এক কিশোরের খেলনা

মার্বেলগুলো হাতের মুঠোয় নাড়াচাড়া করে রুনু। ওগুলোর মধ্যে যেন কি একটা জাদু আছে। অনেকদিন ধরে ওগুলো তার কাছে। কখনও হারায়নি, রুনুও এমনভাবে আগলে রাখে যে, একটাও হারায়নি। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সময়ের নদী। কতবার কতগুলো ক্ষতি হলো। কিন্তু ওই মার্বেলগুলোকে নিরাপদে রাখতে কখনও ভুল করেনি রুনু। এ কথা যারা জানে, তারা গভীর সহানুভূতি নিয়েই মনে রাখে ব্যাপারটা। রুনু নিজেকে কখনও একলা হতে দেয় না। ভাই এসেছে দেশে। দূর বিদেশে দীর্ঘদিনের প্রবাসী তিনি। বোনের জন্য মন উতলা হলো যখন, তখন লম্বা ছুটি নিয়ে দেশে এসে সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করবার প্রোগ্রাম বানালেন। রাত্রে বোনের বাড়ি একটু নিরিবিলি কথা, গল্প, স্মৃতিচারণ করতে বসে জানতে চাইলেন- রুনু তোর প্রাণের বন্দুরা সব কোথায়? রুনু কফি বানাতে বানাতে একটু থেমে গেল। চিনি মেশাতে মেশাতে চোখ তুলে তাকালো। বললো, তোমার মনে আছে! বড়ভাই, কি আশ্চর্য! মনে থাকবে না? এমন একটা মহৎ ঘটনা কি ভোলা যায়? তুই বল? বছরের শেষ মাথায় এসেই মনটা যেন কেমন হয়ে যায়। ঐ একরত্তি ছেলেটা যে একটা লিজেন্ড তা কেমন করে ভুলি? এবারে তাই তোদের দেখার জন্য মনটা ছটফট করে উঠলো। ভাইয়ের সরল স্বীকারোক্তি শুনে এক সময় রুনুর বুকের ভেতরটা যেন কেঁদে ওঠে। আস্তে আস্তে উঠে যায়, রুনুদের নতুন ফ্ল্যাটও আগের বাড়ির মতো বড় রাস্তার ঠিক সামনে। যেমন ছিল অনেক বছর আগে। যুদ্ধ আর হত্যার সে ছিল দুঃস্বপ্নের দিন। আনন্দের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠার মাঝখানে, মানুষের সব আশা কে ধূলিসাৎ করে দিয়ে ধেয়ে এসেছিল মানুষের আক্রোশ আর যুদ্ধ। ঘরগুলো তখন দুর্গ। আর ছোট-বড় সবাই যেন জল দিলো যুদ্ধের আগুনে। সেই আগুনে জলতে জ্বলতে প্রতি মুহূর্ত জুড়ে জুড়ে তৈরি হয়েছিল এক বিরাট মানচিত্র। চাকরিজীবী, ছাত্র, শিক্ষক, খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত নতুন শক্তির মুখোমুখি তখন। পিচঢালা বড় রাস্তা কেঁপে উঠছিল প্রতিবাদী মানুষের পায়ের শব্দে। মৃত্যু অথবা মুক্তি, কোনটা চেয়েছিল তারা? সারা বিশ্ব তখন অবাক চোখে দেখছিল এই দেশটিকে। রুনু তখন কলেজে পড়ে। অবাক করা আবেগ আর শক্তির মাঝে মিটিং-মিছিলে উচ্চকণ্ঠ সতীর্থদের সাথী সে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ওপর নেমে আসছে দিনদুপুরে আঘাত। স্বাধীনতার জন্য জেগে ওঠা জাতিকে অবরুদ্ধ করার জন্য মিছিলে গুলি চলছে। কারো কাছে তাদের কৈফিয়ৎ দেবার দায় নেই।
