বানভাসি ও নদীর গান

আকাশটা যেন রাগে গড়গড় করে উঠল। মেঘ জমেছে ভারী হয়ে। পাঁশুটে রঙের মেঘ হিংসুটে চেহারা নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখছে মাটির পৃথিবীকে। মানব সন্তান ও ভ্র কুঁচকে বিরত চোখে তাকায় ক্রুদ্ধ মেঘপুঞ্জের দিকে। মেয়েরা দল বেঁধে বিরক্ত চোখে তাকায় ক্রুদ্ধ মেঘপুঞ্জের দিকে। মেঘেরা দল বেঁধে আকাশ জুড়ে ভেসে আসে মাঠের ওপর দিয়ে। নদীর ওপরে এক ঝাপটা […]

দুঃখের দুঃস্বপ্ন ছুঁয়ে

শহরটা ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছে। ভীষণ খিদে পেয়েছে তার। ভালো-মন্দের ভেদ নেই। মানুষের প্রতি এ শহরটা যেন ভারী বিরক্ত। মাঝে মাঝেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের ছেলেপুলে। অথচ সারাটা দিনজুড়ে কী ভীষণ কাজের তাড়া। রাস্তাজুড়ে ব্যস্ত কর্মযজ্ঞে। এক টুকরো ঢিলের জন্যও জায়গা ছেড়ে দেয় না। এরই মাঝখান দিয়ে রিকশা, সিএনজি, বাস, অফিস-আদালতে ছুটতে থাকা গাড়ি, বড় বড় বাস, […]

আমি তো আমার গল্প বলেছি তুমি কেন কাঁদলে

বাড়িটা একেবারে আগের মতোই আছে। ইটের ওপরে পলেস্তারা দেয়া দেয়াল মলিন। রুক্ষ্ন, কর্কশ রোদ্দুর এসে রোজ সকাল-বিকাল সেখানে দাঁত বসিয়ে যায়। কিন্তু অযত্নে মলিন নয়। বাড়ির মানুষের ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়িটা এই রকম। সবচেয়ে যেটা চোখে লাগে, তা হলো চারপাশে বাড়িটার বাকি অংশ নিয়ে বড়সড় দশতলা বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। আধুনিক, মজবুত নকশায় বাড়িগুলো বেশ নজরকাড়া। […]

মায়ের মিনার থেকে বিশ্বের মিনার

মিনারটা আমার দিকে তাকায়। তার দৃষ্টিতে ঝরে পড়ে স্নেহ ও করুণা। জানি, এই দেশটাকে সে আমাদের মতোই ভালোবাসে। ওর বুকের ভেতরে গুমরে ওঠে কান্না, যখন এই সুন্দর দেশের মাটিতে ঘটে হানাহানি আর নিষ্ঠুরতা। সে যেন বলতে চায়, ওই যে আমি আগলে রেখেছি আমার সোনার সন্তানদের। দেখ তোমরা। শেখ। রক্ষা কর তোমাদের বিবেক। গর্জে ওঠ অন্যায়ের […]

ফুটবল আর আমি

কাণ্ডটা ঘটেছিলো এই ঢাকা শহরেই। বললে তোমরা বিশ্বাস করবে না, কিন্তু ঘটলো যে একেবারে আমার চোখের সামনে। তাহলে বিশ্বাস না করি কেমন করে বলো? ব্যাপারটা খুলেই বলি। ক’দিন ধরে বিশ্ব ফুটবলের মাতামাতি নিয়ে একেবারে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাবার জোগাড়। স্কুলে যাবার সময় দেখি দোকানে সাজানো কত কাপ-পেয়ালা, তাতে নানা দেশের ছবি। খেলোয়াড়দের ছবি আঁকা ক্লিপ, কাপড়ের […]

কালের অভিযাত্রী শান্তির পথে যাও

ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভার উঠিয়ে নেই। জানতে চাই। হ্যালো, কে বলছেন? হুঁ, জুবাইদা, আমি বলছি। নয়ন। এ রকম সম্বোধনই আমাদের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। কোনো জরুরি কথা মনে পড়লে যেমন, কোনো বিষয়ে জানতে হলে যেমন, তেমনি কোনো বিষয়ে মতামত বা সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজনে আমরা এভাবেই সম্বোধন করতাম পরস্পরকে। নয়ন যে কাজে হাত দিত, তার ভালোমন্দ, সত্য-মিথ্যা […]

এক কিশোরের খেলনা

মার্বেলগুলো হাতের মুঠোয় নাড়াচাড়া করে রুনু। ওগুলোর মধ্যে যেন কি একটা জাদু আছে। অনেকদিন ধরে ওগুলো তার কাছে। কখনও হারায়নি, রুনুও এমনভাবে আগলে রাখে যে, একটাও হারায়নি। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সময়ের নদী। কতবার কতগুলো ক্ষতি হলো। কিন্তু ওই মার্বেলগুলোকে নিরাপদে রাখতে কখনও ভুল করেনি রুনু। এ কথা যারা জানে, তারা গভীর সহানুভূতি নিয়েই মনে […]

কার প্রতিনিধি তুমি শিশু?

ছবিটা আমাকে ডাক দিলো। সে এক সুতীব্র মমতার তৃষ্ণায় হাতছানি দিলো আমাকে। শিশুটি একটি মুখ নয় শুধু। তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে যে অশ্রু, তা আমার হাত ছুঁয়ে গেল। একেবারে স্পষ্ট চোখের জল, যার স্পর্শে আমি শিউরে উঠলাম। আমার নিজের হৃদয় থেকে ডুকরে উঠল কান্নার হাহাকার। মরুভূমির লু হাওয়া কাঁপিয়ে দিলো আমার অনুভূতি। হ্যাঁ, সে […]

আলো দাও, অগ্নিপুষ্প

চিঠিটা বারবার পড়েও আমার বোধগম্য হয় না যে লোকটা কে, আর কী চায়? অফিসের ডেস্কের ওপরে চিঠির গুচ্ছ থেকে ওটা আবিষ্কার করেছি। চিঠিটা বলছেÑ আমি আপনার বন্ধু না হলেও দেশের জন্য আমারও রয়েছে কিছু অবদান। আমিও যুদ্ধ করেছি। দেশের জন্য। আপনার বন্ধু ইকবাল আমাকে চেনে। কেবল একটা সময়ের ব্যবধানে আমাদের পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু বেঁচে […]

একুশের ফুলগুলো

ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকেই কোকিলটা পাগল হয়ে ওঠে। এ দিকে কোকিলের মন কেমন করো ডাক, অন্য দিকে গাছগাছালির আড়ালে পাতায় পাতায় মহাহুল্লোড় তুলে দোয়েল শিস দিচ্ছে। ভোরবেলার বাতাসেও যেন উতলা হয়ে ওঠার ক্ষ্যাপামি। সব মিলিয়ে কারো গোপন ভালোবাসার ভাষা শোনা যায়। পেছনে কারো পায়ের শব্দ শুনে থেমে দাঁড়ালেন আফরোজা। কে যেন মস্তবড় বকুলগাছটার পেছনে লুকিয়ে […]