তার চেয়ে

সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা দিনরাত্রি তেমনি করে জ্বলতে থাকো, জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো, দিনরাত্রি অর্থাৎ মুখের কশ বেয়ে যতদিন রক্ত না গড়ায়। একদিন মুখের কশ বেয়ে রক্ত ঠিক গড়িয়ে পড়বে। ততদিন তুমি কী করবে? পালিয়ে-পালিয়ে ফিরবে নাকি? পালিয়ে-পালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন […]

অল্প-একটু আকাশ

অতঃপর সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। জুঁইয়ের গন্ধে বাতাস যেখানে মন্থর হয়ে আছে ; এবং, রেলিংয়ে ভর দিয়ে যেখান থেকে অল্প-একটু আকাশ দেখা যায়। আকাশ! এতক্ষণে তার মনে পড়ল, সারাটা সকাল, সারাটা বিকেল আর সন্ধ্যা কাজের পাথরে মাথা ঠুকতে ঠুকতে, মাথা ঠুকতে ঠুকতে মাথা ঠোকাই তার সার হয়েছে। কোনো-কিছুই সে শুনতে পায়নি ; না একটা গান, […]

প্রিয়তমাসু

তুমি বলেছিলে ক্ষমা নেই, ক্ষমা নেই। অথচ ক্ষমাই আছে। প্রসন্ন হাতে কে ঢালে জীবন শীতের শীর্ণ গাছে। অন্তরে তার কোনো ক্ষোভ জমা নেই। তুমি বলেছিলে, তমিস্রা জয়ী হবে। তমিস্রা জয়ী হলো না। দিনের দেবতা ছিন্ন করেছে অমারাত্রির ছলনা; ভরেছে হৃদয় শিশিরের সৌরভে। তুমি বলেছিলে, বিচ্ছেদই শেষ কথা। শেষ কথা কেউ জানে? কথা যে ছড়িয়ে আছে […]

চিরমায়া

ঘর দুয়ার বাহিরে দেখি না, শুধু স্থির জানি ভিতরে কোথাও চৌকাঠে পা রেখে তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ, চিরমায়া। দাঁতে-চাপা অধরে কৌতুক স্থির বিদ্যুতের মতো লগ্ন হয়ে আছে, ভুরু বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বাঁকানো, জ্বলে কোমল আগুন সিঁথি ও ললাটে। স্থির সরসীর মতো দুই চোখে চক্ষু রেখে জগৎ-সংসার অকস্মাৎ তার কার্যকারণের-সূত্রে গাঁথা মাল্যখানিকে ঘোরাতে ভুলে যায়। বাহিরে দেখি না, […]

নিশির ডাক

নিশির ডাক শুনে মাঝরাত্তিরে যারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, এখন আবার খুব শান্ত আর খুব সুন্দর এই সকালবেলায় একে-একে সেই ছেলেগুলো যে যার ঘরে ফিরে আসছে। ওদের ছেঁড়া জামাকাপড়, ওদের রক্তাক্ত হাত-পা, আর সেইসঙ্গে ওদের ভাষাহীন চাউনি দেখেই বোঝা যায় যে, যা পাবে বলে ওরা রাস্তায় গিয়ে নেমেছিল, তা ওরা পায়নি। মাথা নিচু করে ওরা […]

আমার ভিতরে কোনো দল নেই

আমার পিছনে কোনো দল নেই, আমার ভিতরে দলবদ্ধ হবার আকাঙ্ক্ষা নেই, আমি সাদা কালো লাল নীল গাং-গেরুউয়া জাফরান বাদামি হরের রঙের খেলা দেখে যাই। একলা-পথে হাঁটতে-হাঁটতে একলা আমি ঘরে ফিরে যাব। যেতে-যেতে ধুলোবালি জঞ্জালে ও ঘাসে খানিকটা প্রশংসা আমি রেখে যাই। দেখি শুকনো পাতা উড়ছে হিলিবিলি সন্ধ্যার বাতাসে। আমার পিছনে কেউ নেই এখানে। কস্মিনকালেও কাউকে […]

ফেউ

সন্ধ্যারাতে চতুর্দিকে চেঁচিয়ে মরে ফেউ। মরুক। তোর কাজে বিঘœ কেন ঘটবে, তোর হাতের কলম কেউ কাড়তে পারবে না যে। দৃশ্য বটে পালটে যায়, রাত্রি হয় ঘোর। তখনও ফেউ ডাকে। ডাকুক, ডেকে মরুক। তাতে ভাবনা নেই, তোর কলম যদি থাকে। ঘরের মধ্যে একলা তুই, বাহিরে ঘুরে যায় আতঙ্কের ঢেউ; এদিকে দেখি টেবিলে আলো। ওদিকে শুনি ঠায় […]

ওর কথাটা বোঝো

তোমার যা বলবার কথা, তুমি পুরো একটা ঘন্টা ধরে সব্বাইকে বুঝিয়ে বলেছ। এই বার ওই যে লোকটা একদম পিছনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, মঞ্চ থেকে নেমে তুমি একবার ওর কাছে চলে যাও, ওর কথাটা বোঝো। ওর বাড়ি—যদ্দুর জানি—ডায়মন্ড হারবারে। কিংবা কালনা কিংবা কাটোয়ায়। কিংবা অন্য যে-কোনো জায়গায় হোক, ওকে দেখলে বোঝা যায় ওর পেটে দাউদাউ জ্বলছে […]

পুকুরচুরি

জলধারা দূরে সরে যায়, দূর থেকে ক্রমে আরও দূরে। শেষ ক’টি পুকুর শুকায়, শহরের বুক যায় পুড়ে। নেমে গেছে পুকুরের জল, ঘটিতে এখন শুধু নুড়ি উঠে আসে, লেঠেলের দল আঁধারে করেছে জল চুরি। কোথায় শুনেছে কে বা কবে লাঠির দাপটে পরপর এভাবে পুকুরচুরি হবে, থাকবে শুধুই বাড়িঘর। যেখানেই আজ চোখ থুই, জল নেই, শুধু সারি-সারি […]

মিলিত মৃত্যু

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে। বরং বুদ্ধির নখে শান দাও, প্রতিবাদ করো। অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায় অনায়াসে সম্মতি দিও না। কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়, তারা আর কিছুই করে না, তারা আত্মবিনাশের পথ পরিস্কার করে। প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর কথা বলা যাক। শুভেন্দু এবং সুধা কায়মনোবাক্যে […]