পুরাণ

হে পিতৃপুরুষবর্গ তোমরা মহৎ ছিলে জানি,
রূপদক্ষ কীর্তির প্রভাবে আজো প্রাতঃস্মরণীয়,
সে কথা বিশ্বাস করি । যে-প্রাসাদ করেছো নির্মাণ
প্রজ্ঞায় অক্লান্ত শ্রমে, জোগায় তা কতো ভ্রাম্যমান
চোখের আনন্দ নিত্য : অতীতের ডালপালা এসে
চোখে-মুখে লাগে আর ফুটে ওঠে সৃষ্টির বিস্ময় ।
আরো গাঢ় অন্ধকারে ভিজিয়ে শরীর পেঁচা, কাক
অথবা বাদুড় আসে শূন্য কক্ষে বিশাল প্রাসাদে
উত্তরাধিকারী খোঁজে, কিন্তু কিছুতেই কোনোখানে
মানবের কণ্ঠস্বর হয় না ধ্বনিত । অলিন্দের
অন্ধকারে ওড়ে শুধু কয়েকটি দারুণ অস্থির
চামচিকে । লেপ্‌টে থাকে দুর্বোধ আতঙ্ক স্তব্ধতায় ।
দূরত্ব বজায় রেখে দেখে সব খিলান, গম্বুজ
ইত্যাদিতে জমেছে শ্যাওলা আর সিংহ দরজায়
হিংসুক সময় বসিয়েছে থাবা । প্রশংসিত
কীর্তিস্তম্ভে ঝ’রে যাচ্ছে বহু প্রতিবিম্ব পুরাণের;
বিধ্বস্ত ভাঁড়ার ঘরে অতীতের সারসত্য, সব
ভাবনাকে আয়াসে খুঁটে খায় ইঁদুর, আরশোলা ।
হে পিতৃপুরুষবর্গ আমাকে ভেবোনা দোষী যদি
এ প্রাসাদ বসবাসযোগ্য মনে না হয় আমার,-
কেননা এ-সৌধ আর মরচে-পড়া তালার বাহার
করে না বহন কোনো অর্থ অন্তত আমার কাছে ।
তোমাদের কারুকার্যে শ্রদ্ধা অবিচল, কিন্তু বলো-
কী করে পিতার শব কাঁধে ব’য়ে বেড়াই সর্বদা?
আমাকে জড়ায় সত্য, অর্ধসত্য কিম্বা প্রবচন,
তবু জানি কিছুতে মজে না মন বাতিল পুরাণে ।।

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
শামসুর রাহমান- র আরো পোষ্ট দেখুন