তোমার নিমগ্ন অগি্ন

নিস্তব্ধ প্রহর : তোমার নিমগ্ন অগি্ন এই শাদা চাদরের প্রান্ত বেয়ে উঠে আসে, অনায়াসে। দীর্ঘপ্রতীক্ষার কাল : আমার বুকের হু হু বাতাসের সঙ্গে লতিয়ে উঠছে রাত্রি; মাঝে-মধ্যে খুব ক’রে অনুভব করি নিজেরই ভেতরে উনুনের আঁচ_ গনগনে কয়লার লালে স্বভাবের সবটুকু উড়ে পুড়ে নিষিদ্ধ সংস্কৃতি! মানুষ তো ঝুঁকে থাকে খুব প্রিয় নগ্ন এক সংলগ্ন সত্তায় : […]

যাও, পত্রদূত

যাও পত্রদূত, বোলো তার কানে-কানে মৃদু স্বরে সলজ্জ ভাষায় এই বার্তা: “কোমল পাথর, তুমি সুর্যাস্তের লাল আভা জড়িয়ে রয়েছো বরতনু; প্রকৃতি জানে না নিজে কতোটা সুন্দর বনভূমি।” যাও, বোলো তার কানে ভ্রমরসদৃশ গুঞ্জরণে, চোখের প্রশংসা কোরো, বোলো সুঠাম সুন্দর শরীরের প্রতি বাঁকে তার মরণ লুকিয়ে আছে, অন্য কেউ নয়, সে আমার আকণ্ঠ তৃষ্ণার জল: চুলের […]

তোমার দু’চোখ শুধু জেগে থাকে

তোমার দু’চোখ শুধু জেগে থাকে, অন্য কিছু নয়— নিভে গেছে সকল প্রদীপ, সভ্যতার সূর্যাস্তের পর চারদিক বড়বেশি শুনশান—উড়ে গেছে ‘মূল্যবোধ’-নাম্নী সংরক্ষিত গ্রন্থের সকল পাতা— পৃথিবীর মূল্যবান গ্রন্থগুলি সফেদ কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়—বন্ধুত্বের সর্বশেষ রজ্জু ছিন্নভিন্ন, বিশ্বস্ত ব্যাংকের ভল্ট থেকে সঙ্গোপনে উধাও হয়েছে শেষ সোনাদানা, কংক্রিটের শক্ত বাড়িগুলি লন্ডভন্ড, মুখ থুবড়ে প’ড়ে আছে সব পথের […]

নত হও, কুর্নিশ করো

হে কলম, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হতে শেখো, তোমার উদ্ধত আচরনে চেয়ে দ্যাখো, কী যে দু:খ পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ, অতএব, নত হও, বিনীত ভঙিতে করজোড়ে ক্ষমা চাও, পায়ে পড়ো, বলো: কদ্যপি এমনটি হবে না, স্যার, বলো: মধ্যবিত্ত হে বাঙালী ভদ্রমহোদয়গণ, এবারকার মতো ক্ষমা করে দিন… বলো হে কলম, হে বলপেন, হে আমার বর্বর প্রকাশ-ভঙিমা- […]

জীবন একটি নদীর নাম

জীবন একটি নদীর নাম, পিতামাতার ঐ উঁচু থেকে নেমে-আসা এক পাগলা ঝোরা— ক্রমশ নিম্নাভিমুখী; পাথুরে শৈশব ভেঙে কৈশোরের নুড়িগুলি বুকে নিয়ে বয়ে চলা পরিণামহীন এক জলধারা— গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে বেলে-এঁটেল-দোআঁশ মাটি ভেঙে-ভেঙে সামনে চলা এক ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী; এই বয়ে চলা পথে বিভিন্ন বৃক্ষের সঙ্গে চলে দ্বিরালাপ; একবার এক বৃদ্ধ অশ্বথের সঙ্গে হয় তার অল্পক্ষণ স্থায়ী আদাব-সালাম […]

বৃষ্টি

খররৌদ্রময় এই দিন— শ্যামল বাংলায় বুঝি ফের নেমে আসে খরা! খরতাপে রুদ্ধশ্বাসক্ষুদ্র এই গ্রামীণ শহর, এ রকম এই দিনে চেতনায়ও খরার প্রদাহ— নির্বাচনে হেরে-যাওয়া প্রার্থী যেন: বিরক্ত, বিব্রত; এ রকম দুঃসময়ে এল বৃষ্টির শব্দের মতো সুখকর এই পত্র—প্রাগের প্রাচীর থেকে উড়ে! কুপিত, বিব্রতকর এই রোদে খামটি খুলিনি; আমি তো অপেক্ষা জানি: এই খররৌদ্রে কখনো কি […]

প্রতীক্ষা

এমন অনেক দিন গেছে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি, হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে- কোনো বন্ধুর জন্যে কিংবা অন্য অনেকের জন্যে হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো… এমন অনেক দিনই তো গেছে কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি- হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো একসঙ্গে বেরুবো।” এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি কোনো বন্ধু ঘোরের […]

ভালোবাসার সংজ্ঞা

ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা ভিতরে-বাহিরে দুজনের হেঁটে যাওয়া; ভালোবাসা মানে ঠাণ্ডা কফির পেয়ালা সামনে অবিরল কথা বলা; ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও মুখোমুখি বসে থাকা।

নগর ধ্বংসের আগে

নগর বিধ্বস্ত হ’লে, ভেঙ্গে গেলে শেষতম ঘড়ি উলঙ্গ ও মৃতদের সুখে শুধু ঈর্ষা করা চলে। ‘জাহাজ, জাহাজ’ – ব’লে আর্তনাদ সকলেই করি – তবুও জাহাজ কোনো ভাসবে না এই পচা জলে। সমুদ্র অনেক দূর, নগরের ধারে-কাছে নেই : চারপাশে অগভীর অস্বচ্ছ মলিন জলরাশি। রক্ত-পুঁজে মাখামাখি আমাদের ভালবাসাবাসি; এখন পাবো না আর সুস্থতার আকাঙ্খার খেই। যেখানে […]

লোকটি তবে কবি ছিলো?

সুখে তারও লোভ ছিলো -চিরকাল অ-সুখে ভুখেছে! মাথার অসুখ ছিলো, লোকটির -বুকের, দাঁতের- নিত্যসঙ্গী গিঁটেবাত, হাঁটতো তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে; শেষদিকে শ্বাসকষ্ট -নিঃশ্বাসের জন্যে একবুক বাতাসও তা ভাগ্যে বরাদ্দ ছিলো না! -লোকটির শরীরে অসুখ ছিল নানা -এজন্যে সে আজীবন লাঞ্চিত হয়েছে আর অপমান সয়েছে অনেক! সমাজও ছিলো না তার, বলতে গেলে, সামান্য প্রভাবও; লোকটির কোনো গুণই, […]