ভালোবাসা

জমিসহ বাড়িটা ডেভেলপারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে একটা ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে পুরনো আসবাবপত্র নিয়ে এসে উঠলেন কবীর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী হালিমা চৌধুরী। আগের বেশকিছু জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে আসতে হলো। কিছু বিলিয়ে দিলেন কাজের মানুষদের মধ্যে। ফ্ল্যাট বাড়িতে অত কিছুর জায়গা হবে না। তাছাড়া সবকিছুর প্রয়োজনও আগের মতো নেই। ছিমছাম অবস্থায় থাকবেন দু’জন, যে ক’দিন আছেন। কবীর চৌধুরীর বয়স পঁচাত্তর, তার স্ত্রী এ বছর সত্তরে পড়েছেন।
ফ্ল্যাটের এক প্রতিবেশী তারা আসার দু’দিন পরই এলেন। নাম মাহতাবউদ্দিন, তাঁর বয়সও সত্তরের ওপর। স্ত্রী নেই। ছেলের সংসারে থাকেন। কবীর চৌধুরীর মতো তিনিও অবসরভোগী। বেল টিপে ভেতরের ঘরে ঢুকে মেঝেতে এলোমেলো অবস্থায় থাকা জিনিসপত্র দেখে থমকে দাঁড়ালেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, আগেই এসে পড়লাম মনে হচ্ছে। এখনও জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখা হয়নি। আমি তাহলে আজ যাই। পরে আসব। তাড়াহুড়ার কী আছে? এসেছেন যখন প্রতিবেশী হয়ে, দেখা হবেই। কথাবার্তাও।
কবীর চৌধুরী অমায়িক হেসে বললেন, না তাতে কী হয়েছে? বসুন। এসেছেন যখন চলে যাবেন কেন?
শুনে মাহতাবউদ্দিন সাহেব বেশ কৃতার্থ হলেন বলে মনে হলো। পুরনো সোফায় বসতে বসতে বললেন, আমি কিন্তু বেশ বকবক করি। সারাক্ষণ কথা না বললে চলে না। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, স্ত্রী চলে যাওয়ার পর কথা বলার মানুষ পাই নে। ছেলে, ছেলেবউ চলে যায় অফিসে, নাতি-নাতনিরা স্কুলে যায় তাদের চেয়ে আরও আগে, সেই ভোরে। আমি যখন ঘুম থেকে উঠি, তখন বাড়িতে কাজের ছেলেটা আর বুয়া ছাড়া কথা বলার কেউ নেই। ওদের সঙ্গে কতক্ষণ কথা বলা যায়, কী নিয়েই-বা বলা যায় বলুন। বেশ ভালো হলো, আপনি এসেছেন। মাঝে মধ্যে চলে আসব। বিরক্ত হবেন না তো?
না, না। বিরক্ত হওয়ার কী আছে? আমারও তেমন কোনো কাজ নেই। টেলিভিশন দেখা ছাড়া।
ছেলে-মেয়ে? নাতি-নাতনি? তারা সব কোথায়? মাহতাবউদ্দিন ঘরের চারদিক জরিপ করে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
কেউ দেশে নেই। ছেলে আমেরিকায়, মেয়ে কানাডায়।
শুনে মাহতাবউদ্দিন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, অনেক বাবা-মায়েরই এখন এই অবস্থা। ছেলে-মেয়ে সব বিদেশে। একা দেশে পড়ে আছেন। নাতি-নাতনি নিয়ে অনেকের সঙ্গে থাকবেন, সে সুযোগ পাচ্ছেন না।
কবীর চৌধুরী বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। অনেকেরই এ অবস্থা। তবে আমাদের মনে হয় বেশিদিন একা থাকতে হবে না।
একা থাকতে হবে না? ছেলে-মেয়ে দেশে চলে আসছে? সে তো খুব ভালো কথা।
না। তারা আসছে না। আমরাই যাব। আমি আর আমার স্ত্রী। কানাডায় সিটিজেনশিপের জন্য দরখাস্ত করা হয়েছে। স্পন্সর আমাদের মেয়ে।
ও, তাহলে আপনারাও দেশ ছেড়ে চলে যাবেন? হ্যাঁ, অনেকে যাচ্ছে। না গিয়ে উপায় কী? তা আমেরিকান সিটিজেনশিপ না চেয়ে কানাডায় যেতে চাইছেন কেন? শুনেছি, ওদেশে বড্ডা ঠাণ্ডা। মাহতাবউদ্দিন কৌতূহল নিয়ে তাকালেন।
কবীর চৌধুরী বললেন, আমেরিকায় সিটিজেনশিপ পেতে অনেক সময় নেয়। গ্রিনকার্ড পেতেই লাগে তিন বছর। কানাডায় বেশ তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। সে জন্যই ওই দেশের সিটিজেনশিপের দরখাস্ত করা।
মাহতাবউদ্দিন একটু হতাশ হয়ে বললেন, তাহলে আপনাকে বেশিদিন পাচ্ছি না প্রতিবেশী হিসেবে!
