মেঘের ওপর বাড়ি

মেঘের উপর
মেঘের উপর

‘অন্যকথা’ শিরোনামে হুমায়ূন আহমেদ ছোট্ট একটা ভূমিকা লিখেছেন, যে ভূমিকাটি তাঁর মতে, পাঠকের ‘না পড়লেও চলবে’;আমাদের মনে হয়েছে এটা পড়া দরকার তাই ভূমিকার কিছু অংশ নিচে তুলে দিলাম

‘প্রথম আলো ঈদসংখ্যার জন্যে যখন আমি এই উপন্যাস লিখি, তখন ক্যান্সার নামক জটিল ব্যাধি আমার শরীরে বাসা বেঁধেছে। এই খবরটা আমি জানি না। ক্যান্সার সংসার পেতেছে কোলনে,সেখান থেকে রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীরে ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনে এক অদ্ভুত কারণে আমার অবচেতন মন কি এই খবরটা পেয়েছে?

আমি বা আমার চেতনা বা অন্য কিছু এখন দিলু রোডের বাড়িতে, আমার নিজের বাড়ি। এখানে কীভাবে উপস্থিত হয়েছি তা জানি না। আমার অবস্থা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো। কলমিশাক। স্রোত যেদিকে নিয়ে যাবে আমাকে যেতে হবে। নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় কিছু করার নেই। কলমিশাক না বলে জলে ভাসা পদ্ম বললে কেমন হয়? জলে ভাসা পদ্ম নিয়ে একটা সুন্দর গান আছে। ‘জলে ভাসা পদ্ম আমি…।’ তবে কলমিশাক জলে ভাসে, মাটিতে তার শিকড় নেই। পদ্ম জলে ভাসে না। তার শিকড় আছে।

নিজের বাড়িতে এসে আমি আনন্দে অভিভূত হয়েছি। মনে হচ্ছে কত দীর্ঘ দিবস কত দীর্ঘ রজনীই না আমাকে বাইরে কাটাতে হয়েছে! এখন ফিরে এসেছি। সব আগের মতোই আছে। পলিন তার ঘরে ইন্টারনেটে কী যেন দেখছে। মনে হয় ফেসবুক আপডেট করছে। রুবিনা শাওয়ার ছেড়ে গোসল করছে। সকাল দশটা বাজে। এই সময় সে একবার শাওয়ার নেয়। শাওয়ার নিয়ে সকালের নাস্তা করে। আরেকবার শাওয়ার নেয় রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে আগে। রুবিনার বিষয়ে প্রফেসর সালাম যা বলেছেন তা কি সত্যি? আমার কিছুই মনে পড়ছে না। মৃত মানুষকে আংশিত স্মৃতি দেওয়া ঠিক না।

রান্নাঘরে নতুন একটা কাজের মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। সে রুবিনার ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। এক স্লাইস রুটি, এক গ্লাস মাল্টার রস, এক কাপ দুধ, একটা সেদ্ধ ডিম। টি-পট ভর্তি হালকা লিকারের চা দেওয়া হবে। রুবিনা নাশতা করার ফাঁকে ফাঁকে চা খাবে। মাল্টার রসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে দিনের প্রথম সিগারেটটা ধরাবে। তার কাছে নাকি দিনের প্রথম সিগারেট প্রেমিকের ঠোঁটে প্রথম চুম্বনের মতো।

লোকমান রান্নাঘরে ঢুকেছে। সে গলা নিচু করে বলল, ড্রয়িংরুমে গেস্ট আছে, এক কাপ কফি দেন। চিনি-দুধ অফ, ব্ল্যাক কফি। চিনি-দুধ ছাড়া এই জিনিস মানুষে ক্যামনে খায় কে জানে!

নতুন কাজের মেয়েটা বলল, কফি আপনি নিজে বানায়া নিয়ে যান। আমার হাত বন্ধ।

লোকমান বলল, গেস্ট কে আসছে শুনলে হাতের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ডিবির ইন্সপেক্টর। ম্যাডামকে অ্যারেস্ট করতে আসছে।

কন কী?

