শ্রীকান্ত মনিদাস

আমাদের পাড়ায় ফুটপাতের ধারে বসে
জুতো পালিশ করে, সেলাই করে, তাপ্পি লাগায়।
থাকে আজিমপুরের এক-কামরার এক ভাড়াবাড়িতে।
ভাড়া মাসে ১৫০০ টাকা।
দাদার জমিজিরেত ছিলো।
কিশোরগঞ্জে।
সেসব বেচে খেতে খেতে কিছুই আর নেই।
বাপ বাধ্য হয়ে নামে মুচি হিসেবে।
শ্রীকান্তও বাপের পথ ধরেছে।
যে-দোকানগুলোর সামনে বসে, সেখানেই কোথাও
রাত্রিবেলা রেখে দ্যায় ওর জিনিসপত্তর
ওর জীবনসংগ্রামের সামান্য কয়েকটি হাতিয়ার।
দোকানদাররা ওকে কিছু বলে না।
ওই দোকানের মালিকও না।
দোতলার ডেন্টিস্ট মাঝে মাঝেই ধমক দ্যায়।
উঠে যেতে বলে।
যাবে কোথায়?
ফুটপাতের ধারে___ না ফুটপাতের না রাস্তায়
যতটা গুটিসুটি মেরে বসা যায়,
ততটাই বসে থাকে শ্রীকান্ত।
জুতো সেলাই আর পালিশ আর নিজের শরীর নিয়ে।
তিন মেয়ে শ্রীকান্তর।
বড় মেয়ের বিয়ে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
মেয়ে পড়েছে এসএসসি অবধি।
বিয়ে ঠিক হয়েছে একজন পিওনের সঙ্গে।
জহরলাল।
বিয়ের পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাবে।
বয়েস?___ শ্রীকান্তের বয়েস হয়েছে ৪০/৪৫
খোঁচা খোঁচা দাড়ি। একটু পাক ধরেছে।
শারদীয় পূজো হয়েছে দুদিন আগে।
___’পূজোয় কি করলেন?’
___’আমাদের আবার পূজা?
মেয়ের যৌতুকের জন্যে একটু সাহায্য করতে পারেন?’
জিগ্যেস না করলে বলত না।
চাওয়ার মধ্যে কোনো প্রার্থনার আকুতি নেই।
যেন চাইতে হলো বলে চাইল।
নির্বিকার।

*
জীবন ওকে নির্বিকার করে দিয়েছে।
জীবনে ওর কোনো পালিশ নেই।
সেলাই করে আর তাপ্পি লাগিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে।

*
শ্রীকান্ত মনিদাস, তুমি আমার ভাই।
তোমার কোনো জাতি, দেশ, ধর্ম নেই।
দারিদ্র্য তোমার ধর্ম, দারিদ্র্য তোমার দেশ, দারিদ্র্য তোমার জাতি।
আমার করুনাময়ী মায়ের সন্তান।