হ্যাঁ, তখনকার তুফান যেন অতীতের সব স্বার্থ, ধ্যান-ধারণা ধ্বংস করে একটিমাত্র স্বপ্ন- স্বাধীনতা চাওয়ার তীব্র প্রলয়। রক্ত¯œাত স্বাধীনতা।
জানালায় দাঁড়ালে আজও শিশু-কিশোরদের কলরব আর মার্বেল নিয়ে বড় রাস্তার ওপরে খেলার ধামাল আর চীৎকার কানে বাজে। এই এলাকার পুরানো বাসিন্দারা নানা ধান্দায় ব্যস্ত, জায়গার অভাবে নানা জায়গা থেকে মাথা গোঁজার জন্য একটা আধাভাঙা বসতি গড়ে নিয়ে থাকছে এখানকার দরিদ্র কিছু মানুষ। তাদেরই ঘরের শিশু-কিশোরগুলোর আস্তানা হলো রাস্তার পাশে। ঢিবিমার্কা মাটি এখানকার। মার্বেল খেলুড়েরা ওখানেই বন্দুদের সঙ্গে মার্বেল দিয়ে গাব্বু খেলতো। ঢাকা শহরে ক্রিকেট মওশুমে যেমন হুল্লোড় ওঠে, ওদের ফুর্তির চীৎকার কতকটা সেই রকম। দোতলার বারান্দা থেকে ওদের খেলার দিকে চোখ চলে যায় রুনুর। বেশ ভালোই লাগে তার। মাঝে-মধ্যে কলেজে যাওয়ার আগে দারোয়ানকে ডেকে রিকশা ধরতে বলে রুনু। তো দারোয়ানের যাওয়ার আগেই এক ছুটে রিকশা ডেকে আনে ছেলেটা। আপা আমি রিকশা আনছি। দারোয়ান চাচা আপনে বসেন। কখন যেন দুরন্ত ছোকরা আর তার সঙ্গীরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠেছে। সে খবর কেউ রাখে না। বিশেষ করে ওরা রুনুর অনুগত হয়ে গেছে। ওর মা রুনুদের বাসায় ছুটা কাজ করে। সেই সুবাদে ছেলেটাও কাছাকাছি দৌড়ে বেড়ায়। ছ্যাড়াডারে একটু কাজ কাম করতে কইয়েন আম্মা। অর বাপে তো একা পারে না। কিন্তু অয় কারো কথা হুনতো না। মহা অভিযোগ ওর মায়ের। রুনুর আম্মা বলেন, বাজারে পাঠাওনা। কত কাজ করতে পারবে। টুকটাক কজকর্ম করে অবশ্য তাজুল। সবচেয়ে বড় কথা ছেলেটার পড়াশোনা শেখার খুব আগ্রহ। বাজার থেকে বর্ণমালা বই এনে বসে বসে কসরৎ করে লেখার। ফাঁকে-ফোকরে বানান করে করে নামটা লেখা নকশা করে। যেদিন রুনু ওর লেখা দেখে একটা গোটা এক টাকার নোট পুরস্কার দিয়েছিল, সেদিন তার ফুর্তি দেখে কে? টাকাটা যতেœ রেখে দিয়ে বলেছিল, আপা আমি বড় হইয়ে আপনাগো মতন ল্যাহাপড়া শিখুম। ভাইজানের মতন মুক্তিযোদ্ধা হমু, দেইখেন।’
রুনুদের বাড়িতে একজন মুক্তিযোদ্ধা আসে-যায় এলাকায় এ খবর সবাই জানে। বাড়িটা সুবিধের নয়। বড়  রাস্তার ওপরে বাড়ি। সে বাড়ির মানুষগুলোও বিচিত্র।  হাসি-ঠাট্টা, গালগল্প, ধন্য ঘরের ছেলেদের আসা-যাওয়ায় যেন টগবগ করে ফুটছে অর্থাৎ সরকারের নেক নজরে রয়েছে এরা। বাড়ির মালিক ডাক্তার। হ্যাঁ, এই ডাক্তার মানুষটাও যেন অদ্ভুত। মাঝরাতে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় কারফিউ উপেক্ষা করে যাবার জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষটিকে সবাই শ্রদ্ধা করে। রুনু আর শিহাব দুই ভাই-বোন স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঢাকা