অনিবার্য সুবর্ণরেখা

আব্দুল মান্নান সৈয়দ
আবদুল মান্নান সৈয়দ[জন্ম :৩ আগস্ট ১৯৪৩; মৃত্যু :৫ সেপ্টেম্বর ২০১০]
তখন আমি চট্টগ্রাম কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের প্রথম বর্ষের ছাত্র। প্রায় নিয়মিত চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে যাই এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বইঘর’-এর দোকানটিতে একবার হলেও ঢুঁ মারি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেলফে সাজানো বইগুলোর দিকে তাকাই। কোনোটা হাতে তুলে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাই, কয়েক ছত্র পড়ি, আবার রেখে দেই। একদিন একটা বই হাতে তুলে নিয়ে পড়ছি। পড়ছি তো পড়ছিই, ওটা রাখার আর নামগন্ধ নেই। আমাকে যেন মোহাবিষ্ট করে ফেলেছে বইটি। বিক্রেতা লোকটি [দুঃখিত, তার নামটি আজ আর মনে করতে পারছি না] বিষয়টি বোধ হয় খেয়াল করছিলেন। অন্যদিন দশ-পনেরো মিনিট থেকেই যেখানে আমি চলে যাই, সেই আমি বোধহয় চলি্লশ-পঞ্চাশ মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে বইটি পড়ছি। পকেটে টাকা ছিল না। নইলে হয়তো তখনই কিনে নিয়ে যেতাম।
চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন বিক্রেতা। বললেন, খুব কঠিন বই। বোঝা যাচ্ছে কবিতাগুলো?
বই ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে লেখক এবং লেখার প্রকৃতি তার সব জানা।
আমার হাতে আবদুল মান্নান সৈয়দের [১৯৪৩-২০১০] বিখ্যাত কবিতার বই ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ [১৯৬৭]। আমি মনে হয় তার ‘পাগল এই রাত্রিরা’ কবিতাটি পড়ছিলাম, যেখানে কবি বলছেন, ‘খটখটে মাটির ভিতর উনিশ বছর আমি ছিপ ফেলে আছি আত্মার সন্ধানে।’ সত্যিই আমার জন্য কঠিন। ১৬-১৭ বছরের কিশোরের কাছে ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’র পরাবাস্তব কবিতা আত্মস্থ করা যে কঠিন, তা ওই লোকটি অনুধাবন করলেও আমি নাছোড়বান্দা। লজ্জা পেয়ে গেলাম। বললাম, আসলেই কঠিন।
বইটি শেলফে রেখে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিলাম সেদিন। কিন্তু টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ক’দিন পরই আমি বইটি কিনে আনি ‘বইঘর’ থেকে। আমাকে এমন মায়াচ্ছন্ন করেছিল কবিতার পঙ্ক্তিগুলো যে, আমি ওটা না কিনে পারিনি। পড়তেই হবে, বুঝতেই হবে। ও ছিল এক দুর্নিবার আকর্ষণ। এমন নিপাট উপমানির্ভর শব্দগুচ্ছ কবিতার অন্তরকে কতটুকু প্লাবিত করে মোহনীয় করে তোলে তা বোঝার জন্য ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ আমার অবশ্যপাঠ হয়ে ওঠে [ক্লাসের ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির বইয়ের চাইতেও]। এখন মনে হয়, সেই তো সবে শুরু।
