শিশুহত্যা

d49702a977f5a107527e8532654ae36f-17কী হয়েছে বাবা? মুখ তুলে তাকিয়েছি, দেখি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বড় মেয়ে। ঘুমভাঙা মুখ সদ্য ফোটা ফুলের মতো। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে গেলাম কী প্রশ্ন করেছে। বললাম, ‘তুমি এত সকালে উঠেছ কেন?’
ঘুম ভেঙে গেছে। চা খেতে ইচ্ছে করছে।
খালি পেটে চা খেয়ো না।
না, শুধু চা খাব না। বুয়াকে বলেছি পরোটা ভেজে দিতে। চায়ে ভিজিয়ে পরোটা খাব। তোমার কী হয়েছে? উদাস হয়ে বসে আছো! মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত!
কথা না বলে খবরের কাগজগুলোর দিকে তাকালাম। দুটো বাংলা আর একটা ইংরেজি কাগজ পড়ে আছে সেন্টারটেবিলে। তিন কাগজের তিন জায়গায় ছাপা হয়েছে ছবিটা। পাতাগুলো খুলে ছবি বের করে রেখেছি। সেই ছবির দিকে তাকিয়ে রইলাম। হুবহু আমার বড় মেয়ের চার বছর বয়সের ছবি।
বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে দুই বছর। স্বামী-সংসার করছে, চাকরি করছে। বয়স সাতাশ বছর। তারপরও তাকে আমি ‘বাবু’ ডাকি। সে যেন এখনো বড় হয়নি, সে যেন এখনো শিশু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে চলে আসে আমার ফ্ল্যাটে। শুক্র-শনি থেকে রোববার সকালে অফিসে চলে যায়। বাকি দিনগুলো শ্বশুরবাড়িতে। মেয়ের সঙ্গে বরও আসে মাঝেমধ্যে। কাল আসেনি। অফিসের কাজে চিটাগাং গেছে।
ছুটির দিনে আমার দুই মেয়েই বেলা করে ওঠে। বড় মেয়ের যেমন অফিস, ছোটটার তেমন ইউনিভার্সিটি। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকালে উঠে দৌড়াতে হয়। এ জন্য ছুটির দিন দুটো ইচ্ছেমতো ঘুমায়। ছেলে সবার ছোট। বোনদের সঙ্গে তার বয়সের ব্যবধান অনেক। বড়টার সঙ্গে বাইশ বছর, ছোটটার সঙ্গে সতেরো। আমার বুড়ো বয়সের ছেলে। কেউ কেউ নাতি বলে ভুল করে। তার স্বভাবও বোনদের মতো। সপ্তাহে পাঁচ দিন স্কুল। এ জন্য শুক্র-শনিবার সকাল দশটা-এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। এই নিয়ে আমি একটু গজগজ করি। ছেলেমেয়েরা পাত্তা তো দেয়ই না, তাদের মা-ও দেয় না।
আমি উঠি ছয়টার দিকে। ফ্রেশ হয়ে দুটো সুগারফ্রি বিস্কুট আর এক গ্লাস পানি খেয়ে পার্কে হাঁটতে যাই। সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা, পাক্কা এক ঘণ্টা হাঁটা। ফিরে দেড় লিটারের একটা পানির বোতল নিয়ে বসি। একটু একটু করে পানি খাই আর খবরের কাগজ পড়ি। তারপর গোসল সেরে নাশতা, দশটার দিকে অফিস। সপ্তাহে ছয় দিনই অফিস। ছুটি শুধু শুক্রবার। এ জন্য শুক্রবার সকালটা অন্যভাবে কাটাই। সকালে উঠি ওই একই সময়ে, তবে হাঁটতে যাই না। স্ত্রীর সঙ্গে বসে গল্প করি, চা খাই। কখনো কখনো একটু গান শুনি। খবরের কাগজ এলে পানি খেতে খেতে পড়ি। অফিসে যাওয়ার উদ্বেগ থাকে না।
আজও সেভাবেই শুরু হয়েছে সকাল। স্ত্রী উঠে চা খেয়েছেন আমার সঙ্গে, তারপর ছেলের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়েছেন। তিনি হচ্ছেন সেই সব সুখী মানুষের একজন, শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। শুধু ঘুম না, গভীর ঘুম। তিরিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট সময়, জগৎ-সংসারের খবর নেই। পাশাপাশি আরেকটা গুণও ভদ্রমহিলার আছে, যত গভীর ঘুমেই থাকুন, ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া। যেমন চট করে ঘুম, তেমন চট করে জেগে ওঠা।
আমি হচ্ছি। ঘুম না-আসা মানুষের দলে। ঘুমাই দেরি করে, উঠি তাড়াতাড়ি। একটানা গভীর ঘুম হয়ই না। রাতে দু-তিনবার উঠি। ডায়াবেটিস, প্রেসার আর গ্যাস্ট্রিক বহু বছর ধরে। সামান্য কারণে এত টেনশন করি, স্ত্রী তো হাসেনই, মেয়েরাও হাসাহাসি করে।
আজ খবরের কাগজ নিয়ে বসার পরই ছবিটা চোখে পড়েছে। ছবি দেখে আর খবরটা পড়ে মনের অবস্থা এমন হয়েছে, অন্য খবর পড়াই হয়নি। মাথা নিচু করে বসে আছি। এটা দেখে বড় মেয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে, কী হয়েছে জানতে চেয়েছে।
ছবিটা দেখিয়ে বললাম, দেখ।
মেয়ে তাকিয়ে দেখল, আরে, এ তো একদম আমার ছোটবেলার ছবি!
