হূদয়ের কাছে রাখি বই

হাইস্কুলে পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণিতে যখন পড়ি, একদিন ঘরে দেখি বেশকিছু বই। চাচা কবির আহমেদ ব্যবসায়ী, অল্প-স্বল্প পড়তে পারতেন। উনি বইগুলো পড়ার জন্য এনেছিলেন। সেখানে অনেক উপন্যাস ছিল যার মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাচালী’, ‘অপরাজিতা’ অবদূতের ‘মরুতীর্থ হিংলজ’ রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের অনেক বই। আমি বইগুলো ক্রমান্বয়ে পড়তে শুরু করি। পড়তে শুরু করি সপ্তসিন্ধু, দশদিগন্ত (পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষার অনুবাদ), বুদ্ধদেব বসুর ‘বন্দির বন্দনা’। বইগুলো খুব ভালো লাগে, পড়তে থাকি। একসময় এক ধরনের মোহ তৈরি হয়। সেই মোহে আজো বই থেকে নিজকে দূরে রাখতে পারি না। বই আমার কাছে অদ্বিতীয় বন্ধু। হূদয়ের কাছে রাখি বই। হূদয় মন শরীর যতদিন থাকবে, ততদিন বই থাকবে। তার সাথে কারো তুলনা হয় না।

দরিয়ানগর পোকখালি গ্রামে জন্ম আমার। শৈশবকালে এ গ্রামে কবিগানের আসর বসতো, বিশেষ করে শীতকালে। আসরে জারি, সারি, ভাটিয়ালী এসব ধরনের গান হতো (১৯৫৭ কি ‘৫৮ সালে)। কবি আলী এয়াকুব, কবি রমেশ সেনসহ আরো অনেকে একে অন্যের সাথে কবিতার লড়াই করত। পড়া হতো খুবই চমত্কার চমত্কার অন্ত্যমিলের কবিতা। আমার কাছে ভালো লাগত, বসে থাকতাম। কিছুদিন পর এ অন্ত্যমিল এবং স্বমিল কবিতার প্রতি আগ্রহী হয়ে ভাবি, আমিও তো এমন কবিতা লিখতে পারি।

ক্লাসে বসে খড়িমাটি দিয়ে স্লেটে একদিন একটি কবিতা লিখি, বিষয়বস্তু হচ্ছে—বাড়ির পাশে ডোবায়, নদীতে শামুকের জীবন চলা ও তার গতি-প্রকৃতি নিয়ে। ভাবাত যখন দেখতাম যে, শামুকের গায়ে হাত দিলেই গুটিয়ে যাচ্ছে, যেন আলাভোলা কিছুই জানে না। তাই মনের আনন্দ, কৌতূহলে লিখি জীবনের প্রথম ছন্দ না-জেনে ‘শামুক’ শিরোনামে কবিতা। ছাপা হয় মৃনাল কান্তি দেব সম্পাদিত একটি দেয়ালিকায়। আমরা বের করি ‘কলতান’। এটি পরে কক্সবাজারের সর্বপ্রথম সংগঠন ‘উর্মিমালা সাহিত্য সংসদ’-এর মুখপত্র হয়। দ্বিতীয় লেখা ছাপা হয়—শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘সংবাদ’-এ, তৃতীয়টি সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’-এ, চতুর্থটি আহসান হাবিব সম্পাদিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এ, পঞ্চমটি আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘কণ্ঠস্বর’-এ।

বইয়ের মোহে থেকে কিছু বই প্রিয় হয়ে যায়। যার মধ্যে ‘পথের পাঁচালী’ রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’, নজরুলের ‘সঞ্চিতা’ জীবনানন্দের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ফরাসি সাহিত্যের আলবেয়ার কাম্যু ‘দি আউট সাইডার’ বুদ্ধদেব বসুর অনূদিত ‘রিলকে, বোদলেয়ারের’ কবিতা, বিনয় মজুমদারের ‘ফিরে এসো চাকা’। বইগুলো বারবার পড়ি। হূদয়ের টানে বারবার পড়তে বাধ্য হই।

সম্প্রতি যে বিষয়ে লিখতে ভালো লাগে এবং আমি লিখি—মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট নিয়ে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার করছি, বক্তব্য দিচ্ছি। লিখছি একটি দীর্ঘ কবিতা, এর বিষয়বস্তু—ব্যক্তি মানুষের জন্ম বিকাশ, সমস্যা, সম্ভাবনা, আরাধ্য, স্বপ্ন-কল্পনা অর্থাত্ মানবজীবনের সূচনা, বিকাশ ও পরিণতি নিয়ে। এবং কক্সবাজারের বিশাল সমুদ্র, পাহাড়ের সৌর্ন্দয, এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম, আত্মার সাথে মিশে থাকা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আমার তৃতীয় উপন্যাস লিখার ইচ্ছা আছে। সময় পেলে আমি লিখব।