‘শুদ্ধতম কবি’ [১৯৭২] জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে লেখা মান্নান সৈয়দের আর একটি জটিল ভাষাশৈলীর প্রবন্ধগ্রন্থ। এখন বুঝতে পারি এবং বলতে দ্বিধাও নেই, বইয়ের পরিচ্ছেদ বিন্যাস, তার শিরোনাম, উদৃব্দতি, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্তের সমাহার এবং সবার উপরে বাক্য-নির্মাণ, শব্দচয়ন এবং তার প্রকাশভঙ্গি [বানানের ক্ষেত্রে সবাইকে চমকে দেওয়ার মতো প্রচেষ্টা] আমাকে এতটাই নিমগ্ন এবং বোধহীন করে দিয়েছিল যে, এক কিশোরের পক্ষে তা ছিল রীতিমতো সাঁতরে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো। আইনস্টাইনের তত্ত্ব বুঝি, কিন্তু মান্নান সৈয়দের ভাষা বুঝি না। কিন্তু সেই ভাষা আত্মস্থ করার জন্য আমি নিয়োগ করি আমার সকল প্রচেষ্টা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কতবার যে ‘শুদ্ধতম কবি’ আমি পড়েছি, তা আর কেউ পড়েছেন কি-না আমার সন্দেহ আছে। পড়তে পড়তে আবিষ্কার করেছি, বুদ্ধদেব বসু [১৯০৮-৭৪] তার প্রিয় জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে পরিচিত করে তুলেছিলেন। কিন্তু বুদ্ধদেব বসুর ওই অভিধা হারিয়ে গেছে মান্নান সৈয়দের ‘শুদ্ধতম কবি’র কাছে। জীবনানন্দ দশ মানেই ‘শুদ্ধতম কবি’ অথবা শুদ্ধতম কবি মানেই জীবনানন্দ দাশ_ এই পরিচয়কে পরিপূরক করে দিয়েছেন জীবনানন্দ দাশ নিয়ে মেতে থাকা এক সপ্রাণ আনন্দলোক আবদুল মান্নান সৈয়দ। অজস্র্র-অসংখ্য বইয়ের লেখক তিনি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ [মননশীল এবং সৃজনশীল দুই অর্থেই], আত্মজৈবনিক উপাখ্যান, নাটক, কাব্যনাটক_ সবখানেই বিচিত্র-রঙিন এবং চিরনতুন দরোজা খুলে দিয়েছেন সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য। জীবনানন্দ দাশের প্রতি ছিল তার গভীর অভিনিবেশ। একটি জীবনের স্বপ্নমগ্ন কাব্য-পৃথিবী অনাঘ্রাতা পড়ে আছে কলকাতার বাড়িটির চৌকির নিচে তালাবদ্ধ ট্রাঙ্কের ভেতর_ একে আবিষ্কার করার লক্ষ্য নিয়ে সেই তরুণ বয়সে তিনি শুরু করেছিলেন তার জীবনানন্দ-মিশন।
একজন মননশীল লেখকের কাজই হলো অনালোচিত-অনালোকিত সাহিত্যভুবনের বন্ধ দরোজা ধাক্কা দিয়ে খুলে দেওয়া। ‘শুদ্ধতম কবি’ই ছিল সেই প্রথম ধাক্কাটি। তারপর তিনি আর পেছনফিরে তাকাননি। তার সকল শিল্পচেতনা ও কল্পমগ্নতার উচ্ছ্বাস দিয়ে খুঁজে ফিরেছিলেন জীবনানন্দের কবিতার অন্তর্নিহিত নির্যাস। শুধু জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে লেখা মান্নান সৈয়দের প্রবন্ধ সংকলন ও সম্পাদিত পত্রিকাগুলো হলো_
‘শুদ্ধতম কবি’ [১৯৭২], ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতা’ [১৯৭৪], ‘সমালোচনা সমগ্র :জীবনানন্দ দাশ’ [১৯৮৩, সম্পাদিত], ‘জীবনানন্দ ১’ [১৯৮৪, সম্পাদিত পত্রিকা], ‘জীবনানন্দ ২’ [১৯৮৫, সম্পাদিত পত্রিকা], ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ [১৯৮৬], ‘কিছুধ্বনি’ [জীবনানন্দ সংখ্যা] [১৯৯৩, সম্পাদিত পত্রিকা], ‘সমগ্র কবিতা :জীবনানন্দ দাশ’ [১৯৯৩, সংকলিত ও সম্পাদিত], ‘জীবনানন্দ দাশের গদ্য-লেখা’, ‘জীবনানন্দ-চর্চা’।
