বৈশাখ

হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ,
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল,
তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক_
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ।

ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর_
ছায়ামূর্তি তব অনুচর

মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।
রহি রহি দহি দহি উগ্র বেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণ রেণুরাশ_
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ

দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী,
পদ্মাসনে বস আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে
শুষ্কজল নদীতীরে, শস্যশূন্য তৃষাদীর্ণ মাঠে,
উদাসী প্রবাসী_
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী

জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগি্নশিখা লেহি লেহি বিরাট অম্বর_
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বৎসর
করি ভস্মসার_
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার

হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ
উদার উদাস কণ্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে_
যাক নদী পার হয়ে, যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ

সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-‘পরে_
ক্লান্ত কপোতের কণ্ঠে, ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্ত স্বরে,
অশ্বত্থছায়াতে_
সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে

দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকারক্ষুব্ধ ধুলা-সম উড়ুক গগনে,
ভরে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধ-সনে
আকুল আকাশ_
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ

তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে_বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা মৃত্যু ক্ষুধা তৃষ্ণা, লক্ষকোটি নরনারীহিয়া
চিন্তায় বিকল_
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল

ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ!
ভাঙিয়া মধ্যাহ্ন তন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণী শূন্য দগ্ধ তৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক_
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ [১৩০৬]