তোমাকে নিয়ে

অনেক মানুষের মাঝে ও আমরা একা হতে পারতাম, কারন আমাদের কথাগুলো ছিল অন্যরকম।
সে সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন প্রথম বেরোয় আমাদের পছন্দের কলাম ছিল “ দিনের পর দিন”।
মইন আর মিলা অনেক দিন পর আমাদের সামনে এলো। আজ আমরা ও মইন আর মিলা ।
শফিক রেহমান কে আমার সে সময় অনেক ভাল লাগতো ,পরে অবশ্য তিনি অনেক বদলে গেছেন ।বদলের আরেক নাম ই তো জীবন ।
ভালোবাসা দিবস আমাদের দেশে আজ অনেক জনপ্রিয়, বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রথম জোয়ার এনেছিল সাপ্তহিক যায় যায় দিন । ১৪ই ফেব্রুয়ারী তে ভালোবাসা দিবস সংখ্যা বের হতো । সেই ৮০র দশকে ।যার স্লোগান ছিল “লেখকই যার পাঠক”।আর একটা স্লোগান ছিল খুবি মজার “যায় যায় দিন এক নিষিদ্ব নেশা”।
আমার স্মরনশক্তি যদি ভুল না করে যায় যায় দিন কে তিন বার নিষিদ্ব করা হয়েছিল।সম্পাদক কেও দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন সামরিক সরকার এরশাদ ।আমাদের সাপ্তাহিক পত্রিকার জগতে নতুন এক বিপ্লব এনেছিল যায়যায়দিন । পত্রিকা হিসাবে সাপ্তাহিক যায় যায় দিন যতটা সফল দৈনিক যায়যায়দিন ততটা বিফল। অনেক ভাল লেখককের সমাগম ছিল সাপ্তাহিক যায় যায় দিন এ । গাফফার চৌধুরী তখন একটা কলাম লিখতেন “বাংলাদেশে এখন কাদের শাসন দরকার “। সেই সময় বাংলাদেশে এরশাদ সাহেবের সামরিক শাসন চলছিল।সেই বিষয়ের উপর লেখা ছিল সেটি । সে লেখার শেষ পর্বটা খুবি মজার ! এক পাঠকের মন্তব্য ছিল “আপনার এই লেখা পড়ে কেউ বাংলাদেশ শাসন করতে যাবে না” । এরপর গাফফার চৌ আর এই বিষয়ে আর লিখেন নি ।রাজনীতি কলাম লিখতেন তারিক ইব্রাহিম ।ফেরদৌস আহন্মেদ কোরেশী ও খুব ভালো লিখতেন । এখন তিনি লেখালিখি করেন কিনা জানি না।শফিক রেহমান এর বাবা সাইদুর রহমান লিখতেন “শতাব্দীর স্মৃতি” ।শতাব্দীর সৃতি বই আকারে বের হয়েছে । আর উনার ছেলেও লিখতেন সঙ্গীত বিভাগে।রাজনীতি কলাম লিখতেন তারিক ইব্রাহিম ।বাংলাদেশের কোন পত্রিকায় বোধহয় তিন প্রজন্মের লিখা একসাথে কোথাও প্রকাশিত এভাবে হয়নি । শফিক রেহমান এর প্রকৃত নাম কিন্ত শফিক রহমান ! বোধহয় মইনুল হোসেন সাবের এর লেখা তে পড়েছিলাম ।
দৈনিক সংবাদ এ তখন প্রতি মংগলবার “সময় বহিয়া যায়” নাম এ কলাম লিখতেন গাছপাথর প্রকৃত নাম টা মনে নেই ,খুবি চমৎকার লেখা।
হুমায়ুন আহমেদ তখন আজকের মত নাম করেন নি। তখন পর্যন্ত উনার প্রকাশিত নামকরা উপন্যাস “নন্দিত নরকে”। পরবরতীতে উনি নাটক লিখা শুরু করলেন। নাট্যকার হিসাবে উনাকে আমার যতটুকু পছন্দ উপন্যাসিক হিসাবে তেমন নয়। কারো কোন কিছু যদি ভাল লাগে তার সবটুকুই যে ভাল লাগবে তেমন কোন কথা নেই ।তবে একটা কাজ উনি চমৎকার করেছেন সেটি হল অনেক পাঠক তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে উনার অবদান আমার কাছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর চেয়ে বেশী মনে হয় আমার কাছে।দুজনের কাজ যদিও দুরকম। হুমায়নের লেখা পাঠক প্রিয় একথা অবশ্য স্বীকার করেতই হয়,সাহিত্য মান বিচার করবে সময় ।
বাংলাদেশী লেখকদের মধ্যে মইনুল হোসেন সাবের, ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌঃ , সৈয়দ শামসুল হক এঁদের অনেক লেখা পড়েছি । সিরাজুল ইসলাম চৌঃ উনার স্ত্রী নাজমা জেসমিন চৌঃ কে নিয়ে একটা স্মৃতি কথা লিখেছেন যদি পার তো পড়ে দেখ। শারদীয় দেশ এর পাশাপাশি ঈদ সংখা বিচিত্রা ছিল আমার নিত্য সংগী।বিচিত্রার ঈদ সংখ্যাগুলো খুবই ভালো ছিল। আমার মনে হয় শারদীয় দেশের বিকল্প বা সমকক্ষ ছিল বিচিত্রার ঈদ সংখ্যা। বিচিত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এরকম কোন সাময়িকী চোখে পড়ে না ।