শহরটা কেমন থমথমে, কুয়াশা আর ধোঁয়ার পর্দায় আচ্ছন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় ও জনজীবন খুবই স্বাভাবিকভাবে চলছে- এ ঘোষণা দিয়ে বহির্বিশ্বের  কাছে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সরকারি দফতরগুলো সর্বদা সোচ্ছার। রুনুর কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো আছে দেশটা। ভালো নেই দেশটা। তাই টহলদারী কায়দায় যখন তখন, যেখানে ইচ্ছা ঢুকে পড়ছে সেনারা। ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমনই এক বিকেলে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় দৌড়ে এলো তাজুল। আপা, ভাইয়ারে চইলা যাইতে কন। কি বলছিস পাগলের মতো? সে তো বাড়িতেই নেই। আমি জানি, ভাইজান আইজ সকালে আসছে। কাগজওয়ালা সাইজ্যা। শিগগির ওনারে অইন্য কোথাও পাঠাইয়া দেন। আমি নিজের কানে শুনছি অরা কওয়া-কউয়ি করতাছে, রাইতে আপনাগো এহানে আইবো … আপা, খুব সাবধান থাইকেন। খুব বিপদ।
তাজুল বলে যাবার জন্য পিছন ফিরতেই রুনু বলেছিল, তোকে না বলেছি, পকেটে মার্বেল নিয়ে ঘুরবি না? তুই এখন বাড়ি যা। তুই নিজেও কি খুব নিরাপদ? পালা এখন।
সন্ধ্যার মুখে শিহাব বেড়িয়ে ফিরল। রুনু আজ খুব ব্যস্ত। শিহাবের যুদ্ধদিনের বন্ধুরা কয়েকজন আজ সন্ধ্যায় আসবে। শহীদ হয়েছে যেসব মুক্তিযোদ্ধা তাদের কথা স্মরণ করবে। রুনুর যখন মায়ের জন্য মন খারাপ করে, তখন ওর কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা আসে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের গৃহহীন শেকড়ছেঁড়া মানুষদের পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করে নানা পেশায় তাদের যুক্ত করে একটা জীবন রক্ষাকারীর কাজ করেছে রুনু। ব্যাপারটা এমন যে, এভাবেই মানুষদের মধ্যে মানুষ খুঁজে পেয়েছে রুনু।
খাওয়া-দাওয়ার পর সব প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সবাই। তখন শিহাব বলে ওঠে- রুনু তোর প্রাণের বন্ধুদের কথাটা বলবি না?
কার কথা ভাইয়া? বলেই থমকে যায় রুনু। শুকনো গলায় বলে- আসছি এক্ষুনি।
সন্ধ্যার পরই রাস্তার ওপরের বাতিটা জ্বলে ওঠে। নিজের ঘরে রাখা মার্বেলগুলো একসঙ্গে মুঠোয় করে আনে রুনু। টেবিলে ছড়িয়ে দেয়। বলে, একটি নাম আমরা কখনও মনে করিনি। সে কি ভয়ে, না অবহেলায় কে জানে। কিন্তু আজ আমি বলবো। ওর নাম তাজুল, শহীদ তাজুল।
আরে বোকারাম! ঐসব খুনেদের সামনে কখনও থাকবি না। ধরা দিবি না। তোর তো প্রাণটা যাবেই, সেই সাথে আমরাও মরবো।
কি কন আপা? অরা আপনে গো বাড়ির দিকে আইলেই অগো কপাল সই কইরা এই মার্বেল ছুইড়া মারমু। তখন অরা যাইবো কই কনতো আমারে!
