বুকের মধ্যে গুলির গর্ত

নান্দাইল স্টেশনে এসে ট্রেনটা থেমে যায়। একটা বিশাল আওয়াজ মনে হয় ট্রেনটার গতি থামিয়ে দেয়। আওয়াজটা কি চিৎকার? সস্নোগান? কান্না? সবকিছু মেশানো একটা স্বর আমাকে ঘিরে ধরে। সবাই হুড়মুড় করে নেমে পড়ছে। কী ব্যাপার। ট্রেন যাবে না। কৃষকরা লাইনের ওপর বসে পড়েছে। বেলা দেড়টা বাজে। শেষ চৈত্রের রোদ আগুনের মতো, বাতাসটা গরম, মুখ পুড়ে যায়। ছড়ানো ছিটানো গাছগুলো আগুন পোড়া তাপ ছিটায়। আমি কিছু ভাবছিলাম, সে ভাবনাও পুড়ে ছাই মনে হয়। এত গরম, কারবালার মতো চারপাশটা। আমি ট্রেন থেকে নেমে একটা নদীর কথা ভাবি, একটা পাখির কথা ভাবি, একটা মাছের কথা ভাবি। কিন্তু ভাবনাটা আমার মধ্যে কোনো মোলায়েম আমেজ আনে না।
আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করি, ঘটনাটা কী?
লোকটির চেহারা উষ্কখুষ্ক। কাঁধে ঝোলা। চোখ থেকে চশমা খোলে লোকটি। বিন্দু বিন্দু ঘামে নাকের ডগা ভেজা। পাঞ্জাবির খুঁট দিয়ে চশমা মুছতে মুছতে লোকটি বলে, কৃষকরা রেললাইন দখল করে বসেছে। ট্রেন আর সামনে যাবে না।
আমি বলি, কেন?
লোকটি আমার দিকে খানিকক্ষণ তাকায়, হয়তো কিছু ভাবে, আপনি এই ট্রেন থেকে নামলেন?
হ্যাঁ।
সেজন্যই। আমি এই এলাকার লোক। প্রাইমারি স্কুলে পড়াই। ঘণ্টা দুয়েক আগে হাজার পাঁচেক কৃষক স্টেশন ঘেরাও করে। তারা শুনেছে ওয়াগনে করে সার চলে যাচ্ছে। চিৎকার আর সস্নোগান বাড়তে থাকে। পুলিশ এসে পজিশন নেয়। গুলি চালায়। দুটি লাশ পড়ে। কৃষকরা ছত্রভঙ্গ হয় না। লাইনে বসে যায়। লাশ না নিয়ে গ্রামে ফিরবে না। পুলিশও লাশ দেবে না। দেখবেন কৃষকদের?
চলুন যাই।
আমরা সামনের দিকে এগোই। জটলার পর জটলা। জনাদশেক পুলিশ বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে। একজন অফিসারের হাতে ওয়াকিটকি। কী সব বলে যাচ্ছে। লোকটি বলে, ময়মনসিংহ থেকে আরো পুলিশ আনাচ্ছে। সড়কপথে।
পুলিশরা আমাদের যেতে দেয় না। সামনে যাওয়ার অর্ডার নেই। পুলিশ অফিসারটি ভুরু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকায়। রেললাইনের ওপর সার সার কৃষক বসে। হাতে তাদের লাঙ্গল। কত কৃষক হবে? পাঁচশ’? পাঁচ হাজার? যত দূর চোখ যায় কৃষক। চারপাশের গ্রাম থেকে তারা এখনো আসছে। কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে। কারো খালি গা, কারো গায়ে ছেঁড়া শার্ট, কারো গায়ে শার্ট; ঘামে ভেজা শরীর, হাতে লাঙ্গল। তারা বসে রেললাইনের ওপর, রেললাইন ছাড়িয়ে, ঝোপঝাড়, মাঠ, খেতের মধ্যে।
লোকটি আঙ্গুল তোলে, দেখেন খেতের দিকে দেখেন।
কী?
