আমার কবি রফিক আজাদ

রফিক ভাই গম্ভীর গলায় বললেন, তোমার লেখাটা পড়ছি৷ এই লেখা তুমি জোর কইরা ছোট করার চেষ্টা করবা না৷ লেখা যেইভাবে আগায়, আগাইবো৷ যতবড় হয় হইব৷ আমি এই লেখা ছাপবো৷ একজন কবিকে নিয়ে আমি উপন্যাস লিখেছিলাম৷ কবির নাম রফিক আজাদ৷ উপন্যাসের নাম ‘দুঃখ কষ্ট’৷ রফিক আজাদের কবিতা থেকেই রাখা হয়েছিল নামটি৷ ‘পাখি উড়ে গেলে পাখির পলক […]

ফরীদি উপাখ্যান

হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে পরিচয় হলো বাহাত্তর সালে। স্বাধীনতার পরের বছর। বছরের বোধহয় শেষ দিকে। আমি তখনও লেখক হইনি, ফরীদি তখনও অভিনেতা হয়নি। লেখা উচিত ‘হননি’। ফরীদিকে আপনি করে লিখতে কি রকম যেন লাগছে। সে আমার এত প্রিয় বন্ধু, ফরীদির মতো বন্ধুকে কেমন করে আপনি বলি! আমি তখন থাকি গেন্ডারিয়াতে। গেন্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের একটা বাসায় […]

সাড়ে তিন হাত ভূমি

১১ আর আমি! মা, আমি! আমি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছি তোমার কাছে। বাবাকে যেমন ভালোবাসি আমি, তোমাকে কি তার চেয়ে কম ভালোবাসি! না মা, না। একদম না। একদম না। তোমাদের দুজনার জন্যই আমার ভালোবাসা এক রকম। ছোটবেলায় হয়তো আমার আচরণে, বাবার জন্য অস্থিরতা দেখে তোমার মনে হয়েছে আমি আমার বাবার জন্য পাগল, তাঁকেই বেশি ভালোবাসি। […]

সাড়ে তিন হাত ভূমি

১০ আমি কাইল চইলা যামু। সন্ধ্যাবেলা পেছন দিককার বারান্দায় বসেছি আমরা। বারেক তার মসলা-মাসায়েল বলবে। মা, তুমি আছ আমার পাশের চেয়ারে, তোমার পাশে বকুল। আর সবাই মেঝেতে। কদম পারুল বুয়া, বুয়ার পায়ের কাছে বারেক। আজ আর মায়ের পায়ে হাত রাখেনি সে। বাবা তাঁর রুমে বসে স্কুলের কাজ করছেন। বিভিন্ন ঘর থেকে আসা হারিকেনের আলোয় কারো […]

জোছনা ও জননীর গল্প

‘ভোরের কাগজ’-এর সাহিত্য পাতায় হুমায়ূন আহমেদ ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁর মনোজগৎ আচ্ছন্ন করে থাকা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। ১৭-১৮ বছর আগের কথা। হুমায়ূন আহমেদ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাসটি লেখার জন্য স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ আরো কয়েক বছর আগে তাঁকে ৫০০ পৃষ্ঠার একটি খাতা উপহার দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের ছুটি […]

সাড়ে তিন হাত ভুমি

৯ বারেকের কথা বলি মা, বারেকের কথা বলি। বুয়ার কথা বলি। সেই যে চৈত্র মাসের দুপুরবেলা মুসাফির বারেক ফিরে এলো, বুয়া চিনতে পারল তার ছেলেকে। বারেকের মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে ছেলের নাম উচ্চারণ করল, বারেক দুহাতে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, পুরো বাড়িতে খবর হয়ে গেছে। আমরা যে যেখানে ছিলাম পেছন দিককার উঠানে […]

সাড়ে তিন হাত ভুমি

৮ মাগো, আমি যুদ্ধ করব তোমার জন্য। তোমার বুক থেকে যারা রক্ত ঝরিয়েছে, আমার বুক থেকে যারা কেড়ে নিয়েছে আমার মাকে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে দেওয়া পর্যন্ত, তাদের বুক থেকে রক্ত না ঝরানো পর্যন্ত, জন্তুগুলোর প্রতিটিকে শেষ না করা পর্যন্ত আমি যুদ্ধ করব। আমার হাত থেকে ওদের নিস্তার নেই, […]

সাড়ে তিন হাত ভুমি

৭ হযরত আবু হুরায়রা হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহেওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আমি সবার আগে কার সঙ্গে সদাচরণ করব? রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহেওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের সঙ্গে। লোকটি প্রশ্ন করল, তারপর? উত্তর আসলো, তোমার মা। লোকটি আবার জানতে চাইল, তারপর কে? রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহেওয়াসাল্লাম এইবারও একই জবাব দিলেন, […]

সাড়ে তিন হাত ভুমি

৬ চৈত্র মাসের দুপুরবেলাটা গুমোট হয়ে আছে। কোথাও হাওয়া নেই, হাওয়ার চলাচল টের পাওয়া যায় না। হঠাৎ মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায় আচমকা উঠেছে চৈতালি ঘূর্ণি। একটা জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাওয়া। ঘুরে ঘুরে মাঠের ধুলোবালি আর খড়কুটো নিয়ে কোনো একটা দিকে এগোচ্ছে। আমাদের এলাকায় এই ঘূর্ণিকে বলে ‘বানাডুলি’। ছেলেবেলায় তুমি আমাকে শিখিয়েছিলে মা, স্কুল থেকে […]

সাড়ে তিন হাত ভুমি

৫ আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময়টার কথা খুব মনে পড়ছে, মা। ম্যাট্রিক পরীক্ষার সিট পড়েছে মুন্সীগঞ্জে। আমাদের কাঞ্চনপুর হাই স্কুল আর লৌহজং থানার কাজীরপাগলা হাই স্কুলের সিট পড়েছিল মুন্সীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। মুন্সীগঞ্জ মহকুমা শহর। কাঞ্চনপুর থেকে আট-দশ মাইল দূরের পথ। বর্ষাকালে যাতায়াতের ব্যবস্থা নৌকা আর গ্রীষ্মকালে পায়ে হাঁটা। আট-দশ মাইল পথ হেঁটে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে […]