রাবণের চোখ

শৈশবের কথা। সদ্যপ্রসূত কালো ছাগলির গা থেকে রক্ত-ক্বাথ পুঁছে দিতে-দিতে বলেছিল কুলসুম আপা, ‘এ ভাবেই প্রাণ আসে পৃথিবীতে ; আমরাও এসেছি একইভাবে’। হাঁস-মুর্গির ঘরে নিয়ে গিয়ে আপা আমার বাঁ-হাতখানা নিজের তপ্ত তুরুপে চেপে বলেছিল, ‘মানুষ জন্মায় এই সিন্দুকের ডালা খুলে’। রাবণের দশ জোড়া চোখে আমি ও-সিন্দুক আতঙ্কিত রুদ্ধশ্বাসে দ্রুত খুলে বন্ধ করে দিই ।

মেরু বিপর্যয়

অবন্তিকা, হিপি বিদেশিনী, স্লিপিং ব্যাগেতে তোর চুপচাপ ঢুকে যেতে দিয়েছিলি শুনে আমি কবি, টাইম পত্রিকা ফোটো ছাপিয়েছে , বিটনিকরাও লিখেছে আমার কথা বড়ো করে তাদের কাগজে– হ্যাশ টেনে ভোম মেরে দু-ঠ্যাং ছড়িয়ে সে-প্রণয় গিঁথে আছে চেতনায় কবিতা ভাঙিয়ে তোর শ্বাস না-মাজা দাঁতের ভাপ সোনালি শুকনো চুল ধরে বুকে  ময়লাটে তাপে মুখ গুঁজে কবিত্ব করেছি– বলেছিলি, […]

চলো গুলফিঘাট

কেউ মরলেই তার শব ঘিরে মৃত্যু উৎসব ছিল ইমলিতলায় বয়ঃসন্ধির পর দেহের ভেতর অহরহ উৎসব চলে তাই তারা মারা গেলে কান্নাকাটি চাপড়ানি নয় বিলাপ কেবল শিশুদের জন্য করো বাচা-বুতরুর জন্য কাঁদো যত পারো শবখাটে চারকোণে মাটির ধুনুচি বেঁধে গুলফি ঘাটের শমসানে ঢোলচি ঢোলকসহ সানাই বাজিয়ে নেচে আর গেয়ে পাড়ার ছেলেরা কুড়োতুম ছুঁড়ে-ফেলা তামার পয়সা প্যাঁড়া […]

দ্রোহ

এ নৌকো ময়ূরপঙ্খী তীর্থযাত্রী ব্যাঁটরা থেকে যাবে হরিদ্বার এই গাধা যেদিকে দুচোখ যায় যায় যাযাবর ঘাট বা আঘাটা যেখানে যেমন বোঝে ঘুরতে চাই গর্দভের পিঠে মাথায় কাগুজে টুপি মুখে চুনকালি পিছনে ভিড়ের হল্লা

আমি ভঙ্গুর হে

আমি যে-নাকি গাইডের কাছে ইতিহাস-শেখা ফোস্কা-পড়া পর্যটক ছায়ায় হেলান-দেয়া বাতিস্তম্ভের আদলে গিসলুম পিতৃত্ব ফলাবার ইসকুলে জানতুম যতই যাইহোক ল্যাজটাই কুকুরকে নাড়ায় রে   আমি যে-নাকি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যভিতু কনের টাকলামাথা দোজবর বস্তাপ্রতিম বানিয়ার বংশে এনেছিলুম হাইতোলা চিকেন-চাউনি কাদাক্যাঙাল ঠ্যাং থেকে ঝরাচ্ছিলুম ঘেসো ঝিঁঝির সাম্ভা নাচ   আমি যে-নাকি ফানুসনাভি ব্যাঙ-থপথপে শুশুক-মাথা আমলা মাটিমাখা নতুন-আলুর চোখে-দেখা দুটাকা […]

মেসোমশায় পর্ব

যুধিষ্ঠির আববে পাণ্ডবের বাচ্চা যুধিষ্ঠির বহুতল বাড়ি থেকে নেবে আয় গলির মোড়েতে নিআয় ল্যাংবোট কৃষ্ণ ভীম বা নকুল কে কে আছে পেটো হকিস্টিক ক্ষুর সোডার বোতল ছুরি সাইকেল-চেন বলে দে দ্রৌপদীকে আলসে থেকে ঝুঁকে দেখে নিক আমার সঙ্গে আজ কিছু নেই কেউ নেই ধৃষ্টদ্যুম্ন দুর্য্যোধন নেই তোদেরই অঙ্গুলিহেলনে কেটে তর্জনীও দিয়েছি শৈশবে দাঁড়াচ্ছি পা ফাঁক […]

এ কেমন বৈরী

ভাবা যায় ? কোনো প্রতিপক্ষ নেই ! সবকটা আধমরা হয়ে আজ শুয়ে আছে জুতোর তলায় ? কিছুই করিনি আমি কেবল মুখেতে হাত চাপা দিয়ে চিৎকার করেছি থেকে-থেকে হাহাহা হাহাহা হাহা হাহা পিস্তল কোমরে বাঁধা তেমনিই ছিল সঙ্গোপনে ক্ষুর বা ভোজালি বের করিনিকো বোমাগুলো শান্তিনিকেতনি ব্যাগে চুপচাপ যেমন-কে-তেমন পড়ে আছে   আমি তো আটঘাট বেঁধে ভেবেছি […]

নখ কাটা ও প্রেম

রবীন্দ্রনাথ,  দেড়শ বছর পর একটা প্রশ্ন আপনাকে : কে আপনার নখ কেটে দিত যখন বিদেশ-বিভুঁয়ে থাকতেন– সেই বিদেশিনী ? নাকি চৌখশ সুন্দরী ভক্তিমতীরা ? যুবতীরা আপনার হাতখানা কোলের ওপরে নিয়ে নখ কেটে দিচ্ছেন, এরকম ফোটো কেউ তোলেনি যে ; ওকামপোর হাঁটুর ওপরে রাখা আপনার দর্শনীয় পা ?   মহাত্মা গান্ধীর দুই ডানা রাখবার সাথিনেরা বোধহয় […]

মৃত্যুকে

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী জানি তুমি আসবেই। তাহলে এ প্রতীক্ষা কেন ? তোমার জন্য আমি পথ চেয়ে, ফুরিয়ে গিয়েছে সব কাজ। আমার আলো তো কবে নিভে গেছে । দরজা রেখেছি খুলে তোমার নামের এক সরল বিস্ময় আসবে সে আশায়। অতএব যে আদল নিতে চাও নাও : ছুঁড়ে মারো তোমার বিষাক্ত বোমা আমার বাসা লক্ষ করে […]

আমার রক্তে অগ্নিশিখা : ওসিপ ম্যানডেলস্টাম

অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী আমার রক্তের ভিতরে এক অগ্নিশিখা পুড়িয়ে ছাই করছে জীবন, হাড় পর্যন্ত আর আমি পাথরের গান গাই না   একটি মাত্র খুঁটির তৈরি হালকা আর রুক্ষ ওক গাছের গভীর হৃদয় আর ধীবরদের বৈঠা   ভিতর পর্যন্ত চালিয়ে দাও শক্ত করে গিঁথে দাও কাঠের স্বর্গের চারপাশে যেখানে সব-কিছুই সহনীয়