নিঃশব্দ কোমল হাহাকার

ফাল্গুন প্রকৃতির মাতাল যৌবন; উদ্দাম, উত্তাল, উন্মীলিত; বসন্তকে আবিষ্কার করেন কবি। এই বসন্ত, এই ফাল্গুন কবির প্রথম প্রেম। তার শিহরণের মধ্যে, তার স্পন্দনের মধ্যে, তার জাগরণের মধ্যে ফাল্গুন প্রত্যক্ষ করেন কবি। হয়তোবা এভাবেই মানুষের মনে বসন্তের জন্ম। বসন্ত ছিল স্বর্গের নন্দনকাননে, ফুলে ফুলে সুরভিত, পারিজাত, অশোক [স্বর্গে কি অশোক আছে?] আরও আরও অমর্ত্যলোকের ফুলে, অপ্সরীদের […]

জীবনতৃষ্ণা

বহুক্রোশ হাঁটা পথিকের মতো আর জাগে না জলের তৃষ্ণা, মাঝে মাঝে শুধু একটু গলা ভেজানোর ইচ্ছা হয়; কিন্তু তখন কী সে তৃষ্ণা, ইচ্ছা করে শুষে নিই গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা অাঁজলা ভরে খেতে চাই পৃথিবীর সব নদী সমুদ্রের জল মনে হয় তাতেও মিটবে না তৃষ্ণা, নিষেধ অমান্য করে নেমে যাই মৃত্যু সরোবরে, এমন কোথায় সে আকুল […]

স্বপ্নভ্রমণ

এই হাত ধরো, আমরা নক্ষত্রপথে হেঁটে বেড়াই, মেঘমহলে বিচরণ করি পৃথিবীর বৃহত্তম জলরাশির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, এই হাত ধরো মুহূর্তে স্বপ্নভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। একটু উষ্ণতা দাও ঝমঝম বৃষ্টি হয়ে ঝরি, একবার সঞ্চায়িত করো স্পর্শের বিদ্যুৎপ্রবাহ আমি মূলসুদ্ধ কেঁপে উঠি, অর্ধেক এখানে রাখি অর্ধেক আকাশে উড়াই; এই হাত ধরো আমি হই জাদুমন্ত্র, আমি হই ম্যাজিক […]

যা ছিল অনন্ত মধুর

জীবনে যা ছিল খুব অনন্ত মধুর যা ছিল নিকট খুব, যা ছিল সুদূর, কাম্য যা ছিল এই মর্ত্যে, সংসারে লুকানো শব্দের বীজ আলোয় আঁধারে; আজ তাকে খুঁজি, পাই না কোথাও যা আছে তোমার তুমি তার কাছে যাও। তাকে দাও ভালোবাসা, তাকে দাও ছায়া সে অদৃশ্য বিমূর্ত হবে অপরূপ কায়া, তাই নিয়ে মেতে থাকো, বাঁধো ভাঙা […]

তুমি চলে যাবে বলতেই

তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে পাড় ভাঙার শব্দ শুনি- উঠে দাঁড়াতেই দুপুরের খুব গরম হাওয়া বয়, মার্সির কাঁচ ভাঙতে শুরু করে; দরোজা থেকে যখন এক পা বাড়াও আমি দুই চোখে কিছুই দেখি না- এর নাম তোমার বিদায়, আচ্ছা আসি, শুভরাত্রি, খোদাহাফেজ। তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন মাথা নেড়ে না, না বলো সঙ্গে সঙ্গে […]

ভালোবাসা বলতে আমি কী বুঝি

ভালোবাসা বলতে আমি কী বুঝি একটু ব্যাখ্যা করা দরকার কেন একটি জীবনভর শুধু ভালোবাসা ভালোবাসা করলাম, প্রেমে ও নারীতে এত বেশি মুগ্ধ হলাম আমি তারও নিশ্চয় একটি গূঢ় কারণ আছে; ভালোবাসার মধ্যে মানুষের জন্ম, নারীগর্ভ থেকে তার এই মর্ত্যে আসা নারী তার মাতৃস্নেহ, নারী তার প্রথম মা ডাক, এই নারী তার মাতৃভাষা, নারী তার এই […]

জন্মে জন্মে যেন

এই দেশ আমাকে যে এতো ভালোবাসে, এই মাটি এতো তার বুকের মমতা দিয়ে আগলে রাখে, ছায়া দেয় সিক্ত করে আমার জীবন; এই লতাগুল্ম ফুল ও উদ্ভিদ, এই পাখি ও পতঙ্গ রাখালের মর্মরিত বাঁশি রাখালের উদাসীন গান আমাকে এতো যে মাতিয়ে রাখে, এতো যে উদ্বুদ্ধ করে আমি আজ সেই ভালোবাসার জন্য অশ্রুজল ফেলি বড় ইচ্ছা করে […]

দেশমন্ত্র

আর কোন মন্ত্র জানি না, জন্মেই দু’চোখ মেলে তোমাকে দেখেছি হয়তো জন্মেরও আগে তোমাকে দেখেছি আমি বাংলাদেশ; এই হাজা মজা ডোবা ও পুকুর এই সারি সারি গাছের দেয়াল, এই নদীর উত্তাল নৃত্য তোমাকে দেখেছি আমি বাংলাদেশ এক জন্মেরও বহু জন্ম আগে, চোখ মেলে তোমাকে দেখেছি দেশ, চক্ষু বুজেও তোমাকে দেখেছি তোমার মানচিত্র আমি ভূগোলের বইয়ে […]

তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি

তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি কতোবার দ্বারস্ত হয়েছি আমি গীতিকবিতার, কতোদিন মুখস্ত করেছি এই নদীর কল্লোল কান পেতে শুনেছি ঝর্ণার গান, বনে বনে ঘুরে আহরণ করেছি পাখির শিস্ উদ্ভিদের কাছে নিয়েছি শব্দের পাঠ; তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি সংগ্রহ করেছি আমি ভোরের শিশির, তোমাকে লেখার মতো প্রাঞ্জল ভাষার জন্য সবুজ বৃক্ষের কাছে জোড়হাতে দাঁড়িয়েছি আমি- […]

শরৎ

শরৎ হচ্ছে বর্ষার দুঃখ, মেঘের দীর্ঘশ্বাস বৃষ্টি ফুরিয়ে গেছে তার, সে খুব গরিব, তার শুভ্রতার মধ্যে ধূসরতার গন্ধ হলুদ পাতার ঝরে পড়া; শরৎ বড় একা একা, শান্ত নিসঃঙ্গ সে শুধু স্থির পুকুরের মতো নিঃশব্দে বসে থকে, তার শুষ্ক মুখে জলের কোন কারুকাজ নেই বর্ষণের লাবণ্য নেই। এই শরতের জন্য মঝে মাঝে আমার বেশ মন খরাপ […]