ঘাস

তার চেয়ে ঘাস হয়ে যাই চল,
তাকে বলেছিলাম, সে বলেছিল চল।
বলেছিল, তুমি আগে হও, আমি পরে।
বলেছিল, তোমার ডগায় ছোট চুমু খেয়ে তারপর আমি।
ঘাস হলাম, সে হলো না। আমাকে পায়ে মাড়িয়ে অন্য কোথাও চলে গেল।
কোথায় কার কাছে কে জানে ! ঘাসের কি সাধ্য আছে খোঁজ নেয় !
কোনও একদিন বছর গেলে শুনি
কোথাও সে বৃক্ষ হতে চেয়ে চেয়ে হয়েছেও,
আমি ঘাস, ঘাসই রয়ে গেছি, ফুল ফোটাই, দিনভর আকাশ দেখি, বাঁচি।
এদিকে দু’টো লোক ঘুরঘুর করছে, বৃক্ষ হবে, বৃক্ষ হবে ?
সে বুঝি পাঠালো বৃক্ষ হতে ? একলা লাগছে তাহলে এতদিনে ?
লোক দুটো চাওয়াচাওয়ি করে। বলে, কার কথা বলো ?
নাম বলি। জীবনে শোনেনি নাম।
তবে কেন বৃক্ষ হতে বলছো আমাকে ?
হেসে বললো, দেখতে রূপসী হবে, ফলবতী হবে।
দুর দুর করে তাড়াই তাদের। আমার ঘাসই ভালো।
ঘাস হলে দুঃখ রাখার জায়গা অত থাকে না,
ঘাস হলে কার সাধ্য আছে গায়ে চড়ে চড়ে
আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে।
আমি আমার মতো বৃষ্টি বাদলায় বাঁচি,
ঘামাচি গরমে বাঁচি।
আমার মতো রাতভর চাঁদ দেখে দেখে, চাঁদ থেকে
চুয়ে পড়া সুখ দেখে দেখে বাঁচি।
ভুল করেও কাউকে বলি না ঘাস হতে আর,
ভুল করে নিজেও কখনও বৃক্ষ হই না।

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
Alternative Textতসলিমা নাসরীন- র আরো পোষ্ট দেখুন