আহত মিছিল

মধ্যরাতে জানালায় টোকা দেয় গোলগাল পূর্ণিমা চাঁদ, ফ্রস্টেড শার্সির
ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শাদা জোছনা, দরোজায় ডুগডুগি বাজায়
দীঘল বৃক্ষছায়া, টেবিলের ফুলদানি থেকে পাখির মতো উড়ে যায়
গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন (ফুল আর স্বপ্নের ভেতর আমি কখনো তফাত দেখি না),
দেয়ালে ফ্রেমবন্দি স্মৃতি নিয়ে মগ্ন বদ্ধ বাতাস, আমি নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে
টের পাই বাসি পাউরুটির মতো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ইতিহাসের বই।
জানালাটা কি তাহলে খুলে দেবো? এমন দোটানায় পড়ে একবার আমি
হারাতে বসেছিলাম বাড়ির রাস্তা, জন্মসনদের চেয়ে আমার কাছে প্রিয়
হয়ে উঠেছিলো কাবিননামা, আমি শেষপর্যন্ত কোনোটাই রাখতে পারিনি
মানিব্যাগে, পলিটিক্যাল লিফলেটের মতো তুলে নিয়ে গেছে আবর্জনার
ট্রাক। বয়সের ওজন কি খুব বেশি? নইলে কেন তার ভারে পায়ের নিচে
চাপা পড়ে যাচ্ছে শৈশব! আমি পূর্ণিমার চাঁদ নিয়ে যখন মগ্ন হয়ে উঠি
তখন তাকিয়ে দেখি দেরাজে লুকিয়ে রাখা পারফিউমের সব সুগন্ধি
লোপাট হয়ে গেছে, একটি ফোঁটাও নেই যা দিয়ে আমি তাড়াতে পারি
এই কবরখানার আদি মদের উত্কট দুর্গন্ধ। অতঃপর দরোজার ওপারে
দিঘল বৃক্ষছায়ার নিচে বিড়ালের ইঁদুর নিধন উত্সব দেখে আমি আশান্বিত
হয়ে উঠি (আমি সবসময় অপটিমিসটিক), জানালার শার্সিতে উড়ে এসে
ডানা ঝাপটায় অন্ধ বাদুড়, মেঝের মার্বেল ফেটে বেরিয়ে আসে তরল
আগুন, সাপের জিহ্বার মতো চকচক করে ওঠে আহত মিছিল।