ধানের চারা হলদেটে। সার নাই।
আমরা পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে কৃষকদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে। গুঞ্জনটা শব্দে, শব্দটা আওয়াজে, আওয়াজটা সস্নোগানে বদলে যায়_ সার না দিলে যাব না। লাশ না দিলে যাব না। আমি চমকে যাই। কৃষকদের এমন সস্নোগান কে শেখায়। সস্নোগানের দাপটে রেলস্টেশন, ঢাকা থেকে আগত ট্রেন, জনাদশেক পুলিশ এবং তাদের অফিসার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। পুলিশরা নড়েচড়ে ওঠে। একজন বলে, স্যার রিএনফোর্সমেন্ট আসবে না? অফিসারটি আমাদের দিকে তাকায়, রওনা হয়েছে।
লোকটি ফের বলে, গ্রামগঞ্জে মিটিং শুনতে শুনতে কৃষকরা সস্নোগান শিখে ফেলেছে। আমি ভাবি এসব কি সস্নোগান, নাকি জীবনের অভিজ্ঞতা? হয়তো তাই।
আমার চায়ের পিয়াস পায়। লোকজন যেখানে ছায়া সেখানটাই দখল করে বসে আছে। ট্রেন থেকে লোকজন নেমে আসে, লোকজন ট্রেনে উঠে বসে। সবার মধ্যে একটা অস্থিরতা। একটা কোলাহল চৈত্রের ঘূর্ণির মতো উঠে উঠে মিলিয়ে যায়।
আমরা একটা চা-খানায় ঢুকি। খালি জায়গা পাওয়া ভার। একটা লম্বা বেঞ্চে সার সার লোক বসা। সিগারেটের ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠে। মরিয়ম সিগারেট এবং সিগারেটের ধোঁয়া একদম পছন্দ করে না। মরিয়মের কাছে আজ কি পেঁৗছতে পারব? নান্দাইলে আজ আমি আটকা। আরো একবার, সেই কবে, ১৯৫৪ সালে আমি নান্দাইলে আটকা পড়েছিলাম। আমি একবার পেছনের দিকে চোখ ফেরাই। আমি একবার মরিয়মের দিকে চোখ ফেরাই। আমার ইচ্ছা হয় রোদটা সোনালি বাতাসার মতো মোলায়েম করার। কিন্তু রোদটা এক স্বেচ্ছাচারী ডিকটেটরের মতো নান্দাইল রেলস্টেশনে দীর্ঘ চেয়ারে বসে আছে। তাকে নড়ানো যায় না।
চারপাশে গুলতানি চলছে। না শোনার উপায় নেই। শব্দ কত নির্মম শব্দের জুলুম কত ভয়াবহ, আমি টের পাই। চা-খানার মধ্যে কত লোক? পনেরো-বিশ জন, কথাবাজি চলছে। আমার সামনের যুবকটি তার সামনের যুবকটিকে বলে, সার নিয়ে কেলেঙ্কারি। সাধে কি কৃষকরা খেপেছে। বোরো সিজনে সার নাই। সারের ডিলার সব দলবাজরা। টুপাইস করে নিচ্ছে। কৃষকদের মেরে যুবকদের ফোলানো হচ্ছে। যুবক যুবক করছিস কেন। তুইও তো যুবক। কৃষকরা গুলি খেলে কার কী হয়। টাকা কামাও। টাকা কামাবার সময় এটা। দুর্নীতিতে দেশটা ডুবে যাচ্ছে। কেন? পৃথিবীর সব দেশে দুর্নীতি হয়। কাগজে পড়িস না? ব্রিটেনে হয়, ফ্রান্সে হয়। জার্মানিতে হয়। ভারতে হয়। খালি বাংলাদেশে হয় না। পুলিশ কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে জানিস তুই? ত্রিশ রাউন্ড, লাশ পড়েছে পাঁচটা। ঠিক জানিস? হ্যাঁ। ঝাঁক ঝাঁক গুলি ছুড়েছে। মানুষের গায়ে লাগল, পাখির গায়ে লাগল, পশুর গায়ে লাগল। দেশটা গেছে। দেশটা যাবে কেন? বদমাশগুলাকে সরাতে হবে। বদমাশগুলাকে কোনোদিন সরানো যায় না।
