কালো নৌকা

তখন ভাটার সময়। সমুদ্রে কোনো তোলপাড় নেই। ডাঙা থেকে মাইলখানেক দূরে জেলে নৌকাগুলো দিগন্তের অস্পষ্ট ভ্রূরেখার মতো আবছাভাবে দুলছে। মৃদুগতিতে অল্প অল্প বাতাস বইছে। হাওয়ার স্পর্শ তেমন শীতলও নয়। আবার তেমন উষ্ণতাও নেই। তবে ডাঙার ভেজা অংশে যেখান থেকে ভাটার টানে সমুদ্র পিছিয়ে গেছে, সে ভেজাবালিতে খালি পা ফেলে হাঁটলে সারা শরীরে বেশ একটা আরামদায়ক […]

ভুল অথবা জীবনের কথা

ভুল অথবা জীবনের কথা

যদি ভুল পথে এসে থাকি তবে জেনো ভ্রান্তিই আমার ধ্রুব। এখন/গাছ সাক্ষী আমি আর ফিরব না। নদী সাক্ষী আমি আর ফিরব না।/মেঘ, পাখি আর পাল তোলা নাওয়ের কসম, যে পায়ের ছাপ/আমার পেছনে রেখে এলাম তা মৃত্যুর দিগন্তে গিয়ে/একবার নিঃশ্বাস ফেলবে। ভুলের পুরস্কার যদি মৃত্যু, তবে তাই/হোক_ ভুলের দিগন্তে ভুল-ভ্রান্তি হলো মানবজীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। কাজ করতে […]

পার হয়ে যাই জীবন-মরণ

কাটিয়ে দিলাম একটা জীবন মস্ত বড় কোথায় এলাম কি যে পেলাম, থরথর কাঁপছে শরীর এই তনুমন, বৃক্ষ যেমন হাওয়ার তোড়ে কাঁপতে থাকে তেমনি এখন—   কাঁপছি আমি অগ্রগামী দু টি চরণ পার হয়ে যাই,পার হয়ে যাই,জীবন মরণ পথ থেকে পথ পাড়ি দিলাম—কি যে পেলাম! দু হাত খুলে দেখছি রেখা কি যে লেখা জানে না কেউ। […]

একটি শরৎ সন্ধ্যা

একটি শরৎ সন্ধ্যা

ঋতুর অতীত আমি। কে জিজ্ঞাসে এটা কোন মাস? বাতাসে গড়িয়ে পড়ে বিদায়ের বিষণ্ন নির্যাস। শ্রবণেরও শক্তি নেই। কিন্তু ভাবি কোলাহল আছে প্রতিটা বাড়ির রন্ধ্রে, ইটে ইটে, আনাচে-কানাচে। এটা কি শরৎ সন্ধ্যা? বাংলাদেশ? কাঁশফুলে ছেয়ে গেছে চর? উদাম আকাশে তবে এখনও কি মাথার ওপর? এমন নির্গন্ধ বায়ু কোনকালে ছিল কি এদেশে? আমার পঙ্ক্তি শুনে, কারা হাসে? […]

শূন্যতায় ভর করে

শূন্যতায় ভর করে

সৃজন মুহূর্তের আগে মনটা থাকে শূন্য ক্যানভাসের মতো। শূন্য হলেও একেবারে শূন্য নয়। এই শূন্যতারও একটা রঙ বা ধরন আছে। এটাই মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তারপর মনের ওপর ভাসতে থাকে নানা ছায়াছবি, স্মৃতি-বিস্মৃতির কাহিনী। বহু মুখ মনে পড়ে, যা এখন ভুলে গিয়েছি। কিংবা মনের কোণে পুরনো আসবাবপত্রের মতো পড়ে আছে, যা ফেলতেও পারি না আবার […]

বৃহদারণ্য

হাঁটতে হাঁটতে এলাম চলে, এই ঘনবন হঠাত্ ভাবি একটু দাঁড়াই—কার দু’নয়ন আমার দিকে তাকিয়ে আছে অশ্রু-সজল দু’গাল বেয়ে ঝরছে কি তার চোখের কাজল? আমার কেন ইচ্ছে করে বাড়ি ফেরার বাড়ি-ঘর কি ছিল আমার? ভাঙা বেড়ার আড়ালে সেই একটি গৃহ দাঁড়িয়ে আছে হাওয়ার মাঝে খুব নিরীহ! কে আছে গো এই বাড়িতে, দাও না দেখা! ফেরার কথা […]

জীবন স্মৃতির আড়ালে

বহু বাঁক পেরিয়ে এমন এক সময়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে আমার জীবন, যখন কোনো আবেগ নেই। আছে শুধু অতীত স্মৃতি-বিস্মৃতি। এ সময়ে অনেক পরিচিত মানুষের মুখ মনে পড়ে। যদিওবা ঝাপসা সব কিছু; তবুও নিজের অজান্তেই অতীত রোমন্থন করে সময় কাটাই। দৃষ্টির মতো স্মৃতিও দ্বিধা-বিহ্বলতায় পরিপূর্ণ। তবুও তাদের কথাই মনে আসে বারবার, যারা আমার এই পথ চলার […]

বর্ষায় রচিত পদ্য ও গদ্য

ধারা বয়ে যায় ঝর ঝর ঝরে বাদলের ধারা অবিরাম বৃষ্টিতে কাঁপছে সৃষ্টি শরীর আমার ঘন ঘন শিহরীত কখনোবা জলের আঙুল কে যেন ছোঁয়ালো পিঠে। আমি বলে উঠি_ কে তুমি অদেখা, কুয়াশায় লেখা বাড়াও একটি হাত। চারদিকে কালো, সন্ধ্যা ঘনালো মনে হয় বুঝি রাত। ফোঁটায় ফোঁটায় জল তরঙ্গ পাতায় পাতায় ঝরে_ শুধু মনে হয়, ধারা বয়ে […]

চন্দ্রগ্রস্ত

সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় চাঁদের উপর; সেই আলোর প্রতিফলন থেকে চাঁদ আলোকিত হয়। আলোকিত করে সমগ্র পৃথিবীকে। একটা কথা খুব প্রচলিত আছে_ ‘চাঁদে পাওয়া’। চাঁদের ঘোরগ্রস্ত মানুষকেই বলা হয়ে থাকে চাঁদে পাওয়া মানুষ। জোছনার কোমল আলো যখন পৃথিবীকে উদ্ভাসিত করে_ সকল মানুষই নিজের অজান্তে হলেও মোহাচ্ছন্নতার অতলে হারিয়ে যায়। আমাদের কবিরা তখন কবিতা লিখেন_ ‘মাঝরাতে […]

ফাল্গুন

শীতের ঠাণ্ডা হাতের পরশ এখনও কাঁধে সহসা কীভাবে ঘামের বিন্দু ললাটে জমলো প্রকৃতির শুকনো ডালপালা দিয়ে কে যেন রাধে মহাব্যঞ্জন সুগন্ধে তার ছড়ায় ক্ষুধা আগুনের ছোঁয়া ফাগুন এনেছে আমি ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণায় বুঝি ফেটে যায় বুক অথচ ললাটে বিন্দু বিন্দু লবণের ছোঁয়া ভেজা চিবুক ২২.০২.২০১২