রুখসানার হাসব্যান্ড

রুখসানার হাসব্যান্ড একটা অপদার্থ, গুড ফর নাথিং। সারাদিন বইসা বইসা ঘোড়ার ঘাস কাটে। ঘোড়া হইলো দুনিয়ার এক আজীব প্রাণী। এই প্রাণী কাটা ঘাস খায় না, একেবারে জীবন্ত দণ্ডায়মান ঘাস নিজ মুখে খায়াই নাকি ঘোড়ার সুখ। রুখসানার হাসব্যান্ড কোন দুনিয়ার ঘোড়ার জন্য বইসা বইসা ঘাস কাটে এই বুঝা বড় কঠিন। অন্য কেউ তো দূরের কথা স্বয়ং রুখসানা পারভীনও বুইঝা উঠতে পারে না তার অকর্মা স্বামী করেটা কী? মানে দিনটা সে কেমনে কাটায়। একদিন বিকাল পাঁচটায় অফিস থেকে ফিরে রুখসানা দেখে নতুন এক আবিষ্কারের নেশায় তাঁর হাসব্যান্ড একেবারে উত্তেজিত হয়ে আছে। অবস্থা দেখে রুখসানা জিগায়, সমস্যা কী? রুখসানার হাসব্যান্ড বলে আজকে একটা অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করলাম। বলেন শুনি, বলে রুখসানা তার স্বামীর দিকে না তাকায়া কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের গুছিয়ে রাখতে থাকে। লোকটা অদ্ভুত, সারাদিন বাসায় বইসা থাকলেও কখনো নিদেনপক্ষে এই টেবিলটা গোছানোর কথাও তার মাথায় আসে না। হাসব্যান্ড নিজের মতো করে বলতে থাকে, তুমি ঘোড়া প্রাণীটা ভাল কইরা খেয়াল কইরা দেখছো নিকি কুনোদিন? রুখসানা বলে, প্রাণীটার জন্য দিনমান ঘাস তো কাটেন আপনে। আমি খেয়াল কইরা কী করবো? হাসব্যান্ড একটু লাজুক হাসে। কয়, দেখছো কি না সেইটা কও। রুখসানা কিছু কয় না। তোয়ালা নিয়া বাথরুমে চলে যায়। হাতমুখ ধুয়ে তোয়ালা দিয়া অনেক্ষণ ধরে মুখ মুছে বারান্দায় আবার তোয়ালেটা ঝুলায়ে সোজা রান্না ঘরে গিয়া চায়ের পানি চাপায়া আসে। পানি চাপায়া হাসব্যান্ডের সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, নিজে থেকে এক কাপ চা-ও তো করে খান না? হাত ব্যথা করে? হাসব্যান্ড তখন ঘোড়া সম্পর্কে নতুন একটা আবিষ্কারের আনন্দে বিভোর। রুখসানার খোঁটা তার গায়ে লাগে না। আবিষ্কারের আনন্দে বিভোর না হইলেই যে তার গায়ে কথাটা গিয়া কাঁটার মতো বিঁধতো সেরকমও না ঘটনা। এমনিতেই রুখসানার কোনো কথা তার গায়ে লাগে না। অফিসফিরত রুখসানা মিষ্টি মিষ্টি খোঁটাগুলা দিতে থাকলে হ্যাসব্যান্ড তার নোকিয়া ১১০০ সেটটা হাতে নিয়া স্নেক গেম খেলা শুরু করে। একটা লতানো রেখাকে একটা বিন্দুর দিকে নিয়া যাওয়ার জন্য তীব্র আকুতি নিয়া বাটনগুলা চাপতে থাকে। এইবার গেমের ফোর্থ লেবেল পর্যন্ত পৌঁছাইতেই হবে যে কইরাই হউক, এই ভাবনায় তার সমস্ত মন মোবাইলের স্ক্রিনে গিয়া স্থির হয়া থাকে। স্নেক গেম খেলতে খেলতে দেখা যায়, রুখসানার এনে দেয়া চা ঠাণ্ডা হয়া আসে। রুখসানা বলে, চা খাওয়ারও তো দেখি সময় নাই আপনের। হাসব্যান্ড ছোট করে উত্তর দেয়, ঠাণ্ডাই ভাল। তুমি জানো না, ঠাণ্ডা চা ভাল পাই আমি? তারপর আবার স্নেক গেমের দ্রুততর থার্ড লেবেলটা খেলতে থাকে। একটু এদিক-ওদিক হইলেই সর্বনাশ। খেল খতম। রুখসানা চা নিয়া আসলে আজকে গরম থাকতেই খাইতে শুরু করে। বলে, এনিমেল চ্যানেলটা দেখছো কুনোদিন? রুখসানা নরমালি টিভির চ্যানেল বদলায়ে তেত্রিশের পরে যায় না। এনিমেল চ্যানেল মনে হয় ছেচল্লিশে। কয়, ক্যান কী হইছে? সে বুঝতে পারে, তার হাসব্যান্ড সারাদিন হিন্দি বাংলা চ্যানেল দেখে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত এনিমেল চ্যানেল দেইখা সময় কাটায়। হবে আবার কী? আজকে চ্যানেল ঘুরাইতে ঘুরাইতে হঠাৎ এনিমেল চ্যানেলে আইসা দেখি ঘোড়ার উপরে একটা অনুষ্ঠান দেখাইতেছে। অনেকক্ষণ ধইরা একপাল ঘোড়ারে ঘুরায়ে ফিরায়ে দেখাইতেছে। বুঝলা? হাসব্যান্ডের কথার উত্তর না করে রুখসানা আনমনে চা খাইতে থাকে। ঘোড়া দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার মনে হইলো, ঘোড়ার পিছন দিকটা মেয়েমানুষের মতো। আর সামনের দিকটা ছেলেদের মতো। হাসব্যান্ডের কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না রুখসানা। হাসব্যান্ড তখন তারে ডিটেইলে বুঝাইতে থাকে। হাসব্যান্ডের ডিটেইলিং শুনতে শুনতে রুখসানা এক্সাইটেড হয়া উঠে। বুঝতে পারে, অনুষ্ঠানটা দেখার পর থেকে হাসব্যান্ড তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেছে। রুখসানা তার বদমতলব টের পেয়ে ঘরের একদিকে ছুটে