এখনই যাওয়া হচ্ছে না। কানাডায় ফরমালিটি শেষ হতেও সময় নেবে। বলে কবীর সাহেব ভেতরের দিকে তাকালেন। রান্নাঘরে বাসন-কোসনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাহতাবউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, চা খাবেন, না কফি? দুটোই আছে।
চা, কফি? তা কফিই হোক। কিন্তু আপনাদের অসুবিধা হবে না তো? এই এসেছেন, হয়তো তৈজসপত্র এখনও বার করা হয়নি।
না, না। তা হবে কেন? আমরা দু’জন চা-কফি খাচ্ছি। কোনো অসুবিধা হবে না।
কফি আর বিস্কিটের ট্রে নিয়ে এলো কাজের ছেলে। পেছনে পেছনে এলেন হালিমা চৌধুরী। মাহতাবউদ্দিন সাহেব সোফা থেকে উঠতে যাচ্ছিলেন। হালিমা চৌধুরী দেখে বললেন, বসুন। বসুন।
কবীর চৌধুরী স্ত্রীর সঙ্গে মাহতাবউদ্দিনের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, আমাদের প্রতিবেশী। দেখা করতে এসেছেন।
হালিমা চৌধুরী বেতের চেয়ারে বসে নিয়ে বললেন, একা কেন? স্ত্রীকে সঙ্গে আনলেন না? পরিচয় হয়ে যেত।
মাহতাবউদ্দিন সাহেব কিছু বলার আগে কবীর চৌধুরী বললেন, তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন।
শুনে হালিমা চৌধুরী বিব্রত হয়ে বললেন, স্যরি।
মাহতাবউদ্দিন সাহেব ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, তার ইচ্ছা। ডেকে নিলেন। আমাকে কবে ডাকবেন_ সেই অপেক্ষায় আছি।
কবীর চৌধুরী সান্ত্বনার স্বরে বললেন, আমাদের সবাইকে যেতে হবে। আগে আর পরে।
মাহতাবউদ্দিন সাহেব কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ। তাই। আগে আর পরে।
রাতে কানাডা থেকে মেয়ে সুরমার ফোন এলো। সেখানে এখন সকাল। বলল, ক’দিন থেকে খুব বরফ পড়ছে। মাইনাস থার্টি টু।
মাইনাস থার্টি টু মানে ঠাণ্ডা কত হয়, তা হালিমা চৌধুরীর জানা নেই। শুনে বললেন, শীতে কষ্ট পাচ্ছিস? দেখিস যেন ঠাণ্ডা না লাগে।
সুরমা ফোনের ওপাশ থেকে বলল, ঘরের ভেতর থাকলে কোনো সমস্যা নেই। বিপদ হয় বাইরে গেলে। আর বাড়ির সামনে জমে থাকা বরফ পরিষ্কার করার সময়।
হালিমা চৌধুরী বললেন, অমন ঠাণ্ডা দেশে আমি আর তোর আব্বা থাকব কেমন করে?
সুরমা হেসে বলল, তোমরা দু’জন সারাক্ষণ ঘরের ভেতর থাকবে। বাইরে বেরুতে হবে না। সামারের সময় বের হবে। অটামে।
হালিমা চৌধুরী বললেন, তোরা কবে আসছিস ঢাকা?
সুরমা বলল, সামার ভ্যাকেশনে। পাঁচ মাস পর। তোমরা কি ফ্ল্যাটে সব গুছিয়ে ফেলেছ?
নাহ্। সময় নেবে। ধীরে সুস্থে বার করছি জিনিসপত্র প্যাকেট ও সুটকেস থেকে।
সুরমা বলল, হ্যাঁ। তাই করো। একসঙ্গে সবকিছু বার করার দরকার কী? আমি এসে পড়লে গোছগাছের যা বাকি থাকবে, সেসব সেরে ফেলব। ভাইয়া আর ভাবি বোধহয় এই সামারে দেশে যাবে না। বলেনি তোমাদের?
