বুকের মধ্যে আশাবৃক্ষ

লোকে বলে – সংসার ভবের হাট; এ বড় লাগসই কথা। মানুষ আসে আর যায়, যায় আর আসে; কিন্তু কি তাই? – আবার যে আসে পুরোনো কি মানুষটাই ঘুরে আসে, নাকি নতুন মানুষ আসে? মানব-জীবনধারার কথা যদি হয়, তবে নতুনই তো আসে, তার নতুন গল্প নিয়ে; সে গল্প একই সঙ্গে নতুন এবং পুরোনো। হায়, এই জীবনের […]

এখন জামগাছটাই শুধু কাঁদছে

মান্দারবাড়ি আটই ডিসেম্বর মুক্ত; যুদ্ধ শেষে আকবর হোসেন বাড়ি ফিরে ঘরের কোণে তার বাবার কঙ্কাল পায়; বাবা কিছুতেই গ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি, কঙ্কালটি দেখে মনে হয় অন্তত দু’মাস আগে ঘটনাটি ঘটে। দেহ থেকে মাংস খসে পড়ে গেছে; দেহটি যেভাবে অন্তিমকালে বসে পড়েছিল ঠিক সেইভাবে ঠিক সেই কোণে কঙ্কালটি স্থাপিত, আর মাথার খুলি গলার হাড় […]

এক কিশোরের খেলনা

মার্বেলগুলো হাতের মুঠোয় নাড়াচাড়া করে রুনু। ওগুলোর মধ্যে যেন কি একটা জাদু আছে। অনেকদিন ধরে ওগুলো তার কাছে। কখনও হারায়নি, রুনুও এমনভাবে আগলে রাখে যে, একটাও হারায়নি। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সময়ের নদী। কতবার কতগুলো ক্ষতি হলো। কিন্তু ওই মার্বেলগুলোকে নিরাপদে রাখতে কখনও ভুল করেনি রুনু। এ কথা যারা জানে, তারা গভীর সহানুভূতি নিয়েই মনে […]

কয়েক কাপ চায়ের গল্প

ছোটবেলায় আম্মাদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া ছিল খুবই একটা আনন্দের ব্যাপার। রিকশায় যেতে হলে তো কথাই নেই। রংপুরের রিকশাগুলো ঢাকার রিকশার মতো খাড়া নয়। যাত্রীর পায়ের কাছে বিস্তর জায়গা। সেখানে পিঁড়ি পেতে আম্মাদের পায়ের কাছে বসে বেড়াতে গেছি কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায়, বেশ মনে পড়ে। সেই বেড়াতে যাওয়ার প্রধান আকর্ষণ ছিল চা-নাশতা। চা জিনিসটা অবশ্য বড়দের জন্য […]

সমরেশ

প্রায় কুড়ি বছর পরে সমরেশের সঙ্গে দেখা হল। সে আমাকে চৌরঙ্গীর একটা হোটেলে নিয়ে একটা নিরিবিলি কোণ বেছে বার করল। আমরা বসলাম দু’জনে। সমরেশ বল্লে : মাঝে-মাঝে খেতাম। অনেক দিন তোমার সঙ্গে দেখা নেই। তুমি জান না আমি মদ ধরেছিলাম। খুব বেশি খেতাম না অবিশ্যি কখনও; কিন্তু নেহাৎ কমও খাওয়া পড়ত না। বাইরে গিয়ে মদ […]

ভীষণ পাজি পিঁপড়া-ছেলে

টিপরা খুব মুশকিলে পড়েছে। সে একটা বয়ামে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু আর বেরোতে পারছে না। কাচটা ভীষণ পিচ্ছিল। আর টিপরা পড়ে আছে একদম বয়ামটার তলায়। ছয় পা দিয়ে সে যে পিলপিল করে উঠে পড়বে, তা সম্ভব হচ্ছে না। পা পিছলে যাচ্ছে। তার ভীষণ কান্না পেল। সে পিঁপিঁ করে কাঁদতে লাগল। কিন্তু বয়ামের মুখ বন্ধ। তার কান্না […]

আমার একটা পোষা দৈত্য আছে

দুপুরবেলা তপু একাই থাকে বাসায়। স্কুল ছুটির পর স্কুল থেকে সে আসে রিকশাভ্যানে। একটা রিকশাভ্যানে আসে তারা আটজন। ভ্যানচালকের নাম হবিবর, তারা ডাকে হবিবর মামা বলে। রিকশাভ্যানটা দেখতে খাঁচার মতো, লোহার জাল দিয়ে ঘেরা। তপুকে হবিবর মামা তাদের বিল্ডিংয়ের গেটে নামিয়ে দেন। তপু তিনতলা পর্যন্ত হেঁটে ওঠে। কলবেল টেপে। তখন মর্জিনা খালা গেট খুলে দেন। […]

কফিচুমু

কান্তা, তোমাকে খুব মনে পড়ছে আজ। সেই রাতের মতো আজ রাতেও কি আমার ঘুম হবে না? বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, পাশে নার্গিস ঘুমুচ্ছে নিশ্চিন্তে, পাশের ঘরে দুই ভাই পরশ আর পাভেলও নিশ্চয়ই ঘুমে কাদা হয়ে আছে। আমার ঘুম আসে না। আমার তোমার কথা মনে পড়ে। আমি বিছানা ছাড়ি, ডাইনিংয়ে গিয়ে গেলাসে পানি ঢেলে খাই, একবার বারান্দার […]

মিতাপু

সত্য বটে আজ আর তাকে ভালোবাসি না, কিন্তু একসময় কী ভীষণ ভালোই না তাকে বেসেছিলুম… পাবলো নেরুদা। মিতাপুকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। সেই মিতাপু। এ কি সেই মিতাপু! রাতের বেলা গেছি বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে। দিনের বেলা হরতাল। রাতের বেলা ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষা হচ্ছে। আমার মেয়ে রিমঝিম পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে নিয়ে এই রাতের বেলা বসুন্ধরা আবাসিক […]

আজব সাজা

‘পণ্ডিতমশাই, ভোলা আমায় ভ্যাংচাচ্ছে।’ ‘না পণ্ডিতমশাই, আমি কান চুলকোচ্ছিলাম তাই মুখ বাঁকা মতো দেখাচ্ছিল!’ পণ্ডিতমশাই চোখ না খুলিয়াই অত্যন্ত নিশ্চিন্তভাবে বললেন, ‘আঃ! কেবল বাঁদরামি! দাঁড়িয়ে থাক।’ আধ মিনিট পর্যন্ত সব চুপচাপ। তারপর আবার শোনা গেল, ‘দাঁড়াচ্ছিস না যে?’ ‘আমি দাঁড়াব কেন?’ ‘তোকেই তো দাঁড়াতে বলল।’ ‘যাঃ আমায় বলেছে না আর কিছু! গণশাকে জিজ্ঞেস কর? কিরে […]