জল পড়ে পাতা নড়ে

আমার জন্ম হয়েছিল এক বর্ষণমুখর রাতে। সম্ভবত এ জন্যই বৃষ্টির শব্দ আমার অন্তরাত্মায় একটা ঝংকার তোলে। বৃষ্টির ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আমাকে এখনো আকুল করে। আমি যদি কবি না হতাম, তাহলে সংগীতজ্ঞ হতাম—এটা আমার ধারণা; কল্পনাও বলা যায়। আমি অতি অল্পে তুষ্ট হই না। সর্বদা আমার মধ্যে খেলা করে ভাষার ব্যঞ্জনা, ব্যাকুলতা। একই সঙ্গে স্বপ্নের ভেতরে চলার উন্মাদনা। […]

বৃষ্টির বিবৃতি

তোমার তুলনা মতে নৈশব্দের পাথর ফেটেছে নিরুত্তর শিলাস্তর তবু আমি স্পর্শ করে বুঝি দিনান্তের তাপটুকু লেগে আছে পাষানে খানিক, নির্মম আবেগে তাই গ্লানিতেই গ- চেপে ধরি। কবে যে তোমার চোখ পৃথিবীর প্রথম আগুনে লোভীর জিহ্বার মতো তুলে নীল শিখার ঝিলিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অবিরাম চুম্বনে চাপনে আমার বিদীর্ণ ওষ্ঠে লেপে দেবে রক্তের লালচ এখনো তেমনি আছি […]

তোমার মধ্যেই আমি

‘তুমি যে তুমি ওগো এই তব ঋণ, আমি মোর প্রেম দিয়ে শুধি চিরদিন’। বন্ধু পুরুষ হলে, বন্ধুত্বের আবেগে আমরা আপনা থেকে সহজেই তুইয়ে চলে যাই। আর বন্ধু যদি নারী হয় তাহলে আমরা তাকে ‘তুই’ বলি না; বলি, তুমি। ‘তুমি’র মধ্যে একটা নীরব, প্রায় নিঃশব্দ চুম্বনের ধ্বনি আছে। আমরা ‘তুমি’ বলতে বলতে নারীর অতি নিকটে পেঁৗছে […]

শাহীন রেজা চিরচেনা সত্যনগর

(জন্ম : ২৯ মে ১৯৬২) যেসব তরুণ প্রতিভাবান কবি আমার মতো প্রায়ান্ধ দৃষ্টিশক্তির মানুষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শাহীন রেজা তাদের অগ্রগণ্য কবি-প্রতিভা। তিনি মূলত প্রেমের কবি। তা সত্ত্বেও শাহীনের কবিতায় যে নিগর্স চিত্র পরিস্ফুট হয় তা মনোমুগ্ধকর। আগ্রহ সৃষ্টি করে এমন কবি-তারুণ্য সময়ে না খুঁজলে সহজে আবিষ্কার করা যায় না। শাহীন রেজা স্পষ্টতই প্রতিভাত হয়েছেন […]

নীলের শিথানে

যে শাদা দেখি ঐ বকের পাখাতে সে রঙ চায় ওকি আকাশে মাখাতে বোঝে না পাখি সে কি নীলের শিথানে কী ফুল ফুটে আছে আকাশে-বিতানে? আলেয়া ঝিকিমিকি সন্ধ্যারাতে যে নদী বয়ে যায় মনের অতলে কে গোনে ঢেউ তার রূপালি সে জলে। কে অাঁকে বনে ঐ সবুজ কাহিনী লাজুক চোখ তুলে আজও তো চাহিনি, কী মায়া আছে […]

ক্যামোফ্লাজ

নিজেকে বাঁচাতে হলে পরে নাও হরিৎ পোশাক সবুজ শাড়িটি পর ম্যাচ করে, প্রজাপতিরা যেমন জন্ম-জন্মান্তর ধরে হয়ে থাকে পাতার মতন। প্রাণের ওপরে আজ লতাগুল্ম পত্রগুচ্ছ ধরে তোমাকে বাঁচতে হবে হতভম্ব সন্ততি তোমার। নিসর্গের ঢাল ধর বক্ষস্থলে যেন হত্যাকারীরা এখন ভাবে বৃক্ষরাজি বুঝি বাতাসে দোলায় ফুল অবিরাম পুষ্পের বাহার। জেনো, শত্রুরাও পরে আছে সবুজ কামিজ শিরস্ত্রাণে […]

কবির ইচ্ছা

হাঁটতে হাঁটতে পার হয়ে গেছি তপ্ত দুপুর; এখন বিকেল। সামনে সন্ধ্যা। কার যেনো সুর_ ইশারায় ডাকে, আয় আয় হাঁকে আমার নামেই আসছে রাত্রি গভীর কালো কে যেনো বলছে, দুয়ারে অতিথি প্রদ্বীপ জ্বালো। আলোর খেলাতো দেখেছি আগেও অনেক আমি। এখন রাতের উষ্ণ হাতের স্পর্শ কী পাবো? পাই বা না পাই, আমি চলে যাই দূর দিগন্তে খেলা […]

সংসার যাপন

‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’_ এই কথাটি প্রচলিত আছে। কিন্তু সংসারের মূল উপাদান হলো সংসারের অংশীদার দু’জন মানব-মানবী। পরস্পরের আস্থা ও ভালোবাসায় তারা ঘর বাঁধে এবং জীবনের যাত্রা শুরু করে। আমরা এটাকেই বলি ‘সংসার’। প্রেম, ভালোবাসা ও নীড়_ এভাবেই গঠিত হয় সংসার। পরস্পরের ওপর গভীর আস্থা না থাকলে সঙ্গ হয়; কিন্তু সংসার হয় না। সংসারের […]

ভালোবাসি

হেলায় ফেলায় দিন কাটিয়ে কোথায় এলাম নাম জানি না মুখ চিনি না ডাকবো কারে! কে দেবে গো সাড়া আমায়, মুখটি দেখাও পার হয়েছি অনেক দূরের পথের রেখা এখন তবে চাইগো তোমার হঠাৎ দেখা। আর তো আমার পিছন ফেরার নাই সুবিধা, এগিয়ে যেতে হবে তবে- কি আর সামনে বল কী দেখাবে? আমি কবি, আমায় বল কী […]

অস্পষ্ট স্টেশন

আমি সারা জীবন একটা স্টেশনের জন্য ধাবমান গাড়ির জানালায় বসে থাকি। বাইরে কত গ্রাম আর চাষা জমির চলচ্চিত্র। কুয়াশার ভেতর মানুষের অস্পষ্ট নড়াচড়া। ভোরের মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা কর্মনিপুণ কিষানের মেহেদিরাঙা দাড়ির মতো ভেজা বাতাস। আর সদ্য দুইয়ে নেওয়া গাভীর বাঁটের মতো হাল্কা মেজাজের বাংলাদেশ। আমি সব পেরিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি স্টেশন আমার চেনা। আখ মাড়াইয়ের […]