মান্নান সৈয়দের বিচিত্র লেখালেখি এবং সাহিত্যচিন্তা তাকে তার সময়কালের লেখকদের থেকে সব সময় আলাদা করে রেখেছিল। জীবনানন্দীয়-চর্চার ভেতর দিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [১৮৬১-১৯৪১], কাজী নজরুল ইসলাম [১৮৯৯-১৯৭৬], সৈয়দ মুর্তাজা আলী [১৯০২-৮১], ফররুখ আহমদ [১৯১৮-৭৪], সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ [১৯২২-১৯৭১] প্রমুখ তার লেখালেখির জগতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন কোনো কোনো সময়। দেশি-বিদেশি লেখকদের সাহিত্য বিশ্লেষণ ও সাহিত্য বিচার তার কর্মজগৎকে আরও সম্প্রসারিত ও বর্ণিল করেছে। যাদের লেখালেখি নিয়ে তিনি রাতদিন চর্চা করেছেন তারা আমাদের সাহিত্যের অনিবার্য পুরুষ। তাদের গতিশীল লেখনীর ধার ছুঁয়ে গেছে মান্নান সৈয়দকেও। তিনি মনস্কপাঠকের জন্য তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কল্পনার জগৎকে অবাধ করে দিয়েছেন তার ভাষাশৈলীর গুণপনায়। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় [১৮৯৬-১৯৬০], সুধীন্দ্রনাথ দত্ত [১৯০১-১৯৬০], অমিয় চক্রবর্তী [১৯০১-১৯৮৬], অন্নদাশঙ্কর রায় [১৯০৪-২০০২], অজিত দত্ত [১৯০৭-১৯৭৯], বুদ্ধদেব বসু [১৯০৮-১৯৭৪], বিষ্ণু দে [১৯০৯-১৯৮২], সুকান্ত ভট্টাচার্য [১৯২৬-১৯৪৭], শামসুর রাহমান [১৯২৯-২০০৬], সৈয়দ শামসুল হক [১৯৩৫], আল মাহমুদ [১৯৩৬], ফজল শাহাবুদ্দীন [১৯৩৬], শহীদ কাদরী [১৯৪২] প্রমুখের সাহিত্যকীর্তি মান্নান সৈয়দের নানাবিধ ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণে উন্মোচিত হয়েছে পাঠকের কাছে।
তিনি যখন পরাবাস্তবতা বা স্যুররিয়ালিজম বুঝতেন না [কারও কারও মতে এবং তিনি নিজেও বলেছেন], তখন তিনি নিয়মিতই লিখে চলেছেন পরাবাস্তব কবিতা। তার ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ বা ‘জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা’ [১৯৬৯], ‘মাতাল মানচিত্র’ [১৯৭০] ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ যখন প্রকাশ করেছিলেন, তখন তার বয়স চবি্বশ থেকে সাতাশ বছরের মধ্যে, [কবিতাগুলো আরও আগে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ধরে নিতে হবে]। এসব গ্রন্থের সব কবিতাই পরাবাস্তব, ফরাসি পরাবাস্তববাদের ইশতেহারের বিনির্মিত কাব্যপ্রতিমা। বাংলা সাহিত্যের বিরল কয়েকজন কবির ভেতর মান্নান সৈয়দ একজন, যিনি একেবারে প্রথম কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বিপুল পাঠকের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। এসব কাব্যগ্রন্থের প্রতীক-উপমা ব্যবহার, শব্দ সংযোজন, নির্যাস, আকার-আয়তন, পরিবেশনার পদ্ধতি, টেকনিক_ সবকিছুই যেন আমূল বদলে দিয়েছিল বাঙালির তিরিশি-ঘরানার কবিদের কবিতার চারণভূমিকে।
