এসএমএস যুগের আগেকার একটি প্রেমপত্র

স্যার,
প্রথমে আমার শতকোটি সালাম নেবেন। সালাম মানে শান্তি। এর ভেতরে প্রেম-ভালোবাসা খোঁজার চেষ্টা করবেন না। সমস্যাটা ছেলেদের। মেয়েরা কোনো চিঠি পাঠালেই খুশিতে ডগমগ হয়ে ভাবে, প্রেমপত্র পাঠিয়েছে। আমাদের এলাকার ছেলেগুলো একটু বেশি আহাম্মক—বাপ-মা তুলে গালি দিয়ে চিঠি লিখলেও তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। চিঠি তো লিখেছে! মেয়ের অন্তরে প্রেম না থাকলে কি আর চিঠি লিখতে পারে?
এত কথা বলার মানে একটাই। আপনি আবার এটাকে প্রেমপত্র ভেবে অকারণে পুলকিত হবেন না। এটা আর যা-ই হোক, কিছুতেই প্রেমপত্র নয়। আপনাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য এই চিঠি।
স্যার, আপনি নিজেকে কী মনে করেন? আমাকে প্রাইভেট পড়াতে এসে আপনি এমন ভাব দেখান যেন আপনি অমিতাভ বচ্চন। আশ্চর্য! একটা মানুষ কি নিজের মাপ বোঝে না? কোথায় হিপোপটেমাস আর কোথায় গুবরে পোকা।
আপনি ভেবেছেন আমি আপনার প্রেমে পড়েছি, তাই না? আমাদের এলাকারগুলো তো আছেই, আপনাদের এলাকার আহাম্মকগুলো পর্যন্ত তাদের দিকে তাকিয়ে কোনো সুন্দরী মেয়েকে হাসতে দেখলে নির্ঘাত ধরে নেবে মেয়েটি তাদের কারও প্রেমে পড়েছে।
প্রেমে পড়লে হাসি থাকতেই পারে। পরিহাসের সময়ও হাসি থাকে। ওই কথাটা শোনেননি—নিয়তির মর্মান্তিক পরিহাস।
আপনি যদি ভেবে থাকেন সুন্দরী মেয়ে হিসেবে আমিও আপনার প্রেমে পড়েছি, এটাই হবে আপনার জন্য নিয়তির মর্মান্তিক পরিহাস।
আপনি কচু। আপনি গলা চুলকানো মানকচু। আপনাকে আমি বুড়ো আঙুল দেখাই। বুড়ো আঙুলের আগায় ওয়াক থু।
যে কলম দিয়ে আপনাকে চিঠি লিখছি, সে কলম ছুঁয়ে বলছি, আমি আপনার প্রেমে পড়িনি। আমি আপনাকে একটুও ভালোবাসি না। এই পৃথিবীতে পুরুষ মানুষের যেন আকাল পড়েছে! কী বিদঘুটে চেহারা আপনার! আঁচড়ানোর সময় চুল সামনে এনে কপাল কেন ঢাকেন, আপনি ভেবেছেন আমি কিছুই বুঝি না। এটা ক্লাস থ্রির বাচ্চাও বুঝবে যে আপনার মাথায় টাক পড়ছে, আর সেটা ঢাকতে চুল নিয়ে এত টানাটানি। বেশ তো, সামনের দিকটা না হয় জোড়াতালি দিয়ে ম্যানেজ করলেন, কিন্তু পেছনের দিকটা? পেছনের দিকটা কখনো দেখেছেন? দেখবেন কেমন করে—পেছনে তো আর এক জোড়া চোখ নেই। থাকলে আয়নায় দেখতে পেতেন একটি গোলাকার টাকের আভাস স্পষ্ট হয়ে আসছে। আমি আপনাকে লিখে দিতে পারি, এমন গোলাকার টাকওয়ালা পুরুষ মানুষ আমাদের বুয়ার মেয়ে উম্মে কুলসুমও পছন্দ করবে না। উম্মে কুলসুমেরও রুচি আছে।
