মিলনটুকুই খাঁটি

মিছেই তুমি করছ বিবাদ দিচ্ছ কঠিন আড়ি, তোমার কথার তুবড়ি তো শেষ চলো এবার বাড়ি; তোমার ক্রোধ তোমার দ্রোহ মলিন হবে রাতে, আমার পিঠেই নাচবে দু-হাত আনন্দে-আহ্লাদে; কিসের বিরোধ কিসের দ্রোহ শয্যা-পরিপাটি পুরুষ-নারীর মিলনই সব মিলনটুকুই খাঁটি।

তুমিঃ বিশ বছর আগে ও পরে

তুমি যে-সব ভুল করতে সেগুলো খুবই মারাত্মক ছিলো। তোমার কথায় ছিলো গেয়া টান, অনেকগুলো শব্দের করতে ভুল উচ্চারনঃ ‘প্রমথ চৌধুরী’ কে তুমি বলতে ‘প্রথম চৌধুরী’ ’ জনৈক উচ্চারণ করতে গিয়ে সর্বদাই ‘জৈনিক’ বলে ফেলতে । এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে- ভরা ছিলো তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুধুর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়ো- বেশি […]

নবীন কাঠুরের উক্তি

নিতান্ত নির্ভুলভাবে কোনো কাজ করতে পারিনি হাতের কুঠার ফেলে কাঠকাটা ভুলে বারবার দেখেছি বনের শোভা : বৃক্ষরাজি হরিৎ পত্রালি; পরিণামে অভুক্ত থেকেছি দীর্ঘ তিরিশ বছর। কাঠুরের ঘরে জন্ম, তবু, পারিনি কঠোর হতে; অবলীলাক্রমে বৃক্ষ কুঠারের আঘাতে-আঘাতে কেটে ফেলতে প্রাণে লাগে, পত্রপুষ্প শোভিত বনে ভুলক্রমে মিশে গেছি প্রাকৃতিক জীবন প্রবাহে।

জড় ও চৈতন্যের দ্বৈরথ

উৎস-মুখের স্বচ্ছ জলের তলে খড়কুটো নয়, পাথর পড়ে থাকে; প্রতিবন্ধক দারুণ প্রবল বলে নদীর উৎসে ক্ষিপ্র খরধারা। জলের মধ্যে ধাউর পাথররাশি জলের বাইরে অর্থহীন জড়; উষ্ণ জলের গতিচঞ্চলতা পাথর দাঁড়ায় রুদ্ধ করে দিতে; কিন্তু খুবই মজার ব্যাপার হলো পাথর শুধুই হচ্ছে পরাজিত। উৎস-মুখের ঠান্ডা পাথররাশি খুব কিছু নয়, ঠান্ডা পাথররাশি!! –

সোনার নূপুর বেজে যায়

এখন তো বৃষ্টিতে ভেজার বয়স আমার নেই সাহসও তো নেই— আষাঢ় মাসের এ-সময়ে অঝোর ধারায় শুনি সোনার নূপুর বেজে যায়, বাজে অনাদি ঘুঙুর; আনন্দে আপ্লুত গাছগাছালির পল্লব-পত্রালি আন্দোলিত হতে দেখি, যেন পুন কালিদাস-কাল সমাগত!—পত্রেপুষ্পে সুশোভিত প্রিয় বৃক্ষরাজি অপার আহ্লাদে ভিজছে… শুনি ফুল্ল আনন্দভৈরবী! বাঙ্গালার নরনারীগণ বুঝি সুখে নিদ্রা যায় উন্মুখর আনন্দ-বর্ষণে!—বর্ষা আজ সর্বব্যাপী মানুষে ও […]

বৃষ্টি

খররৌদ্রময় এই দিন— শ্যামল বাংলায় বুঝি ফের নেমে আসে খরা! খরতাপে রুদ্ধশ্বাসক্ষুদ্র এই গ্রামীণ শহর, এ রকম এই দিনে চেতনায়ও খরার প্রদাহ— নির্বাচনে হেরে-যাওয়া প্রার্থী যেন: বিরক্ত, বিব্রত; এ রকম দুঃসময়ে এল বৃষ্টির শব্দের মতো সুখকর এই পত্র—প্রাগের প্রাচীর থেকে উড়ে! কুপিত, বিব্রতকর এই রোদে খামটি খুলিনি; আমি তো অপেক্ষা জানি: এই খররৌদ্রে কখনো কি […]

তারা খুব চেনা লোক

আমি দু’টি লোককে চিনি… দু’জনই বা বলি কেন… আমি তো অনেক লোককেই চিনি, ঐ অনেকের মধ্যে আমি মাত্র দু’জনের কথাই বলবো… এই দুই ব্যক্তি ভিন্ন রকমের অভিন্ন পথিক, বাস্তবিক তারা খুব আলাদা আরব; অথচ পাঁচবার তারা একই মসজিদে এক আল্লাহকে ডাকে! এ-ছাড়া এদের মধ্যে লক্ষ্যযোগ্য আরো একটি মিল রয়ে গেছে… এবাদতখানা থেকে বেরিয়েই এরা একে […]

আমার লোকেরা গান গায়

আমার লোকেরা গান গায় আর সবজি চাষ করে- আমার লোকেরা গান গায় আর শীতের সবজি তোলে, শীতের সবজি তারা ঘরে তুলতে পারে না ট্রাকে তোলে; ট্রাকে তুলে তারা খুব বেশি পয়সা পায় না, বড়জোর উৎপাদন-ব্যয় উঠে আসে, যদি আসে, আসবেই উঠে ব্যয়টা এমন কোনো গ্যারান্টি মধ্যস্বত্বভোগীরা দেয় না, তাদের কী দায় কৃষকের মুখে তাকানোর? তবু […]

জন্মবৃত্তান্ত

“ক্ষুধার্ত চাষীর ঘরে জন্ম নিলো আজ এক কবি” -মোরগের উচ্চারণে ভোরের আজান; “কে সে শিশু?”-“জানো না সে কেমন মানুষ? কবি সে- তোমার কথা সর্বদাই বলবে জনে-জনে” -ব’লে আড়মোড়া ভাঙে এক সুবেহ্ সাদেকের পাখি; “তোমাদের কথা, ৰুধা ও ব্যাধির কথা রাষ্ট্র ক’রে দেবে দেশে ও বিদেশে” -ব’লে হালের বলদ দু’টি নিশ্চিনত্মে জাবর কাটে বিষণড়ব গোয়ালে৷ “স্বাগতম” […]

ময়ূর-আনন্দে মাতো

বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে— নিরন্তর ঝ’রে যাও অঝোর ধারায়; করুণায় আর্দ্র হয়ে মানবমণ্ডলে মিশে যেতে বাঞ্ছা হলে পূত ধারাজলে সিক্ত হতে হয়—হও অবিচল-মনে; (দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে জানি নাগরিক জন!) তোমার জল্লাদ-মন দ্রবীভূত হবে— করুণায় হবে সিক্ত নবধারাজলে! আর্দ্র হবে পোড়োজমি বর্ষণে-বর্ষণে, খরার প্রকোপ আছে ভূ-বাঙ্গালা জুড়ে— উর্বরতা নিঃশেষিত জরায়ু-প্রান্তরে। চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত খরা, শুধু খরা! বর্ষায় […]