জন্মদিনের কবিতা

আমারো রয়েছে ঋতু, ঋতুচক্রে যেহেতু মানুষ আমি সকল প্রাণীর মতো আমারো রয়েছে তাই প্রাণ, আমারো রয়েছে জন্ম, রয়েছে জন্মের প্রতি প্রেম, রয়েছে মৃত্যুর প্রতি টান। কারো জন্ম ঋতুর বাহিরে নয়, ঋতুর ভিতরে সব; জন্ম-মৃত্যু, দিন-রাত্রি, যৌবন-শৈশব। ঋতুবন্দী সব। ঘনপুঞ্জ জলবিন্দু সম আকাশের নীলে গ্রীষ্মের সকল বিষ কন্ঠ ভরে গিলে তুমি ছিলে নীলকন্ঠ দাবদগ্ধ জীবের মিছিলে, […]

বউ

কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে । একদি আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’ বাজে কথা । আজ বলি,হবে,বউ থেকে হবে । বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম,মাটি,লোহা, সোনার কবিতা, —কী সে নয়? গোলাপ,শেফালি,যুঁই,ভোরের আকাশে প্রজাপতি, ভালোবাসা,ভাগ্য,ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি । ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,দুইজন্ম এবার মিশেছে,দেখা যাক । হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম,গাঁজা,মদ,নৈঃসঙ্গ আমার ভালোবেসে হে […]

দু'জনের ভাত

গত রাত্রির বাসি ভাত খেতে খেতে মনে কি পড়ে না? পড়ে। ভালো কি বাসি না? বাসি। শ্লথ টেপ থেকে সারা দিন জল ঝরে, সেই বেনোজলে এঁটো মুখ ধুয়ে আসি। গত রাত্রির বাসি ভাত খেতে খেতে প্রেম কি জাগে না? জাগে। কিছু কি বলি না? বলি। তিতাস শিখায় যতটুকু তাপ লাগে, অনুতাপে আমি তার চেয়ে বেশি […]

মা

আমি বড় হয়ে গেছি, আর কোনোদিন নোংরা হবো না৷ মা, আমার পিঠ থেকে ধুলো ঝেড়ে দাও, আমি পরিচ্ছনড়ব হতে চাই গাত্রচর্মে৷ তেত্রিশ বছরের ধুলোয় লুটানো দেহখানি আজ তুলে এনেছি তোমার কাছে৷ তুমি এর গালে চুমু খাও, এর বাহুতে চিমটি কাটো, উষ্কখুষ্ক চুলের ভিতরে দ্রত বেগে আঙুল চালাতে গিয়ে যদি ব্যথা দাও, দাও: আমি কিচ্ছুটি বলবো […]

নাম দিয়েছি ভালোবাসা

আমরা মিশিনি ভালোবেসে সব মানুষ যেভাবে মেশে, আমরা গিয়েছি প্রাজ্ঞ আঁধারে না-জানার টানে ভেসে। ভাসতে ভাসতে আমরা ভিড়িনি যেখানে নদীর তীর, বুনোবাসনার উদ্বেল স্রোতে আশ্লেষে অস্থির। আমরা দুজনে রচনা করেছি একে অপরের ক্ষতি, প্রবাসী প্রেমের পাথরে গড়েছি অন্ধ অমরাবতী। আমরা মিশিনি বিহবলতায় শুক্রে-শোণিতে-স্বেদে, আমাদের প্রেম পূর্ণ হয়েছে বেদনায় বিচ্ছেদে

পৃথিবী

তুমি ডেকেছিলে, আমি চলে এসেছিলাম একা। কোনো কিছু সঙ্গে নিইনি; সঙ্গে করে নিইনি পানীয়, তিল-তিসি-তামা বা বিছানা বালিশ, তুমি বলেছিলে সব পাওয়া যাবে, __এ শহর নেশা ও নারীর। তুমি ডেকেছিলে, জননীর কোমল বিছানা ছেড়ে চলে এসেছিলাম, শুধু তোমার ডাকে। পেছন থেকে অদৃশ্য নিয়তি এসে পাপের পিচ্ছিল লেজ টেনে ধরেছিল। সর্বশেষ স্পর্শের আনন্দে উন্মাতাল মায়ের বিছানা […]

চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা

চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা নদীর জল তোমাকে যেভাবে পেয়েছে আমি সেভাবে পাই নি! লাক্স সাবান যেভাবে তোমাকে ছুঁয়েছে আমি সেভাবে ছুঁইনি। মেডলিন লিপস্টিক যেভাবে তোমাকে চুমু খেয়েছে আমি সে সুযোগ পাই নি। প্রসাধন ঘরের চারদেয়াল তোমাকে যেভাবে দেখেছে আমি সেভাবে তোমাকে দেখিনি। গাঢ় অন্ধকার যেভাবে তোমাকে আলিঙ্গন করেছে আমি তো তা পারি নি। দিনের আলো […]

দন্ডকারণ্য

আজ প্রায় ত্রিশ বছর পর রেখার চিঠি পেয়ে আমি তো অবাক। পাছে চিনতে ভুল করি, তাই নিজের পরিচয় দিয়েই রেখা শুরু করেছে তার চিঠিঃ ‘আমি রেখা। জানি, আমাকে চিনতে তোমার কষ্ট হবারই কথা। সে তো আজকের কথা নয়, সে যে হলো কতো কাল! আমি ছিলাম তোমার ছোটবেলার খেলার সাথী, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে […]

প্রশ্নাবলী

কী ক’রে এমন তীক্ষ্ণ বানালে আখিঁ, কী ক’রে এমন সাজালে সুতনু শিখা? যেদিকে ফেরাও সেদিকে পৃথিবী পোড়ে । সোনার কাঁকন যখন যেখানে রাখো, সেখানে শিহরে, ঝংকার ওঠে সুরে । সুঠাম সবুজ মরাল বাঁশের গ্রীবা কঠিন হাতের কোমল পরশে জাগে, চুম্বন ছাড়া কখনো বাঁচে না সে যে । পুরুষ চোখের আড়ালে পালাবে যদি, কী লাভ তাহলে […]

বসন্ত বন্দনা

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা,—দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক। এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরন, মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে নিমজ্জিত হতে চায়। […]