এখনো সময় আছে

তখন তোমার বয়স আশী, দাঁড়াবে গিয়ে আয়নায়
নিজেই ভীষণ চমকে যাবে, ভাববে এ কে ? সামনে এ কোন ডাইনী ?
মাথা ভর্তি শনের নুড়ি, চামড়া যেন চোত-বোশেখের মাটি
চক্ষু দুটি মজা-পুকুর, আঙুলগুলো পাকা সজনে ডাটা !
তোমার দীর্ঘষ্বাস পড়বে, চোখের কোণে ঘোলা জলের ফোটায়
মনে পড়বে পুরনো দিন, ফিসফিসিয়ে বলবে তুমি,
আমারও রূপ ছিল !
আমার রূপের সুনাম গাইত কত শিল্পী-কবি !
তাই না শুনে পেছন থেকে তোমার বাড়ির অতি ফচকে দাসী
হেসে উঠবে ফিকফিকিয়ে
রাগে তোমার শরীর জ্বলবে ! আজকাল আর ঝি-চাকরের নেই কোন
ভব্যতা !
মুখের উপর হাসে ? এত সাহস ? তুমি গজগজিয়ে যাবে অন্য ঘরে
আবার ঠিক ফিরে আসবে, ডেকে বলবে, কেন ?
কেন রে তুই হাসিস ? তোর বিশ্বাস হলো না ?
আমারও রূপ ছিল, এবং সেই রূপ দেখে পাগল
হয়েছিলেন অনেক লোকই, এবং কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় !
সবাই যাকে শ্রদ্ধা করে, যার কবিতা সবার ঠোটে ঠোটে
প্রতিবছএর জন্মদিনে যার নামে হয় কয়েক ঘন্টা বেতারে গান বাজনা
সেই তিনি, সেই কবি এমন বুড়ীর জন্য পাগল
হয়েছিলেন ? হি হি হি হি এবং হি হি হি হি
রাগে তোমার মুখের চামড়া হয়ে উঠবে চিংড়ি মাছের খোসা
তুমি ভাববে এক্ষুনি সুনীলকে ডেকে যদি সবার
সামনে এনে প্রমাণ করা যেত ।
কিন্তু হায়, কি করে তা হবে ?
সেই সুনীল তো মরেই ভূত পঁচিশ বছর আগে
কেওড়াতলার চুল্লীতে যার নাভীর চিহ্ন খুঁজেও পাওয়া যায়নি !

তাই তো বলি, আজও সময় আছে
এখন তুমি সাতাশ এবং সুনীলও বেশ যুবক
এখনও তার নাম হয়নি, বদনামটাই বেশি
সবাই বলে ছোকরা বড় অসহিষ্ণু এবং মতিচ্ছন্ন
লেখার হাত ছিল খানিক, কিন্তু কিছুই হলো না ।

তাই তো বলি, আজও সময় আছে
দাঁড়াও তুমি অখ্যাত বা কুখ্যাত সেই কবির সামনে
সোনার মতো তোমার ঐ হাত দু’খানি যেন ম্যাজিক দন্ড
বলা যায় না, তোমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে একদিন সে হতেও পারে
দ্বিতীয় রবিঠাকুর !
তোমার সব রূপ খুলে দাও, রূপের বিভায় বন্দী করো
তোমার রূপের অরূপ রঙ্গ তাকে সত্যিই পাগল করবে
তোমার চোখ, তোমার ওষ্ঠ, তোমার বুক, তোমার নাভি…
তোমার হাসি, অভিমানে গুচ্ছ গুচ্ছ অশোক পুষ্প…
কিন্তু তুমি তখনই সেই সুনীল, সেই তোমার রূপের পূজারীর
চুলের মুঠি চেপে ধরবে, বলবে , আগে লেখো !
শুধু মুখের কথায় নয়, রক্ত লেখা ভাষায়
কাব্য হোক রূপের, শ্লোক, ওমর ভালোবাসায় ।