সাড়ে তিন হাত ভুমি


বারেকের কথা বলি মা, বারেকের কথা বলি।
বুয়ার কথা বলি।
সেই যে চৈত্র মাসের দুপুরবেলা মুসাফির বারেক ফিরে এলো, বুয়া চিনতে পারল তার ছেলেকে। বারেকের মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে ছেলের নাম উচ্চারণ করল, বারেক দুহাতে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, পুরো বাড়িতে খবর হয়ে গেছে। আমরা যে যেখানে ছিলাম পেছন দিককার উঠানে চলে আসছি। আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম, বিড়বিড় করে বারেকের নাম উচ্চারণ করার পর, বারেক মাকে জড়িয়ে ধরার পর, বুয়াও দুহাত তুলল ছেলেকে জড়িয়ে ধরার জন্য, তার পরই তার হাত থেমে গেল। তার হাত নেমে গেল। বারেকের মতো করে বারেককে সে জড়িয়ে ধরল না। দাঁড়িয়ে রইল পাথর হয়ে, গাছ হয়ে।
কেন?
কেন এমন করল বুয়া?
আমি খুবই অবাক। বুয়ার চোখে পানিও নেই। যেন ধরেই নিয়েছিল তার ছেলে নেই, বাঁশঝাড়ের তেনায় বারেককে মেরে পচা পুকুরের কাদার তলায় এমন করে পুঁতেছে, লাশও কোনো দিন ভেসে উঠবে না।
আর বারেকের জন্য তার কান্না!
দিনদুপুরে!
রাতদুপুরে!
বিলাপ করে কান্না। বারেক রে, আমার বারেক। ও আমার বাজান, আমারে ছাইড়া তুই কই চইলা গেলি? ক্যান চইলা গেলি? আমি নাইলে তরে একটু মারছিলাম, এর লেইগা এত বড় কষ্ট মারে দিলি? এত বড় শাস্তি মারে দিলি? অহন তরে ছাইড়া আমি বাঁচি কেমনে! ও বাজান, বাজান।
রাতদুপুরে বুয়ার কান্নায় স্তব্ধ হতো ঝিঁঝিপোকারা, চলাফেরা বন্ধ করত ইঁদুর-ব্যাঙ, রাতপোকারা। আকাশে ডানা মেলা বাদুড় আর দূরে-অদূরে থেকে থেকে ডাকতে থাকা রাতপাখিরা থেমে যেত।
দুধরনের রাতপাখি দু চার ছ মাসে এক-দুবার ডাকত আমাদের বাঁশঝাড়ের ওদিকে, বাচ্চুদের বাড়ির ওদিকে। গভীর রাতে ডাকত।
একটা পাখি ডাকত কু কু করে। কু শব্দে একটা ডাক দিয়ে থামত, মিনিটখানেক পর আবার ডাকত। এ রকমই ডাকার স্বভাব পাখিটার। দেশগ্রামের লোকে বলত কুপাখি। মানে খারাপ পাখি।
কেন খারাপ পাখি?
এই পাখির ডাকের সঙ্গে কু শব্দটা আছে। যে বাড়িতে ডাকে, সেই বাড়িতে খারাপ কিছু ঘটে।
ছেলেবেলায় শোনা এসব কুসংস্কারের কথা। তবু আমরা বিশ্বাস করতাম। রাতদুপুরে কুপাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙলে সহজে আর ঘুম আসত না।
আমাদের বাড়িতে ডাকছে না তো পাখিটা!
আমাদের বাড়িতে খারাপ কিছু ঘটবে না তো!
বড় রকমের কোনো অসুখবিসুখ কারো কিংবা অন্য রকমের কোনো বিপদ!