সমরেশ,শীর্ষেন্দু,বুদ্বদেব,সুনীল ছিল আমাদের সব সময়ের সাথী। পুর্নেন্দ পত্রী ও বাদ যায়নি। আচ্ছা তুমি কি আবুল বাশার এর লিখা পড়েছো। পরে না থাকলে ঊনার “ফুলবঊ” টা পড়ে নিও। ধর্মকে এভাবে বিশ্লেষন করেছেন যা পড়লে অনেক কিছু ভাবতে হয় । ভাগ্যিস উনার এই লেখাটি আমাদের মৌলবাদীদের চোখে পড়েনি । পড়লে লেখকের অবস্থা তসলিমা নাসরীন বা হুমায়ুন আজাদের মত হতো ।
ভালোবাসা ব্যাপার টা এমন নিজের যা কিছু ভাল লাগে তা যদি অন্যের সাথে শেয়ার করতে না পারলে কোন মজা ই নেই।
রবীন্দ্রনাথের লিখা তেমন একটা পড়া হয় নি ,এক শেষের কবিতা থেকে আমি কোন দিন ই বের হতে পারি নি। হয়তো পারবো এ জন্মে ।তবে উনার এত গান শুনেছি যে আর কারো গান না শুনলেও চলবে।
রবীন্দ্রনাথ কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর না বলতে একদিন আমাকে অনেক বিব্রতকর অবস্তায় পড়তে হয়েছিল।
আমাদের দেশের কিছু বড় বোদ্দা আছেন যাদের অনেক কিছুই লোক দেখানো। লোক দেখানো কোন কিছুই আমার ভাল লাগে না কোনদিন । হিপোক্রাসি করতে আমার ভাল লাগে না।
আমার ভালবাসা আর ঘৃণা দুটোই বড়বেশি আগল খোলা।কোনভাবেই লুকাতে পারি না।সবায় সব কিছু পারে না,পারার কথাও না। প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা। তোমার সন্তানেরাও আলাদা আলাদা মানুষ । যেমন আমি ও তুমি ।আমরা মনে করি আমাদের সন্তানেরা আমাদের সম্পত্তি ।আমাদের প্রজন্মের সব ছেলে মেয়েই বাবা মা কে নিয়ে সুখী ছিলাম? যেহেতু বাবা মায়েরা আমাদের খেতে পরতে দিতেন,দেখাশুনা করতেন, আমরা বোবার মতো তাঁদের সব কিছুকেই মেনে নিতাম। আমরা ভীরু ছিলাম ,অসৎ ছিলাম কিন্তু আমাদের সন্তানেরা তেমন হবে না ,তারা আমাদের সাহায্য ছাড়াই ভেসে যাবে নিজের গভীর গন্তব্যের দিকে। আমাদের মতো প্রশ্বাস নেওয়া আর নিঃশ্বাস ফেলাকে ওরা বাঁচা বলে ভুল করবে না ।
কাহালিল গিব্রান (Khalil Gibran)এর The Profet বইয়ে Cildren নাম এর একটা কবিতা আছে।বইটি হয়ত পাবে না তাই কবিতা টা নীচে দিলাম

Children

And a woman who held a babe against her bosom said, “Speak to us of Children.”
And he said:
Your children are not your children.
They are the sons and daughters of Life’s longing for itself.
They come through you but not from you,
And though they are with you, yet they belong not to you.
You may give them your love but not your thoughts.
For they have their own thoughts.
You may house their bodies but not their souls,
For their souls dwell in the house of tomorrow, which you cannot visit, not even in your dreams.
You may strive to be like them, but seek not to make them like you.
For life goes not backward nor tarries with yesterday.
You are the bows from which your children as living arrows are sent forth.
The archer sees the mark upon the path of the infinite, and He bends you with His might that His arrows may go swift and far.
Let your bending in the archer’s hand be for gladness;
For even as he loves the arrow that flies, so He loves also the bow that is stable.
লেখাটি প্রথম আলো ব্লগে এপ্রিল ৪, ২০০৯ প্রথম আলো ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । লিংক

সামান্য পরিবর্তিত।
(চলবে)

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
মিতা- র আরো পোষ্ট দেখুন