সত্যের মতো বদমাশ

তারা দুজন, মা আর ছেলে : মা-র মুখমণ্ডল তৈলাক্ত করুণ ও লম্বিত আর ছেলেটার গোলমুখ বিস্ময় আনন্দ ও কৌতূহলে ভরা, তারা দুজন এক মুষ্টি অথচ সমুদ্রসমান এই গ্রহের মেলার মধ্যে এসে ঢুকলো। এতো লোকজন, আলো হাসি-গান, বাঁশি বাজছে ঐদিকে, কুকী মেয়েদের নাচ দেখার জন্য সাতজন মহাহল্লা করতে করতে পরস্পরের পিঠে চড়ে চলে গেলো। তার পাশ […]

কেয়া আমি এবং জার্মান মেজর

আমি তখন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করছিলাম। হঠাৎ ক্রিং ক্রিং শব্দে টেলিফোন বাজল। শব্দটা যেন সন্ধ্যার ধূপের ধোঁয়া। কিছুক্ষণের জন্য আচ্ছন্ন করল আমার চোখে দেখার এবং চিন্তা করার ক্ষমতা। এই পনেরো দিন যন্ত্রটা ছিল মৃত। রিসিভার তুলেও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যেত না। হঠাৎ সেই মৃত যন্ত্রটা (না জন্তুটা) পুনর্জীবন পেতেই অদৃশ্য প্রেতের মতো মনে […]

কালো নৌকা

তখন ভাটার সময়। সমুদ্রে কোনো তোলপাড় নেই। ডাঙা থেকে মাইলখানেক দূরে জেলে নৌকাগুলো দিগন্তের অস্পষ্ট ভ্রূরেখার মতো আবছাভাবে দুলছে। মৃদুগতিতে অল্প অল্প বাতাস বইছে। হাওয়ার স্পর্শ তেমন শীতলও নয়। আবার তেমন উষ্ণতাও নেই। তবে ডাঙার ভেজা অংশে যেখান থেকে ভাটার টানে সমুদ্র পিছিয়ে গেছে, সে ভেজাবালিতে খালি পা ফেলে হাঁটলে সারা শরীরে বেশ একটা আরামদায়ক […]

রুখসানার হাসব্যান্ড

রুখসানার হাসব্যান্ড একটা অপদার্থ, গুড ফর নাথিং। সারাদিন বইসা বইসা ঘোড়ার ঘাস কাটে। ঘোড়া হইলো দুনিয়ার এক আজীব প্রাণী। এই প্রাণী কাটা ঘাস খায় না, একেবারে জীবন্ত দণ্ডায়মান ঘাস নিজ মুখে খায়াই নাকি ঘোড়ার সুখ। রুখসানার হাসব্যান্ড কোন দুনিয়ার ঘোড়ার জন্য বইসা বইসা ঘাস কাটে এই বুঝা বড় কঠিন। অন্য কেউ তো দূরের কথা স্বয়ং […]

মেঘের উপর

মেঘের ওপর বাড়ি

‘অন্যকথা’ শিরোনামে হুমায়ূন আহমেদ ছোট্ট একটা ভূমিকা লিখেছেন, যে ভূমিকাটি তাঁর মতে, পাঠকের ‘না পড়লেও চলবে’;আমাদের মনে হয়েছে এটা পড়া দরকার তাই ভূমিকার কিছু অংশ নিচে তুলে দিলাম ‘প্রথম আলো ঈদসংখ্যার জন্যে যখন আমি এই উপন্যাস লিখি, তখন ক্যান্সার নামক জটিল ব্যাধি আমার শরীরে বাসা বেঁধেছে। এই খবরটা আমি জানি না। ক্যান্সার সংসার পেতেছে কোলনে,সেখান […]

কালো বিড়াল রহস্য

সত্যজিত্ রায়ের ঋণ স্বীকার করে তাঁর ফেলুদাকে নিয়ে লেখা এ স্যাটায়ার গল্প আমরা ঢাকা যাচ্ছি শুনে লালমোহন গাঙ্গুলীও এক পায়ে খাড়া। ফেলুদাকে বললেন,  ‘বহুদিনের শখ মশাই, ঢাকার ওপর একটা নভেল লিখব। অথচ দেখুন, হাতের কাছের দেশটাতেই একবার যাওয়া হলো না।?’ ফেলুদা বলল, ‘দেশ নিয়ে লিখতে গেলে যে সে দেশ ঘুরতে হবে এমন দিব্যি আপনার বেলায় […]

আজাহারকে ছুঁয়ে গেল

নাস্তার টেবিলের কাছে এসে আজাহার থমকে দাঁড়ায়। তার রোজকার নাস্তা সাধারণত রুটি, হাতে বানানো, সঙ্গে সবজি বা ঘন ডাল। আজ রুটি আর সবজি ভাজি আছে, তার পাশে সাজানো একটা ডিম, সেদ্ধ, একটা চমচম, এক গ্গ্নাস দুধ। এর মানে কী, সে বোঝার চেষ্টা করল। সে না বসে দাঁড়িয়ে থাকল, তাকিয়ে থাকল চমচম, দুধ আর ডিমের দিকে। […]

ছায়াসঙ্গী

প্রতি বছর শীতের সময় ভাবি কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে আসব। দলবল নিয়ে যাব_ হৈচৈ করা যাবে। আমার বাচ্চারা কখনো গ্রাম দেখে নি_ তারা ভারি খুশি হবে। পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারবে। শাপলা ফুল শুধু যে মতিঝিলের সামনেই ফুটে না, অন্যান্য জায়গাতেও ফুটে, তাও স্বচক্ষে দেখবে। আমার বেশির ভাগ পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারি না। এটা কেমন […]

আনন্দ বেদনার কাব্য

বইটির নাম ‘রিক্তশ্রী পৃথিবী’। প্রচ্ছদে একটি মেয়ের মুখের ছবি। মেয়েটি কাঁদছে। তার মুখের পাশে একটি গ্গ্নোব। একটি বিকটদর্শন নর-কঙ্কাল গ্গ্নোবটি বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। কঙ্কালটির ডান হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। যথেষ্ট জটিলতা। পৃথিবীর রিক্তশ্রী ফুটিয়ে তোলার আয়োজনে কোনো ত্রুটি নেই। এ ধরনের প্রচ্ছদচিত্রের বইগুলোর পাতা সাধারণত উল্টানো হয় না। তবুও অভ্যাসবশেই পাতা উল্টালাম। এবং এক […]

একজন মানুষের গল্প

অনেকদিন আগে শঙ্খনীল কারাগার নামের একটি বই লিখেছিলাম। সেখানে ভালোবাসাবাসি ছিল, চোখের জল ছিল, কাজেই মেয়ে মহলে ‘লেখক’ নাম হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বারো বছরের এক মেয়ে একটি চিঠি লিখে ফেললো। চিঠি পেয়ে সরাসরি উপস্থিত হলাম ভক্তার বাড়িতে। ভাবখানা এরকম যেন মুখোমুখি বসে আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে আসব। মেয়ের মা দরজা খুলে দিলেন। […]