লেখক-সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর সম্পাদিত কণ্ঠস্বর পত্রিকায় [মে-জুন, ১৯৬৭] ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ নিয়ে লিখেছিলেন [বাংলাদেশের সাহিত্য নির্মাণের শস্যকালীন সময়ের অন্যতম বাহন ছিল কণ্ঠস্বর] :’জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ হাতে নিয়ে একজন নিশ্চক্ষুু পাঠকও, আমার বিশ্বাস, অনুভব করবেন যে এই কবিতাগুচ্ছ অর্ধমনস্ক শৌখিন প্রয়াসের ফসল নয়। এই কবিতাগুলো রচিত হবার পেছনে, প্রতিটি পঙ্ক্তি নির্মিত হবার উদ্যোগে চেষ্টা, শ্রম ও অধ্যবসায়ের দুরূহ সাক্ষ্য লিখিত হয়ে আছে। এই কবিতার প্রতিটি শব্দ ব্যবহার সচেতন, প্রতিটি উপমা সযত্ন এবং প্রতিটি কবিতাই সশ্রম ও সতর্ক প্রয়াসের ফল। বোঝা যায়, কবিতার ব্যাপারে কর্মঠ চেষ্টায় হাত দিয়েছেন কবি, সচেতন ও সক্লেশভাবে চেষ্টা করছেন গতানুগতিক কবিতার সহজ মসৃণ ও পরিচিত জগৎ থেকে, চেনা রূপকল্প বা পুরোনো উপমার ভিড় থেকে নিজেকে পৃথক করে তুলতে। বার বার তিনি নতুন শব্দ, নতুন চিত্রকল্প ও রূপকের দ্বারস্থ হচ্ছেন, স্বস্তিহীন উৎকণ্ঠায় ও আগ্রহে তুলে আনছেন, রাখছেন ও ব্যবহার করছেন- নতুন অনুষঙ্গে, অপরিচিত অভিধায়, কবিতার আপাদমস্তকে স্বতন্ত্র চরিত্র দেবার জন্যে।
জীবনানন্দ দাশের পরই মান্নান সৈয়দের প্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছিল কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক লেখালেখি হলেও নজরুলকে ভিন্নভাবে-ভিন্নমাত্রায়-ভিন্ন কলেবরে বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। অজস্র্র-অসংখ্য প্রবন্ধ তিনি লিখেছিলেন দেশের সেরা সেরা পত্রিকায়। সেসব সংকলিত করেছিলেন তার নজরুল-বিষয়ক গ্রন্থাবলিতে। ‘নজরুল ইসলাম :কবি ও কবিতা’ [১৯৭৭], ‘নজরুল ইসলাম :কালজ কালোত্তর’ [১৯৮৭] এবং ‘নজরুল ইসলামের কবিতা’ [২০০৩] গ্রন্থগুলো তার অনুসন্ধানী মনের প্রতিফলন বলে নজরুল-গবেষকগণ মনে করেন, রেফারেন্স বই হিসেবে এগুলোর মূল্য অপরিসীম। নজরুলকে নিয়ে তার সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যাও কম নয়। তার নজরুল-বিষয়ক সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ [১৯৮৯], ‘নজরুল রচনাবলী’ [প্রথম খণ্ড-চতুর্থ খণ্ড- ১৯৯৩], ‘শ্রেষ্ঠ নজরুল’ [১৯৯৬], ‘লেখায় রইল আড়াল :নজরুল ইসলাম’ [১৯৯৮], ‘অতীত দিনের স্মৃতি’ [২০০৪], ‘কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক সাক্ষাৎকার’ [২০০৪], ‘পাণ্ডুলিপি :নজরুল সংগীত’ [২০০৫], ‘কাজী নজরুল ইসলাম :তিন অধ্যায়’ [২০০৭], ‘নজরুল রচনাবলী’ [জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, ২০১০] ইত্যাদি। নবপর্যায়ের ‘নজরুল একাডেমী পত্রিকা’ সম্পাদনা করেছিলেন অনেক দিন। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও নজরুলের অনেক অনালোকিত বিষয়কে তুলে এনেছিলেন পাঠক-শ্রোতার সামনে ‘নজরুল ইনস্টিটিউট বুলেটিন’ [২০০২-২০০৫] এবং ‘নজরুল ইনস্টিটিউট পত্রিকা’র [২০০২-২০০৫] মাধ্যমে। তিনি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্কলার-ইন-রেসিডেন্স হিসেবে দু’বছর [২০০৬-২০০৭] নজরুল-গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। যে গবেষণার ফলশ্রুতি ‘কাজী নজরুল ইসলাম :তিন অধ্যায়’ শীর্ষক সম্পাদিত প্রবন্ধ গ্রন্থটি।