কবির সম্বল

    কবি এই ত্রিভুবন রাজনীড়ে নেই শস্যদানা, শিরে তবু গোলাপের তাজঠোঁটে তার কষ্টবোঁটা, দুই চোখে দুই ডানা আঁকা ঘাসফড়িঙের খোঁজে ওড়ে তাও অগ্নিবলাকা নিষিদ্ধ নিয়ম ভেঙে অনিয়ম যদিও নিয়তি নিজেকে নিবৃত্ত করে অপরের ক্ষতিকরেনি তো, বল্লম বুলেট নিয়ে ফরমান জারি না করার অভিমানে নেই আহাজারি কবির সম্বল শুধু ঘাসপাতালতা কবিরও বরাদ্দ আছে আপন ক্ষমতা […]

কেন লিখি

কেন লিখি? এটিকে যদি একটি গ্রাহ্য প্রশ্ন ধরা হয়, তাহলে আমি পুরোপুরি নিরুত্তর। এই ষাটোর্ধ্ব জীবনেও এ নিয়ে কোনো মীমাংসায় পৌঁছুতে পারিনি। বাকি জীবনে যে পারবো, এমনটিও আশা করি না। তবে দায় সারার জন্যে দিতে পারি এক বৈপরীত্যমূলক উত্তর। আর সেটি হচ্ছে, কারণেও লিখি, অকারণেও লিখি। কারণে লিখি বললে কারণগুলো অন্ততপক্ষে তালিকায়িত করার প্রশ্ন আসে। […]

চার অন্ধ

শান্তিনগরের মোড়ে এসে চার অন্ধ গায়ে গায়ে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। ওদের শরীর দেখে শরীরের রূপ, ওদের হৃদয় পড়ে হৃদয়ের ভাষা। সামনে পেছনে আর জলে-স্থলে আকাশে বাতাসে ওরা ছড়িয়েছে স্নায়ুর গহিনে ডালপালা; ওদের দেখার ভঙ্গি সর্ববস্তুনাশা; সূর্য আর নক্ষত্রের আলো নয়, ওদের দেহে ও মনে ক্ষিপ্রতর আলো বিচ্ছুরিত হতে হতে সাত আসমান পার হয়ে আরো দূরে যায়; […]

গড়াতে গড়াতে কোন বোঁটা থেকে

কোথায় তার শুরু, কোন আকাশের কোন বোঁটায় কেউ জানে না; কেউ জানে না কোন দরিয়ায় কোন ঘূর্ণিস্রোতের গোপনাঙ্গে শেষমেশ তার ঠাঁই। তবু যখন অঙ্কুরিত হলো তার বীর্য, শুধু যাই-যাই। যাবে তো যাবে, কিন্তু কোথায় যাবে, কোন পথে? ঠিকানা অটুট আছে কোন বটমূলে, কোন অশ্বত্থে? যেতে যেতে পাল গুটাবে কোন চিলমারীর ঘাটে? গাভীর ওলান ছেড়ে কোন […]

সীমানাগুলো

সীমানা আছে, সীমানা ছিল- সীমানাগুলো কোথায়? সীমানাগুলো মাথায়। সীমানাগুলো থাকবে কতকাল? সীমানারা সব যাক-না গতকাল! সীমানা আছে ভূগোলজুড়ে সীমানা আছে ক্রমতাজুড়ে সীমানা আছে দৃষ্টিজুড়ে সীমানা আছে কৃষ্টিজুড়ে সীমানা দেহ-মনও জুড়ে সীমানা সন্দেহ জুড়ে- সীমানাগুলো কোথায়? আকাশজুড়ে বাতাসজুড়ে সীমানাগুলো মাথায়! সীমানাগুলো থাকবে কতকাল? সীমানাগুলো যাক-না গতকাল!

