নূরলদীনের সারা জীবন (প্রস্তাবনা)

নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগনিত আর নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে ঊনসত্তর হাজার। ধবলদুধের মতো, জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার। নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নীলক্ষার নীলে তীব্র শিষ দিয়ে এত বড় চাঁদ? অতি অকস্মাৎ স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে […]

মৃত্যুর শরীর ভেঙে

বিদ্যুতেরও সাধ্য নেই রুদ্ধ করে রক্তের প্রবাহ— যেভাবে রাতের ঘরে এলে তুমি দাঁড়ালে যখন শরীরের বস্ত্র ছেড়ে, চুলে ঝড়, যখন উধাও লজ্জার সকল শীল, মরে যাই আমি যে তখন! বিপুল সমুদ্র দেখে ছোট এক জাহাজের মাঝি— ধ্রুবতারা লক্ষ্যহারা, কম্পাসের কাঁটাও বিকল— তখন যে হয় তার হাহাকার, কীভাবে যে বাঁচি— চারদিকে নাচে তার রাক্ষুসীর জল ছলচ্ছল। […]

পরানের গহীন ভিতর ৩১

কে করে পরশ তার জীবনের এত জটিলতা? তোমার অধিক টান দেয় বৃক্ষ দেয় বিষলতা; একবার আমারে আছাড় দিয়া সোজা করে ফের, আমারই মতন যারা বেশুমার সন্তান মায়ের। কিসে যে চালনা করে এই দেহ এই ভবিষ্যৎ- কিছুই বুঝি না, দেখি আচানক শেষ হয় পথ; যে পথেই মেলা দেই সেই পথে ভয়ানক ভুত- এ বড় কঠিন জাগা, […]

হাসপাতালে লেখা

আবার এখানে এসে বসা গেলো তবে, এই জল নীলের নিকটে ফের বহুদিন পরে, এখনো এখানে রোদ সেদিনের উজ্জ্বল বৈভবে আমাকে করালো স্নান, আরো কিছু ঘটে তার পরে। একটি বালিকা এসে হাত পেতে দাঁড়ায় সে আজও, ভিক্ষা চায়, বুকের ওড়না থেকে বকুলের ফুল, তবে বাঁশি সেদিনের ইমনের সুরে তবে বাজো, যেন ভেসে যেতে থাকে পৃথিবীর একূল […]

ভাষার গভীরে ভাষা

ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া নীল এই মখমল রাতে চাঁদের সোনালি থালা, রাশি রাশি নক্ষত্রের ফুল; মনে হয় মানুষ এমন রাত দেখেছে বোগদাদে। অথচ কী অগ্নিদাহ, স্তব্ধতার দীর্ঘ কালো চুল খুলে পড়ে আছে পথে রাজপথে অন্ধকারময়। ছদ্মবেশে—হারুনর রশিদের মতো—নামী পথে, এখন আমার সঙ্গী সেদিনের হাবশি খোজা নয়— আমারই কবিতাগুলো, নাছোড় সঙ্গী সে কোনোমতে। শব্দের অমৃত আমি পান […]

নীরবতার কয়েক অক্ষর

পায়ের কাছে সবুজ এক সাপ, ফণা তোলে না, ফণাই নেই তার। গুটিয়ে আছে মানব-মনস্তাপ। নির্জনতায় পুরনো পুকুরপাড়। কী হতো ওই ফণাটি যদি পেত, বিষের নীলে আকাশভরা নীল জাড্য তবে কোথায় দূরে যেত! তারায় তারা হাসত খিলখিল! চমকে সরে গেলাম চলার পথে, বিষ আছে কি বিষ নেই ও সাপে? বাঁচাটাই তো এখন কোনোমতে! পাল্লাতে কে পাপের […]

বৈশাখ! বৈশাখ!

এই আমার পহেলা বৈশাখ এভাবেই আমার ইতিহাস, এভাবেই আমি, বৈশাখের এই মাঠের মেলায়, গ্রামীণ গরীব এক সার্কাসের তাঁবুতে লম্বমান দড়ির পিঁড়িতে। উজ্জ্বল আলো, সঙ্গীতের ঝমঝম, টানটান ভাসমান আমি পরের দড়িটি লাফ দিয়ে ধরবার জন্যে দোল খাচ্ছি দোল খাচ্ছি, দর্শকের স্তম্ভিত নিঃশ্বাস, কিন্তু দৃষ্টি নেই তাদের ওপরে, তারা কিছু নয়! দড়িটিই কেবল আমার চেতনায়_ এভাবেই আমার […]

পুষ্প বিহনে পয়লা বৈশাখ

পুষ্প নাই তো কিছুই নাই, উৎসব নাই, সংগীত নাই; নারীর খোঁপায় বিলাস নাই, কালীবাড়ির মন্দিরে দেবীর পায়ে শোভা নাই, ডাকবাংলার বাগানে যদি পুষ্প নাই তবে বালকদের দস্যুতারও ঘটনা নাই, ইতিহাস বইয়ের পাতায় তবে শাহজাহান বাদশার চিত্রে তাঁর হাতে ধরা পুষ্পটি নাই; আমাদের পুষ্পও জলেশ্বরীতে আর নাই; নাই মানে এ নয় যে যেমন লোকে চলিত কথায় […]

তুমি আজও তুমি

সে কী বিস্ময়! সেই বসন্ত! কী করে ভুলি? অমাবস্যার রাত নাকি সেটা দীর্ঘ চুলই পরণকথার কোনো রূপসীর! আজকাল কারও দেখি না তো চুল দীর্ঘ এতটা— বিস্ময় সে কী! আর সেই চুলে তারার ফোঁটা— কত লক্ষ তা? এক লক্ষই হবে— দাবানল লাগা বনের শিখায় ওড়ে এক কোটি অগ্নিকণা— আমি ভুলব না সে উন্মাদনা! বিস্ময়ে হই এমন […]

আরো একজন

যেখানেই যাও তুমি, যেখানেই যাও সঙ্গে যায় আরো একজন; যদিও অদূরে তবু তার দূরত্ব ভীষণ। যেখানেই দৃষ্টি দাও, যেখানেই দাও দৃষ্টি দেয় আরো একজন; যদিও সুনীল তবু সেখানেই মেঘের গড়ন। যাকেই যে কথা বলো, যাকেই যে কথা শুনে যায় আরো একজন; যদিও নিশ্চুপ তবু অবিরাম পদ্মার ভাঙন। যেখানেই রাখো হাত, যেখানেই রাখো রাখে হাত আরো […]