প্রিয় নদী

নদীর ওপরে, নদীবক্ষে বেশ ক’টি সুখী দিন কেটেছিলো মৃদুমন্দ ঢেউয়ের দোলায়, নদীতীর প্রকৃতই সুখী গৃহকোণ ব’লে মনে হয়েছিলো; নদীর সময় কম থমকে দাঁড়াবার_ তবু নদী স্থির হ’য়ে কিছুটা থমকে সময় দিয়েছিলো, এতটা প্রশ্রয় আমি আশাও করিনি; আমার সৌভাগ্য এই স্বেচ্ছায় নদীই বক্ষে তার দিয়েছিলো ঠাই _ আতিথ্য, আদর, সুখ। নদী বলেছিলো : “ভুলে যেয়ো, আমার […]

সমাপ্তি

বস্তুরা পতিত হয় অথবা মলিন বিস্ফোরিত হয় না কখনো যে রকম সূর্যালোকে ফিকে হয় দ্রুত যেমন বালুকারাশি শুষে নেয় ফেনা এমন কি প্রেমের বিদ্যুচ্ছটা সাঙ্গ হয় না বজ্রের গর্জনে ঝামাপাথরের রুক্ষ মালিনো ফুলের সৌন্দর্য যেন সশব্দে বিলীন সবকিছু এমনই তো অবিকল এমনই রূপ নিতে থাকে। আমরা নিপতিত নৈঃশব্দে এমন বেটোফেনের মাথার চারপাশব্যাপী যে অপার নিঃশব্দ […]

জলভরা মেঘ চাই যখন খরায়

সবকিছু ডুবে যাক আজ : চেতনা, চিত্রিত নদী, গৃহস্থের ঘরদোর, ফসলের ক্ষেত, গাছপালা, ধানী মরিচের টাল, মননের নিধুয়া পাথার… নদীনালা ব্যেপে চাই আজ অথৈ জলের বিস্তার, জল চাই জীবনে-যৌবনে_জীবনকে ঘিরে চাই পরিব্যাপ্ত স্থির জলরাশি_ জল-থৈ-থৈ সি্নগ্ধ শাপলা-শালুকে ভরা দীঘিটিও চাই; প্লাবনেও ক্ষতি নেই; ফসলবিনাশী জল জানি একদিন খুব ক’রে আমাদের ক্ষেতে-ক্ষেতে ফসল ফলাবে; আবেগের সীমা […]

আলোয়-আঁধারে

ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে গাঢ় অন্ধকার প্রগাঢ় ঘুমের থেকে এই জেগে-ওঠা অর্থময় হয়ে ওঠে নগরে ও গ্রামে! আড়ে-দিঘে বেড়ে যায় সুচির রজনী, রজনীর বাড়াবাড়ি মানুষের ঘরে বেমানান বরাবরই মানুষের চোখে; চোখগুলি দোষী নয় বরং নির্দোষ মানুষের চোখ চায় কনে-দেখা আলো! কোন আলো লাগল তবে মানুষের চোখে? মানুষীর চোখে জাগে অনন্ত আঁধার! ভোরের কাগজ : শুক্রবার, […]

দুপুরের দূরবীন

এই দুপুরটি অন্যরকম, এই দুপুরটি বুকের উপর চেপে-বসা নষ্ট দুপুর_ এই দুপুরটি শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাসের দোদোল দোলায় অসহ্য এক ভ্রষ্ট দুপুর… এই দুপুরটি জীবনগ্রাসী : এই দুপুরটি আকাশউপুর কান্না জরায় দু’চোখ পুকুর! এই দুপুরটি বুকের ওপর বিশাল ভারী কৃষ্ণপাথর, জগদ্দল-ও বলতে পারো_ এই দুপুরটি কুরে খাচ্ছে হাড়মাংস ও মজ্জাসহ; এই দুপুরটি গলার কাছে অস্বস্তিকর আটকে আছে, […]