অজানা আতঙ্কে কাঁপত বুক।
অন্য পাখিটা হচ্ছে নিমপাখি।
এই পাখিটার ডাকার স্বভাবও কুপাখির মতোই। নিম শব্দে একটা ডাক দিয়ে তিরিশ সেকেন্ড বা মিনিটখানেকের গ্যাপ, তারপর আবার ‘নিম’। ডাকটা অদ্ভুত ধরনের। যেন ছোট্ট কোনো বিড়ালছানা ডাকছে। সরু বিড়ালগলায় ‘মিউ’ না ডেকে ডাকছে ‘নিম’।
গভীর কোনো রাতে এই পাখির ডাক শুনলেই গা শিউরে উঠত আমার। পরদিন এই নিয়ে আলোচনা হতো বাড়িতে। হয়তো আমার মতো ডাকটা শুনেছে মা-বাবা। বকুলও হয়তো শুনেছে। কিংবা আমরা কেউ শুনিনি, শুনেছে কদম অথবা বুয়া পারুল। দশ বছর বয়স পর্যন্ত হয়তো বারেকও শুনেছে।
যে-ই শুনে থাকুক, পরদিন নিমপাখি নিয়ে আলোচনা হতো সকালবেলাই।
বিক্রমপুর অঞ্চলে নিম শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘নেব’ অথবা ‘নিয়ে যাব’। যে বাড়িতে রাতদুপুরে এই পাখি ডাকে, সেই বাড়ির কাউকে না কাউকে নিয়ে যায়। অর্থাৎ মৃত্যু এসে নিয়ে যায়। বাড়ির কেউ না কেউ মারা যায়।
কুসংস্কার।
গ্রাম্য কুসংস্কার।
বুজরকি।
কিন্তু বুয়া আবিষ্কার করেছিল, যেদিন বারেক উধাও হলো, তার কয়েক দিন আগের এক রাতে এই বাড়ির দক্ষিণ দিকটায়, যেদিক দিয়ে বাড়িতে আমি আজ উঠলাম, ওই দিকটায়, তেঁতুলগাছে কুপাখি ডেকেছিল। বাড়ির কেউ শোনেনি, শুধু সে শুনেছে। তখন থেকেই নাকি তার বুক কাঁপত।
কিছু একটা কু ঘটনা এই বাড়িতে ঘটবে।
বারেক উধাও হওয়ার আগের রাতে বাঁশঝাড়ের ওদিকটায় তিনবার পরিষ্কার নিমপাখির ডাক শুনেছে বুয়া।
ও, আরেকটা কথা। নিমপাখি দিনের বেলা কোথায় কোন গাছের ডালপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকে, ওই পাখি চোখেও দেখে না কেউ। চেনেও না কেউ। রাতের বেলা, তাও গভীর রাতে গাছপালা থেকে নেমে আসে, ঝোপঝাড়ে থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর যে বাড়ির মানুষকে সে নেবে, সেই বাড়ির মাটিতে নেমে একটা করে ঠোকর দেবে, একটা করে ডাক দেবে।
অর্থ হচ্ছে এই বাড়ির কাউকে মৃত্যুর ডাক দিচ্ছে।
কবরে নেওয়ার ডাক দিচ্ছে।
মাটির তলায় নেওয়ার ডাক দিচ্ছে।
আমাদের ছেলেবেলা আচ্ছন্ন করেছিল এই সব কুসংস্কার। বাঁশঝাড়ের তেনায়, কুপাখি নিমপাখি- এ রকম কত কি!