আমি শব্দের এবং আওয়াজের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে আসি। মাথাটা ঝিম ঝিম করে। আমার সঙ্গীটি বলে, ভাইসাব আমি যাই। আমি মাথা নাড়াই। প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ কোনায় একটা গাছ, কিছু ছায়া মেলে দাঁড়িয়ে। ভাবি সেখানে গিয়ে বসব যতক্ষণ ট্রেন না ছাড়ে। আমার ভাবনাটাকে নাড়া দেয় সস্নোগানের কথাগুলো_ সার না দিলে যাব না। লাশ না দিলে যাব না। লাঙ্গলের ফলার মতো শব্দগুলো চারপাশটাকেবুকের মধ্যে গুলির গর্ত ফালা ফালা করে দেয়।
গাছটার তলায় কিছু ছায়া আছে, ছায়ার ঝর্ণা। আমি বসে পড়ি। চারপাশটা স্তব্ধ হয়ে ভেঙে যেতে থাকে, ১৯৫৪-এর নান্দাইল গাছপালা ভেঙে গ্রামজঙ্গল ভেঙে ফিরে আসে। আমি এবং আমরা এসেছিলাম এখানে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারের কাজ করতে। আমরা তখন কলেজের ছাত্র। পাকিস্তান হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে মুসলিম লীগ। রাষ্ট্রটি মুসলিম লীগের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত। রাষ্ট্র্র তখনো পারিবারিক সম্পত্তি ছিল, এখনো তাই। কেন এমন হয়? যে জেলার যে মন্ত্রী, সেই মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন জেলা বোর্ডের মালিক, ইউনিয়ন বোর্ডের কর্তা। তাদের দাপটে গাছের পাতাদের পর্যন্ত নড়াচড়া করার হুকুম নেই। শব্দ পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে তারা। গণতন্ত্র হয়েছে জমহুরিয়াত। সংস্কৃতি হয়েছে তমুদ্দুন। নতুন মাস হয়েছে মাহে নও। নয়া হয়েছে নও। আমরা তাই ঠাট্টা করে বলতাম, তুমি পাকিস্তানের নও। নির্বাচনে আমরা বিরোধী দলের পক্ষে কাজ করতে এসেছি। বিরোধী দলকে বলা হচ্ছে ভারতের গুপ্তচর। ইসলামের দুশমন। কাফেরদের চেলা। মুসলিম লীগ ব্যবহার করছে রাষ্ট্র এবং লাঠিয়ালদের। আমাদের সম্বল আমাদের মুখের কথা। আমরা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি যাই, বলি; আমরা আপনাদের ছাওয়াল। চাচাগো ছাওয়ালদের বাঁচান। মুসলিম লীগের হাত থেকে ছাওয়ালগো বাঁচান। চাচারা মনে নাই বায়ান্ন সালে মুসলিম লীগ ভাষার বুকে গুলি চালিয়েছে। চাচারা চালের দর কত এখন? নুনের দর কত এখন? আপনারা না বাঁচলে ছাওয়ালগো খাওয়াবেন কেমনে? দশ টাকা নুন, দশ টাকা চাল। যে দেশে চাল আর নুনের দর এক সে দেশতো বেইমানদের দখলে। বেইমানদের ভোট দেবেন চাচারা? মুসলিম লীগের লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের বেড় দিয়ে যেখানে যাই গুলতি মারে। গুলতি মেরে আমার কপালে দাগ ফেলে। সেই দাগ এখনো আছে। আমি কপালে হাত ছোঁয়াই। আমার রাজতিলক। নান্দাইলে মুসলিম লীগ হেরে যায়, সারাদেশে হেরে যায়। মানুষ কি পাখি নাকি, গুলতি মেরে মেরে ফেলবে?
