স্রোতের মোহনায়

কপোতাক্ষ মাহমুদার প্রিয় নদ। গাঁয়ের চারদিকে কত কিছু আছে, তার মধ্যে নদী কেন প্রিয়—এ নিয়ে নিজেকে কোনো দিন প্রশ্ন করেনি ও। নিজের ভালো লাগাই প্রধান হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় নদী ওকে স্রোতে ভাসিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। এই যাওয়া এক গভীর আনন্দ। কোনো খুশির খবর হলে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ছুটে আসে, দুঃখের খবর […]

জন্ম ও প্রেম

জুঁই মাঝেমধ্যে ওর গোপন ঘরে ঢুকে পড়ে, যেখানে ওর ছায়া ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু দুটো ঘটনা আছে অদৃশ্য হয়ে। ঘটনার তো কোনো আকার থাকে না। তবে তার সরব উপস্থিতি অদৃশ্য হাঙরের আকারে ভয়াবহ মূর্তির মতো। একটি ঘটনা ওর জন্মের। অন্যটি প্রেমের। এই দুই ঘটনার সঙ্গে ওর রাতদিনের খেলা আছে। ভয়াবহ ঘটনার সঙ্গে খেলায় ও […]

বিষণ্ণ শহরের গল্প

আসপিয়া শোবার ঘরে ঢোকার জন্য এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বুকে হাত চেপে বসে থাকা আরমান হককে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘরে ঢুকতে পারে না। পা নড়ছে না। ওর উপস্থিতি টের পায়নি আরমান হক। যে ভঙ্গিতে বসেছিল সেভাবেই বসে থাকে। আসফিয়ার মনে হয় চোখ বন্ধ করে রাখা আরমান হক যেন হাজার বছর আগের গুহাবাসী কোনো মানুষ। তার সামনে […]

উৎসবের জোয়ার

প্রাইমারি পরীক্ষায় পাস করা হলে দুজনের বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। প্রথমে বিয়ে হয় বকুলের। ছেলে বাপের সঙ্গে খেতে কাজ করে। ধান কাটে, ঘরে ফসল তোলে। পড়ালেখায় প্রাইমারি পাস করেছে। সন্ধ্যা বিয়ের আগের দিন বকুলকে নিয়ে পুকুরঘাটে বসে গল্প করে। বকুল জিজ্ঞেস করে, বিয়ে কী রে সন্ধ্যা?

লাল কাঁকড়া ও বুনোফুল

অফিসে আজ অলস সময় কাটছে মাহবুবের। দু-একবার বারান্দায় গিয়ে পায়চারি করে আসছে। টেবিলে বসে স্থির থাকতে পারে না। পেপার ওয়েট দিয়ে কাঠের টেবিলের ওপর শব্দ করে। পাশের টেবিলের মুস্তাফিজ আজ অফিসে আসেনি। ও মনে মনে ঠিক করে, বেরিয়ে যাবে। ঢাকা শহর থেকে দেশের শেষ সীমানার এই অফিসে কাজের পরিমাণ আর কতই বা থাকতে পারে। আধা-ঢিলেমির […]

মুখোশ

রাহুল আর লোপিতা পার্কে বসে কথা বলছিল। লাঠির মাথায় একগাদা মুখোশ বেঁধে হেঁটে আসা মামুনকে ওরা দূর থেকে দেখতে পায়। লোপিতা চেঁচিয়ে বলে, দেখো রাহুল, লোকটা কত সুন্দর সুন্দর মুখোশ নিয়ে যাচ্ছে। আমি দুটো মুখোশ নেব? কোনটা নেবে? রানি? উঁহু, রানি সাজার শখ আমার নেই। আমি ভালুকের মুখোশ নেব। ভালুক? লোপিতা হেসে গড়িয়ে পড়ে, আমি […]

একজন বিশাল পরিমাপের মানুষ

ষাটের দশকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন অনেকের লেখা পড়তাম। তখন থেকেই হক ভাইকে লেখার মধ্য দিয়ে চিনি। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘তাস’-এর কথা শুনেছিলাম সেই সময়ে। একুশের সংকলনে প্রকাশিত তাঁর কবিতা পড়েছিলাম। তারপর পড়েছি ‘রক্তগোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’ বইগুলো। হক ভাইকে দেখি স্বাধীন বাংলাদেশে। এর আগে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়ই ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশে দেখা হয়, বাংলা একাডেমিতে তাঁর […]

কার্তিক বিহুতে প্রেম

মাস দুই হলো হরিণঘাটার বনের ধারে ছনের ছাউনির কুটিরে ডেরা গেড়েছে মাহবুব বিন আলসাফা তৈয়বুদ্দিন। আমেরিকা থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশে এসে বনের ধারের এই চাকরিটি জুটিয়েছে। বেসরকারি সংস্থার অফিস। বেশ দিন কাটছে। রাতারাতি ঢাকা শহরের চেনাজানা পরিবেশ থেকে অচেনা পরিবেশে ধাম করে চলে আসা জীবন নিয়ে বাজি ধরা মনে হয় না। বরং এই স্নিগ্ধতার […]

সখিনার চন্দ্রকলা

রাজাকার সুলেমানের দিকে দা উঁচিয়ে নিকলির সখিনা বলে, এইডা কি চিনস? কল্লা ফালায়ে দিমু। সুলেমান কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বিড়বিড় করে বলে, মাগি। সখিনা শব্দটা ঠিকই শুনতে পায়। বয়স হলেও ওর শ্রবণশক্তি তীক্ষ। ও দা উঁচিয়ে সুলেমানকে তাড়া করলে সুলেমান ছুটে পালায়। সখিনাও পিছু নেয়। একপর্যায়ে ও সুলেমানকে লক্ষ্য করে দা-টা ছুড়ে মারলে সেটা অল্পের […]

মুঠি ভরে ধরে রাখা ছায়ার শব্দ

জেনিফার চলে যাওয়ার পরে শামসুল আলম ডায়েরি লিখতে শুরু করে। যেদিন কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না, সেদিন তারিখের ঘরে লাল দাগ দেয়। মন ভালো থাকলে ছোট্ট ফুল-পাখি আঁকে, নইলে টিকচিহ্ন দেয়। একটি লাল কালির বলপেন রাখা আছে ডায়েরির সঙ্গে। ডায়েরি লেখার আট দিন পার হয়েছে আজ। সকাল থেকে মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে। এ ঘরে ও […]