তবে ওই কুপাখি আর নিমপাখির ডাক নিয়েও বিলাপ করত বুয়া। যেই রাইত্রে কুপাখির ডাক হুনছি, আমার কলিজা কাঁপছে। কী জানি হয়! আর যেই রাইত্রে নিমপাখি ডাকছে, ওই রাইত্রে ডরে আমি ঘুমাইতেই পারি নাই। হায় হায় রে, তখন কি আর বুঝছি, ওই পাখি আমার পোলারেই নিব! বাঁশঝাড়তলায় নাইমা ডাকছে, ওইখানেই মরছে আমার পোলায়।
এই পাখির রহস্যটা আমি বড় হয়ে বুঝেছি। জানি না কী পাখি। দেশগ্রামের সব পাখিই তো আর চিনি না। হয়তো এমন এক পাখি, যে পাখি দিনের পাখি না, রাতের পাখি। দিনে গাছপালা কিংবা ঝোপঝাড়ের আড়ালে ঘুমায়, বেরোয় রাতে। রাতপাখি। গাছপালার তলার পরিষ্কার মাটিতে, গৃহস্থবাড়ির আঙিনায় রাতের বেলা গর্ত থেকে বেরোয় নানা ধরনের পোকামাকড়। এই পাখি হয়তো ঠুকরে ঠুকরে সেই সব পোকামাকড় ধরে খায় আর ডাকে। সেই ডাককেই কুসংস্কার বানিয়েছে মানুষ। কেউ হয়তো কোনো রাতে দেখেছে ওই পাখি। মাটিতে পোকামাকড় ঠুকরে খাচ্ছে আর ডাকছে, দু-চার দিনের মধ্যে হয়তো সেই বাড়িতে মারা গেছে কেউ, তৈরি হয়ে গেছে কুসংস্কার।
কুসংস্কার তো এভাবেই তৈরি হয়।
তবে বাঁশঝাড়ের তেনায় যে বারেককে মারেনি, নিমপাখির ডাকে যে মারা যায়নি বারেক, এগারো বছর পর তার ফিরে আসাই প্রমাণ করল সব।
একটা রহস্য রয়ে গেল।
বুয়ার ভাষায় কুপাখি ডেকেছিল। দুর্ঘটনা একটা ঘটেছিল আমাদের বাড়িতে। বারেকের উধাও হয়ে যাওয়া।
কিন্তু বারেকটা গিয়েছিল কোথায়?
মাগো মা, নিমপাখির কুসংস্কারটা আজ আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। আমার মনে হচ্ছে, কাল রাতে আমাদের বাড়িতে, বাড়ির সামনের দিককার উঠানে, যেখানে পড়ে আছে বাবার লাশ, পেছন দিককার উঠানে, যেখানে পড়ে আছে মায়া আর আমার অপুষ্ট ছেলের লাশ। এই দুটো জায়গায় নিমপাখি নেমেছিল। কাল রাতে সে আর পোকামাকড় ঠুকরে খায়নি। কাল রাতে সে বাড়ির মানুষজনের মৃত্যুবার্তা নিয়ে এসেছিল। মাটিতে ঠোকর দিয়ে অবিরাম ডেকেছিল- নিম নিম।
তোমরা কেউ শুনতে পাওনি, মা?
শুনতে পাওনি নিমপাখির ডাক?
দেখ কী অবস্থা আমার! একবার যুক্তি দিয়ে নিমপাখির স্বভাব ব্যাখ্যা করছি, আরেকবার ফিরে যাচ্ছি কুসংস্কারে!
এলোমেলো।
সব এলোমেলো, মা।
সব এলোমেলো।
কিন্তু বারেক কোথায় চলে গিয়েছিল, মা?
এই এগারোটা বছর সে কোথায় ছিল?
কার কাছে ছিল?
ওভাবে গেলই বা কেন, ফিরেই বা এলো কেন?