হ্যাঁ। বলেছে। পরে আসবে। নে ধর, তোর বাবার সঙ্গে কথা বল। শুধু আমিই কথা বলে যাচ্ছি।
সুরমার কথা বলা শেষ হতে না হতে আমেরিকা থেকে ছেলে মুঈনের ফোন এলো। ওরা দু’জন প্রায় একই সময় ফোন করে, বিশেষ করে উইকএন্ডে। মুঈন বলল, বাবাকে বলো স্কাইপে লাগাতে। তাহলে কথার সঙ্গে সঙ্গে চেহারাও দেখা যাবে।
হালিমা চৌধুরী বললেন, হ্যাঁ লাগাবো। ফ্ল্যাটে নতুন এসেছি তো। সময় নিচ্ছে। হয়ে যাবে।

কবীর চৌধুরী আর তার স্ত্রীর বয়স সত্তরের ওপর হলেও দু’জনের ক্রনিক কোনো অসুখ নেই। ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, হাঁপানির মতো অসুখে ভুগতে হচ্ছে না কাউকে। যারা শোনে খুব অবাক হয়। বলে, বেশ ভাগ্যবান আপনারা। এই বয়সে একেবারে রোগমুক্ত থাকা একটা মিরাকল।
হালিমা চৌধুরী হেসে বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা আর আপনাদের দোয়া।
অসুখ-বিসুখ না থাকলেও শুধু বয়স বেশি হওয়ার জন্য কানাডার ইমিগ্রেশন আপত্তি তোলে অনেক। জানতে চাইল, এত বয়সে এসে তারা কানাডায় কী করবেন? কোনো কাজ করতে পারবেন না। যার অর্থ হলো কানাডা তাদের কাজের বেনিফিট পাবে না। এতো গেল একটা দিক। অন্যদিক হলো বৃদ্ধ বয়সে তারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ফলে হাসপাতালের ওপর দায়িত্ব পড়বে চিকিৎসার। হেলথ কেয়ার সিস্টেম বয়োবৃদ্ধদের জন্য ভেঙ্গে পড়ার দশা। ওই অবস্থায় নতুন সিটিজেন এসে সেই বোঝা বাড়ালে আরও সমস্যা বাড়বে।
সুরমা ঢাকায় এসে এ কথা জানালো কবীর চৌধুরীকে। পাশে বসে হালিমা চৌধুরী শুনলেন। কবীর চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তাহলে আমরা মুঈনকে বলি, সে আমেরিকায় গ্রিন কার্ডের জন্য চেষ্টা করুক। সেদেশে বয়স হয়তো কোনো বাধা হবে না।
হালিমা চৌধুরী বললেন, হ্যাঁ। মুঈনকে তাই বলো। আমেরিকায় গেলে আমরা কানাডায়ও যেতে পারব বেড়াতে।
সুরমা ব্যস্ত হয়ে বলল, কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন একেবারে না করে দেয়নি। কিছু প্রশ্ন করেছে, তথ্য চেয়েছে। আমরা সেগুলোর উত্তর দেব।
হালিমা চৌধুরী বললেন, দুই দেশের জন্যই চেষ্টা করা হোক। যেখানে আগে হয়, আমরা সেই দেশে যাবো।

লিফটের দরজা খুলতেই কবীর চৌধুরী দেখলেন তাদের ফ্ল্যাটের সামনে মাহতাবউদ্দিন দাঁড়িয়ে। তাদের দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, বাইরে গিয়েছিলেন বুঝি? আমি ভাবছিলাম, এত সকালে কোথায় গেলেন দু’জন।
তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে কবীর চৌধুরী বললেন, কফি খেতে।
কফি খেতে! কোথায়?
কফি শপে। সোফায় বসে হাসিমুখে বললেন কবীর চৌধুরী।
কফি শপে, মানে দোকানে! কেন বাড়িতে কফি ছিল না? অথবা চা? আমাদের বাসায় আসতে পারতেন। কফির জন্য দোকানে যেতে হবে কেন? মাহতাবউদ্দিন অবাক হয়ে বলেন।
হালিমা চৌধুরী বললেন, ওটা আমাদের পুরনো অভ্যাস। মাঝে মাঝেই দোকানে গিয়ে কফি খাই।
শুনে ভ্রূ কুঁচকালেন মাহতাবউদ্দিন। তারপর বললেন, আর কী কী করেন দু’জনে মিলে? মানে এ ধরনের পাগলামি? তরুণদের মতো?