স্যার, বড্ড দেমাগ আপনার। কিন্তু দেমাগটা কিসের শুনি? দু-চারটে কঠিন কঠিন অঙ্কের উত্তর আপনার জানা—এই তো? পৃথিবীতে অনেক টিচার আছেন, যাঁরা আরও কঠিন অঙ্কের উত্তর হাতে কাগজ-কলম না নিয়ে মুখে মুখেই বলে দিতে পারেন। সুতরাং, তাঁদের তুলনায় আপনার যে কোনো দামই নেই, এটা তো বোঝেন? আমি এসব ঠুনকো দেমাগকে দুপয়সার পাত্তাও দিই না। আই ডোন্ট কেয়ার। ম্যায় পরোয়া নেহি করতি হুঁ।
স্যার, আপনি আর কী জানেন? দু-চার লাইন ইংরেজি। টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার। এসব দুধের বাচ্চারাও জানে। আপনি যে পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশকে ফিফলস রিফাবলিক অব বাংলাদেশ বলেন, এটা কি আর আমি জানি না? খুব জানি। ক্লাসে যেদিন ফিফলস রিফাবলিক বললেন, আমার বান্ধবীরা মানে আমার ক্লাসমেটরা ফিক করে হেসে উঠেছিল, এটা তো আর আপনার চোখে পড়েনি। অথচ আমি তখন লজ্জায় মরি। আপনার কথার জন্য আমাকে লজ্জা পেতে হবে কেন? আপনি আমার কে?
ছি ছি ছি, যে স্যারকে দেখেই আমার এত ভালো লেগেছিল, তিনি পিপলকে বলবেন ফিফল! এটা মেনে নেওয়া যায়? বেশ, এটাই যদি হয় আপনার উচ্চারণের ধরন, তাহলে তো পেঁয়াজকে বলতেন ফেঁয়াজ, পুতুলকে বলতেন ফুতুল আর সবচেয়ে ভয়াবহ উচ্চারণে প্রেমকে বলবেন ফ্রেম!
প্রেমের মতো একটি অসাধারণ স্বর্গীয় বিষয়কে যিনি ফ্রেম বলবেন, আমাকে তাঁরই প্রেমে পড়তে হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এটা কি ঠিক, আপনি গুনগুন করে গান গেয়ে থাকেন, ‘ফ্রেম একবারই এসেছিল নীরবে!’
আমার বান্ধবী পুষ্প অবশ্য অন্য মেয়েদের মতো হিংসুটে নয়। পুষ্প সেদিন অ্যালজেব্রার ক্লাস টেস্টে পঞ্চাশে পঞ্চাশ পাওয়ায় আপনি দেখি খুশিতে বাকবাকুম শুরু করে দিলেন। কারণটা কি জানতে পারি?
আপনি ন্যাকা স্বরে আদুরে গলায় বললেন, ‘ফুষ্ফ ইজ আ ভেরি গুড গার্ল। গণিতে ফুষ্ফের মাথা সরস।’
অ্যালজেব্রায় কেউ না কেউ পঞ্চাশে পঞ্চাশ পেতেই পারে। তাই বলে পুষ্পকে ফুষ্ফ ফুষ্ফ বলে মাথায় তুলবেন? ধরুন ছেলেদের মধ্যে পিন্টু পঞ্চাশ পেল। আপনি কি তখন বলতেন গণিতে ফিন্টুর মাথা সরস?
কামিজের দুই বগলে ঘামের হলদে দাগ। ছি! তার পরও বুঝলাম পুষ্প ইজ আ ভেরি গুড গার্ল। কথা বলার সময় ডান দিকের দুই ঠোঁটের কোনায় থুতু জমলেও ধরে নিলাম গণিতে তার মাথা ভালো। কিন্তু তাতে আপনার কী? ক্লাস টেস্টের খাতা নেওয়ার জন্য সে যখন আপনার সামনে এল, আপনি অন্য দিকে তাকিয়ে খাতাটা তাকে দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আপনি পুষ্পর মাথায় হাত রাখলেন। একটু আদরও করলেন বলে মনে হলো। কিন্তু এত বাড়াবাড়ি কেন? মেয়েদের গায়ে হাত দিতে লজ্জা করে না? বেহায়া কোথাকার!
আপনি কী বলবেন, আমি জানি। বলবেন, মাথায় হাত দেওয়া আর গায়ে হাত দেওয়া এক হলো নাকি?
এক নয়তো কী? মাথা কি শরীরের মানে গায়ের অংশ নয়? নাকি মেয়েদের গা বলে বিশেষ কোনো অঙ্গ আছে?
এত বড় অপমান করলাম, আমি জানি তার পরও আপনি বলবেন, ছাত্রী হচ্ছে কন্যাসম আর শিক্ষক পিতৃসম। আপনি খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করবেন, পিতৃসম হলে তো কন্যার মাথায় হাত রাখাই যায়। চমৎকার! কী চমৎকার কথা! আর একটুখানি লাই দিলে তো বলেই বসবেন, কন্যাসম ছাত্রীকে তো কোলেই বসানো যায়। ছি! ওয়াক থু! আমাদের স্কুলের অন্তত দুজন ছাত্রী পিতৃসম শিক্ষকের সঙ্গে প্রেম করে—একজন ট্যারা মুনমুন। তার সঙ্গে বশিরউল্লাহ স্যারের প্রেমের কথা স্কুলের সবাই জানত, প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বাধ্য হয়ে বশির স্যারকে ছমাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছেন। এত দিন দেখাদেখি না হলে যদি প্রেমটা ছুটে যায়! আর দ্বিতীয়টি এখনো জানাজানি হয়নি—রোকসানা তাবাসসুম আর আবুল খায়ের স্যার। আমার কাছে দুনিয়ার সব খবর আসে। ছেলেরা প্রাইভেট পড়তে চাইলে আপনি বলেন, সময় নেই। আর মেয়েরা বললে বলেন, ঠিক আছে, টাইমটা ম্যানেজ করে নেব। আপনার ইভনিং ব্যাচের তারানা ওয়াক্কাস নামের মেয়েটির ব্যাপারে সাবধান। যদি ভুলে ওর হাতে আপনার হাত লেগেও যায় ও কিন্তু বলে বেড়াবে, স্যার আমার দুহাত বুকের মধ্যে নিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন।
অবশ্য ব্যাটাছেলেরা যে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, এটা তো আর মিথ্যে নয়। আমি জানি, আপনি ও রকম টাইপের নন। তার পরও যদি আমার কাছে খবর আসে আপনি ফ্যালফ্যাল করে তারানা ওয়াক্কাসের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আমি শিককাবাবের শিক গনগনে আগুনে গরম করে আপনার চোখে ঢুকিয়ে দেব। আপনি আমাকে চেনেন না, আমার নাম সাবরিনা। আমি জীবন দিয়ে হলেও আপনার সঙ্গে অন্য যেকোনো মেয়ের প্রেম করা ঠেকিয়ে দেব। মনে রাখবেন, সুইডেন আসলাম আমার দূরসম্পর্কের কাজিন।
স্যার, একটা কথা মনে পড়ল। আপনি নাকি ইলেকশনের সময় ‘ক’ দলের চামচাগিরি করেছেন। আপনি তো জানেন, আমার বাবা ‘খ’ দলের একজন নেতা। তাহলে বুঝে দেখুন, আপনার সঙ্গে যদি কখনো আমার কিছু একটা হয়, বাবা তো বাধা দেবেনই। তার চেয়ে বরং কিছুদিন নাহয় ‘খ’ দলের চামচাগিরি করুন। এটা তেমন দোষের কিছু নয়। পলিটিশিয়ানের আবার চরিত্র কিসের!