হেসে ফেলেছিল রুনু, দারুণ মুক্তিযোদ্ধা তো? আচ্ছা যা এখন।
কি হয়েছিল সেদিন? রুনু ভাবতেও চায় না। অথচ সারাদিন সারাবেলা ঐ দিনটাই তার বুকের মধ্যে ঝড় তোলে।
বিকেল বেলায় এসেছিল হানাদারদের সৈন্যরা। ওরা ছিল পাঁচজন। একজনকে গাড়িতে রেখে ওরা দরজায় ঠকাঠক ধাক্কা দিয়েছিল।
এখানে মুক্তি আছে? নেমকহারাম মুক্তি লোগ?
-জ্বী না। দরজায় দাঁড়ালেন রুনুর আম্মা।
আপনার সাহেব কোথায়?
-উনি ডাক্তার। বাইরে গেছেন। মা নিষ্কম্প গলায় বলে উঠলেন।
সাচ বোল রাহা হ্যায়? ভ্রুকুঁচকে তাকালো তাদের অফিসার।
জ্বী। এরই মধ্যে সিঁড়িতে দাঁড়ালো তাজুল। ওর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে রাস্তায় নামলো সৈনিক সদস্য। এখন রুনু কি করে? ওরা যদি ধরে নিয়ে যায় ওকে? নিজের লুকানো জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে একটা চীৎকার করে উঠেছিলো রুনু-তাজুল, চলে যা, বাড়ি যা, ছেলেটার কিশোর গলায় একটা দুর্বোধ্য শব্দ বেরিয়ে এলো। লোকটার দিকে কি যেন ছুঁড়ে মারলো তাজুল। ব্যথায় চীৎকার করে উঠল লোকটা। লোকাটার হাতের মুঠি থেকে প্রাণপণে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করতে করতেই কড়াক করে শব্দটা এসে ঘা দিলো। মুহূর্তের মধ্যে কেমন অসহায়ভাবে চীৎকার করে উঠলো তাজুল। মাটিতে পড়ে গেল শব্দহীন নীরবতায়। তখন মেঘলা বিকেল। রুনু দেখলো, আশপাশের গলির মধ্য থেকে দুই-একজন মানুষ বেরিয়ে এসে ছেলেটাকে ধরার চেষ্টা করতেই হিং¯্রভাবে হাতের বন্দুকটা তাক করলো লোকটা এখনই হয়তো আর এক দফা গুলি ছুড়বে। এক লাফে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালো।
জিপ গাড়িতে উঠে পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
তাজুলকে নিয়ে বুকফাটা আর্তনাদে ফেটে পড়ল সারা এলাকা। পলক ফেলার আগেই সর্বনাশ হয়ে গেল।
-ওর বন্ধুরা মার্বেলগুলো তুলে এনে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। বলেছিল, আপা এই গুলান রাখেন। তারপর থেকে ওগুলো আমার কাছে। কখনও হারায়নি। কিন্তু ওতো ছেলেমানুষ ছিল। কিন্তু ওর মধ্যে ছিল একজন সত্যিকার মানুষ। লড়াকু মানুষ। দেশের জন্য জীবন দেয়া মানায় ওকেই।
-শিশু, শিশুই পারে এভাবে জীবন দিতে। বললেন, একজন।
-না, আমি মনে করি ওর যুদ্ধ ছিল সত্যিকার শহীদের মতো। আমাদের যাতে বিপদ না হয়, সেজন্য ওর কাজ ছিল পাহারাদারের মতো।
মার্বেলগুলো হাতে নিয়ে শিহাবের বন্ধুরা কি যেন অনুভব করেন।
-খেলনা, কিন্তু খেলনা নয়। তাজুল যা বলেছিলো, তা-ই করেছে, বললো শিহাব।