মার্ডার চার্জ। ম্যাডাম আমাদের স্যাররে বিষ খাওয়ায়ে মেরেছে। পত্রিকায় খবর চলে এসেছে। ‘সাত সকাল’ পত্রিকার নিউজ। পড়তে চাইলে আমার ঘরে চলে যান। বিছানার উপর রাখা আছে।

ও আল্লা!

আপনের তো ‘ও আল্লা’ বলার দরকার নেই। ম্যাডাম বলবে ‘ও আল্লা’। মহাবিপদে আছেন ম্যাডাম। বিপদে আপনি নেই, আমিও নাই। যত্ন করে কফি বানায়া দেন, নিয়া যাই।

কফির সঙ্গে আর কিছু দিব? কেক দিব?

শুধু কফি চেয়েছে,শুধু কফি নিয়া যাব। বাড়তি যত্ন করলে সন্দেহ করবে। পুলিশের লোক। আমি নিজেও সামান্য চাপের মধ্যে আছে। দুনিয়ার প্রশ্ন করতেছে। আপনি বেঁচে গেছেন। আপনি জয়েন করেছেন স্যারের মৃত্যুর পর। তার পরেও টুকটাক প্রশ্ন আপনারে করবে। ডিবি পুলিশ নিজের বাপরেও ছাড়ে না। এমন খতরনাক জিনিস।

লোকমান কফি নিয়ে অতি বিনীত ভঙ্গিতে ডিবি ইন্সপেক্টর খলিলের সামনে রাখল। খলিল বলল, থ্যাংক য়্যু।

লোকমান বিনয়ে ভেঙে পড়ে বলল, স্যার, নো মেনশন।

খলিল বলল, বসার ঘরে বেশ কয়েকটা অ্যাসট্রে দেখছি। এখানে কি সিগারেট খাওয়া যায়?

জি, খাওয়া যায়। সিগারেট আপনার সঙ্গে আছে, না এনে দিব?

সিগারেট সঙ্গে আছে।

স্যার, লাইটার কি আছে?

আছে, থ্যাংক য়্যু।

নো মেনশন, স্যার। ম্যাডাম এখন শাওয়ার নিতেছেন। শাওয়ার নিয়ে ব্রেকফস্ট করবেন,তারপর আপনার কাছে আসবেন।

কোনো অসুবিধা নেই, আমি অপেক্ষা করব। ম্যাডামের মেয়েটি কি বাসায় আছে?

জি আছে। কী করতেছে জানি না, দেখে আসব?

দেখে আসতে হবে না। আপনি আমার সামনে বসুন। আপনার স্যারকে যে রাতে হাসপাতালে নিয়ে যান, সে রাতের ঘটনাটা আপনার মুখ থেকে শুনি। ঘটনা যা ঘটেছে তা-ই বলবেন। নতুন কিছু যুক্ত করবেন না, আবার কিছু বাদও দেবেন না। বলুন কী ঘটেছিল।

লোকমান কী ঘটেছিল বেশ গুছিয়ে বলছে। আমি তার কথা শুনছি। সে কী ভাবছে তাও বুঝতে পারছি। পুলিশ ইন্সপেক্টর খলিল কী ভাবছে তা বুঝতে পারছি না। মনে হয়, সে কিছু ভাবছে না। কিংবা যে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে খলিলের ভাবনা আমাকে জানাতে চাচ্ছে না।

লোকমান বলছে, স্যার আমি থাকি একতলায়। আমার ঘুম না-হওয়ার রোগ আছে। ডাক্তাররা এই রোগের নাম দিয়েছেন ‘ইনসমনিয়া’। ঘুমের বড়ি খেলেও আমার ঘুম হয় না। ঘটনার দিন রাতে দু’টা ঘুমের বড়ি খেয়ে শুয়েছি। বড়ির নাম কি বলব স্যার?

নাম বলতে হবে না।

তারপরেও নামটা শুনেন। বড়ির নাম ডরমিকাম। ম্যাডাম নিজেও এই বড়ি মাঝে মধ্যে খান। স্যার, আপনি কি কখনো খেয়েছেন?