থাক, আমি পলিটিকসের মধ্যে নেই। আমার বড় মামা একবার দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন আমার মামি তাঁকে তালাক দেওয়ার নোটিশ দেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে একটি মন্ত্রণালয় পেয়ে যাওয়ায় মামি নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। এই কথাগুলো এমনিই বললাম। আমার মামা যে মন্ত্রী এটা বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। মামার কথা এমনি বললেও ভেতরে একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে—তাঁকে দিয়ে যেকোনো সময় আপনাকে যেকোনো জায়গায় বদলি করিয়ে দেব। আপনি যদি আমার পরিচিত কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েন, আপনাকে বদলি করাব থানচি উপজেলায়। তখন ‘প্রেমের নাম বেদনা’ গাইতে গাইতে আপনার গলা ভেঙে যাবে। শরীর নিশ্চল হয়ে যাবে। সরি, আপনি গাইবেন ‘ফ্রেমের নাম বেদনা’। আর একটা মেয়ের কথা বলি: পড়শি।
কী রকম মায়াভরা চোখ। চোখে চোখ পড়লেই আপনার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠবে। তবে সাবধান, পড়শির বাবা কিন্তু র্যাবের অফিসার। মেয়ে স্কুলটিচারের সঙ্গে প্রেম করুক এটা কিন্তু কেউই, মানে কোনো বাবাই চান না। পড়শির বাবা যে চাইবেন না এটা তো শতভাগ নিশ্চিত। তাহলে কী করবেন—মেয়েকে নিষেধ করবেন? প্রশ্নই আসে না। বাবারা মেয়ের কাছে অতিশয় ভালো মানুষ সেজে থাকতে চান। তিনি পড়শিকে কিছুই বলবেন না। একদিন শোনা যাবে, আবদুল করিম গুম। তিন দিন পর আবদুল করিমের বিচ্ছিন্ন মুণ্ডুটা পাওয়া যাবে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে।
সরি স্যার, আপনার নাম নিয়ে এই কথাগুলো আমাকে বলতে হলো। এবার একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আবদুল করিম নামটা কি বদলানো যায়? আপনার নামের আবদুল অংশটুকু আমার একদম ভালো লাগে না। করিমটা কোনো রকম চলত, যদি নামটা হতো নাজমুল করিম। আমার পছন্দের একটা নাম বলব—আদনান সামি। আপনার নামটা আদনান সামি হলে কী যে জোশ হতো!
থাক এসব কথা।
আপনি পরপর তিন দিন আমাকে পড়াতে আসেননি। ছাত্রীর বাবা টিউশনির ফি কম দেন—এ অজুহাতে আপনি নাকিকয়েক জায়গায় পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন? আমাকে খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমার বাবা কিন্তু পাঁচ শ টাকার বেশি এক পয়সাও দেবেন না। আমি তাঁকে চিনি। বাবা বলেছেন, দু শ টাকা বেশি দিতে হলে আবদুল করিমকে কেন, পঁয়ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মোক্তাদির স্যারকেই দেব। ভালো পড়াবে। তা ছাড়া বুড়ো হওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গে মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কম হবে।
স্যার, দোহাই আল্লাহর, এতক্ষণ আপনার বিরুদ্ধে যা লিখেছি, তা মূলত আমার হিংসা থেকে। শব্দটা বোধ হয় ঈর্ষা হবে। ঈর্ষা থেকে। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।
আপনি যদি আমাকে পড়াতে না আসেন, আমি স্কুল ফাইনালে গণিতে ফেল করব। গণিতে ফেল মানে পরীক্ষায় ফেল। পরীক্ষায় ফেল মানে আমার সুইসাইড করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা রইল না। আর সুইসাইড যদি করতে হয়, আমাকে নতুন করে সুইসাইড নোট লিখতে হবে না। অন্তত দশ জায়গায় আমি লিখে রেখেছি: ভালোবাসা দিলাম আমি, ভালোবাসা পেলাম না। আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী করিম স্যার।
আমি জানি, আপনি ৭০০ টাকার টিউশনি পাবেন। কিন্তু আমার বাবার মতো কিপটে মানুষের হাত গলে দুটো বাড়তি টাকাও বেরোবে না। আপনি বাবার কাছ থেকে ৫০০ টাকাই নেবেন। আমি দেব আপনাকে আরও ৫০০ টাকা। এক হাজার টাকা হলে আপনার সম্মানও থাকল, টেনেটুনে আমারও পরীক্ষাটা দেওয়া হবে। তা ছাড়া আমিও আপনাকে পেলাম।
বাড়তি পাঁচ শ টাকা কোথায় পাব?
