এসেছি দাফন ক’রে

কেউ কি শুনতে পাচ্ছে বহুদূর থেকে ভেসে আসা বন – পোড়া হরিণীর আর্তনাদ ? সর্ষেক্ষেত , আশশ্যাওড়ার ঝোপ , মাছরাঙা আর পানকৌড়িময় বিল , প্রান্তর পেরিয়ে – আসা ধ্বনি ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে এ – শহরে রাজপথে , গেরস্ত পাড়ায় , কলোনিতে দেয়ালে দেয়ালে কারাগারে , অত্যন্ত সতর্ক প্রহরীবেষ্টিত ছাউনিতে , পরিখায় কেউ কি শুনতে পাচ্ছে? […]

একটি ফটোগ্রাফ

‘ এই যে আসুন , তারপর কি খবর? আছেন তো ভালো ? ছেলেমেয়ে ?’ কিছু আলাপের পর দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে— ‘ এ আমার ছোট ছেলে , যে নেই এখন , পাথরের টুকরোর মতন ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে বছর – তিনেক আগে কাক – ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে।’ কি সহজে হয়ে […]

কালবেলার সংলাপ

সুজাতা। কতকাল অন্ধকার আমাদের শাসাবে, গৌতম? বলো, আর কতকাল? কেবলি হোঁচট খাই, ভয় পাই প্রতি পদক্ষেপে; দূরন্ত বইলে হাওয়া, ভাবি- এই বুঝি এলো তেড়ে মাস্তানের দল, পথ খুঁজি, চৌকাঠে কপাল ঠেকে, পায়ে কালো পাথরের ভার। পক্ষাঘাতগ্রস্ত যেন আমি, পারি না কোথাও ছুটে যেতে, এই অন্ধকার এত বিষ লুকিয়ে রেখেছে নিজের থলিতে, আগে কখনো জানিনি। ভয় […]

মরণ-বিরোধী পঙ্‌ক্তিমালা

আমি গোলাকার চাঁদ এবং জ্যোস্নাধারার কথা চিন্তা করি, অথচ ঘোর অমাবস্যা ধেয়ে আসে আমার দিকে। মনে হয়, একটা কুচকুকে কালো কাফন আমাকে ঢেকে ফেলেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাহলে আমার দিন কি ফুরিয়ে এলো? চিরকালের জন্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এই শরীর আমার, যাকে কত যত্নেই না ধুলোবালি, নোংরা আবর্জনা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছি? শরীর একটু বিগড়ে […]

অনুজ প্রসঙ্গে অগ্রজ শান্তি আর শিল্পের মানুষ

পঞ্চাশের দশকের কয়েকজন কবি বাংলাদেশের কবিতার নতুন জমি তৈরি করলেন, আবাদ করলেন সেই জমি মেধা ও শ্রমে। এই জমিতে পা রেখেই ষাটের দশকের সিকদার আমিনুল হক, রফিক আজাদ এবং আবদুল মান্নান সৈয়দ বিশিষ্টতা অর্জন করেন। তাঁদের আবির্ভাবের পরই সানাউল হক খান, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা এবং অকালপ্রয়াত আবুল হাসানের কাব্যশস্য হিলহিলিয়ে ওঠে। সর্বপ্রথম আবুল হাসানের […]

কেউ কি এখন

কেউ কি এখন এই অবেলায় আমার প্রতি বাড়িয়ে দেবে হাত? আমার স্মৃতির ঝোপেঝাড়ে হরিণ কাঁদে অন্ধকারে এখন আমার বুকের ভেতর শুকনো পাতা, বিষের মতো রাত । দ্বিধান্বিত দাঁড়িয়ে আছি একটি সাঁকোর কাছাকাছি, চোখ ফেরাতেই দেখি সাঁকো এক নিমিষে ভাঙলো আকস্মাত্‍ । গৃহে প্রবেশ করবো সুখে? চৌকাঠে যায় কপাল ঠুকে । বাইরে থাকি নত মুখে নেকড়েগুলো […]

ছিল সে-ও

ছিল সে-ও ধুলোর নিঃসঙ্গ পথে, ছিল কোলাহলে সমর্পিত চিরদিন। দিঘি তাকে চেয়েছিল বলে সোনার শরীর নিয়ে ব্যর্থ হল নারী। ডুবিয়ে পায়ের পাতা, সহচরী শাড়ি ডুবিয়ে নিঃসঙ্গ জলে নামল যখন- ঝাপসা চোখ, মেঘ হল মন। অত শান্ত জলের কুহকে তার সমাজ সংসার হবে লীন কেই তাকে বলেনি সেদিন। মাচায় অর্পিতা লতা জানে যার প্রীত পরিচয়, ভুলব […]

তুমি বলেছিলে

দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। পুড়ছে দোকানপাট, কাঠ লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘরবাড়ি। পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মানচিত্র, পুরোনো দলিল। মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে সাধের আশ্রয়ত্যাগী হয় মৌমাছির ঝাঁক, তেমনি সবাই পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্গি্বদিক। নবজাতককে বুকে নিয়ে উদভ্রান্ত জননী বন-পোড়া হরিণীর […]

গেরিলা

দেখতে কেমন তুমি? কী রকম পোশাক-আকাশ পরে করো চলাফেলা? মাথায় আছে কি জটাজাল? পেছনে দেখাতে পারো জ্যোতিশ্চক্র সন্তের মতন? টুপিতে পালক গুঁজে অথবা জবরজং, ঢোলা পাজামা কামিজ গায়ে মগডালে একা শিস দাও পাখির মতোই কিংবা চা-খানায় বসো ছায়াচ্ছন্ন? দেখতে কেমন তুমি? অনেকেই প্রশ্ন করে, খোঁজে কুলুজি তোমার আতিপাতি। তোমার সন্ধানে ঘোরে ঝানু গুপ্তচর সৈন্য, পাড়ায় […]

পুরাণ

হে পিতৃপুরুষবর্গ তোমরা মহৎ ছিলে জানি, রূপদক্ষ কীর্তির প্রভাবে আজো প্রাতঃস্মরণীয়, সে কথা বিশ্বাস করি । যে-প্রাসাদ করেছো নির্মাণ প্রজ্ঞায় অক্লান্ত শ্রমে, জোগায় তা কতো ভ্রাম্যমান চোখের আনন্দ নিত্য : অতীতের ডালপালা এসে চোখে-মুখে লাগে আর ফুটে ওঠে সৃষ্টির বিস্ময় । আরো গাঢ় অন্ধকারে ভিজিয়ে শরীর পেঁচা, কাক অথবা বাদুড় আসে শূন্য কক্ষে বিশাল প্রাসাদে […]