বৈশাখ! বৈশাখ!

এই আমার পহেলা বৈশাখ এভাবেই আমার ইতিহাস, এভাবেই আমি, বৈশাখের এই মাঠের মেলায়, গ্রামীণ গরীব এক সার্কাসের তাঁবুতে লম্বমান দড়ির পিঁড়িতে। উজ্জ্বল আলো, সঙ্গীতের ঝমঝম, টানটান ভাসমান আমি পরের দড়িটি লাফ দিয়ে ধরবার জন্যে দোল খাচ্ছি দোল খাচ্ছি, দর্শকের স্তম্ভিত নিঃশ্বাস, কিন্তু দৃষ্টি নেই তাদের ওপরে, তারা কিছু নয়! দড়িটিই কেবল আমার চেতনায়_ এভাবেই আমার […]

পুষ্প বিহনে পয়লা বৈশাখ

পুষ্প নাই তো কিছুই নাই, উৎসব নাই, সংগীত নাই; নারীর খোঁপায় বিলাস নাই, কালীবাড়ির মন্দিরে দেবীর পায়ে শোভা নাই, ডাকবাংলার বাগানে যদি পুষ্প নাই তবে বালকদের দস্যুতারও ঘটনা নাই, ইতিহাস বইয়ের পাতায় তবে শাহজাহান বাদশার চিত্রে তাঁর হাতে ধরা পুষ্পটি নাই; আমাদের পুষ্পও জলেশ্বরীতে আর নাই; নাই মানে এ নয় যে যেমন লোকে চলিত কথায় […]

তুমি আজও তুমি

সে কী বিস্ময়! সেই বসন্ত! কী করে ভুলি? অমাবস্যার রাত নাকি সেটা দীর্ঘ চুলই পরণকথার কোনো রূপসীর! আজকাল কারও দেখি না তো চুল দীর্ঘ এতটা— বিস্ময় সে কী! আর সেই চুলে তারার ফোঁটা— কত লক্ষ তা? এক লক্ষই হবে— দাবানল লাগা বনের শিখায় ওড়ে এক কোটি অগ্নিকণা— আমি ভুলব না সে উন্মাদনা! বিস্ময়ে হই এমন […]

আরো একজন

যেখানেই যাও তুমি, যেখানেই যাও সঙ্গে যায় আরো একজন; যদিও অদূরে তবু তার দূরত্ব ভীষণ। যেখানেই দৃষ্টি দাও, যেখানেই দাও দৃষ্টি দেয় আরো একজন; যদিও সুনীল তবু সেখানেই মেঘের গড়ন। যাকেই যে কথা বলো, যাকেই যে কথা শুনে যায় আরো একজন; যদিও নিশ্চুপ তবু অবিরাম পদ্মার ভাঙন। যেখানেই রাখো হাত, যেখানেই রাখো রাখে হাত আরো […]

দরজা বিষয়ে ভাবনা

বারবার দরজাটা ভেঙে গেছে আমার ঘরের, মনে হয় কাঠ ভালো ততটা ছিল না। একটি দোয়েল কেঁদে উঠেছিল আমলকী ডালে— কিন্তু ভিত এখনো মজবুত বলে আমি কাঁদি নাই। উৎসন্ন সংসারে তাই ভেবেই চলেছি। কবে সেই একদিন তুমুল স্বপ্নের ধাক্কা লেগে উড়ে যাই মানবের ইতিহাস পাঠে; তারপর থেকে আমি ঘর আর দরজা বিষয়ে অনেক ভেবেছি আর ঘুরে […]

কাফনের আবরণ ছিঁড়ে

তুমি যদি তুমি নও, তবে আর কে ছিল এমন প্রাচীনকালের সেই রোগহর ভিষক চ্যবন যে তার মেধাবী হাতে একদা প্রস্তুত করে প্রাশ যাতে কফ দূর হয়, ফুসফুসের কেটে যায় ত্রাস। তুমিও তেমনি দেখি সেই ঋষি ভিষকের প্রায় কবিতার ধ্বনি দাও উদ্গ্রীব আমার জিহ্বায়, উচ্চারণমাত্র তার কেটে যায় কফ পিত্ত বায়ু- শুধু কি সুস্থতা আসে?- পেয়ে […]

আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়

আজ আমি যাব সেখানে, দিগন্তের শেষ সীমান্তে, অস্তমিত রবির শেষ আভা ছোঁয়াবে যেখানে ঠিক সেখানে, আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়। গোধূলির লাল টিপ কপালে পরে, কুয়াশার সাদা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে, বাতাসের দুরন্তপনার কাজল দৃষ্টির তেপান্তরে এঁকে, আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়। গুচ্ছ পাতার মত বুনন করে কথামালা উপহার দেব বলে, সন্ধ্যা প্রদীপের আলোর মত, মিষ্টি আলো তোমার […]

স্বাদিত রবীন্দ্রনাথ

আমার রবীন্দ্রনাথ সোনার বেদিতে বসানো আরাধনার নন, তিনি আমার মহান অগ্রজ, তাঁর সাফল্য যেমন জানি, তাঁর ব্যর্থতাও আমার চোখে পড়েছে; ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলিনি কিন্তু শিখেছি তা থেকে, সাফল্যে সবার সঙ্গে থেকেছি। হয়তো কোনো একদিন একটি বইই লিখব অগ্রজের ওই সাহিত্যিক ও সামাজিক ব্যর্থতা নিয়ে, যা তাঁর অসামান্য কৃতির আলোয় চোখ ধাঁধানো আমদের চোখেই পড়েনি। […]

কাইয়ুমের জন্যে

চলে যাচ্ছো? যেয়ো না, দাঁড়াও। দাঁড়াবে না? যাবেই তাহলে। চিত্রপটে শেষ টান দিয়ে যাও। যা ছিলো বলার যাও বলে। নৌকোর গলুই চোখে জল ফিরে তুমি দেখবে না আর? আজ মাটি খুঁড়ছে শাবল, পরে নিচ্ছো কাফন তোমার। মাটিতেই ফিরে যাও তবে_ একে তুমি ভালোবেসেছিলে, এরই রঙ রেখার বৈভবে পট পরে পট এঁকেছিলে। এখন যে নিয়েছো কাফন, […]

বুকের মধ্যে আশাবৃক্ষ

লোকে বলে – সংসার ভবের হাট; এ বড় লাগসই কথা। মানুষ আসে আর যায়, যায় আর আসে; কিন্তু কি তাই? – আবার যে আসে পুরোনো কি মানুষটাই ঘুরে আসে, নাকি নতুন মানুষ আসে? মানব-জীবনধারার কথা যদি হয়, তবে নতুনই তো আসে, তার নতুন গল্প নিয়ে; সে গল্প একই সঙ্গে নতুন এবং পুরোনো। হায়, এই জীবনের […]