মান্নানের জন্য কুড়িয়ে-বাড়িয়ে

মেঘে মেঘে ঢের বেলা হলো। এই পৃথিবীর আলো-হাওয়ার কম দিন তো কাটানো হলো না! ভাবি, কীভাবে পেরিয়ে যায় সময়! এই তো সেদিনও আমাদের হাসি-উচ্ছলতায় থই থই করত নানা মাহফিল, আজ সেসব নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায়। একে একে গত হচ্ছেন আমাদের কালের মানুষ। নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, পৌঁছে গেছি সায়াহ্নে। এ বয়সে যদি আমাদের সময়ের কথা […]

শ্রীকান্ত মনিদাস

আমাদের পাড়ায় ফুটপাতের ধারে বসে জুতো পালিশ করে, সেলাই করে, তাপ্পি লাগায়। থাকে আজিমপুরের এক-কামরার এক ভাড়াবাড়িতে। ভাড়া মাসে ১৫০০ টাকা। দাদার জমিজিরেত ছিলো। কিশোরগঞ্জে। সেসব বেচে খেতে খেতে কিছুই আর নেই। বাপ বাধ্য হয়ে নামে মুচি হিসেবে। শ্রীকান্তও বাপের পথ ধরেছে। যে-দোকানগুলোর সামনে বসে, সেখানেই কোথাও রাত্রিবেলা রেখে দ্যায় ওর জিনিসপত্তর ওর জীবনসংগ্রামের সামান্য […]

কবির হাতে সোনার ছাই

  সাঁইত্রিশ বছর আগের কথা। ৩ আগস্ট ১৯৭৫ সাল।  প্রকাশিত  হলো আবদুল মান্নান সৈয়দের নির্বাচিত কবিতা। প্রকাশক মুক্তধারা। একই সঙ্গে একই তারিখে বের হলো রফিক আজাদেরও নির্বাচিত কবিতা। ষাট-দশকের প্রথমার্ধে আবির্ভুত সমকালীন বাংলা কবিতার দুই তাৎপর্যপূর্ণ কারুকৃৎ। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে মুক্তধারা এই দুই কবির নির্বাচিত কবিতা দিয়েই  কোনো ব্যক্তি-কবির এই ধরনের প্রতিনিধিত্বশীল রচনার একক সঙ্কলন […]

আবদুল মান্নান সৈয়দ

জন্মঃ৩রা আগস্ট, ১৯৪৩ – মৃত্যুঃ ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১০) বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক  ও সাহিত্য-সম্পাদক। পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় ধ’রে বাংলা সাহিত্যকে নানান দিকে দিয়ে ঋদ্ধ করেছেন। তবে ঊনিশ শতকের ষাট দশকে আবির্ভূত অন্যতম কবি হিসেবে তিনি সচরাচর অভিহিত। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, সমালোচনা, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সুপ্রসার ও সুগভীর […]

পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ

পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ ঝর্না থেকে নেমে এসেছিলো। এখন, রহস্যময় জলে, খেলা করে অবিরল। পদ্মায় গিয়েছে একটি– মেঘনায়-যমুনায়-সুরমায়– আর-একটি গোপন ইচ্ছায়। পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ ঝর্না থেকে নেমে এসে সাঁতরে চলে বিভিন্ন নদীতে। পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ জলের রহস্য ভেদ করে এখন একাকী এক শব্দহীন সমুদ্রে চলেছে।

সোনালি আর ডালিয়া

সোনালির সঙ্গে ডালিয়ার দেখা হয়ে গেল একদিন। ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরল সোনালি। ডালিয়া বলল—আপনি কে? সোনালি বলল—আমি সোনালি। কত নাম শুনেছি তোমার। তোমাকে তো দেখামাত্র চিনে ফেললাম। ডালিয়া বলল—কার কাছে নাম শুনেছেন আপনি? নাম বলল সোনালি। ছায়া নামল ডালিয়ার দুধের মতো ফরসা মুখমণ্ডলে। বলল শুধু—ও। সোনালি বলে—মুখ কালো হয়ে গেল কেন তোমার? উনি সারাক্ষণই তোমার কথা […]

সেরগেই এসেনিন বলছে

ইসাডোরা, বার্লিনে তোমার সঙ্গে আছি আমি। আমার সঙ্গে আরেক কবি – গাধাও বলতে পারো – গলায় ঝোলানো গিটার, খামোখাই, বাজাতে-টাজাতে পারে না। কোত্থেকে এলেন আমাদের সেই মহাকথাশিল্পী, ম্যাকসিম গোর্কি। চেহারা ভাঙাচোরা হলে কী হবে, চোখ দুটিতে তাঁর যেন ছুরির ঝলক, সেই চোখ সব-কিছুর অন্তস্তলে ঢুকে যায়। আমার দিকে তাকিয়ে গোর্কি, চোখে স্নেহ ঝরে পড়ছে, বললেন, […]

গ্রিনরোড

একদিন কুলিরোড ছিলে। হাঁটু অব্দি ডোবানো ধুলোয় ছিলে এক নির্জন তাপস। অড়হরখেতে একদিন দেখেছিলাম তরুণ খরগোশ যেন কোন প্রাকৃতিক নিবিড় নিখিলে বিদ্যুচ্চমক তুলে মিশে গিয়েছিলো মটরশুঁটির খেতে। লাল-কালো কুঁচফল পেড়েছি একদিন সান্দ্র ঝোপ থেকে দেখেছি ধানখেত, কামময়, গভীর খোড়ল, কৈশোরক নিরুদ্বেগে, কৌতূহলে। তারপর সপ্তর্ষির নৈশ সংকেতে আমগাছ জামগাছ কাঁঠালগাছের শ্যাম ক্রমাগত মুছে মুছে উঠে আসছে […]

আলোক সরকার আর অন্ধকার রায়

‘একি, আপনি বাজারে? কবিশাহেব, আপনিও কি বাজার করেন?’ –হ্যাঁ, আমাকেও বাজার করতে হয়, আমাকেও তেল-নুন-মাংসের হিশেব কষতে হয়– আমি নই বায়ুভুক রবীন্দ্রনাথ। কবিতাকেও হতে হয় পৌরুষেয়– শুধু নারীলাবণিগ্রস্ত নয়। বসন্তের সংঘর্ষে জ্বলে উঠতে হয় আগুনের মতো। জীবনানন্দকেও একদিন খালি গায়ে দুই হাতে দুই ভরা পানির বালতি বয়ে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন অনুজ কবি আলোক সরকার আর […]

সৃষ্টিশীলতার প্রতি

শুধু তোমাকে সালাম– আর কাউক্কে তোয়াক্কা করি না, আর-সব-পায়ে-দলা মুথাঘাস– শুধু তুমি ঘাসে রত্নফুল, আর-সব নোংরা টাকা-পয়সার মতো : হাতে-হাতে ঘোরে-ফেরে– শুধু তুমি অমল-ধবল তুমি, তোমার আহারে শুধু ঘড়ি লাগে– আর-কিছুই রোচে না তোমার, নামো ঝরনা ফাটিয়ে পাথর– সৃষ্টি তার মুখোশ ছিঁড়েছে, বস্তুর বিরুদ্ধে শুধু অফুরান প্রজাপতি ওড়ে ।