অপেক্ষমাণ

এই-যে ভেঙে পড়ছে চর ও চরাচর, খাড়া পাহাড়ের ঢাল এই-যে ভেঙে পড়ছে সুনীতি ও দুর্নীতির মাঝে বাধার দেয়াল তুমি এ-সবের প্রতি চির-উদাসীন, চিরটাকাল ভ্র-ক্ষেপহীন বাড়–ক বা না-বাড়–ক দ্রব্যমূল্য, কাটুক বা না-কাটুক সংসারের দিন… তুমি বললে, আমি তো সারাক্ষণ তোমাকে ভাবি না আমি বললাম, আমিও সারাক্ষণ তোমাকে ডাকি না। আমাদের ভাবা-না ভাবা, আমাদের ডাকা-না ডাকা, কুচ-পরোয়া, […]

হূদয়ের কাছে রাখি বই

বইয়ের মোহে থেকে কিছু বই প্রিয় হয়ে যায়। যার মধ্যে ‘পথের পাঁচালী’ রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’, নজরুলের ‘সঞ্চিতা’ জীবনানন্দের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ফরাসি সাহিত্যের আলবেয়ার কাম্যু ‘দি আউট সাইডার’ বুদ্ধদেব বসুর অনূদিত ‘রিলকে, বোদলেয়ারের’ কবিতা, বিনয় মজুমদারের ‘ফিরে এসো চাকা’। বইগুলো বারবার পড়ি। হূদয়ের টানে বারবার পড়তে বাধ্য হই।

শীতের কাব্যবয়ান

পৌষ যায় যায়, এখনো মাঘ আসেনি। শীত এসেছে, এখনো আসেনি শীতের বাঘ। যে বাঘের কামড়ে কাঁপন জাগে সুন্দরবনের ডোরাকাটা বাঘের হাড়েও। কাঁপন জাগতে শুরু করেছে আমারও ষাটোত্তর হাড়ে। এখন সকাল এগারোটা, পৌষের শেষ সপ্তাহ। আমার পুস্তকাকীর্ণ লেখার টেবিলে বসে বন্ধ করে দিয়েছি পাশের কাচের জানালা। খুললেই আসছে শীতের মৃদুমন্দ তীর। ত্বকের উপর কেমন যেন ভালো-লাগা […]

মানুষ মূলত যোদ্ধা

জন্ম যদি প্রাকৃতিক, মৃত্যু কেন প্রাকৃতিক নয়? মানুষ মূলত যোদ্ধা, মানুষের নেই পরাজয়। প্রকৃতির মুখোমুখি চিরকাল অতিপ্রাকৃতিক হন্তারক জীবেদের দন্তনখ অতিদানবিক ক্ষুধার দোহাই তুলে যত্রতত্র হাড়মাংস খায় ত্রিভুবনে অন্য সব প্রাণী-অপ্রাণীর; না, তাদের তো নেই কোনো দায় আকাশপাতাল জুড়ে সৃষ্টিসাম্য অটুট রাখার; ক্ষমতার ক্ষুধা-মুখে এ ব্রহ্মাণ্ড তাদের আহার। নিরীশ্বর নয় তারা, বন্ধু তারা শুধু শয়তানের, […]

তুমি-তো বন্দিত নিত্য

তুমি-তো বন্দিত নিত্য নন্দিত নরকে বাঙালির বুকে-মুখে তোমার তারিফ; শঙ্খনীল কারাগারে, অপেক্ষা-সড়কে বহুব্রীহি শিখা জ্বেলে দারুচিনি দ্বীপ জোছনা ও জননীর গল্প বলে যায় শ্রাবণ মেঘের দিনে বাঙালির ঘরে, তাবৎ দেয়াল ভেঙে যুক্তির শিখায় যখন স্বদেশ মুক্ত বিশ্ব-চরাচরে। তুমি সেই মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তি-অস্ত্রধারী, আগুন পরশমণি, চিত্তে মানবিক; মেঘের ছায়ায় ভেসে গাঙুড়ের পাড়ি, নুহাশপল্লীর মায়া স্বর্গের অধিক। জোনাকি-আলোয় […]