আমি এ পর্যন্ত মোট সাড়ে সাত হাজার টাকা চুরি করেছি। আপনাকে সবটাই দিয়ে দেব। তারপর টানা পনেরো মাস পড়ার নামে আপনার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করব। তখন কিন্তু না বলতে পারবেন না। আমার গায়ে কোথাও আপনার সুইট হাতটা লেগে গেলে আমি আপনাকে খারাপ ভাবব, এটা মোটেও মনে করবেন না। এতটা বোকা আমি নই যে আপনি যদি আমার গা ঘেঁষে বসতে চেষ্টা করেন আমি মান গেল, ইজ্জত গেল বলে চেঁচামেচি শুরু করব, কিংবা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করাতে চেষ্টা করব।
সত্যি যদি স্যার আপনি আমার গা ঘেঁষে বসতেন, আমি একটু সরে যেতাম না, আমিও আরও গা ঘেঁষে একেবারে আপনার ভেতরে ঢুকে পড়তাম। আপনি আমাকে বেহায়া ভাববেন, ভাবুন। আমার তাতে বয়েই যাবে।
স্যার, আপনি আমাকে বলেছেন, আরও অনেক পড়াশোনা করতে হবে, আমাকে অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু আমি যে রকম ছাত্রী, আপনাকে ছাড়া আমি তো এক পা-ও এগোতে পারব না।
প্রাইভেট টিচার হিসেবে আপনাকে ধরে রাখার জন্য আমি আরও দশ হাজার টাকা চুরির টার্গেট নিয়েছি। অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে দিলে সামনের পনেরো মাসের পর আরও কুড়ি মাস আপনাকে কাছে পাব। যদি দশ হাজার টাকার টার্গেট মিস হয়, একটুও চিন্তা করবেন না, আমার দুহাতের দুটো বালা (এত ভারী অলংকার আমার মোটেও পরতে ইচ্ছে করে না।) চোখ বুজে পঁচিশ-তিরিশ হাজার টাকা বেচা যাবে।
দ্বিতীয় যে কুড়ি মাস, সে সময়ই আমাকে নিয়ে আপনার পালানোর পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করতে হবে। তবে খুব সতর্কভাবে।
আচ্ছা স্যার, আপনার কোন বাচ্চা বেশি পছন্দ, ছেলে না মেয়ে? ঠিক আছে, এটা নিয়ে পরে আপনার সঙ্গে ফয়সালা হবে। যদি একমত হতে না পারি, তাহলে লটারি হবে। ছোট্ট বাচ্চা যা কিউট লাগে! স্যার, একটা ভালো খবর দিই। আমার রুম এখন বাসার একেবারে শেষ প্রান্তে। রুমের এক পাল্লার দরজাটা দারুণ। খোলা দরজা ছেড়ে দিলে এমনিতেই লকড হয়ে যায়। খুব মজা, তাই না স্যার। আপনি যখন ভেতরে আমাকে পড়াবেন, একটু একটু করে আমাকে ছুঁয়ে দেখবেন, তখন হুট করে কেউ দরজা খুলতে পারবে না। এ জন্যই তো অটো-লকড। দরজায় নক করতে হবে। ততক্ষণে আমরা সামলে নিতে পারব, তাই না স্যার?
স্যার, আপনি যদি কাল থেকে না আসেন আমার কান্না কেউ থামাতে পারবে না। আমি একটি পিরিচে বিষ গুলিয়ে রেডি করে রেখেছি। আর একবার যদি আমার মনে আঘাত দেন, আমি পুরোটাই চেটেপুটে খেয়ে ফেলব। তখন শত চেষ্টা করেও আমার ডেড বডিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।
স্যার, আমি নেই। আর পৃথিবীতে সবাই আছে—ভাবতেই আমার চোখ কান্নায় ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। চিঠির অক্ষরগুলো এখনই ভিজতে শুরু করবে। স্যার, বিশ্বাস করুন, আল্লাহর কসম, আই লাভ ইউ।
স্যার, আপনার পায়ে ধরি। আমাকে আঁকড়ে ধরে আপনিও একবার বলুন: আই লাভ ইউ। আমি জানি, আপনার অন্তরে আর কেউ নেই, আমি আছি।
আপনার চিরদিনের
সাবরিনা

পুনশ্চ: স্যার, আপনি যদি কাল আমাকে পড়াতে না আসেন তাহলে পরশু দিনই এই চিঠিটিকে আমার ফাইনাল সুইসাইড নোট বিবেচনা করবেন। পরপুরুষ হিসেবে আমার মরা মুখ দেখার কোনো অধিকারই তখন আপনার থাকবে না। বাই বাই। খোদা হাফেজ।