আমি ভাবি, আসলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নির্যাতনের একটা ব্যবস্থা অছে। সেজন্যই যারা যখন ক্ষমতায় আসে, তারা রাষ্ট্রকে প্রায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে তোলে। নির্যাতনটা তাই দরকার। তখন লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে গুলতি মারা হতো, এখন পুলিশ আর মস্তান দিয়ে গুলি মারা হয়। খুব কি তফাত তখনকার সঙ্গে এখনকার? আমি নিজেকে প্রশ্ন করি আর রোদের মধ্যে করতল মেলে ধরি, দেখি_ রক্ত। রক্ত। রক্ত।
পুলিশ হুইসল বাজায়। পুলিশ কি আবার গুলি চালাবে? হুইসলের জবাবে কৃষকদের কণ্ঠ থেকে হাঁক আসে, সার না দিলে যাব ন। লাশ না দিলে যাব না। আমি দূর থেকে দেখতে পাই শত শত, সহস্র সহস্র কৃষক নান্দাইল থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত রেললাইন দখল করে বসে অছে। শত শত লোক দেখলে সংখ্যা সীমানা ছাড়ায়। একজন লোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে বলি, শাবাশ। শত শত লোক রুখে দাঁড়ালে বলি, বিদ্রোহ। শব্দ বদলে যায়। শব্দের মধ্যে কৌণিকতা তৈরি হয়। শব্দের মধ্যে তেজ আসে।
আমি এখন বুঝি কৃষকদের রক্তের মধ্যে বিদ্রোহের একটা বীজ আছে। নান্দাইলের সেই নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে কত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে। হাজং, নানকার, জিরাতিয়া তেভাগা। কৃষকরা কৃষকদের খবর রাখে, এক এলাকায় কিছু ঘটলে অন্য এলাকার কৃষকরা টের পায়। সে কি মাটির কাছে থাকার কারণে? যে হাতে জমিন ধরে, জমিন বোধ হয় সে হাতে কিছু দেয়। জমিনের কসম। জমিনের কাছে ইমান। জমিনের নুন। যারা রাষ্ট্র চালায় তাদের রক্তে জমিনের নুন নেই। আমার কানটা আবার ছিঁড়ে যায়, লাশ না দিলে ফিরে যাব না। সার না দিলে ফিরে যাব না। আমি তো রোজই খবর কাগজে পড়ি_ জামালপুরে, মেলান্দহে, লালমনিরহাটে, গাইবান্ধায়, রংপুরে, কুড়িগ্রামে, ঝিনাইদহে, নরসিংদীতে, ধামরাইয়ে, কোথায় না, সর্বত্র কৃষকরা খেতখামার ছেড়ে পাগলের মতো রাস্তাঘাটে, টিএনও অফিসে, ডিসি অফিসে ছুটছে। সার চাই, সার না পেলে কৃষকদের সন্তানরা মারা যাবে। কৃষকদের সন্তান হচ্ছে ধান। ধানগাছ ছেড়ে তারা বিদায় নেবে না। সন্তানের কাছ থেকে কি বিদায় নেয়া যায়? রাষ্ট্র যারা চালায় তারা বোধ হয় লোভী হয়। ক্ষমতার লোভ এবং টাকার লোভের মেধ্য তফাত নেই। আর বোধ হয় সময়ের চাপ। স্বল্পসময়ে যা পার করে নাও। পরে সময় পাবে না। আমার ভাবনাটা আমার চোখ ঝাপসা করে দেয়।
