না।
কেরানি চিন্তা করে নীরবে।
কী! চুপ কইরা আছেন যে! ঠিক কইছি কিনা?
জ্বরের তাপে আচ্ছন্ন গলায় কেরানি উচ্চারণ করে, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। আমারই মাথার ঠিক নাই।
[চলবে]