সবিতার কবিতা

সবিতা তার নবজাতক কন্যাটিকে সাত তলা থেকে ফেলে দিয়েছে নিচে
ছিঃ সবিতা ছিঃ
এত পাষন্ড তুই!
কে পারে অবোধ শিশুর চোখ ফুটিফুটি করে ফুটছে যখন,
যখন ঠোঁট খুঁজছে কিছু মধু,কিছু দুধ বা জল—
তুলোর মত নরম শরীর খুঁজছে কোনও উষ্ণ স্পর্শ
তখন কিনা শিশুটিকে আচমকা ছুঁড়ে ফেলে দিলি। হৃদয় কি দিয়ে গড়া তোর? পাথর!
হ্যাঁ পাথর । সবিতার চোখেও বসানো দুটো কালো পাথর ।
সবিতা কি মানুষ? কে বলেছে মানুষ! আস্ত ডাইনী!
নিচে রাস্তায় থেতলে যাওয়া মাংসপিন্ড নিয়ে একশ নেড়ি কুকুর উৎসব করছে ভূরি ভোজনের।
লোক জড়ো হচ্ছে । সবিতার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে দলা দলা ঘৃণা।
ছিঃ সবিতা ছিঃ ।

সবিতা পাগল,সকলেই এক বাক্যে রায় দেয় সবিতা পাগল
পাগল মেয়ে উদাস চোখে তাকিয়ে আছে আকাশে,যেমন করে কবিরা তাকায়।
সবিতা তো কবি নয়। তবে সে একটি কবিতা লিখেছে আজ,
তৃপ্ত সে কবিতাটি লিখে।
সেই শৈশব থেকে চেয়েছিল চমৎকার একটি কবিতা লিখতে,পারেনি।
নবজাতক কন্যাটিকে সাততলা থেকে ছুঁড়ে ফেলাই সবিতার কাছে নিটোল একটি কবিতা নির্মাণ করা।
যদি বেঁচে থাকতো কন্যাটি, বেঁচে থাকতো পঞ্চাশ বছর,পঞ্চাশ বছর ধরে সইতে হত তার,
সে নিজে যেমন সয়েছে মেয়েমানুষ হওয়ার যন্ত্রণা।
নিজেকে সে যতটা ভালবাসে, তার চেয়ে বেশি বাসে কন্যাটিকে,
পঞ্চাশ বছরের যন্ত্রণাকে পঞ্চাশ মিনিটে কমিয়ে একটি অনবদ্য কবিতা লিখেছে সবিতা
এ কবিতা নিজের কন্যাকে হত্যা নয়, বাঁচানো ।

কবিতা তো মানুষের মঙ্গলের জন্যই মানুষ লিখে।

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
Alternative Textতসলিমা নাসরীন- র আরো পোষ্ট দেখুন