আষাঢ়, কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া।

আষাঢ়, কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া। মাঠের শেষে শ্যামল বেশে ক্ষনেক দাঁড়া ।। জয়ধ্বজা ওই-যে তোমার গগন জুড়ে পুব হতে কোন্‌ পশ্চিমেতে যায় রে উড়ে, গুরুগুরু ভেরী কারে দেয় যে সাড়া ।। নাচের নেশা লাগলো তালের পাতায় পাতায়, হাওয়ার দোলায় দোলায় শালের বনকে মাতায়। আকাশ হতে আকাশে কার ছুটোছুটি, বনে বনে মেঘের ছায়ায় লুটোপুটি- ভরা […]

তোমরা যা বলো তাই বলো

তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে। আমার যায় বেলা, বয়ে যায় বেলা কেমন বিনা কারণে॥ এই পাগল হাওয়া কী গান-গাওয়া ছড়িয়ে দিয়ে গেল আজি সুনীল গগনে॥ সে গান আমার লাগল যে গো লাগল মনে, আমি কিসের মধু খুঁজে বেড়াই ভ্রমরগুঞ্জনে। ওই আকাশ-ছাওয়া কাহার চাওয়া এমন ক’রে লাগে আজি আমার নয়নে॥

ক্ষমা কর মোরে

ক্ষমা কর মোরে, সখি, শুধায়ো না আর! মরমে লুকানো থাক্‌ মরমের ভার! যে গোপন কথা, সখি, সতত লুকায়ে রাখি ইষ্টদেবমন্ত্র-সম পূজি অনিবার তাহা মানুষের কানে ঢালিতে যে লাগে প্রাণে— লুকানো থাক্‌ তা, সখি, হৃদয়ে আমার! ভালোবাসি, শুধায়ো না কারে ভালোবাসি! সে নাম কেমনে, সখি, কহিব প্রকাশি! আমি তুচ্ছ হতে তুচ্ছ, সে নাম যে অতি উচ্চ, […]

১৪০০ সাল

আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহলভরে, আজি হতে শতবর্ষ পরে! আজি নব বসন্তের প্রভাতের আনন্দের লেশমাত্র ভাগ, আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান, আজিকার কোনো রক্তরাগ_ অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে তোমাদের করে, আজি হতে শতবর্ষ পরে? তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার বসি বাতায়নে সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি […]

বৈশাখ

হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ, ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল, তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল কারে দাও ডাক_ হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ। ছায়ামূর্তি যত অনুচর দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে! কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে নিঃশব্দ প্রখর_ ছায়ামূর্তি তব অনুচর মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ। রহি রহি দহি দহি […]

দুঃসময়

যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া, যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া, মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, দিক্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা- তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা। এ নহে মুখর বনমর্মরগুঞ্জিত, এ যে অজাগর-গরজে সাগর ফুলিছে; এ নহে কুঞ্জ কুন্দকুসুমরঞ্জিত, ফেনহিল্লোল কলকল্লোলে দুলিছে। কোথা […]

খাতা

লিখিতে শিখিয়া অবধি উমা বিষম উপদ্রব আরম্ভ করিয়াছে। বাড়ির প্রত্যেক ঘরের দেয়ালে কয়লা দিয়া বাঁকা লাইন কাটিয়া বড়ো বড়ো কাঁচা অক্ষরে কেবলই লিখিতেছে_ জল পড়ে, পাতা নড়ে। তাহার বউঠাকুরানীর বালিশের নিচে ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ ছিল, সেটা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়া তাহার পাতায় পাতায় পেনসিল দিয়া লিখিয়াছে_ কালো জল, লাল ফুল। বাড়ির সর্বদা ব্যবহার্য নূতন পঞ্জিকা হইতে […]

নির্ভয়

আমরা দুজনা স্বর্গ-খেলনা গড়িব না ধরণীতে, মুগ্ধ ললিত অশ্রুগলিত গীতে। পঞ্চশরের বেদনামাধুরী দিয়ে বাসররাত্রি রচিব না মোরা প্রিয়ে; ভাগ্যের পায়ে দুর্বলপ্রাণে ভিক্ষা না যেন যাচি। কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয় তুমি আছ, আমি আছি। উড়াব ঊর্ধ্বে প্রেমের নিশান দুর্গম পথমাঝে দুর্দম বেগে, দুঃসহতম কাজে। রুক্ষ দিনের দুঃখ পাই তো পাব, চাই না শান্তি, সান্ত্বনা নাহি […]

অনন্ত প্রেম

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার– কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা, অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা, অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে […]

বাঁশি

কিনু গোয়ালার গলি। দোতলা বাড়ির লোহার-গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর পথের ধারেই। লোনাধরা দেয়ালেতে মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি, মাঝে মাঝে স্যাঁতাপড়া দাগ। মার্কিন থানের মার্কা একখানা ছবি সিদ্ধিদাতা গণেশের দরজার ’পরে আঁটা। আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটি জীব এক ভাড়াতেই, সেটা টিকটিকি। তফাত আমার সঙ্গে এই শুধু, নেই তার অন্নের অভাব॥ বেতন পঁচিশ টাকা, সদাগরি […]