পুরো ঘটনা বারেক একদিন বলল। এ রকম এক জ্যোৎস্না রাতে, আমাদের পেছন দিককার বারান্দায় বসে। ফিরে আসার বেশ কিছুদিন পর। আমি তখনো বাড়িতে, বকুল বাড়িতে। বারেকের মুখে মসলা-মাসায়েল শোনার জন্য কদম, পারুল বুয়া, তুমি, আমি, বকুল বসেছি। বাবা বাড়িতে। তার রুমে বসে স্কুলের কিসব হিসাবকিতাব দেখছেন।
বারেক সেদিন মসলা-মাসায়েল না বলে শুরু করল তার এগারো বছরের উধাও হয়ে থাকা জীবনের গল্প।
তার আগে যেদিন সে ফিরে এলো, সেদিনকার ঘটনা শেষ করি, মা।
বুয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে বারেক। মা, মাগো! আমি তোমার বারেক, মা। আমি তোমার বারেক। তোমারে ছাইড়া আমি চইলা গেছিলাম, আবার তোমার কাছে ফিরত আইছি, মা। তুমি আমারে মাপ কইরা দেও মা, তুমি আমারে মাপ কইরা দেও। আমি তোমার কাছে বিরাট অন্যায় করছি। তোমারে ছাইড়া থাইকা বিরাট গুনাহর কাজ করছি। তুমি না মাপ করলে আল্লাহপাকও আমারে মাপ করবো না। রোজ হাশরের দিন আমার মাথার ওপরে নাইমা আসবো সূর্য। সূর্যের তাপে আমার মাথার মগজ গইলা গইলা পড়বো। দোজখের আগুনে আমি সারা জীবন জ্বলুম। তুমি আমারে মাপ কইরা দেও, মা।
বারেক জড়িয়ে ধরে আছে বুয়াকে, বুয়া গাছপাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর কোনো রাগারাগি না, মান-অভিমান না, কান্নাকাটি না- একেবারেই নির্বিকার ভঙ্গিতে দুহাতে আলতো করে সরিয়ে দিল বারেককে। একটাও কথা বলল না। রান্নাঘরের বারান্দায় গিয়ে বসল। পা দুটো উঠানের মাটিতে।
উঠান থেকে প্রতিটা ঘরই তো হাত দেড়েক উঁচুতে। বারান্দায় বসে পা ঝোলানো যায় উঠানে।
সেভাবেই বসেছে বুয়া।
মা তাকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। দেখে বারেকও কাঁদতে কাঁদতেই থতমত খেল। তারপর গিয়ে বুয়ার পায়ের সামনে বসে দুহাতে জড়িয়ে ধরল তার পা। মা, মাগো, আমার ভুল হইয়া গেছে, বহুত বড় ভুল হইয়া গেছে। তুমি মাপ না করলে আমার কোনো গতি নাই। ইহকাল-পরকাল দুইকালেই আমি জ্বইলা-পুইড়া মরুম।
বুয়ার মুখে তবু কথা নাই। নির্বিকার সে, একেবারেই নির্বিকার। বারেক তার পা ধরে কাঁদছে, এটা যেন কোনো ব্যাপারই না। বারেকের দিকে সে তাকিয়েও দেখছে না। উদাস চোখে তাকিয়ে আছে গোয়ালঘরের ওদিককার জামগাছটার দিকে।
বারেককে দেখে যতটা না অবাক আমরা, বুয়ার আচরণ দেখে তার চেয়ে বেশি অবাক।
একি কাণ্ড!
যে ছেলের জন্য এত কান্নাকাটি, এত বিলাপ হাহাকার, সেই ছেলে ফিরে আসার পর এত নির্বিকার মা!
এটা কী করে সম্ভব!