না।

ইনসমনিয়া রোগ হলে খেয়ে দেখবেন। ফাসক্লাস ঘুম হবে।

খলিল বলল, অকারণে বকরবকর করবেন না। মূল ঘটনা বলুন।

রাত আনুমানিক দেড় ঘটিকায় ম্যাডাম আমার ঘরে ধাক্কা দিলেন। দেড় ঘটিকা নাও হইতে পারে। পাঁচ-দশ মিনিট আগ-পিছ হইতে পারে। যাই হোক, আমি দরজা খুলতেই ম্যাডাম বললেন, মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াও। তোমার স্যারের শরীর খারাপ। অ্যাম্বুলেন্স আসতে বলেছি। এর মধ্যে চলে আসার কথা। তুমি অ্যাম্বুলেন্সকে বাসা চিনিয়ে নিয়ে আসবে। ম্যাডামের কথা শুনে আমি দৌড়ে রাস্তায় চলে গেলাম।

খলিল বলল, স্যারের কী হয়েছে জানতে চাইলেন না?

তখন জানতে চাই নাই।

অ্যাম্বুলেন্স আসার পর জানতে চেয়েছেন?

জি-না। তখন রুগি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি।

অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন?

জি। অবশ্যই।

খলিল সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, ওই রাতে আপনার ম্যাডাম আপনার ঘরে যান নাই। তিনি আপনাকে মোবাইল টেলিফোনে সিগারেট কিংবা গাঁজার পুরিয়া আনতে বলেছেন। আপনি ওই জিনিস নিয়ে ফিরে এসে শোনেন অ্যাম্বুলেন্স এসে আপনার স্যারকে নিয়ে গেছে। আপনি হাসপাতালেও যান নাই।

 

আমি বুঝতে পারছি লোকমান ভয়ে-আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টরের প্রতিটি কথাই সত্য। লোকমান ভেবে পাচ্ছে না, এই লোক এত কিছু জানল কীভাবে?

খলিল হাই তুলতে তুলতে বলল, সমানে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। শরীর থেকে চামড়া খুলে ফেলব। চামড়া যদি নাও তুলি অণ্ডকোষ থান ইট ঝুলিয়ে দিব। কানে ধরে দশবার উঠ-বস করুন।

খলিলের কথা শুনে আমি অবাক। অতি নোংরা কথা অবলীলায় বলে যাচ্ছে। আবার মিষ্টি গলায় আপনি আপনি করে কানে ধরে উঠ-বস করতে বলছে।

লোকমান সঙ্গে সঙ্গে আদেশ পালন করল। খলিল বলল, আমিক এতক্ষণ এই বাড়িতে থাকব আপনি ততক্ষণ কানে ধরে থাকবেন। আপনার ম্যাডাম যদি কান থেকে হাত নামাতে বলে তার পরেও নামাবেন না। আমি অনুমতি দিলে তবেই নামাবেন।

অবশ্যই। স্যার, বাথরুমে কি যাওয়া যাবে?

যাওয়া যাবে না কেন! কানে ধরে যাবেন।

খলিল আরেকটা সিগারেট ধরাল। সে আনন্দিত ও উত্ফুল্ল। খলিল চমত্কার প্যাঁচ খেলাচ্ছে। আমি প্রায় নিশ্চিত, সে রুবিনাকে প্যাঁচে ফেলবে। সে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।

আপনার নাম যেন কী?

লোকমান হেকিম। কেউ কেউ ডাকে লোকমান,আবার কেউ কেউ ডাকে হেকিম।

খলিল হাই তুলতে তুলতে বলল, এত লম্বা নামে তো ডাকতে পারব না। এখন থেকে আপনার নাম লোকমা। ভাতের লোকমার লোকমা, কোঁত্ করে গিলে ফেলা যায় এমন জিনিস। লোকমা ডাকলে অসুবিধা আছে?