পহেলা বৈশাখ

মেঘের ডাকের সঙ্গে কাল আমারও সামান্য ডাক মিশে গিয়েছিল ভুলে! ভুল আমি সারা জীবন করেছি অনেক—ভুলে ভুলে ভরে আছে এত্তটুকু ছোট্ট লগবুক! তারও পরে অবিরাম ভুল করে যেতে ইচ্ছে করে! ভুল মানুষের কাছে হাত পেতে খেতে যাই চড় ও চাপড়—অথচ আশ্চর্য, পাই ধুলোমুঠি সোনা! যা চাওয়া উচিত নয় যার কাছে পেয়ে যাই অযাচিত মূল্যবান খনিজ […]

অভিমানী আঙুল আমার

সহস্র অভিমানী জীবন আমাদের। হাজারো পরিচয় আর সম্পর্কের বেড়াজালে বেড়াতে বেড়াতে ভুল হয়ে যায়। কিছু ভুল থেকে যায় মনের আড়ালে। অনেক না পাওয়া, অনেক ভুল বোঝাবুঝি আর অনেক আকাঙ্ক্ষার মৃত্যুতে সেসব সম্পর্কগুলো অভিমানের জন্ম দেয়। আমরা অভিমানী হয়ে যাই হাজারো নিয়মে। কখনও কখনও অনিয়মেও। পৃথিবীর কোনো সূত্র, কোনো মনোবিজ্ঞান দ্বারাই হয়তো সে অভিমানের আঙুল ছুঁতে […]

আমার মূর্ধন্যগুলো

আমার রেফ্গুলো যদি তুমি বাজেয়াপ্ত করো তবে আমি ‘বর্শা’ লিখবো কী দিয়ে? তোমার ঐ তেকোণা ‘র’গুলো দিয়ে? তো, বর্শার তীক্ষ্ম ফলাটা কোথায় পাবো? আর আমার প্রিয় ‘বর্ষা’ লিখবো কী দিয়ে? বৃষ্টির তীব্র ফোঁটাগুলো কি রেফ্ ছাড়া আঁকা যাবে? আমার খুঁতগুলোও কি নিয়ে নেবে? —তা-হলে তো আমার ‘ভবিষ্যত্’-ই অন্ধকার! আমার পূর্বপুরুষদের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল কোষাগারে ৫২টি দ্যুতিময় হীরক […]

ঘড়ির কাঁটার মতো

খুব ঘন কুয়াশার মধ্যে আমরা দুজন সোনালি কাঁকড়ার ক্ষুদ্র দাঁড়ার ওপর ঘণ্টা আর মিনিটের কাঁটার মতন এক হ’য়ে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছি— আমাদের সংকীর্ণ সাঁকোর নিচে সময় গড়ায়… তোমার মুখের মতো আর কোনো গাঢ় লাল ঘড়ি কখনো দেখিনি—নেই; আমাদের তড়িঘড়ি সংক্ষিপ্ত চুমোর মধ্যে কেবল দেখেছি স্বপ্নের বাস্তবে ঘড়ির যুগলে কাঁটা মিলেমিশে স্থির হ’য়ে আছে; ভবিষ্যতে কোনো […]

অপেক্ষা

কবির প্রতীক্ষা শেষ হয় না

মানুষ জীবনে যা চায়, যা কিছুর জন্য মানুষ অপেক্ষা এবং প্রতীক্ষায় থাকে_ তার সবটা কি পায়? সব স্বপ্নের রঙ মানুষ দু’হাতে পারে না আঁকড়াতে। নিজের সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট, একটা বিচ্ছিন্ন ধারণা তো বরাবরই ছিল আমার। কবি হবো_ এমন ধারণা কৈশোর উত্তীর্ণ বয়সেই স্থির করি এবং এমত জীবন যাপন আরম্ভ করি। আর বাবা এই ভাবনা ও […]