কেরানিও দৌড়ে ছিল

৬. ঘুম এসেছিল কী আসে নাই, নির্ণয় নাই; হস্তিবাড়ির এই কুটির, কুটিরের চালার নিচে তার বাসর, মদিনার সঙ্গে কী এক যুবতীর সঙ্গেই তার ঝাঁপবন্ধ একাকী এই প্রথম রাতটিতে, ঘুম অথবা জাগরণের ভেতরেই স্বপ্ন আসে। স্বপ্নে কোনো ছবি নয়, কেবল একটি কণ্ঠস্বর। আর কার? সেই রুহিতনের! স্বপ্নের ভেতর রুহিতনের খসখসে স্বর, মধুনিস্রাবী স্বর আব্বা রাজি না […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

কেরানিও দৌড়ে ছিল

৫. নান্না আর হাকিমদ্দি, কেরানির প্রাণের দুই বন্ধু। সেই কবে হস্তিবাড়ি প্রাইমারি ইশকুলে একসঙ্গে পড়তো তারা, ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় কেরানি যখন জলশ্বেরীর হাই ইশকুলে পড়তে যায়। নান্না আর হাকিমদ্দি তাই বলে কেরানিকে ভোলে নাই। যুবক হয়ে যাওয়ার পরেও যোগাযোগটা থেকে যায়। জলেশ্বরী আরো পরে ঢাকা চলে যাওয়ারও পরে কেরানি যখনই হস্তিবাড়ি আসতো তারা কোথা থেকে […]

কেরানীও দৌড়ে ছিল

কেরানিও দৌড়ে ছিল

৪ বৃষ্টি! বৃষ্টি! কী বৃষ্টি! সোমবার থেকে নেমেছে তো শুক্রবারেও তার জিরেন নেই। টানা পাঁচদিন। বড় বড় মানকচুর পাতা কেটে মাথায় ধরে পথে এখন লোক। আধকোশা নদী থৈ থৈ। ভাগ্যে এখন বাঁধ দিয়েছে সরকার, নইলে নদীর পাগল ধাক্কায় পাড়ের বাড়িঘর ধসে পড়ত নদীর বুকে। বৃষ্টিমাথায় কেরানি এসে ঘাটে দাঁড়ায়। জলেশ্বরী বাস ইস্টিশান থেকেই বৃষ্টি দেখে […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

৩ মঙ্গলবার! দেশের বাড়িতে পেঁৗছুতে হবে মঙ্গলবারেই, বাবার চিঠিতে আদেশ। লঙ্ঘন করার উপায় নাই, সাধ্যও নাই কেরানির, বাবার কথা উপেক্ষা করার ইতিহাস তার নাই। আমি এখন অচল আতুর হয়ে পড়েছি, সংসারের ভার এখন তোমার যুবক ছেলের প্রতি কোনো বাবা যদি এমন ঘোষণা দেয়, একালের ছেলে ক’জন তা মাথা পেতে নেয়? বরং অবিলম্বে একটা ছুতো ধরে […]

কেরানীও দৌড়ে ছিল

কেরানিও দৌড়ে ছিল

২ বুড়িগঙ্গা! নামেই প্রমাণ একদিন গঙ্গা ছিল এই খাতে। সেই গঙ্গা, শরীর পবিত্র হয় যে-জলে গাহনে, যে জলে চিতাভস্ম বিসর্জিত হয়। নারী যুবতী থেকে ক্রমে বুড়ি হয় তার একই শরীরে। নদীর বয়স হলে নদী দেহ ছেড়ে তার যৌবন নিয়ে সে অন্য খাতে যায়। এখন এ বুড়িগঙ্গাও আর সেই শুদ্ধজলের গঙ্গা নয়। এখানে গাহনে আর শুদ্ধ […]

কেরানিও দৌড়ে ছিল

১. তাকে তবে কেরানিই বলা যাক, কেরানি বলেই ডাকা হতে থাক। একটা ভালো নাম আছে, ডাকনামও আছে বা ছিলো_ কিন্তু কেরানিটাই বহাল হয়ে যায় তার নাম হিসেবে। লঞ্চের চাকরিটা ছেড়ে দেবার বা চলে যাবারই বহু বহু দিন পরেও, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই কেরানি লেজুড় তাকে ছাড়ে না। প্রকাশ্যে হয়তো কেরানি কেউ উচ্চারণ করে না, […]

শেষের কবিতা-১৭

১৭ কলকাতার কলেজে পড়ে যতিশংকর। থাকে কলুটোলা প্রেসিডেন্সি কলেজের মেসে। অমিত তাকে প্রায় বাড়িতে নিয়ে আসে, খাওয়ায়, তার সঙ্গে নানা বই পড়ে, নানা অদ্ভুত কথায় তার মনটাকে চমকিয়ে দেয়, মোটরে করে তাকে বেড়িয়ে নিয়ে আসে। তার পর কিছুকাল যতিশংকর অমিতর কোনো নিশ্চিত খবর পায় না। কখনো শোনে সে নৈনিতালে, কখনো উটকামণ্ডে। একদিন শুনলে, অমিতর এক […]

শেষের কবিতা-১৬

১৬ একটি ছোটো চিঠি এল লাবণ্যর হাতে, শোভনলালের লেখা : শিলঙে কাল রাত্রে এসেছি। যদি দেখা করতে অনুমতি দাও তবে দেখতে যাব। না যদি দাও কালই ফিরব। তোমার কাছে শাস্তি পেয়েছি, কিন্তু কবে কী অপরাধ করেছি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট করে বুঝতে পারি না। আজ এসেছি তোমার কাছে সেই কথাটি শোনবার জন্যে নইলে মনে শান্তি পাই […]

শেষের কবিতা-১৫

১৫ দুই সখী যোগমায়ার বাগানে বাইরের দরজা পার হয়ে চাকরদের কাউকে দেখতে পেলে না। গাড়িবারাণ্ডায় এসে চোখে পড়ল, বাড়ির রোয়াকে একটি ছোটো টেবিল পেতে একজন শিক্ষয়িত্রী ও ছাত্রীতে মিলে পড়া চলছে। বুঝতে বাকি রইল না, এরই মধ্যে বড়োটি লাবণ্য। কেটি টক্‌ টক্‌ করে উপরে উঠে ইংরেজিতে বললে, “দুঃখিত।” লাবণ্য চৌকি ছেড়ে উঠে বললে “কাকে চান […]

শেষের কবিতা-১৪

১৪ এতদিন পরে অমিত একটা কথা আবিষ্কার করেছে যে, লাবণ্যর সঙ্গে তার সম্বন্ধটা শিলঙ-সুদ্ধ বাঙালি জানে। গভর্মেন্ট্‌ আপিসের কেরানিদের প্রধান আলোচ্য বিষয়–তাদের জীবিকাভাগ্যগগনে কোন্‌ গ্রহ রাজা হৈল কে বা মন্ত্রিবর। এমন সময় তাদের চোখে পড়ল মানবজীবনের জ্যোতির্মণ্ডলে এক যুগ্মতারার আবর্তন, একেবারে ফাস্ট্‌ ম্যাগ্নিচ্যুডের আলো। পর্যবেক্ষকদের প্রকৃতি অনুসারে এই দুটি নবদীপ্যমান জ্যোতিষ্কের আগ্নেয় নাট্যের নানাপ্রকার ব্যাখ্যা […]