অসুবিধা নাই স্যার।

এখন যান, আপনার ম্যাডামের ব্রেকফাস্ট টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকুন। ম্যাডাম যখন জিজ্ঞেস করবে কানে ধরা কেন, তখন আমার কথা বলবেন। খবরদার কান থেকে হাত নামাবেন না। কান থেকে হাত নামালে আপনাকে ভাতের লোকমার মতো গিলে ফেলব।

কান থেকে হাত নামাব না স্যার। আপনি যখন বলবেন তখন নামাব, তার আগে না।

খলিল ভুল করেছে। রুবিনা সহজ চিজ না। লোকমানকে কানে ধরিয়ে সে রুবিনাকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছে। রুবিনা ভয়-পাওয়া টাইপ মেয়ে না। খলিলের সঙ্গে রুবিনার কথোপকথনের জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আনন্দময় অপেক্ষা বলা যেতে পারে। কোনো একটা ভালো সিনেমা দেখার আগের মুহূর্তের আনন্দের মতো আনন্দ।

মৃতদেরও তাহলে আনন্দ-বেদনার ব্যাপার আছে। তবে আনন্দ-বেদনার তীব্রতা কম। লোকমান কানে ধরে ঘুরছে—দৃশ্যটি মজার লাগছে। জীবিত মানুষ অন্যের বিব্রত অবস্থায় আনন্দ পায়। এ জগতেও তাই।

 

রুবিনা সিগারেট হাতে ড্রয়িংরুমে বসতে বসতে বলল, সরি, দেরি করলাম।

খলিল উঠে দাঁড়াল। বিনীত গলায় বলল, ম্যাডাম,কোনো সমস্যা নেই। লোকমান নামের একজন আমাকে কফি দিয়েছে, কফি খাচ্ছিলাম।

খলিল চাচ্ছিল লোকমানের প্রসঙ্গ ওঠায় রুবিনা তার কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বিষয়ে কিছু বলবে। রুবিনা কিছুই বলল না।

খলিল বলল, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. ইফতেখারুল ইসলাম স্যারের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে এসেছে। পাকস্থলিতে Toxic বস্তু পাওয়া গেছে। উচ্চমাত্রায় অরগ্যানো ফসফরাস।

রুবিনা সিগারেটে টান দিয়ে বলল, ও আচ্ছা।

খলিল চোখ সরু করে বলল, আমি নিশ্চিত, বিষটা কেউ তাকে খাইয়েছে।

রুবিনা বলল, কিংবা নিজেই খেয়েছে।

খলিল বলল, এই সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। সে ক্ষেত্রে ভিকটিম ডেথনোট রেখে যাবে। কিংবা মৃত্যুর আগে কাউকে বলে যাবে। আমার প্রয়াত শিক্ষক আপনাকে কি কিছু বলে গেছেন?

না। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। তিন দিন তিন রাত হাসপাতালে ছিল। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরেছে। কথাবার্তা বলেছে,কিন্তু বিষ খাওয়া নিয়ে কিছু বলে নি।

কী কথাবার্তা বলেছিলেন?

আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে। সিগারেটের গন্ধে কষ্ট হচ্ছে, এইসব হাবিজাবি।

রোগীর ঘরেই সিগারেট খাচ্ছিলেন?

হুঁ। তবে ঘরে ঠিক না। টয়লেটে কমোডের উপর বসে সিগারেট খেয়েছি।

খলিল বলল, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের খাতাপত্র, ডায়েরি, এইসব পরীক্ষা করে দেখতে চাই।

রুবিনা শক্ত গলায় বলল, কথায় কথায় ‘আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক’ এই বুলশিট কপচাবেন না। আপনি কখনো তার ছাত্র ছিলেন না। আপনি যেমন আমার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন,আমিও আপনার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে আপনি কখনো পড়েন নি। আপনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। অনার্স পর্যন্ত পড়েছেন। অনার্সে থার্ডক্লাস পাওয়ায় আপনার এম, এ পড়া হয়নি। আপনি কবিতা লেখার চেষ্টা করেন।  ‘অরুণিমা সেন’ ছদ্মনামে কিছু অতি অখাদ্য কবিতা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা করবেন নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে করবেন। কোনো মেয়ের নামের আড়ালে করবেন না।

খলিল থতমত ভাব কাটাতে কাটাতে বলল, আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি।

রুবিনা বলল, অবশ্যই পারেন। আমি যদি সিগারেট খেতে পারি আপনিও পারেন। ভালো কথা, লোকমান কানে ধরে ঘুরছে কেন?

