বর্ষার দিনে

এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়! এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে তপনহীন ঘন তমসায়। সে কথা শুনিবে না কেহ আর, নিভৃত নির্জন চারি ধার। দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি, আকাশে জল ঝরে অনিবার। জগতে কেহ যেন নাহি আর। সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব। কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি […]

রাশিয়ার চিঠি-৪

মস্কৌ থাকতে সোভিয়েট ব্যবস্থা সম্বন্ধে দুটো বড়ো বড়ো চিঠি লিখেছিলুম। সে চিঠি কবে পাবে এবং পাবে কি না কী জানি। বর্লিনে এসে একসঙ্গে তোমার দুখানা চিঠি পাওয়া গেল। ঘন বর্ষার চিঠি, শান্তিনিকেতনের আকাশে শালবনের উপরে মেঘের ছায়া এবং জলের ধারায় শ্রাবণ ঘনিয়ে উঠেছে, সেই ছবি মনে জাগলে আমার চিত্ত কিরকম উৎসুক হয়ে ওঠে সে তোমাকে […]

রাশিয়ার চিঠি -৩

মস্কৌ বহুকাল গত হল তোমাদের উভয়কে পত্র লিখেছিলুম। তোমাদের সম্মিলিত নৈ:শব্দ থেকে অনুমান করি সেই যুগলপত্র কৈবল্য লাভ করেছে। এমনতরো মহতী বিনষ্টি ভারতীয় ডাকঘরে আজকাল মাঝে মাঝে ঘটছে বলে শঙ্কা করি। এই কারণেই আজকাল চিঠি লিখতে উৎসাহ বোধ করি নে। অন্তত তোমাদের দিক থেকে সাড়া না পেলে চুপ করে যাই। নি:শব্দ রাত্রির প্রহরগুলোকে দীর্ঘ বলে […]

রাশিয়ার চিঠি -২

মস্কৌ স্খান রাশিয়া। দৃশ্য‚ মস্কৌয়ের উপনগরীতে একটি প্রাসাদভবন। জানালার ভিতর দিয়ে চেয়ে দেখি‚ দিক্প্রান্ত পর্যন্ত অরণ্যভূমি‚ সবুজ রঙের ঢেউ উঠেছে– ঘন সবুজ‚ ফিকে সবুজ‚ বেগনির সঙ্গে মেশামেশি সবুজ‚ হলদের-আমেজ-দেওয়া সবুজ। বনের শেষসীমায় বহু দূরে গ্রামের কুটিরশ্রেণী। বেলা প্রায় দশটা‚ আকাশে স্তরে স্তরে মেঘ করছে‚ অবৃষ্টি সংরম্ভ সমারোহ‚ বাতাসে ঋজুকায়া পপ্লার গাছের শিখরগুলি দোদুল্যমান। মস্কৌয়েতে কয়দিন […]

রাশিয়ার চিঠি -১

মস্কৌ রাশিয়ায় অবশেষে আসা গেল। যা দেখেছি আশ্চর্য ঠেকছে। অন্য কোনো দেশের মতোই নয়। একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলছে। চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক‚ তাদেরই সংখ্যা বেশি‚ তারাই বাহন; তাদের মানুষ হবার সময় নেই; দশের সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। সব চেয়ে কম খেয়ে‚ কম প’রে কম শিখে‚ বাকি […]

মাস্টার বাবু

আমি আজ কানাই মাস্টার, বড় মোর বেড়াল ছানাটি আমি ওকে মারি নে মা বেত, মিছিমিছি বসি নিয়ে কাঠি। রোজ রোজ দেরি করে আসে, পড়াতে দেয় না ও তো মন, ডান পা তুলিয়ে তোলে হাই, যত আমি বলি ‘শোন, শোন’। দিনরাত খেলা খেলা খেলা, লেখা পড়ায় ভারি অবহেলা। আমি বলি ‘চ ছ জ ঝ ঞ’ ও […]

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে – আমায় তখন নাই বা মনে রাখলে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে।। যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা […]

মধুর বসন্ত এসেছে

মধুর বসন্ত এসেছে ,মধুর মিলন ঘটাতে আমাদের মধুর মিলন ঘটাতে, মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মলয় সমীরে ,মধুর মিলন রটাতে আমাদের মধুর মিলন ঘটাতে,মধুর বসন্ত এসেছে কুহ কোলে কলি ছুটায়ে, কুসম কলি ছে ফুটায়ে কুহ কোলে কলি ছুটায়ে, কুসম কলি ছে ফুটায়ে লিখিছে প্রনয় কাহিনী বিবিধ বরণ ছটাতে মধুর বসন্ত এসেছে হের পুরানো প্রাচীন ধরনী হয়েছে […]

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ

আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর, কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান! না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ। জাগিয়া উঠেছে প্রাণ, ওরে উথলি উঠেছে বারি, ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি। থর থর করি কাঁপিছে ভূধর, শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে, ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল গরজি […]

মেঘের পরে মেঘ জমেছে

মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে- আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে। কাজের দিনে নানা কাজে থাকি নানা লোকের মাঝে, আজ আমি যে বসে আছি তোমারই আশ্বাসে। আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে। তুমি যদি না দেখা দাও কর আমায় হেলা, কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল-বেলা। দূরের পানে মেলে আঁখি কেবল […]