শব্দের দোকান খুলে সেই কোন প্রথম প্রহরে অপেক্ষায় আছি, আর এখন দুপুর, কেউ তো আসেনি, শুধু এক ক্ষুধার্ত কুকুর— তাকেই দিয়েছি সব শব্দধ্বনি দুই থালা ভরে। নদীতে নির্জন নৌকো, জলের নূপুর স্তব্ধতাকে চুমো খেয়ে শীর্ণ খাতের ভেতরে শুয়ে আছে—চোখে দেখা যায় যত দূর দীর্ঘ ছায়া পড়ে আছে মানবের পাঁজরে পাঁজরে। আমি তো এখন শুয়ে চৌকিতে […]
গাঢ় সন্ধ্যার অমাবস্যা
শেষ যোদ্ধা
কাল: বর্তমান কুশীলব: লোক ১, লোক ২, প্রৌঢ়, স্বামী, স্ত্রী, কন্যা, কন্যার প্রেমিক যুবক ও কোরাস (মঞ্চ: তিন স্তরে তিনটি স্থান—পার্ক, বসবার ঘর, রেস্তোরাঁ) দৃশ্য: ১ পার্কের অংশ ভোরের মৃদু আলোয় উদ্ভাসিত। আবহধ্বনি: মোটা বাঁশিতে ভৈরবী রাগ, দূর থেকে আগত। দুটি লোক এসে মঞ্চে দাঁড়ায়। লোক ১: সন্ধ্যায় যে সূর্য ডুবে যায় ভোরে সে আবার […]
বহরমপুর ভ্রমণ
হেমন্তের পাতলা কুয়াশা জড়ানো ভোরে আমি আর আমার জীবনসঙ্গী আনোয়ারা সৈয়দ হক ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি সীমান্তের ওপারে বহরমপুরের দিকে। ওখানে অনেক দিনের এক নাট্য সংস্থা ঋত্বিক আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বছর পনেরো থেকে ওঁরা দেশ-বিদেশের নাট্যমেলা করে আসছেন। ২০১৫-এর ওই উৎসবে ওঁরা আমাকে ডেকেছেন উপস্থিত থাকবার জন্যে। ওঁদের মনে আছে আমার আশি বছর হতে যাচ্ছে […]
তারে কই বড় বাজিকর
জন্মদিন : সৈয়দ শামসুল হক এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর। এ তো হক ভাইয়েরই রচিত পঙ্ক্তি, সৈয়দ শামসুল হকের। কে আছে তারও চেয়ে বড় জাদুকর, যিনি প্রাণের গভীরে রুমাল নাড়তে পারেন! আমাদের কালে আমরা পেয়েছি তেমনি এক বড় বাজিকরকে, যাঁর নাম সৈয়দ শামসুল হক। জাদুকরের […]
আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়
আজ আমি যাব সেখানে, দিগন্তের শেষ সীমান্তে, অস্তমিত রবির শেষ আভা ছোঁয়াবে যেখানে ঠিক সেখানে, আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়। গোধূলির লাল টিপ কপালে পরে, কুয়াশার সাদা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে, বাতাসের দুরন্তপনার কাজল দৃষ্টির তেপান্তরে এঁকে, আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়। গুচ্ছ পাতার মত বুনন করে কথামালা উপহার দেব বলে, সন্ধ্যা প্রদীপের আলোর মত, মিষ্টি আলো তোমার […]
আমি একটুখানি দাঁড়াব
আমি একটুখানি দাঁড়াব এবং দাঁড়িয়ে চলে যাব; শুধু একটু থেমেই আমি আবার এগিয়ে যাব; না, আমি থেকে যেতে আসিনি; এ আমার গন্তব্য নয়; আমি এই একটুখানি দাঁড়িয়েই এখান থেকে চলে যাব। আমি চলে যাব তোমাদের এই শহরের ভেতর দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এর মার্চপাস্টের যে সমীকরণ এবং এর হেলিকপ্টারের যে চংক্রমণ, তার তল দিয়ে তড়িঘড়ি; আমি […]
তুমিই শুধু তুমি
তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি। কপালে ওই টকটকে লাল টিপ। আমি কি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি? তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ। করতলের স্বপ্ন-আমন ধানের গন্ধ তুমি তুমি আমার চিত্রকলার তুলি। পদ্য লেখার ছন্দ তুমি−সকল শব্দভুমি। সন্তানের মুখে প্রথম বুলি। বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত। পাহাড় থেকে সমতলে যে […]
স্মৃতিময় শারদীয় হাওয়া
সে কী বিস্ময়! কী যে বিস্ময়! কী করে ভুলি! আকাশের নীল ঘন শাদা মেঘ, কবেকার গ্রামপথে ডুলি! নাইওরে যাচ্ছে বউ! একদিন চুল তার— দেখি নাই কারও চুল দীর্ঘ এতটা— বিস্ময় সে কী! আর চুলে নক্ষত্রের ফোঁটা— কত লক্ষ! এক লক্ষ! দাবানল লাগা বনের সেই অগ্নিকণা— ভুলব না! কিশোরের ঘুড়ি হাতে উড্ডীন উন্মাদনা! এখনো কী বিস্ময়ে […]
আবার শুরুর দিকে
উড়ে যাক উড়ে যাক পাখিদের ঝাঁক যেখানেই যাক তারা উড়ে চলে যাক শুধু রেখে যাক আকাশটা শুধু রেখে যাক এই মাঠ মাঠের আকাশে যেন সন্ধ্যা নেমে এলে অন্ধকার ঘন হয়ে এলে তারা-পাখি হয়ে তারা আসে পাখিদের ফিরে আসা মানুষও তো আসে ফিরে আসে ইতিহাস ঘন অন্ধকারে তারার ঝাঁকের মতো পাখির ঝাঁকের মতো মাঠে ঘাস ঘাসের […]
কেরানিও দৌড়ে ছিল
২৩ সোনালি খড়ে ছাওয়া গোলঘরের টেবিলে এসে বসবার সঙ্গে সঙ্গে ধোপদুরস্ত শাদা প্যান্ট-শার্ট পরা এক সেবক এসে লণ্ঠনের চিমনির মতো কাচের লাল গোলকের ভেতরে দুটি মোমবাতি রাখে। নিবিড় একটি আলো ছড়িয়ে পড়ে। লেডির মুখটিকে আরো অপরূপ দেখায়। কেরানি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ থেকে বিস্ময় কাটে না_ ইনিই তিনি? যার কথা এত শুনেছে সে, […]