‘হ্যাঁ, চার বছর বয়সে তুই এ রকমই ছিলি। একটু মোটামতো, গোলগাল ফরসা মুখ, মাথার চুল লালচে ধরনের, ববকাট করা। তোর হাতের মুঠোও এ রকম ছিল।
ভারি সুন্দর ছবি! কী সুন্দর হাত তুলে রেখেছে মাথার ওপর!
হ্যাঁ সুন্দর ছবি। কিন্তু আসল ঘটনা শুনলে চোখে পানি আসবে।
মেয়ে আমার পাশে বসল। বলো তো, শুনি।
মেয়েটির নাম হুদিয়া। সিরিয়ার হামা এলাকায় বাড়ি। সিরিয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। বহু মানুষের মতো চার বছরের হুদিয়া তার মা আর দুই ভাইয়ের সঙ্গে আতমেহ এলাকার শরণার্থী ক্যাম্পে যায়। এখানে থেকে সে বুঝতে পারে, অস্ত্র এমন এক জিনিস, যা কেউ তার দিকে তাক করলে দু-হাত মাথার ওপর তুলতে হয়। না হলে গুলি ছুটবে, সে মরে যাবে। গত বছর ডিসেম্বরে তুর্কির ফটোসাংবাদিক ওসমান আগিরলি হুদিয়াদের ক্যাম্পে গিয়েছিল। মেয়েটিকে দেখে ক্যামেরা তুলেছিল। ক্যামেরায় লাগানো টেলিফটো লেন্স। হুদিয়া ভেবেছে এটা মারণাস্ত্র। প্রচণ্ড ভয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরেছে, সারেন্ডারের ভঙ্গিতে হাত তুলেছে মাথার ওপর…
কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল। মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকরুদ্ধ অবস্থা। নিজেকে সামলে বললাম, এই ছবি হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে অনলাইনে। প্রথমবার টুইটারে পোস্ট হওয়ার পর টুইট হয়েছে এগারো হাজার বারের বেশি। পৃথিবীর মানুষ স্তব্ধ হয়েছে ছবি দেখে। কী অসহায়, করুণ অবস্থা একটা শিশুর ভাব তো?
টেবিলে দুধচা আর পরোটা রেখে গেছে বুয়া, মেয়ে সেদিকে তাকিয়েও দেখল না। খবরের কাগজ তুলে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে।
এ সময় ইন্টারকম বাজল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ধর তো বাবু।
মেয়ে ইন্টারকম ধরল। নিচ থেকে সিকিউরিটির লোক কিছু বলল। মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বারেক ভাই এসেছে।
নিচে বসতে বল। এখন কথা বলতে পারব না।
সেভাবেই বলল মেয়ে। তারপর ডাইনিং টেবিলে বসে চায়ে পরোটা ভিজিয়ে খেতে লাগল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, হুদিয়ার ছবিতে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম চার বছর বয়সী তোকে। যেন আমার মেয়েটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে অসহায়, ভয়ার্ত ভঙ্গিতে মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়ে কথা বলল না।
কিন্তু বারেক এসেছে কেন? মাস শেষ হয়নি, এখনই আসবে কেন? সে আসে মাসের শুরুর দিকে বেতন নিতে। আজ কী এমন দরকার পড়ল?