মরিয়মের কাছে আজ আমার পেঁৗছবার কথা। কখন ট্রেন ছাড়বে জানি না। আজ লাল চাঁদ উঠবে। মরিয়ম খুব সম্ভব লাল চাঁদটার দিকে চেয়ে ঘুমুতে যাবে। আমি নিজের গাড়িতে ময়মনসিংহ যেতে পারতাম। ভাবলাম ট্রেনে যাই, বহুদিন ট্রেনে চড়িনি। নান্দাইল দিয়ে ট্রেন যাবে। ছাত্রজীবনের নান্দাইল দেখে দেখে যাব। ছাত্রজীবনে বংশীবাদক রাখালের মতো কিছুদিন রাজনীতির রাস্তায় পথ হারিয়েছিলাম সেই কথাটা ভাবব। এমন হবে ভাবিনি।
আমার বয়স পঞ্চান্ন। আমার স্ত্রী পাঁচ বছর আগে আমেরিকায় মারা যান, ক্যান্সারে ভুগে। ছেলেপুলে নেই। মরিয়ম ডিভোর্সি, বয়স পঞ্চাশ। একটি মেয়ে আছে। মেয়েটি বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় সেটল করেছে। মরিয়মের প্রাক্তন স্বামী ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। আমরা দুজন দুজনকে ছাত্র বয়সে চিনতাম। প্রেম হতেও পারত। সে হয়নি। আমি প্রেম করে আমার স্ত্রী দিলরুবাকে বিয়ে করি। মরিয়ম প্রেম করে বিয়ে করে রায়হানকে। মাঝেমধ্যে দেখা হতো বিদেশেই। বিদেশে দেখা হওয়ার অর্থ পুরনো কালে ফিরে যাওয়া। নস্টালজিয়া বুকের মধ্যে পানির মতো আছড়ায়। সোনালি দিন, সোনালি দিন। ছয় মাস আগে ঢাকায় হঠাৎ দেখা হয় মৌরি, মরিয়মের সঙ্গে। দেখা, মাঝেমধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ টেলিফোনে কথা বলা। এই তো। এই বয়সে তো যৌবনকালের মতো প্রেমে পড়া যায় না। এই বয়সে কাছে আসা যায়। যেমন কাছে আসে হাওয়ার মধ্যে পাতা। এখনতো যাওয়ার সময়। যাওয়ার সময় তো মানুষ কাছে আসে। মৌরির কাছে আসাটা যাওয়ার সময়ে কাছে আসার মতো। ঘুম ভাঙলে এখন মনে হয় কেউ যেন কাছে থাকে। একটা সম্পর্কের মধ্যে মরে যাওয়ার আগে কারো হাত ধরে থাকি। আমার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমার সময় কম। মৌরি তোমার কাছে আজ পেঁৗছতে পারলাম না। আমার ট্রেনটা নান্দাইলে আটকা পড়েছে। কৃষকরা দখল করে রেখেছে রেললাইন। আমার কপালে গুলতির দাগ আর কৃষকদের বুকে গুলির গর্ত। মৌরি যখন লাল চাঁদটা উঠবে তখন তুমি নান্দাইলের দিকে চোখ রেখ।
একটু দূরে ট্রেন থেকে নামা কতগুলো লোকের জটলা। জটলার মধ্যে ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-পুরুষ সব আছে। সেখান থেকে গোঙানির মতো কিছু শোনা যায়। আমি ভাবনা ছেড়ে উঠে দাঁড়াই। যা হওয়ার তা হবে। আজ যদি মৌরির কাছে পেঁৗছতে না পারি আগামীকাল পেঁৗছব। আগামীকাল পর্যন্ত নিশ্চয়ই বেঁচে থাকব। একটি দশ-বারো বছর বয়সের ছেলেকে ঘিরে জটলা। ছেলেটির হাতে একটি কবুতর। আমি জিজ্ঞাসা করি। ছেলেটি আমার হাতে কবুতরটি দেয়। কবুতরটির বুকে গুলির গর্ত। আমার মুখে রা নেই, চোখে পলক পড়ে না। ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-পুরুষ আমার হাত থেকে কবুতরটি নিয়ে পালা করে হাত বুলায়। আমাদের চোখে রক্তপাত হতে থাকে।