হালিমা চৌধুরী বললেন, লেকের পাড়ে বসে বাদাম খাই। কখনও ফুচকা।
শুনে মুখ হাঁ হয়ে যায় মাহতাবউদ্দিন সাহেবের। তিনি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে দু’জনকে দেখেন। যেন নতুন পরিচয় হলো। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, আপনারা এখনও রোমান্টিক। দারুণ রোমান্টিক। এই বুড়ো বয়সেও। কফি শপে গিয়ে কফি খান। লেকের পাড়ে বসে ফুচকা! বেশ আছেন। তা বাড়িতে কফি আছে তো? থাকলে এই বেচারাকে দিন এক কাপ।
হালিমা চৌধুরী হেসে বললেন, নিশ্চয়ই দেব। বসুন। বলে তিনি ভেতরে চলে গেলেন।
বিকেলে ফ্যামিলি রুমে বসে বসে টিভিতে ভিডিও থেকে সিনেমা দেখছেন দু’জন। খুব তন্ময় হয়ে আছেন, কেউ কথা বলছেন না। শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দটা শোনা যায় কি যায় না। হালিমা চৌধুরী একটু পরপর শাড়ির আঁচল টেনে চোখ মুছছেন। কবীর চৌধুরীর চোখও ভিজে এসেছে। সিনেমা শেষ হলে দু’জনে চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষণ। হালিমা চৌধুরী ভাবি প্রণয়ে বললেন, কতবার দেখলাম অগি্নপরীক্ষা? সেই মুকুল সিনেমায় প্রথম দেখা নিয়ে?
কবীর চৌধুরী বললেন, অসংখ্যবার। গোনা নেই।
হালিমা চৌধুরী চোখ মুছে বললেন, এই বয়সেও চোখ ভিজে আসে। কী অভিনয় দু’জনের!
কবীর চৌধুরী বললেন, সর্বকালের সেরা রোমান্টিক জুটি।
হালিমা চৌধুরী ডিভিডি বন্ধ করতে করতে বললেন, সুচিত্রার অভিনয়_ মনেই হয় না, অভিনয় করছে। এত সাবলীল। দুঃখের দৃশ্যে চোখে পানি ভরে আসে এখনও।
কবীর চৌধুরী বললেন, হ্যাঁ।

হাসপাতালে ডাক্তার খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন। হালিমা চৌধুরীর বেড থেকে সরে এসে কবীর চৌধুরীকে বললেন, একটু বাইরে আসেন। কথা আছে।
ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন কবীর চৌধুরী। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, আর ইউ শিওর!
ডাক্তার সাহেব বললেন, হ্যাঁ। তারপর বললেন, আপনার ওয়াইফকে বলতে পারেন। এটাই নিয়ম। রোগীকে বলা হয়।
কবীর চৌধুরী মাথা নাড়লেন। মাটির দিকে তাকিয়ে বললেন, না। বলার দরকার নেই। কী হবে? শুধু শুধু মন খারাপ করবে।
ডাক্তার বললেন, মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নেবেন। শেষ ইচ্ছা কিছু থাকলে তার কথা বলবেন।
কবীর চৌধুরী এবার শুধু মাথা নাড়লেন। কিছু বললেন না। তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে। ভেঙে পড়েছেন, এমন মনে হচ্ছে।
রাতে সুরমার ফোন এলো। খুব খুশি মনে হলো তাকে। উচ্ছ্বসিত স্বরে বলল, তোমাদের দু’জনের সিটিজেনশিপ হয়ে গিয়েছে বাবা। আজই জানাল।
কবীর চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর ভাঙা গলায় বললেন, একটা খারাপ খবর আছে মা। কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না!
শুনে সুরমা আর্তনাদ করে উঠল। চিৎকার করে বলল, না, না। ডাক্তার নিশ্চয়ই ভুল করেছেন। তাকে ভালো করে দেখতে বলো। আমরা আসছি। ভাইয়াকে বলেছো? তাকেও জানাও। সেও আসবে।

বসার ঘরে সবাই বসে আছে। কবীর চৌধুরী, তার ছেলে মুঈন, মেয়ে সুরমা। সবার মাথা মেঝের দিকে নামানো।
সুরমা মাথা তুলে সবাইকে দেখল। তারপর কবীর চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, জিনিসপত্রগুলো বাঁধা-ছাঁদা শুরু করে দিই। মায়ের কাপড়-চোপড়গুলো আলাদা করে রাখা হবে।
কবীর চৌধুরী উঠে গিয়ে টেলিভিশনের ওপর রাখা হালিমা চৌধুরীর ছবিটা হাতে নিয়ে শার্টের কোনা দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বললেন, ধুলো পড়েছে। ময়লা দেখাচ্ছে। ঘরের ভেতর এত ধুলো কোথা থেকে আসে?
সুরমা তার বাবার কাছে এসে বলল, তোমাকে আমাদের সঙ্গেই নিয়ে যেতে চাই।
কবীর চৌধুরী স্ত্রীর ছবিটা টেলিভিশনের ওপরে রাখতে রাখতে বললেন, কোথায় নিয়ে যেতে চাস?
কেন, কানাডায়?
ওহ, কানাডা। তারপর বললেন, না থাক।
কেন, যাবে না বাবা? এতদিন যেতে চেয়েছো?
কবীর চৌধুরী সোফায় বসে নিয়ে বললেন, ওখানে কঠিন শীত। বড় ঠাণ্ডা।