ভালুকার ওদিকে আমার কিছু জমি আছে। বারেক দেখভাল করে। স্বাধীনতার আগের বছর বারেককে কোলে নিয়ে তার মা এসেছিল আমাদের সংসারে, বুয়ার কাজ করতে। বারেকের বাপ অন্যত্র বিয়ে করে চলে গিয়েছিল। বারেক বা তার মায়ের সঙ্গে সেই লোকের আর কোনো দিন দেখা হয়নি। বারেকের মা এখন বৃদ্ধা। ভালুকায় বারেকের সঙ্গে থাকে। মা-ছেলে দুজনেরই জীবন কেটে গেল আমাদের সঙ্গে। বারেক পালিয়ে বিয়ে করল অল্প বয়সে, বাবা হলো অল্প বয়সে। নানা হয়েছে তাও আট-দশ বছর হবে। প্রথম বউয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বউয়ের গর্ভে সন্তানাদি হয়নি। বড় মেয়ে আর দুই ছেলে ঢাকায়। ছোট মেয়েকে সে নিয়ে গেছে ভালুকায়। মেয়ের জামাই সুবিধার লোক না। ফুটফুটে দুটো মেয়ে আছে। আমার জমির কাছে ঘরভাড়া নিয়ে থাকে। দিনমজুরের কাজ করে। তা-ও এক দিন করে দুই দিন বসে থাকে। বাজারে গিয়ে চা খায় আর আড্ডা মারে। সংসারে চুলা জ্বলল কি জ্বলল না, তাকিয়েও দেখে না। সংসার টানে বারেকের মেয়ে। এদিক-ওদিক কাজ করে যা টুকটাক পায়, তাই দিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে আছে। বারেক যতটুকু পারে সাহাঘ্য করে। আমাদের কাছ থেকেও চেয়েচিন্তে নেয় কিছু।
আজ কি সে রকম কোনো উদ্দেশে এসেছে?
ধুৎ, এসব নিয়ে এখন ভাবতে পারব না। হুদিয়ার ছবি সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, গত বছর জুলাই মাসে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরু করল গাজা উপত্যকায়। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দেড়-দুই হাজার। তার বেশির ভাগই শিশু। আহত রক্তাক্ত শিশুদের নিয়ে দিশেহারা মানুষ ছুটছে হাসপাতালে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মারা যাচ্ছে বহু শিশু। যারা বেঁচে থাকছে, তাদের দিকে তাকানো যায় না। কারও হাত উড়ে গেছে, কারও পা। সারা শরীর রক্তাক্ত, মুখ মাথায় ছোপ ছোপ রক্ত। কেউ আছে অচেতন হয়ে, ডাক্তার চেষ্টা করছেন জ্ঞান ফেরাতে, কিংবা বুকে পাম্প করে চালু করতে চাইছেন হার্ট। অপারেশন টেবিলে কাতরাচ্ছে শিশু। ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছিল, গাজা উপত্যকায় প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন শিশু মারা যাচ্ছে ইসরায়েলি হামলায়।
মেয়ে বলল, বাবা, তুমি ওষুধ খেয়েছ? ওষুধ খেয়ে নাশতা করো। সাড়ে নয়টা বাজে।
বুঝলাম সে কথা ঘোরাতে চাচ্ছে। বললাম, তোর আম্মু উঠুক, তারপর নাশতা করি।
আম্মুর জন্য ওয়েট কোরো না। তোমার ডায়াবেটিস আছে, টাইমলি খাওয়া উচিত।
মেয়ে ওষুধের ব্যাগ এনে দিল। বুয়াকে বলল, বাবার নাশতা দাও।
ওষুধ খেয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। মাথা থেকে শিশুদের ব্যাপারটা যাচ্ছেই না। বুয়া নাশতা দিয়েছে, খেতে খেতে বললাম, গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারের একটা স্কুলে ছয়জন অস্ত্রধারী ঢুকে গুলি চালাতে লাগল। মারা গেল ১৪১ জন, তার মধ্যে ১৩২ জনই শিশু। এসব কী চলছে পৃথিবীতে? শিশুহত্যায় এভাবে মেতে উঠেছে কেন মানুষ?
মেয়ে আবার কথা ঘোরাল। বাবা, বারেক ভাই এসে বসে আছে…
ও তাই তো! ডাক, ডাক।
দেড়-দুই মিনিটের মধ্যে বারেক এসে হাজির। তাকে দেখে আমি অবাক। বারেকের অবস্থা ভিখিরির মতো। খয়েরি প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরা। দেখে মনে হচ্ছে সারা রাত মাটিতে শুয়ে-বসে ছিল। মুখটা ভেঙেচুরে গেছে, চোখ গর্তে। মাথার চুল এলোমেলো। গা থেকে ঘাম-ময়লার গন্ধ আসছে।
আমি কথা বলার আগেই মেয়ে বলল, কী হয়েছে বারেক ভাই? এই অবস্থা কেন?
বারেক মেঝেতে বসেছে। মেয়ের কথা শুনে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
কী হয়েছে বারেক? কাঁদছিস কেন?
