লেখা শেখা

পেছনের দিকে তাকিয়ে এখন শিউরে উঠি, লেখার কৌশল কত কম জেনে-আরো ভালো, যদি বলি কিছুই না জেনে-একদা কলম হাতে নিয়েছিলাম। লেখা যেহেতু কোনো একটি ভাষায় লেখা এবং যেহেতু সেই ভাষা আমরা শিশুকাল থেকেই, জন্ম-বোবা না হলে অনবরত ব্যবহার করে থাকি, তাই আমাদের অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে একবারও মনে হয় না যে শিল্পের প্রয়োজনে ভাষা নামক এই […]

এখন জামগাছটাই শুধু কাঁদছে

মান্দারবাড়ি আটই ডিসেম্বর মুক্ত; যুদ্ধ শেষে আকবর হোসেন বাড়ি ফিরে ঘরের কোণে তার বাবার কঙ্কাল পায়; বাবা কিছুতেই গ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি, কঙ্কালটি দেখে মনে হয় অন্তত দু’মাস আগে ঘটনাটি ঘটে। দেহ থেকে মাংস খসে পড়ে গেছে; দেহটি যেভাবে অন্তিমকালে বসে পড়েছিল ঠিক সেইভাবে ঠিক সেই কোণে কঙ্কালটি স্থাপিত, আর মাথার খুলি গলার হাড় […]

তাঁর রঙ, তাঁর ক্যানভাস

কাইয়ুম আমার কতদিনের বন্ধু; মৃত্যুর অনতিপরে সেই হিসেবে মন সায় দেয় না। দশকের পর দশক আমরা একসঙ্গে পথ হেঁটেছি; একত্রে স্বপ্ন দেখেছি। এখন ঢাকা মহানগরীর যে অংশকে অনেকেই খানিকটা করুণা করে পুরনো ঢাকা বলেন, সেখানেই একদা ছিল মূল শহর, আর ছিল ঢাকার প্রথম চারুকলা ইশকুল; ব্রিটিশ আমলের ভিক্টোরিয়া পার্ক লাগোয়া, লাল পানির ট্যাংকের ছায়ায়, ব্রিটিশ […]

তাঁকে প্রণতি

কবি আবুল হোসেন চলে গেলেন—আমাদের কবিতা সংসারে এক বটবৃক্ষের পতন ঘটে গেল। নজরুল পরের বাঙালি মুসলমানদের প্রায় নিঃসঙ্গ কবিতা-ভূমিতে এই বৃক্ষটি একদা তার শিকড় বিস্তার করে বৃদ্ধিলাভ করছিল, আর সেই সঙ্গে আরও দুটি বিশাল বৃক্ষ—ফররুখ আহমদ আর আহসান হাবীব—হয়ে উঠছিল পঞ্চাশের আমাদের কবিতা-বীজ রোপণের দশকাধিক আগে থেকে। ফররুখ ও হাবীব অনেক আগেই গত, এই সেদিন […]

অভিজ্ঞতার গান

আমি চুল নোখ কাটবো না, জামা পাল্টাবো না, স্যান্ডেল বদলাবো না, মশারি টানাবো না, সমস্তটা রাত মশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাইবো আমার দুঃখের গান— ঘুণ—ঘুণ—ঘুণ—ঘুণে ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে আমার শরীর। তুমি কি জানো, ঘুণ পোকার হাত থেকে বই বাঁচে মানুষের ছোঁয়া যদি পায়— আমার মগজের ভেতরে, কত অসংখ্য বই ঘুণে নষ্ট হয়ে গেছে; এবং প্রতিবার […]

আমি একটুখানি দাঁড়াব

আমি একটুখানি দাঁড়াব এবং দাঁড়িয়ে চলে যাব; শুধু একটু থেমেই আমি আবার এগিয়ে যাব; না, আমি থেকে যেতে আসিনি; এ আমার গন্তব্য নয়; আমি এই একটুখানি দাঁড়িয়েই এখান থেকে চলে যাব। আমি চলে যাব তোমাদের এই শহরের ভেতর দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এর মার্চপাস্টের যে সমীকরণ এবং এর হেলিকপ্টারের যে চংক্রমণ, তার তল দিয়ে তড়িঘড়ি; আমি […]

আমিও তোমার মতো হবো স্বেচ্ছাচারী

আমিও তোমার মতো হবো স্বেচ্ছাচারী– খুলে নেবো শাড়ি পৃথিবীর সব প্রেমিকার যেমন চাঁদের আলো ছিঁড়ে নেয় অরণ্যের অন্ধকার তেমনি তোমার। তুমি কি আমাকে চেনো, দেখেছো কি বুনো ঝাকড়া চুল? দেখেছো কি কিভাবে ফুলের থেকে মধু চুষে খায় চঞ্চল বালক আমিও এমন লোক— খায় দায় হিংসায় জ্বলে পুড়ে যায় যদি তুমি শুয়ে থাকো অন্য কারো সাথে […]

তুমিই শুধু তুমি

তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি। কপালে ওই টকটকে লাল টিপ। আমি কি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি? তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ। করতলের স্বপ্ন-আমন ধানের গন্ধ তুমি তুমি আমার চিত্রকলার তুলি। পদ্য লেখার ছন্দ তুমি−সকল শব্দভুমি। সন্তানের মুখে প্রথম বুলি। বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত। পাহাড় থেকে সমতলে যে […]

বৈশাখের সূর্যমুখী

চৈত্রের গভীর রাতে স্বপ্নের রোদ্দুরে সূর্যমুখী! স্বপ্নঘোরে যাই যত দূরে আমারই সেদিকে ফিরে থাকে। চড়াই-উতরাই বাঁকে প্রতি পা ফেলায়— সে আমার দিকেই তাকায়। কবিতার শব্দধ্বনি দ্বিগুণ হলুদ হয়ে ওঠে তো তখনি, ঝরে পড়ে পাপড়িতে তার— স্বপ্ন সাধ উল্লাস বিষাদ সবকিছু নিয়ে এই নদী এই মাঠ এই আকাশ পেরিয়ে সৃজনের সূর্যমুখী সামান্য এ জীবন আমার।

বৈশাখের সোনালি ডানায়

পাখি ওই অপেক্ষায় মেলে দিয়ে ডানা খুঁজে নিচ্ছে আকাশের নীলের ঠিকানা। আমিও উড়াল দেবো, সোনার গুঁড়োর মতো আলো মেখে নেবো ডানায়! যে-ডানা আমি শব্দে শব্দে পাবো রূপকথা রঙিন ছটায়, নিচে ফেলে যাবো পৃথিবীর অন্ধকার, ধসে পড়া ঘর_ উড়ে যাবো তবুও তো নিজেরই ভেতর!_ যেখানে করণ আজও করে শিল্পবোধ এবং ভোরের আলো, দুপুরের রোদ। আমি সেই […]