ম্যাডাম, ও আমাকে কিছু মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছে। শাস্তি হিসেবে কানে ধরা। অতি মৃদু শাস্তি বলতে পারেন। মূল শাস্তি এখনো শুরু হয়নি। তবলাফ ঠুকঠাক বলতে পারেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরে শুরু হবে।

মিথ্যা ইনফরমেশনের শাস্তি যদি কানে ধরা হয়, তাহলে সিগারেট ফেলে আপনারও তো কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। আপনিও আমাকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি আমার স্বামীর ডিরেক্ট স্টুডেন্ট। যা আপনি না।

খলিল বলল, ম্যাডাম, লোকমান একটি হত্যাকাণ্ডের সাসপেক্ট। আপনিও সাসপেক্ট। আমি তদন্তকারী অফিসার। মামলার তদন্তের সাহায্যের জন্য আমরা সাসপেক্টদের সঙ্গে কিছু  মেন্টাল গেম খেলি। লোকমানের সঙ্গে আমি এক ধরনের মেন্টাল গেম খেলছি। লোকমানের মোরালিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন চট করে মিথ্যা বলবে না।

আমি একজন সাসপেক্ট?

জি ম্যাডাম। এ বাড়িতে যারা আছে সবাই সাসপেক্ট। আপনার মেয়ে পলিন, যার বয়স তের বছর, সেও সাসপেক্ট। চালুনি দিয়ে চেলে মূল আসামি বের করা হবে। এই কাজটি আমি ভালো পারি। কবি হিসেবে আমি ব্যর্থ হতে পারে, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমার সুনাম আছে।

রুবিনা বলল, আমি যেহেতু সাসপেক্ট, আপনি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে মেন্টাল গেম খেলবেন বা খেলা শুরু করেছেন।

ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে আমি মেন্টাল গেম এখনো শুরু করিনি। তবে অবশ্যই শুরু করব।

কখন শুরু করবেন?

আপনি যখন বলবেন তখন শুরু করব।

এখনই শুরু করুন। দেখি আপনার মেন্টাল গেমের নমুনা।

খলিল শান্ত গলায় বলল, ম্যাডাম, আমি আপনার স্বামীর ডেডবডি নিয়ে এসেছি। বারান্দায় দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন, পুলিশের গাড়ির পেছনে একটা অ্যাম্বুলেন্স আছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর কফিনে ডেডবডি আছে। সুরতহাল যেহেতু শেষ হয়েছে, ডেডবডির কাজ শেষ।

খলিল পকেট থেকে হলুদ খাম বের করল। হলুদ খামের ভেতর সরকারি সিলের কাগজ। খলিল কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, ম্যাডাম,এখানে সই করে ডেডবডি রিসিভ করুন।

রুবিনা সই করল। খলিল বলল, সুরতহালের ডেডবডি এভাবে হ্যান্ডওভার করা হয় না। নানান ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আমি দৌড়ঝাঁপ করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছি। এটাই আমার মেন্টাল গেম। লোকমানকে আমি অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। ওকে আপাতত রেখে যাচ্ছি। বাসায় ডেডবডি, আপনাকে অনেক কাজকর্ম করতে হবে। একজন পুরুষের সাহায্য দরকার।

রুবিনার ঠোঁটের কোনায় ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। খানিকটা অবাক হয়েই সে খলিলের দিকে তাকাল।

খলিল বলল, ম্যাডাম! আমার মেন্টাল গেম কি আপনার পছন্দ হয়েছে?

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
Alternative Textহুমায়ূন আহমেদ- র আরো পোষ্ট দেখুন