মাঝরাতে নিজের ঘরের বারান্দায় বসে স্থিরভাবে অনেক কথা ভাবে রুনু। শেষ রাত্রির বাতাসে ভেসে আসে তারাদের উজ্জ্বল আলোর শিখা। নিঃসঙ্গ স্ফটিকের মতো আকাশের আয়নায় তাকিয়ে সব স্মৃতি ফিরে আসে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মাকে হারালো রুনু। আব্বা তো অনেক আগেই চলে গেছেন। কঠিন কঠোর এক জীবন তাকে সাথী করে নিয়েছে। পাড়ি দিচ্ছে দূর বিস্তৃত পথ। গন্তব্য কোথায় তা কখনও থেমে দাঁড়িয়ে ভাববার সময় পায়নি। নিজেকে যাচাই করে যখন বিচার করতে বসে তখন সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে মায়ের ¯েœহ ভরা মুখ, বাবার উজ্জ্বল দূরগামী দৃষ্টি। তারা যেন নীরবে বলে ওঠে- যা করেছিস, ঠিকই করেছিস। প্রাণপনে বাঁচার জন্য দরকার একটা হৃদয়। নিজেকে নিয়ে কিছু রচনা করার জন্য থেমে যাসনি। পাঁচজন অসহায় মানুষকে নিয়ে বাঁচবার ভিত গড়ে দিস।
-রুনু। তুই কি খুব ব্যস্ত? রুনু নিঃশব্দে চোখ মুছে ফেলে।
-কেন ভাইয়া, এসোনা, এস বোসো। ঘুম আসছে না?
-ভাবছি তোকে একটা কথা বলি। তাজুলের জন্য একটা কিছু করার দরকার। ওর নামে একটা বৃত্তি দেয়া যায় না?
-ভাইয়া, ওযে একাত্তরের শহীদ! অথচ আমরা কেউ কিছু করিনি। এটা এক ভীষণ ব্যর্থতা। তবে তোমার কথাই ঠিক। ওতো শুধু খবরাখবর আনা-নেয়া করতো, তাই নয়- আরও অনেক কিছু কাজ করেছে- তাই নয়? যদি ও সেদিন সিপাইটাকে মার্বেল ছুঁড়ে না মারতো, তাহলে তো ওরকমভাবে মরতো না।
-ঠিক বলেছিস। ওর জন্য সেদিন প্রাণে বেঁচে গেছি। সে কথা ভুলে থাকা অন্যায়। এই অপরাধবোধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, দীর্ঘশ্বাস ফেললো শিহাব। শেষ রাত্রির ঠা-া বাতাস এসে ছুঁয়ে  যায় ওদের। শুকতারা তার আকাশ পরিক্রমা শেষ করে ওদের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এক পশলা ঠা-া বাতাস এসে লাগলো মুখে। রুনু সামনে তাকিয়ে যেন স্পষ্ট দেখতে পায়। একটি সহাস্য কিশোরের মুখ। হেসে হেসে বলছে, ওরা আপনাদের ক্ষতি করতে আইলে এইগুলো দিয়া … এমন মাইর দিমু যে … না, না তুই এসব বুদ্ধি ছাড়। ওগুলো আর কাজে লাগবে না। ওগুলো আমি খুব যত্ন করে রেখেছি।
-ওঠ, রুনু, যা ঘুমোতে যা। শিহাব বললেন।
রুনু স্পষ্ট অনুভব করলো, হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে তাজুল। হাতের মুঠোয় জ্বল জ্বল করছে একমুঠো রঙিন মার্বেল। আকাশের ওপর থেকে আদম সুরত ¯েœহভরে তাকেই তাকিয়ে দেখছে। রুনু এখন দায়দায়িত্ব নিয়ে সবার রুনু আপা। আদম সুরতের আলোকিত নক্ষত্রম-লী যেন তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এক কিশোর যোদ্ধাকে, যে খেলতে খেলতে হয়ে উঠেছিল শহীদ তাজুল। এভাবেই তো ইতিহাস তৈরি হয়।