দু-হাতে চোখ মুছল বারেক। আমার বড় নাতনিটা, ছোট মাইয়ার বড় মাইয়াটা, আলতা…আলতা মইরা গেছে মামা।
বারেক হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। কাইল সন্ধ্যার ঘটনা। খাওয়া-দাওয়ার পর কয়, পেট বেদনা করে। এমন বেদনা, মুখ নীল হইয়া গেছে। ফিট হইয়া যাওনের দশা। খবর পাইয়া দৌড়াইয়া গেছি। মাইয়ার জামাইও আইছে। আমার কাছে টেকাপয়সা নাই, মাইয়ার কাছেও নাই। গেছি নজরুল মাস্টারের কাছে। আপনের কথা কইয়া সাত হাজার টেকা আনছি। মাইক্রো ভাড়া কইরা লইয়া গেছি ভালুকা হাসপাতালে…
বারেকের কান্না আর কথাবার্তার শব্দে স্ত্রীর ঘুম ভেঙেছে। তিনি এসে দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। বারেক চোখ মোছে, শার্টের খুঁটে নাক মোছে। হাসপাতালে যাওনের আগেই আলতা শেষ হইয়া গেল।
ততক্ষণে ছোট মেয়ে উঠে এসেছে, পাঁচ বছর বয়সের ছেলে উঠে এসেছে। মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চেয়ারের পেছনে, আমার কাঁধে হাত দিয়ে। ছেলে এসে উঠেছে কোলে। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে বাবা? বারেক ভাইয়া কাঁদছে কেন?
ছেলের মা বললেন, এখন কথা বোলো না।
বারেকের দিকে তাকালেন তিনি। হঠাৎ পেটে ব্যথা হলো কেন? আগেও এ রকম হতো?
না মামি, আগে কোনো দিন হয় নাই। কাইলই প্রথম। কেন হইছে সেইটা আমি বুঝছি। খাওন-দাওন পায় না ঠিক মতন। এক বেলা খায়, আরেক বেলা না খাইয়া থাকে। আমার ছোট মাইয়াটা চাপা স্বভাবের। সহজে কিছু কইতে চায় না। নিজে চেষ্টা করে সব সামাল দিতে। যখন দেখে আর পারতাছে না, তখন আসে আমার কাছে। দিন দশেক ধইরা জামাই কাম করে না। মাইয়ারও কাম নাই। আমি দুই-তিন দিন কিছু চাউল দিছি। শাকপাতা, জাউ—এসব খাইয়া রইছে। আলতার স্বভাব ওর মার মতন। না খাইয়া থাকলেও কেউরে কিছু কয় না। সাত বছর বয়সের মাইয়া, আল্লায় যে ওরে কী সহ্যশক্তি দিছিল! নিজে না খাইয়া ছোট বইনটারে খাওয়াইত। বাপ গেছে আড্ডা মারতে, মা গেছে কামের খোঁজে, ছোট বইনডারে লইয়া আলতা রাস্তায় রাস্তায় হাঁটত। এই কথা ওই কথা কইয়া খিদা ভুলাইয়া রাখত বইনটার।
বারেক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কান্নার হেঁচকি তুলল।…কাইল বিকালে এক বাড়িতে জেয়াফত আছিল। সেই বাড়িতে কাম কইরা মাইয়াগো লেইগা তেহারি লইয়া আইছে মাইয়ায়। অনেকখানি তেহারি। ছোড বইনরে লইয়া ভালো কইরা খাইছে আলতা। তারপর থিকাই পেট বেদনা। মনে হয় কয়েক দিন পেট ভইরা খায় নাই, অথবা বেশি কইরা খাইছে…
বারেকের গলা জড়িয়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আহা রে, আহা।
আমি উদাস হয়ে আছি। হুদিয়ার সারেন্ডারের ভঙ্গিতে হাত তোলা ছবি দেখে কত কাতর হয়েছি সকালবেলায়, গাজা উপত্যকার রক্তাক্ত শিশু, পেশোয়ারের স্কুলে নিহত হওয়া শিশু, তাদের নিয়ে কত আপ্লুত হয়েছি। আর কোনো না কোনোভাবে আমার সঙ্গে জড়িত একটি শিশু এভাবে মারা গেল? এ-ও তো এক প্রকারের শিশুহত্যা!
বারেক বলল, আলতার লাশ ঢাকায় লইয়া আইছি। জুরাইনে দাফন করুম। এই ফাঁকে ঘটনা আপনেরে জানাইতে আইছি।
আমার কোলে পাঁচ বছরের ছেলে। নিজের অজান্তে তাকে আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।