যুদ্ধকাল

আজাদ জাদুঘরের ওদিকটায় এসে রিকশাঅলা আমার দিকে মুখ ফিরাল। কী অইছে বাবা? কানবার লাগছেন ক্যালা? লোকটার বয়স চল্লিশের ওপর। রোদে পোড়া কালো শরীর। শরীরের বাঁধ ভালো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি-মোচ। নীল রঙের লুঙ্গি আর কোড়া রঙের গেঞ্জি পরা। গেঞ্জির হাতা কনুইয়ের কিছুটা ওপরে টাইট হয়ে লেগে আছে। ঘাড়ের কাছে গেঞ্জি একটু ছেঁড়া। কোমরে গামছা বাঁধা […]

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো ০১

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যেদিন পরিচয় হলো সেদিন আমার মাথা ন্যাড়া। জীবনে দুবার ন্যাড়া হওয়ার কথা আমার মনে আছে। একবার একাত্তরের মাঝামাঝি, আরেকবার তিরাশির শুরুর দিকে। দুবারই মন ভালো ছিল না। একাত্তরে আমি এসএসসি ক্যান্ডিডেট। আমাদের বয়সী ছেলেরাও মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে। এ কারণে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করে দিলেন। দুঃখে। আমি ন্যাড়া হয়ে গেলাম। ন্যাড়া […]

কাক ও রসগোল্লা

এই কাকটা বেশি চালাক। বাজারের পাশের জামগাছে থাকে। আরাম-আয়েশেই দিন কাটে। মাছবাজারের ওদিকটায় আস্তাকুঁড়। সেখানে বিস্তর খাবার। মুদি-মনিহারি দোকানগুলোর পেছন দিকটায় পড়ে থাকে নানা রকম বাসি-পচা বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি। ইঁদুরের উৎপাত আছে দোকানপাটে। ইঁদুর ধরার কল বসিয়ে সেগুলো ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে দেওয়া হয়। খাদ্য হিসেবে ধাড়ি ইঁদুর খারাপ না। মাংসের দোকানগুলোর ওদিকে গরু-ছাগলের নাড়িভুঁড়ি […]

কয়েক রকম বাংলাবাজার

অনেক দিন পর বাংলাবাজার গিয়েছি। তাও বেশ কয়েক বছর আগে। ইচ্ছে হলো, দেখি ফুটপাতে বইয়ের দোকানগুলো আগের মতো আছে কি না। কলেজিয়েট স্কুলের উল্টোদিককার ফুটপাতে দেখি কিছু দোকান আছে। তবে আগের মতো গল্প-উপন্যাসের কালেকশন নেই। বেশির ভাগই পাঠ্যবই। আগে পাঠ্যবইয়ের তুলনায় গল্প-উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ-বিজ্ঞান-ইতিহাস-জীবনী ইত্যাদিই বেশি থাকত। এখন উল্টো হয়ে গেছে। মস্কো থেকে আসা প্রগতি প্রকাশনীর কী […]

লোকটি রাজাকার ছিল

চোখের বাঁধন খুলে দেওয়ার পর বোঝা গেল লোকটি খুবই নির্বোধ ধরনের। জগৎ সংসারের অনেক খবরই সে রাখে না। চেহারায় অলস আয়েশি ভাব। মাথার চুল কদম ছাঁট দেওয়া, কিন্তু রুক্ষ নয়, তেল দিয়ে বেশ পরিপাটি করা। মুখের ঘন কালো দাড়িগোঁফ যতনে ছাঁটা। চোখের কোণে বুঝি সুরমা ছিল, চেপে চোখ বাঁধার ফলে মুছে গেছে। পরনে হাতাঅলা কোরা […]

বন্ধু স্বজন

ইছাপুরার ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মহাশয়ের দোতলা দালানবাড়ির নিচতলার বারান্দায় বসে গুড়-মুড়ি খাচ্ছে স্বজন। আজ সাত মাস এই বাড়িতে আছে তারা। প্রায়ই গুড়-মুড়ি খাওয়া হয় সকালবেলা। প্রথম প্রথম তেমন সুবিধার লাগেনি। গত কয়েকদিন ধরে জিনিসটা এত পছন্দ হচ্ছে, মনে হচ্ছে নাশতা হিসেবে গুড়-মুড়ির চে উপাদেয় কোনও খাবার পৃথিবীতে নেই। মুঠোভর্তি মুড়ি আর এক কামড় গুড় মুখে দিলে […]

পারুলকন্যা

কী খবর কবি সাহেব, কেমন রয়েছেন? সোফা-কাম বেডটিকে বেড করে দিয়ে গেছে একজন বয়। কেবিনেটে রাখা বালিশ বের করে দিয়েছে। দুপুরের পর থেকে শুয়ে আছে কবি। নকশিকাঁথা বের করে পা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে রেখেছে। ঘুমাবার চেষ্টা করেছিল, হয়নি। ভেতরে শুধুই এক অস্থিরতা। এই হয়তো জ্ঞান ফিরলো মেয়েটির। জীবন-মৃত্যুর মাঝখান থেকে জীবনের দিকে ফিরে এলো। […]

বিনা খালাদের বাড়ি

লিচুপাতা থেকে পিছলে পড়ছে সকালবেলার রোদ। একটুখানি হাওয়া আছে। সেই হাওয়া খোকন মামা মিন্টু মামার মুখের ঘাম মুছতে পারেনি। এই সকালেই কোথায় কোথায় যেন ছোটাছুটি করে এসেছেন দুজনে। ঘাড়ে-গলায় ঘাম, নাকের তলায় ঘাম। ঘামকণায় চিকচিক করছে মুখ। খোকন মামার হাতে গুলতি, মিন্টু মামা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে। লিচুডালে বসেছে শালিক পাখি। গুলতির কালো […]

রেশমি

বসুন মারুফ সাহেব, বসুন। আমি আর রেশমি ডক্টর কামালের মুখোমুখি বসলাম। কী খবর বলুন। কেমন আছেন? ভালো। ভালো? তাহলে সায়কায়াট্রিস্টের কাছে এসছেন কেন? হা হা হা। কামাল সাহেবের প্রাণখোলা হাসি দেখে আমিও হাসলাম। তবে নিঃশব্দে। রেশমি গম্ভীর। বলুন ম্যাডাম, আপনিও কি ভালো আছেন? রেশমি আমতা গলায় বলল, না মানে… বলুন, আমাকে সব খুলে বলুন। আচ্ছা, […]

মানুষ ও খাঁচার পাখি

চোখ ফোটার পর দেখেছি ভাঙাচোরা একটা দালানবাড়ি। এই ধরনের বাড়িকে বলে পরিত্যক্ত বাড়ি। কেউ বাস করে না। কতকালের পুরনো কে জানে! ছাদ দেয়াল ধসে গেছে, ইটগুলো আছে হাঁ করে। বট অশ্বত্থের চারা গজিয়েছে দেয়ালে কার্নিসে। কোনো কোনোটা বড়ও হয়েছে। জোরে হাওয়া দিলে ডালে পাতায় শন শন করে শব্দ হয়। বিশাল বাড়িটির চারদিকে একসময় দেয়াল ছিল। […]