বারেকের সঙ্গে কথাই বলে না বুয়া, ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েও দেখে না। সে থাকে তার কাজ নিয়ে, আগের মতোই আমাদের সংসারের কাজ নিয়ে। যখন-তখন বারেক তার কাছে যাচ্ছে, হাতে-পায়ে ধরে কাঁদছে। আকুলিবিকুলি করে মাফ চাইছে।
বুয়া নির্বিকার। নিঃশব্দে ছেলের হাত ছাড়িয়ে দেয়। রাগ বিরক্তি ক্ষোভ- কোনো কিছুই প্রকাশ করে না। অদ্ভুত এক আচরণ।
বারেকের থাকার জায়গা হয়েছে কদমের ঘরে। সেই ঘরে বসে যখন-তখন শিশুর মতো কাঁদে বারেক। কদমকে বলে, কদম মামা, আমার মারে বুঝাও। আমারে মাপ কইরা দিতে কও।
পারুলকে বলে, ও পারুল খালা, মারে বুঝাও। যেই কষ্ট মারে আমি দিছি, ফিরা আইসা মার ব্যবহারে তার থিকা বহুত বেশি কষ্ট আমি পাইতাছি। মারে জিগাও, কী করলে সে আমারে মাপ করবো? মায় যা কইবো, আমি তা-ই করুম।
কদম পারুল বুয়াকে বোঝায়। বুয়া কানেই নেয় না তাদের কথা। বারেকের নাম উঠলেই নির্বিকার হয়ে যায় সে। কোনো কাজে থাকলে সেই কাজ নিয়েই ব্যস্ত হয়। কাজ না থাকলে উঠে চলে যায় কোনো দিকে।
বারেক তারপর আমাকে ধরে, বকুলকে ধরে। আমরা দুজন দুভাবে বোঝাই বুয়াকে। আমার আর বকুলের সঙ্গে তো কদম পারুলের মতো ব্যবহার করা সম্ভব না। বুয়া অন্যভাবে আমাদের কথা এড়িয়ে যায়। আমাকে বলে, আমি তোমার কাছে মাপ চাই, দাদা। এটা লইয়া আমার লগে কথা কইয়ো না।
বকুলকে বলে, মাপ চাই বইন। আমি তোমার কাছে মাপ চাই। ওর নাম আমার সামনে লইয়ো না।
এরপর আমাদের আর কী বলার থাকে!
বুয়ার বুকের ভেতর যে এত অভিমানী এক মায়ের বাস, এটা বুঝে আমি আর বকুল থেমে যাই।
বারেক সবশেষে ধরে তোমাকে আর বাবাকে। আপনেরা আমার মারে বুঝান। আপনেগো কথা না শুইনা পারবো না মায়। মার লগে আমার সম্পর্কটা ঠিক কইরা দেন। তার বিনিময়ে আমি সারা জীবন এই বাড়ির কামলা মজুর হইয়া থাকুম, চাকর হইয়া থাকুম।
এক দুপুরে বুয়াকে তুমি আর বাবা ডাকলে।
সেদিন ছুটির দিন। রবিবার। স্কুল বন্ধ। খাওয়াদাওয়া শেষ করে বুয়াকে বসার ঘরে ডাকলে। আমি আর বকুল দাঁড়িয়ে আছি দরজার সামনে। বারেক পায়চারি করছে বারান্দায়। পারুল উঁকি দিয়ে আছে উত্তর দিককার জানালা দিয়ে। কদম তার ঘরে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে।
তোমরা কী বলবে বুয়া বুঝে গিয়েছিল। বুঝে এমন একটা কাজ সে করল, তোমাদের দুজনকে বারেকের বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগই দিল না, সরাসরি বাবার পা জড়িয়ে ধরল। আমি আপনের পায়ে ধরি, ওর কথা আপনে আমারে কইবেন না। দরকার হইলে আমারে আপনের পায়ের জুতা দিয়া মারেন, তাও ওর কথা আমারে কইয়েন না। ও আমার কেউ না। আমার পোলা এগারো বছর আগে মইরা গেছে।
বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। কোনো কথাই বললেন না। তুমিও কোনো কথা বললে না, মা।
এমন অভিমানী মাও হয়, মা!
এমন পাথরহৃদয় মাও হয়!
এমন শীতল কঠিন বরফ হতে পারে কোনো মায়ের মন!
না, পারে না, মা। পারে না। অভিমান একদিন ভেঙে যায়। পাথর একদিন চূর্ণবিচূর্ণ হয়। শীতল কঠিন বরফ একদিন গলে পানি হয়।
বুয়ারও হয়েছিল।
[চলবে]