একজন ইডিয়টের গল্প

বহুদিন পরে পুরীতে এলাম। এসে পুরী এক্সপ্রেস থেকে নেমে পুরী স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই ধাক্কাটা খেলাম। না, কোনো মানুষ বা জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা নয়, ধাক্কাটা নিজের স্মৃতির সঙ্গে। আমরা কামরা থেকে নেমে একটি ব্যাগ কাঁধে তুলে বাইরে যাবার গেট-এর দিকে এগোচ্ছি যখন, তখন ভিড় পাতলা হয়ে গেছে প্ল্যাটফর্মে। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সিরা তাড়াতাড়ি হেঁটে বেরিয়ে গেছেন স্টেশন থেকে। আমার […]

সমাপ্তি

সমাপ্তি প্রথম পরিচ্ছেদ অপূর্বকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন। নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষা অন্তে প্রায় শুকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বাঁশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়াছে। বহুদিন ঘন বর্ষার পরে আজ মেঘমুক্ত আকাশে রৌদ্র দেখা দিয়াছে। নৌকায় আসীন অপূর্বকৃষ্ণের মনের ভিতরকার একখানি ছবি যদি দেখিতে পাইতাম তবে […]

অন্য রকম

সুমিত্রা ফোন করেছিল। বলল, নির্মলদা, অলকাদি এসেছে। কবে? আসলে অলকার নামটাও যেন নির্মলের স্মৃতির অন্ধকার লফট খুঁজে খুবই কষ্ট করে বের করতে হল, কারণ সেখানে এখন অনেকই ঝুল, ধুলো ময়লা এবং পুরোনো সব কিছুকে নির্মমভাবে কুচিয়ে-কাটা নেংটি ইঁদুরের ভিড়। অন্যমনস্কতা কাটিয়ে উঠে বলল, কোথায় আছে ও এখন? সুমিত্রা বলল, মিডেক্স-এ। কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সুমিত্রা […]

মুন্নির বন্ধুদের জন্য

এমনিতেই কয়েকদিন হল এক চাপা টেনশনে ভুগছি। মুন্নির হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুবে দিন দশেকের মধ্যে। আগেও বেরুতে পারে। সবই তো তাঁদের মর্জির উপরে নির্ভরশীল। তার উপরে যতীনের চিন্তা। কাল রাতে শুতে গেছিলাম বড়োই চিন্তিত মনে। যতীনটা পি জি হাসপাতালে পড়ে আছে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে। প্যারালিসিস হয়ে গেছে সারা শরীর। অথচ মাথাটা কাজ করছে। আমি […]

মেয়েটা আমার সঙ্গে হাঁটে

এই যে শুনুন। মিলি শুনতে পেল না। যেমন হাঁটছিল, হাঁটতে লাগল। ভদ্রমহিলা দ্রুতই হাঁটছিলেন। পরনে বেগুনি প্রিন্টের কামিজ আর সাদা সালোয়ার। পায়ে আরামদায়ক জুতো। অক্টোবরের শেষদিক। বিকেলবেলার পার্কে শীতলভাব। তারপরও তিনি বেশ ঘেমেছেন। মিলি শুনতে পায়নি দেখে দৌড়ে এসে তাকে ধরলেন। শুনুন। মিলি যেন অন্য জগৎ থেকে ফিরল। ডাগর চোখে আত্মমগ্ন দৃষ্টি। বলুন। আপনি মিলি […]

স্রোতের মোহনায়

কপোতাক্ষ মাহমুদার প্রিয় নদ। গাঁয়ের চারদিকে কত কিছু আছে, তার মধ্যে নদী কেন প্রিয়—এ নিয়ে নিজেকে কোনো দিন প্রশ্ন করেনি ও। নিজের ভালো লাগাই প্রধান হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় নদী ওকে স্রোতে ভাসিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। এই যাওয়া এক গভীর আনন্দ। কোনো খুশির খবর হলে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ছুটে আসে, দুঃখের খবর […]

মতিন সাহেবের মা

মতিন সাহেব বুক হাতাতে হাতাতে বিছানায় বসে পড়লেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। ডানহাতে বুকের বাঁ পাশটা হাতাচ্ছেন। নাশতার পরের অষুদ আর পানি নিয়ে এসেছেন রেখা। স্বামীর অবস্থা দেখে বললেন, কী হল, এমন করছ কেন? মতিন সাহেবের চোখে ঘন ঘন পলক পড়ছে। চিন্তিত গলায় বললেন, বুকটা ব্যথা করছে। বেশ ভালো রকমের ব্যথা। হঠাৎ বুক ব্যথা? নাশতার আগের […]

জন্ম ও প্রেম

জুঁই মাঝেমধ্যে ওর গোপন ঘরে ঢুকে পড়ে, যেখানে ওর ছায়া ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু দুটো ঘটনা আছে অদৃশ্য হয়ে। ঘটনার তো কোনো আকার থাকে না। তবে তার সরব উপস্থিতি অদৃশ্য হাঙরের আকারে ভয়াবহ মূর্তির মতো। একটি ঘটনা ওর জন্মের। অন্যটি প্রেমের। এই দুই ঘটনার সঙ্গে ওর রাতদিনের খেলা আছে। ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে খেলায় ও […]

দি নিউ হযবরল

বেশ ক’বছর আগে আমি ‘ওয়াল্ডারল্যান্ড’ নামে একটা গল্প লিখি। তবে ‘ওয়াল্ডারল্যান্ড’ লেখার আগে আমি যে গল্পটা লিখেছিলাম, তার নাম ‘সুকুমারের লজ্জা’ এ গল্পটার কথাও বলতে হবে। সুকুমারের লজ্জার যে মূল চরিত্র, মূল চরিত্র বলে আমার অনেক গল্পে যেহেতু কিছু থাকে না, কাউকে মূল চরিত্র আখ্যা দেওয়া উচিত না, কারণ আশপাশে অন্যান যে চরিত্রগুলো আছে, সেগুলো […]

একটি হাত ডান হাত

দ্রোণ বলিলেন, যদি সন্তোষ করিবে। দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধ অঙ্গুলিটা দিবে গুরুর আজ্ঞায় সে বিলম্ব না করিল। ততক্ষণে কাটিয়া অঙ্গুলি গোটা দিল —দ্রোণ সমীপে অস্ত্রশিক্ষা হেতু একলব্যের আগমন, মহাভারত,/কাশীরাম দাস। আমার নাম একলব্য। পিতার নাম হিরণ্যধনু। মায়ের নাম বিশাখা। পিতামহ অনোমদর্শী। ‘মহাভারত’ যুগের মানুষ আমি। ‘মহাভারতে’ আমাকে নিয়ে সামান্য কথা আছে। অন্য চরিত্রগুলো নিয়ে অনেক কথা […]