মরুস্বর্গ-১

পটভূমিকা প্রসঙ্গে পুরাণ-মিশ্রিত এই কাহিনীর পটভূমি খ্রিস্টের জন্মের সহস্রাধিক বৎসর আগের প্রাচীন পৃথিবী–পৃথিবীর এক নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। এই ভূখণ্ডের আকৃতি বাঁকা চাঁদের মত। উত্তরে তার কৃষ্ণসাগর, দক্ষিণে আরব মরুভূমি। পূর্বে পারস্য, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর–পারস্য উপসাগর থেকে অর্ধবৃত্তাকার এই ভূমি মিশরের লোহিত সাগরের কিনারা ছাড়িয়ে গেছে। আরব মরুভূমির বুকে তিনটি প্রধান ধর্মের জন্ম–যিশুর ধর্ম, মুসার ধর্ম এবং হজরত […]

মরুস্বর্গ-২

সাদইদের দিকে চোখ মেলে চাইল রিবিকা। তার বুকের কাপড় সরে গেছে। লোকটি তার দিকে গভীর আগ্রহে চেয়ে আছে। হঠাৎ কী খেয়াল হওয়াতে সাদইদ রিবিকার বুকের কাপড় সাবধানে তুলে রিবিকাকে ঢেকে দেয়। রিবিকা পুরুষের এই আচরণ ভাবতে পারে না। নারী যখন সংজ্ঞাহীন, পুরুষ তখনও নারীকে গমন করে। মিশরে সমকামী পুরুষের অভাব ছিল না। পুরুষ এমনকি মৃতাকেও […]

মরুস্বর্গ-৩

লোটার কেবলই মনে হচ্ছিল তার সমস্ত গা পচে যাবে। শব বহনের সময় মানুষের মৃতদেহ থেকে গলিত রক্ত সারা দেহে লিপ্ত হয়েছে, দেহ থেকে একটা বীভৎস গন্ধ কিছুতেই নড়তে চাইছে না। একথা সে কাকে বলবে? কালো ঘোড়া ছুটিয়ে সমস্ত রাত সে জ্যোৎস্নায় মরুভূমি তোলপাড় করেছে। কিন্তু এভাবে তো বাঁচা যায় না। সকালবেলায় রুহার মৃত্যু-সংবাদ বাতাসে ছড়িয়ে […]

মরুস্বর্গ-৪

জুম পাহাড় কোন উত্তর দিল না। আমার সমন্বয়ী অরমিক ভাষায় যারা কথা বলেছ, তারা কেউ নেই। আর্তনাদ করেছিল সাদইদ। তার নিজস্ব পাহাড়ও কোন জবাব দেয়নি। শিশুর গলার লকেটটি সে ঝুলিয়ে রেখেছে সাদা অশ্বের কপালে। এই চিহ্ন ছাড়া জুম পাহাড়ী জীবনের আর কোন অবশেষ নেই। কোন দিগন্তেই লোটার সাক্ষাৎ মেলেনি। ঈগল উড়ে আসা যত অলৌকিক, তারও […]

মরুস্বর্গ-৫

ফের সেই তাঁবুরই পৃথিবী। কনানে এসে তাঁবুরই তলে আশ্রয় পেয়েছিল। সৈনিক আর দেবদাসীরা। গৃহ পায়নি। সাদইদের ভাল লাগল, দেবদাসীর সঙ্গে অনেক সৈনিকের বিয়ে দিয়েছেন ইহুদ। তবে দেবদাসীর সংখ্যা বেশি ছিল না বলে অনেক সৈনিক অবিবাহিতই রয়েছে। সেই অবিবাহিতদের মধ্য থেকে কিছু সৈনিকের বিয়ে ইহুদ দিয়েছেন অনেক আগে আসা যাযাবর পরিবারে–যারা ইয়াহোর উপাসক। তবে সেইসব পূর্ববর্তী […]

মরুস্বর্গ-৬

সোনালী অশ্বের পিঠে চড়ে হেরা সোজা উপত্যকার কালো আঙুরের মত নিবিড় মধুচক্রের কাছে উঠে এল। এতবড় প্রশস্ত পথ নিনিভেও ছিল না। পথের দু’পাশে বাজার-পাট বসতে শুরু করেছে। কনানের সমস্ত পথ সবার জন্য উন্মুক্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে নানান দেশের সঙ্গে। নগর প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। উচ্চতার দিকে উঠে গেছে পথ, তারপর সিঁড়ি তৈরি হচ্ছে, যেভাবে কল্পনা […]

নতুন মনসা-মঙ্গল

এক একজন খুনিকে দেখতে যাচ্ছি মোহনপুর। আমি বটু দারোগা। গোমোহনী নদীর গা-লাগা যে বোবাডিহির বিল, তার ওপারে লগড়াজলি গাঁয়ে শয়তানটা এসেছে। ধ্রুবপুর আর মোহনপুরের পাশের গাঁ। তারা সরকারের বৈঠকের সামনের ঘোড়ানিম গাছে ঘোড়া বাঁধব, উনি তো মোহনপুরের একপ্রকার জমিদার গোছের মুরুব্বি, অত্যন্ত সজ্জন। ওঁর ছেলে ব্রজলাল ওরফে বিজু ছিল আমার স্কুলের সহপাঠী, বন্ধু। ওদের ওখানে […]

নন্দিনী পাখিরা

আমি পাগল হয়ে যাব। আমি তো দেখতে পাচ্ছি কারা কী করেছে! সুবল ভট্ট এমন করে আজকাল আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওই ভট্টই আমাকে কালাচাঁদের ব্যাপারে বলে। কী বলে? ভোরবেলা এল। তখন আলো ফোটেনি। প্রসাদ ডাক্তার আর আপনি পৌঁছনোর অনেক আগে। ভট্ট বলে গেল, যা সরমা দেখ গে যা, ভুড়িপুকুরে কালাচাঁদ ভাসছে। কেটে-মেরে ফেলে দিয়েছে। সারারাত রাস্তার […]

নন্দিনী পাখিরা

সব সময় মানুষের ঘের; সব সময় শুধুই মানুষ; সর্বদা মানুষ-মানুষ, ভালো লাগে? সবই মানুষের, আর কারও নয়? এ কথা ভেবে আপন মনে, কেমন আনমনা হেসে ওঠে নন্দিনী পাখিরা। সব সময় মানুষ; কাছেপিঠে সর্বক্ষণ মানুষের গরম নিশ্বাস, কথার গলগলানি, চোটপাট, গায়ের গন্ধ; হাসি, ছ্যাবলামি, গজর-গজর কপটতা, নানান খেল, দাঁতের ঘষায় হিংসার বিদ্যুৎ, অবৈধ ব্যাপারে সিনেমা, সেক্স-সিটি […]

আমার প্রথম পাপ

প্রত্যেকের জীবনেই ‘প্রথম পাপ’ বলে একটি গোপনতম ঘটনা তো থাকেই। কবে সেই ঘটনাটা ঘটেছিল মনে পড়ে? মনে করবার চেষ্টা করো। কোন বয়েসে প্রকৃত পাপটি তুমি করলে! শৈশবের ঘটনা নিশ্চয়। বয়েস তখন কত যেন! মনে করো, মনে করো। হ্যাঁ, পাপ। এই যে ‘পাপ’—সেটাকে বাংলা ভাষায় অন্য কোনও শব্দে ঠিক ব্যক্ত করা যায় না। ‘অন্যায়’ শব্দটি পাপের […]